খতম কাহিনী
লিখেছেন লিখেছেন জুম্মি নাহদিয়া ২৭ মার্চ, ২০১৪, ০৫:২৫:১২ বিকাল
(আমি আব্বু বিষয়ক আরেকটা পোস্ট দিলাম । উনি বেঁচে থাকলে হয়ত স্বজনপ্রীতি করছি এই আশংকায় এত ঘন ঘন দিতাম না । কিন্তু চলে যাবার পর তাকে নিয়ে লিখতেই আমার বেশী শান্তি লাগে । ইচ্ছে করে তার কর্মকাণ্ড সবাইকে জানিয়ে দিতে । কি জানি , কেন এত ভাল লাগে !)
যে বয়সে সাধারণত বাংলা মাধ্যমের ছেলে মেয়েরা হুজুরের কাছে কায়দা সিপারা পড়া শুরু করে, আমি ঠিক সেই বয়সেই করলেও কোরআন খতম দেই অনেক দেরীতে । পোলাপান যখন বলাবলি করে ´আমি তিনবার দিছি , চারবার দিছি´ আমি তখন টেনেটুনে মাত্র একবার । দোষ যতটা না আমার , তার চেয়ে বেশী দোষ আমার আব্বুর আর মোকাররম হুজুরের ।
মোকাররম হুজুর একজন অন্ধ হাফেজ । শুক্র শনিবার ছাড়া প্রত্যেকদিন বিকাল বেলা বারান্দা আর জানালা দিয়ে ওনাকে ছোটশালা আক্তারের হাত ধরে আমাদের বাসার দিক আসতে দেখা যেত ।
আমাদের ভেতর পড়ালেখার প্রতি সবচেয়ে বেশী সিন্সিয়ার আমার ছোট বোন । সে হুজুর আসার দৃশ্য দেখা মাত্র ওড়না পেঁচিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে যেত । আমার যখন শয়তানের ফান্দে পড়ে খালি হাই আসে, তখন আমারই মায়ের পেটের বোন কোরআন নিজ উদ্যোগে মুখস্ত করছে । সে আবিষ্কার করেছে যে কোরআনের আয়াত মুখস্ত করা শুরু করা মাত্র ব্রেইনের লেখাপড়া সেলের ব্লকেজ খুলে যায় এবং ক্লাস টু ´র পড়া সহজে মাথায় ঢোকে ।
আমি মুখস্ত না করলেও রোজ এক আধ ঘণ্টা বানান করে করে কোরআন পড়তাম । খতমের কিঞ্চিত টেনশন তো ছিলই । বন্ধুদের অনেকেই দিয়ে ফেলেছে । বছর ঘোরার আগেই এক খতম দিয়েও হয়ত ফেলতাম । কিন্তু মাঝখান দিয়ে গোল পাকালো আব্বু , আর সেই গোল্লা ভরাট করলেন হুজুর ।
এক বিকেলে আব্বু বাসায় ছিল ... আর হুজুরও এসে কলিং বেল টিপ দিলেন । নাজমী যথারীতি ওযু করতে গিয়েছে, আর আমি ´এত তাড়াতাড়ি পাঁচটা বেজে যায় !´´ বলতে বলতে গল্পের বই বন্ধ করছি, তখন আব্বু বলে ,´´ মোকাররম ভাই ! আপনাকে তো ব্যস্ততার কারনে কাছে পাইনা , আসেন কিছু কথা বার্তা বলি । আপনার ছাত্রীদের আজকে ছুটি দিয়ে দেন ।´´
ড্রয়িং রুম পাস করে বিপুদের বাসায় যাওয়ার সময় শুনতে পেলাম মুসলিম জাতির অধপতন নিয়ে আলোচনা চলছে । বিপুদের বাসা থেকে ফেরত এসে কানে আসল স্পেন গ্রানাডা , বুয়া আসলে গেট খুলে দেয়ার সময় ছোট্ট ভূখণ্ড বাসী ইজরাইলীদের নোবেল প্রাপ্তিতে এগিয়ে থাকা , আম্মু অফিস থেকে ফেরার পরে তীতুমীর , মুন্সী মেহেরুল্লাহ ...মোটামুটি তিন ঘণ্টা কথা বার্তা চলল ।
পরের দিন থেকে একটা সিস্টেম চালু হল । এখন থেকে আমাদের রোজ এক পাতা অর্থ এবং ব্যাখ্যা সহ কুরআন পড়তে হবে , দশটা হাদীস পড়তে হবে আর পাঁচ পৃষ্ঠা ইসলামী সাহিত্য পড়তে হবে ।আব্বু রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক ঘণ্টা আরও কিছু কথা বার্তা বলল যার সারমর্ম হল , ´´কুরআন বুক শেলফের শোভা বর্ধনের জন্য আসেনাই আর না বুঝে ঠাস ঠাস খতমের জন্যেও আসেনাই । সুতরাং , কোরআনের একটা আয়াত পড়লেও এখন থেকে নিজ দায়িত্বে সেটার অর্থ পড়ে নিবা । হায় বোকা মানুষ ! তুমি জানলানা তোমার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ ! ´´
এক আয়াত পড়লেও অর্থ ব্যাখ্যা সমেত পড়েছি । একটা হলেও হাদীস পড়েছি আর এক পাতা হলেও ইসলামী সাহিত্য পড়েছি । আর দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে পারা মানুষটি শুনতেন , শুনতে চাইতেন বারবার । তিন বছর লাগিয়ে আমি প্রথম খতম দিয়েছি । অন্তত এইটুকু বলতে পারি যে , আমার নিজের জীবনের উদ্দেশ্য আমার কাছে এরপর থেকে অনেকটাই ক্লিয়ার ।
কোরআনে লিখে দেয়া আল্লাহ তায়ালার হুকুম আহকামের কতটুকুই বা ইমপ্লিমেন্ট করতে পেরেছি ! গিরায় গিরায় মন্ত্রণাদাতাকে এক্কেবারে লাথি মেরে শুইয়ে ফেলতে পারি না , পায়ে পর্যাপ্ত শক্তি নাই , সেই অজুহাত ।
ঠিক এই মুহূর্তে আমার একটা খতমের অনেক বেশী দরকার ।
একবার যদি অর্থের পাশাপাশি ইমপ্লিমেন্ট সহ খতম দিতে পারতাম !
বিষয়: বিবিধ
১৫৮০ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইমাম শাফেঈ (র) একবার ইমাম আবূ হানীফা সম্পর্কে বলে ছিলেন:
أعد ذكر نعمان فإن ذكره* مسك إذا كررته يتضوَّع
মানে হলো তোমরা আবূ হানীফার নাম বেশি বেশি স্মরণ করো, কারণ তিনি মিশকের মত, যতই নাড়াবে সুবাস বের হতে থাকবে।
তুমি বেশি বেশি লিখো।
আর কোরআনকে খুব সহজ করে বোঝার জন্য মরহুম ইসরার আহমদ সাহেবের 'বয়ানুল কোরআন আমার মতে খুবই উপযোগী, তবে ওটা উর্দূ ডিভিডিতে আছে৷ একটা ইংরাজী ভার্ষান ও নেটে পাওয়া যায় (আসওয়াত আল ইসলাম ডট নেট)(বাংলা টাইপের সময় আমি ইংরাজী টাইপ আনতে পারিনা তাই বাংলায় দিলাম) আমি ওটার সহজ বাংলা অনুবাদ ধারাবাহিক ভাবে এ ব্লগে দিয়ে যাচ্ছি৷ পড়ে দেখতে পারো৷ ভাল থাকো৷
লিখে যান। আপনার লিখার মধ্যে মল্লিক ভাই এর স্মৃতি ফিরে আসে বারবার।
আপনার লেখার স্টাইল সুন্দর। লেখালেখি চালিয়ে যাবেন প্লিজ
ভালো লাগলো || ধন্যবাদ || পিলাচ || মাইনাস || অনেক ধন্যবাদ || স্বাগতম ||
কুইক কমেন্ট তৈরি করুন
মন্তব্য করতে লগইন করুন