পথ চলতে আনমনে

লিখেছেন লিখেছেন জুম্মি নাহদিয়া ২৯ মে, ২০১৪, ০৯:৩০:৪৮ রাত



খুব হুট হাটের ডিসিশন সব সময় খারাপ না ।

কাকভোর থেকে রাত নিশুতি পর্যন্ত দৌঁড়ানোর ফাঁকে এক বিকেলে উনি গলা বাড়িয়ে বললেন , পলিরা (সিস্টার ইন ল) যাচ্ছে , যাবা ?

´´ আমি ঝর্না হয়ে গলে যেতাম অমনি পরম সুখে ... ´´লাইনগুলো ছোটবেলায় বিভিন্ন কম্পিটিশনে অসংখ্যবার না বুঝে গেয়েছি । একটু বড় হয়ে মানুষের অন্তরে এত তৃষ্ণা কেন জমে- কিভাবে জমে বুঝতে চাইতাম , অনুভব করতে চাইতাম । । এক সেকেন্ডের জন্যেও জায়গাটি যেহেতু থেমে থাকে না , তাই মনের ভেতর বিস্ময়ও ছিল খুব । আমি বললাম ,

- পাত্তি আছে ? যদি থাকে , তাহলে না যাওয়ার কোন কারণ তো নাই ই বরং ভুল ।

- অ্যা ...ইয়ে... সেটা হবে কাচায় কুচায় , কিন্তু আহমাদকে নিয়ে বেশী কষ্ট হয়ে যাবে না ?

-শোন , কষ্ট হবেনা আমি এরকম কথা বলব না । আমরা কেউই সুপার হিউম্যান বিইং নই । কিন্তু নিজেদের স্বার্থে সেই কষ্টকে জয় ব্লা ব্লা ব্লা (একটি মানুষ গেছে চাঁদে টাইপের মোটিভেশনাল লেকচার দিয়ে ফেললাম । )

মোটিভেশনের চোটে তক্ষন ল্যাপটপ খুলে পাত্তির হিসাব , টিকেট দেখাদেখি শুরু হল । ফাঁকে ফাঁকে আমেরিকায়( সিস্টার ইন ল এর বাসা) ফোন । আমি পাসপোর্ট জমা দেয়ার আগেই তল্পিতল্পা নিয়ে ভাবতে বসলাম । কি আছে কি লাগবে এইসব মেয়েলীপনা । এই এপ্রিলের বার তারিখ ওনারা ফ্লাই করবেন । আমাদের টার্গেটও বার তারিখ । আমরা যেহেতু কোন গ্রুপের সাথে যাচ্ছি না এবং ওখানকার ভাব ধারা কিছুই চিনি টিনি না তাই ওনাদের ধরাটাই স্বাস্থ্যকর ।

মার্চের প্রায় শেষ । বার তারিখ টার্গেট তাই খুব অল্প দিনের ভেতর কাগজ পত্র নিয়ে দৌড়ঝাঁপ থেকে শুরু করে ভ্যাক্সিন , কেনাকাটা একযোগে করে ফেলছি। আর সাথে গ্যদা বাচ্চা যাবে যেহেতু তাই প্রিপারেশন খুব খিয়াল করে কিন্তু ঢিপিয়ে না -এভাবে নিচ্ছি ।

দশই এপ্রিল সকালে দেখা গেল ভিসা এখনো আসেনি । আমার পাসপোর্ট বাংলাদেশি হওয়াতে ঝামেলা এবং বিলম্ব দুই ই হচ্ছে । মনের ভেতর দুইটি ভাবনা উঁকি দিল । এক ,নিয়ত করেছি , কবুলের মালিক আল্লাহপাক । পাপী তাপী মানুষ আমি , ভিসা নিয়ে একটু ঘুরিয়ে ঘারিয়ে হয়ত পরীক্ষা করতে চাচ্ছেন । দুই , পাসপোর্ট বাংলাদেশী হওয়াতে বহু আগে থেকেই এয়ারপোর্টে কতিপয় ই ইউ পাসপোর্টধারীদের সুপারিওরিটি কমপ্লেক্সে ভোগা সহ্য করছি কিন্তু মাই ব্যাড , এক ফোঁটা ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স তৈরি হয়নি । বরং ভেতর থেকে জার্মান নাগরিক হিসেবে ওথ নেয়ার তেমন কোন তাড়াহুড়াও অনুভব করিনা । এই বিলম্ব - এই লাইনের একদম পেছনে দাঁড়ানোর রীতি নীতি সবুজ পাসপোর্ট হাতে নিয়েই ভাঙ্গার কল্পনা করি কিন্তু প্লেনের ল্যাভেটরীতে বিড়ি টেনে ধরা খাওয়া , মাগনা মদ পেয়ে প্লেনের ভেতর মাতলামীর চূড়ান্ত করা দেশী ভাইগুলো কিংবা গুয়াংজু এশিয়ান গেমস ভিলেজ থেকে আরেক দেশী ভাইয়ের ইলেকট্রিক মশার কয়েল চুরি দৃশ্যপটে এসে ঝামেলা বাঁধায় ।

বিকেলবেলা পাসপোর্ট ফেরত পেলাম । আল্লাহ চাইলে পরশু দুপুরে ফ্লাইট ।

-ইজিপ্টের ভিসার জন্য তিন সপ্তাহ লাগবে । মেজাজ গরম লাগতেছে । এদিকে হোটেলও বুকিং দিয়ে ফেলছি ।

-কি আর করবা । বাদ দাও । আসল জায়গার ভিসা আসছে আলহামদুলিল্লাহ । এখন এই সাতাশ ঘণ্টা এয়ারপোর্টের ভেতর হোটেল খুঁজে না পেলে মসজিদে কাটায় দিতে হবে । আমার ষোল ঘণ্টার রেকর্ড আছে । এবার ব্রেক হবে।

-তুমি তখন একদম একা ছিলা জুম্মি !

আহমাদের অস্বস্তি কান্নাকাটির কথা চিন্তা করতেই হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসল । তাও বললাম ,

- তুমি সাথে থাকলে পাওয়ার তো আরও বাড়ার কথা , বল , কথা না ? আমার এনালাইসিস হল আমরা প্রথমেই এয়ারপোর্টের ভেতরে হোটেল খোঁজার ট্রাই দিব । খুঁজে না পেলে কায়রো (আহ কায়রো ) এয়ারপোর্টে অবশ্যই মসজিদ আছে । আমি জানি , কয়েক ঘণ্টা পর অনেক বিরক্ত লাগবে , মাথা ভন ভন ভন ভন করবে কিন্তু পারা যাবে ইনশাল্লাহ , সাতাশ ঘণ্টাই তো ... তুমি চিন্তা কর আদনান, আমার পূর্বপুরুষ- তোমার পূর্ব পুরুষ মাসের পর মাস ধরে পায়ে হেঁটে ... ( এনাদার মোটিভেশনাল লেকচার )

-আমাদের কিন্তু সাতটার ভেতর বের হতে হবে , নো ওয়ে ।

-দুপুরে ফ্লাইট তুমি সাতটায় বের হতে বলতেছ ক্যান?

-ফ্লাইট তো বার্লিন থেকে । হামবুর্গে তো ইজিপ্ট এয়ার নাই । হাউপট বানহফ ( সেন্ট্রাল স্টেশন) থেকে বাস নিতে হবে ।

হইছে কাম ! এনাদার ফাইভ আওয়ারস । আল্লাহর কাছে আর্জি , ইয়াল্লাহ , তুমি আমাদের শরীর এবং মনের জোর উভয়ই আনুপাতিক হারে বাড়িয়ে দাও । আমার মেজাজ মর্জি ঠিক রাখ । আমার শিশুরটাও বিশেষভাবে । আর স্ট্রলারের চাকাতে কোনরূপ ডিস্টার্ব দিওনা ।

