যে ভাগে গুণ হয় ...
লিখেছেন লিখেছেন জুম্মি নাহদিয়া ০৪ মার্চ, ২০১৪, ১২:০৯:১৮ রাত
পৃথিবীতে কিছু জিনিস শেয়ার ছাড়া ভাবাই যায়না ।
৯৭ তে মাহিন মামা আমাদের বাসায় এক বিকেলে কম্পিউটার নামক বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ অবদান নিয়ে হাজির ।
উত্তেজনায় ঘুমাতে পারি না !
কিন্তু লম্বা লাইন অতিক্রম করাটা ছিল দুরহ বিষয় । এরা আর দশ মিনিট , আর দশ মিনিট করতে করতে ´´প্রিন্স অব পার্সিয়া ওয়ান ´´গেম ওভার দিয়ে ´´প্রিন্স অব পার্সিয়া টু ´´তে শিফট করে ফেলতো ,আমার গ্রামের দৃশ্য আঁকার কোন মূল্যই যেন ছিলনা !
মামাদের , ভাইদের (বাটুল মুন্না সহ ) পালা শেষ করে যখন চাতক পাখি আমার আর নাজমীর পালা আসতো তখন আম্মু সারাদিন অফিসের পর হাল্কা বিনোদনের জন্য গেম খেলতে বসত । বিচ্ছু মারার গেম । কতগুলি বিচ্ছু সব খেয়ে ফেলছে আর আম্মু বন্দুক পিস্তল দিয়ে ওগুলি মারছে। ইয়াক!
স্কুল থেকে ফেরার সময় কত কি ভাবতাম ! আজকে বাসায় গিয়ে দখল নিতেই হবে । আজকের গ্রামের দৃশ্যে দোলনা আঁকবো ... বেশি কঠিন না । খালি দুইপাশে দুইটা লম্বা চারকোণা , দুইটা বাঁকা দাগ (লোকে বুঝবে ওগুলা দড়ি) আর মাঝখানে একটা আয়তক্ষেত্র ...কালার নিয়ে ভাবতে ভাবতে কলিং বেল টিপলাম ।
নাজমী বলল , ´´জুম্মাপু জানো , আমাদের আর লাইন ধরা লাগবে না । মুন্না না ফ্লপি ডিস্কের ভেতর ইটের চাকতি ঢুকায় রাখসিলো কালকে রাতের বেলা । সে জন্য কম্পিটার আর অপেন (বড় করে অ) হচ্ছেনা।´´
২০০১ এ আম্মু একান্ত আমাদের মালিকানায় একটা ব্ল্যাক পিসি কিনে আনলো । তখন আমার গান শোনার যুগ চলে । বৃষ্টি শুরু হলে ইচ্ছে করতো হেডফোন কানে নিয়ে ´´আকাশ এত মেঘলা ´´ শুনি কিন্তু নাজমী মুন্না তখন দেখা যেত,
´´ দিবিনা ক্যান , দিতে হবে । তুই সকাল বেলায় তিন ঘণ্টা চালাইছিস আমি কিছু বলিনাই , এখন আবার আসছিস , পাইছিস কি তুই , কম্পিউটার কি তোর একলার ??´´
আমি যে নিরব দর্শক সেটা কিন্তু ভুল । বিয়ের আগে তিনজনে সমান তালে মারামারি করতাম । একবারে চলে আসার আগে আমার ছিল ইন্টার্নশিপ রিপোর্ট জমাকালীন সময় , আর মুন্না ´´এজ অব মিথলজি ´´না কি ছাতা মাথা , এক্কেবারে সারাদিন !
মার শুরু হওয়ার পর টের পেলাম ও আমাকে মারছেনা । আমি এমনই রেগেছিলাম যে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলাম ,
´´আমাকে আর মারোস না ক্যান ?? বিয়ে হয়ে গেছে দেখে কি সব হিসাব পাল্টায় গেছে ???´´
এখানে আসার পরে শুরু হল আরেক ফ্যাঁকড়া ।জামাই কাজের ফাঁকে টেলিফোন রিসিভ করতে গিয়েছে আর আমি ফেসবুকে ঢুকে স্ট্যাটাস মারি । কতদিন ওর অর্ধসমাপ্ত কাজের বারোটা বাজায় দিছি ,হা হা !
টিকতে না পেরে সারপ্রাইজ গিফট দিল ল্যাপটপ । এখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ভেবেছিলাম । লন্ডনে গিয়ে দেখি সবারটা পায় আমার ল্যাপটপ নেট কানেকশন ঠিক ঠাক পায়না । ব্যস শ্বশুর আব্বার ল্যাপটপ এবার টার্গেট । ধৈর্যশীল মানুষ , একটু পেপার পড়তে ইচ্ছা করে , একটু ফেসবুক চালাতে ইচ্ছা করে কিন্তু এই ´´পচা মাইয়া ´´কে বলেন নাই ,
´´ হইছে ...অনেক্ষন চালিয়েছ, এবার দাও দেখি !´´
এই যে এখন আমি এইসমস্ত লিখছি , কি পরিমাণ সংগ্রাম করে যে লিখছি ! পুরাই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া অবস্থা । আমার ছেলের কবল থেকে ল্যপটপ দূরে রাখাটা দিন কে দিন দুষ্কর হয়ে পড়ছে !
কে বলে , বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ কেড়ে নিয়েছে আবেগ ?
বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় আমি যে স্লো ছিলেম সেই স্লোই আছি । আজও হামবুর্গের পথে প্রান্তরে ´´ঢাকায় নতুন´´ লুক নিয়ে মানুষের বসত বাড়ি দেখতে দেখতে অন্য ভুবনে হারিয়ে যাই । আদনানের´´ অই ! সিনামা পরে দেখলে হয়না ! ´ চিল্লানিতে ঘোর ভাঙে...
আবেগে কোথা থেকে কোথায় চলে যাই ... বিজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞান প্রয়োগের মুহূর্তগুলোতে আমার বরাবর আবেগের স্মৃতিই দেখি বেশি !
বিষয়: বিবিধ
১৫৭৫ বার পঠিত, ৩৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপু মন্তব্যের জবাব দিতে হলে নীল যে চিহ্ন আছে সেটাতে ক্লিক করে জবাব দিবেন তাহলে প্রতিউত্তর ঐ ব্যক্তি দেখতে পাবেন! না হলে আপনিও মন্তব্য করে যাচ্ছেন!!!
শুভ ব্লগিং আপু!
ভারী সুন্দর লেখাটা দিয়ে যে যাত্রা শুরু হোল তা যেন হয় অনন্ত
কুইক কমেন্ট তৈরি করুন
খুব সুন্দর।
আমারওতো একই দশা!
সুস্বাগতম জুম্মি মা মনিকে ব্লগে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন