ভয় !!!
লিখেছেন লিখেছেন জুম্মি নাহদিয়া ০৫ মার্চ, ২০১৪, ১২:৩৭:৩০ রাত
।।১।।
টুনটুনির বয়স দেড় বছর । টিভিতে ´´ভাইয়ার কাছে আছে এমন এক গরু / চার চোর করল চুরি ভাইয়া আর গরু´´র অ্যাডটা শুরু হলেই গলু গলু করতে করতে ছুটে আসে । ওদের বাসার টিভিটা বেশ নিচু একটা ট্রলির ওপর রাখা । তাই টুনি বুড়ি স্ক্রিনের ওপর ছোট্ট ছোট্ট হাত বুলিয়ে- মাথা ঠুকে রেগে মেগে ভাইয়ার গরুর সাথে পারলে মার শুরু করে দেয় । বাসার সবাই হা হা করে আহ্লাদের হাসি হাসতে থাকে। সেদিনও পছন্দের কোন জিঙ্গেল শুনেই হয়ত ছুটে এসেছিল টিভির সামনে । অন্যদিনের মত টুপ করে ঢুকে পড়তে চেয়েছিল টিভির ভেতরে । কিন্তু ট্রলির চাকায় কি জানি কি হল ......... ট্রলি আর টিভির ভার বইতে পারলো না ।
টুনটুনি তার শেষ আর্তচিৎকারে সেদিন মাকে ডেকেছিল ।
।।২।।
-আমি কিন্তু দেড়টার ভিত্রে দোকানে বমু । ভাত ইটটু তাত্তারি রেডি কইরেন ম্যাডাম ! আমনে যে ঢিপাইন্না পার্টি , দেহা যাইব দেড়টার সময়কাও পিয়াইজ কষাইন্না শ্যাষ অইতাছেনা ।
-তুমি এত খোচাইন্না কথা কও ক্যান ? আল্লায় তোমার দিলে রহম দেয় নাই ? এত ছুড বাচ্চা লইয়া রাইন্দা দশ জনের পাতে দেই এইডাই শুক্কুর কর ।
-ক্যা ? আমার মায়ে তো তের ভাই বইন এক হাতে পালছে । কই কুন্দিন তো খাওন দিতে দেরি অয়নাই _? যত সব নখরামী দেখলাম তুমার ভিত্রেই ।
মাথায় আগুন ধরে গেছে রাহেলার । সব সময় খালি তুলনা আর তুলনা ।ভাল্লাগেনা আর কোন কিছু । বান্দির মত খাটে তবু খালি কথা আর কথা । ননদ নেল পলিশ লাগাচ্ছে আর শাশুড়ি গেছে বোনের বাড়ি । ননদের সাথে এমনিতেই বনিবনা কম আর এখন তো তার নিজের মেজাজই ফোরটি নাইন হয়ে আছে ।
মিন্টুকে খাটে বসিয়ে খাটের পাশেই পেপার পেতে শোলমাছ কুটতে বসলো রাহেলা ।
মিন্টু তখন বিছানাময় হামাগুড়ি দেয়। আর মার দেখা পেলেই ফিক ফিক করে হাসে।
হাসতে হাসতেই মিন্টু বিছানার কিনারায় চলে আসলো ।
আর একটু উপুর হলেই বুঝি মাকে ছোঁয়া যাবে ।
মাত্র কয়েক সেকেন্ড । অথচ শোল মাছের রক্ত থেকে মিন্টুর রক্ত কে আলাদা করতে পারছেনা বজ্রাহত মানুষটি ।
।।৩।।
´´তিতু মা !! তিতু মা !!!! ইত্তু আথো না ´´বলে আনিশা মিতুকে জাপটে ধরল ।
মিতুর হাতে অনেক কাজ । অনেক । সাবলেটের বাসাতে বেলা বাজে একটা । এখনও ডাল রান্না বাকি । ভাত - কুমড়ার তরকারী চুলায় । পাশের ঘরের ভাবী ওয়ার্নিং দিয়েছে । একটার ভেতর রান্না কমপ্লিট করতে হবে নাইলে বিরাট অসুবিধা হয় ওনার ।
মিতুর মেয়েটা সারা রাত একটু পর পর ওঠে ।সকালে পলাশ কাজে যাওয়ার পর মিতু ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে বাচ্চার পেছন পেছন দৌড়ায় আর ঘর ঝাড়ু দেয় , দৌড়ায় আর কাপড় কাচে ,দৌড়ায় আর বাজার সারে । আজকেও ওয়াশিং পাউডার গোলানোর সময় বালতির ভেতর হাত ঢুকিয়ে অবাক হয়ে বলেছিল ,
´´আল্লা! এত থেনা !! ´´
´´এহ হে ! দিলিতো জামাটা ভিজায় ! ঠাণ্ডা লাগায় আবার খক খক কইরা কাশিস..চুল ছিড়া ফেলব একদম! যা ওদিক যা ভাগ!´´
চ্যাংদোলা করে মেয়েকে কয়বার যে হাড়ি পাতিল আর পুতুল কর্নারে মিতুর রেখে আসা লাগে !