শুক্রবার সারাদিন গেল ঘর গুছাতে । আমি সাধারণত কোথাও যাওয়ার আগে বেশ সময় নিয়ে ঘর গুছাই । ফ্রিজ ধুই । ফিরে এসে বিছানায় সটান করে শুয়ে পড়ার লোভে মেহমান আসার আগে বাসা যেমন থাকে তেমন করে রাখতে ইচ্ছুক থাকি । ও বারবার বলছিল লাগেজের জিনিসপত্রের দিকে অধিক মনোযোগী হতে। কোথাও ভুল চুক আছে কিনা চেক করে নিতে । পাত্তা দেইনাই ।

পরে হামবুর্গ থেকে দেড়শ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার পর খেয়াল হল পাত্তা না দেয়াটা ঠিক হয়নি । আহমাদের সানগ্লাস মিস্টেক হয়ে গেছে । ছেলেটার ভবিষ্যৎ দশটি দিন ইনশাল্লাহ একটি বেশীই রৌদ্রউজ্জ্বল থাকার কথা । বার্লিন নেমেই সানগ্লাস কেনা যাবে কিনা চিন্তা করতে চাচ্ছি , কন্সানট্রেশন আসছেনা । আহমাদ সিট থেকে নেমে হাঁটতে চাচ্ছে । চলন্ত বাসে মোট পাঁচটি দাঁতের বাচ্চারা হাঁটলে যে পড়ে যায় এটা এখন তাকে কে বোঝাবে ?

( চলবে )

বিষয়: বিবিধ

১৪৫৯ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

228126
২৯ মে ২০১৪ রাত ০৯:৩২
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২৯ মে ২০১৪ রাত ১১:৫৯
175013
জুম্মি নাহদিয়া লিখেছেন : ধন্যবাদHappy
228132
২৯ মে ২০১৪ রাত ১০:০০
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : আপু কেমন আছেন? ‌অনেক ভালো লাগলো পারিবারিক গল্পটি। সময়ের অভাবে ভালো করে মন্তব্য করতে পারলাম না। চালিয়ে যান
৩০ মে ২০১৪ রাত ১২:০১
175015
জুম্মি নাহদিয়া লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে । ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ । আপনিও ভাল থাকবেন ।
228134
২৯ মে ২০১৪ রাত ১০:০১
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : জাজাকাল্লা খায়র... অনেক ভালো লাগলো পড়ে
৩০ মে ২০১৪ রাত ১২:০১
175016
জুম্মি নাহদিয়া লিখেছেন : Happy Happy
228145
২৯ মে ২০১৪ রাত ১০:৩০
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : আপনার উপস্থাপনার স্টাইল দারুন মজার। Thumbs Up Thumbs Up উপভোগ করলাম বেশ। Bee Bee সামনের পর্বে এত্ত বেশি লেকচার দিলে কিন্তু এটা Time Out Time Out Time Out চলবে, কইলাম Winking Winking
৩০ মে ২০১৪ রাত ১২:০৩
175017
জুম্মি নাহদিয়া লিখেছেন : মোটিভেশনাল লেকচার দেয়া ছাড়া জীবনে আর কিছু করতে পারলাম না । কি আর করা , খাইলাম না হয় হাতুড়ির বাড়ি !
228175
৩০ মে ২০১৪ রাত ১২:২৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার শুরু!!!
চলতে থাকুক আপনার সাথে আমরাও ভ্রমনে।

কিন্তু আমাদের কইলাম বেশি লেকচার দিয়েননা।
সেক্ষেত্রে ভাইগা যাব।
৩০ মে ২০১৪ রাত ০২:৩১
175041
জুম্মি নাহদিয়া লিখেছেন : আচ্ছা ঠিকাছে ।
228182
৩০ মে ২০১৪ রাত ১২:৩৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো
৩০ মে ২০১৪ রাত ০২:৩০
175040
জুম্মি নাহদিয়া লিখেছেন : ;Winking ;Winking
228619
৩১ মে ২০১৪ দুপুর ১২:১৫
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : বেড়ানোর কথা শুনলেই আমি আছি Happy
০১ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:২০
175665
জুম্মি নাহদিয়া লিখেছেন : এটা আমার ক্ষুদ্র জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেড়ানো । Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File