´´তিতু মা ! মা! আথো না !´´
উফ ! ধ্যাত্তেরি ! ছাড় তো বলে ঝটকা মেরে সরানোটা খুব একটা আলতো হলনা । আর বেলা একটার খেয়ালে মিতু ভুলেই গিয়েছিল যে একটু আগে স্টিলের র্যাকটার সামনে দরজার পাশে আর মিতুর পেছনে অল্প দূরে ফুঁটানো পানির ডেকচীটা রাখা আছে ।
১৯ দিন পর।
মিতু আই সি ইউর সামনে পাগলের মত ছোটাছুটি করছে আর যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই ধরে ধরে বলছে
´´ ও আপু ,আপুরে জানেন , আমার আনিশা আমাকে মাত্র ডাকতো তিতু আর ওর বাপকে ততাস ! ওর মিরন চাচ্চুকে মাত্র তিরন ডাকা শিখছিল ......তলা , তমলা ,তুতি দিম ভাজি , তলিজা......আমি আমার নিজের হাতে আমার কলিজাটার ছোট্ট তলিজা সিদ্ধ কইরা ফালাইছি !!!
আল্লাহ গো !!!!! আমি কি নিয়া বাঁচবো !!!!´´
ওপরের গল্পগুলো গল্প না । চরম সত্যি ।
আমার ছেলেটা টুকটুক করে হাঁটে এখন মাশাল্লাহ । চোখে মুখে অসম্ভব কৌতূহল । কোথাও একটু শব্দ হলেই হামাগুড়ি দিয়ে শব্দের উৎসের দিকে ছোটে । আমি ধরতে গেলে স্পীড বাড়িয়ে দেয় ।
খুব ভয় হয় । খুব ।
লোকে লোকারণ্য অথবা একলা । আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে বাচ্চার সর্বোচ্চ খেয়াল আমাকেই রাখতে হবে ।আমি আমার শিশুর কাঁধে ভর করে কারো হৃদয়বিদারক গল্পের বিষয়বস্তু হতে চাইনা।
আমার ছোট্ট মানিক, তুই আর তোর মত আর যারা আছে সবাইকে আল্লাহ নেক হায়াত দান করুন । অনেক নিরাপদ , আনন্দময় জীবন দিন ।আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৫ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শুধু ভিশু ভাই না,এরকম ঘটনা আমিও দেখছি।৫বছরে একটা মেয়ে মারা গেছে আমার সামনে স্যালাইন লাগানো অবস্থায়।
লেখায় +++++
আমার আড়াই বছর বয়সী একমাত্র ছেলে আবীর। এত ছটফট আর এত দুষ্টুমি করে যে বলার নয়। আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন।
https://www.facebook.com/bdcbf/posts/610698385683894
https://www.facebook.com/bdcbf/posts/610698385683894
Alhamdulillah ami time pass korini.
মন্তব্য করতে লগইন করুন