৫২'র ভাষা আন্দোলন, আজকের বাংলাদেশ ও আমাদের স্বাধীনতা"/ "শুধু উদযাপন নয় একটু যে ভাবতেও হবে"
লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৬:২৪:০৫ সকাল
অত্যাচারের বিরুদ্ধে শোষিতের পক্ষে ভাষা শহীদদের যে সংগ্রাম ও আদর্শ ছিল, আমরা কি জাতি হিসেবে সেটা ধারন করতে পেরেছি? না, আমি বলছি না যে গাড়ি- বাড়ি আর চিকিৎসা সুবিধা দিয়ে তাঁদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। বরং তাঁরা আমাদের কাছে এগুলো চাননি। যদি তাই চাইতেন তাহলে ৫২ সালে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করে বরং উল্টো সুবিধা নিতে পারতেন বৈকি! বরং তাঁরা চেয়েছিলেন এই সমাজকে এমনভাবে দেখতে যেখানে ভাষা, অর্থনীতি ও সামাজিক ন্যায়নীতি এর কোন ক্ষেত্রে কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না। আমরা কি তাঁদের এই আদর্শ ধারন করবো নাকি শুধু বছরে একটি দিনে তাঁদের সমাধী ও স্মৃতিসৌধে খালি পায়ে ফুল হাতে অশ্রুসজল নয়নে নির্বাক শোক প্রকাশ করে যাবো?
আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখনই, আমরা কোনটি করবো। আর এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদেরকে সেইসব আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আরেকবার ভালো করে ভেবে দেখতে হবে।জীবন দিয়ে করা ভাষা আন্দোলন মানে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের স্বীকৃতি নয় বা এটি শুধু কোন স্লোগান নয় বরং ২১ ফেব্রুয়ারি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সামাজিক ন্যায়নীতির পক্ষে দৃড়ভাবে আপোষহীন আন্দোলনের ও সে মোতাবেক সমাজ বিনির্মাণের একটি উজ্জ্বল স্মরণিকা, আর এটিই হলো সেই মূল্যায়ন- আজ যা খুবই প্রয়োজন।
জনাব ভাষা মতিন তথা আব্দুল মতিন ( আল্লাহ উনাকে জান্নাতী করুন) টেলিভিশনে দেওয়া একটি সাক্ষাতকার খুব বারবার মনে পড়ছে। করণ তাঁরা জীবিত থাকতেই যেভাবে ইতিহাস চুরি, বিকৃতি ও ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে ও হচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই যে তাঁদের অবর্তমানে তা আরো ভয়াবহ রুপ ধারন করবে শীঘ্রই।
জনাব আব্দুল মতিন থেকে আমার নিজ কানে শুনা.........
"২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২, আওউয়ামিলীগ অফিসে বিকেল বেলা পাকিস্তান সরকারের ১৪৪ ধারা নিয়ে আলোচনা হয়। উপস্থিত ১৫ জন নেতার মধ্যে ৪ জন পরের দিনের ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে আন্দোলন করার এবং ১১ জন (যারা রাজনৈতিক দলের নেতা) ভঙ্গ না করার মৌখিক ভোটাভুটির মাধ্যমে মত দেন। সেখানে এই ৪ জনের নেতৃত্ত দেন জনাব ভাষা মতিন।দলীয় সেই ১১ জনের বিপক্ষে মত দেন জনাব আব্দুল মতিন।সিদ্ধান্ত হয় যে হ্যাঁ ভোট প্রদান কারী ৪ জনের মতটি জনাব মতিন ও ১১ জনের মধ্যে একজন লিডার পরবর্তী দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার সভায় নিজ নিজ মত ব্যক্ত করবেন, বেশীরভাগ ছাত্র-জনতা যে মতের পক্ষে রায় দেবে আমরা সেটিই করবো। সেমতে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২, ক্যাম্পাসে যেয়ে জনাব আব্দুল মতিন তাঁদের সেই ৪ জনের মতামত ঘোষণা করার সাথে উল্লসিত কণ্ঠে হ্যাঁ মতামত জয়ী হয়। আর দলীয় অফিসে সেই ১১ জনের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার যে সিদ্ধান্ত সেটি আম ছাত্র- জনতা প্রত্যাখ্যান করে্ন। শুরু হয়ে গেল তীব্র আন্দোলন আর মিছিল, সাথে সাথে ছাত্র-শিক্ষক-জনতা গর্জে উঠেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে অতঃপর পুলিশের নির্মম গুলি, আহত, লাশ,পরিশেষে বিজয়।"
অথচ খেয়াল করে দেখবেন, একটি দল সব অর্জনকে নিজেদের বলে চালিয়ে দিচ্ছে সব সময়। ৪ বনাম ১১ ভোটে সেদিন হ্যা বনাম না ভোটে যারা মতামত দিয়েছিলেন, সে মোতাবেক দলীয় বিবেচনায় নিলে আমাদের অর্জন কতটুকু হতো তা আজ সহজেই অনুমেয়।একটি দলের পক্ষ থেকে ইতিহাসের সব অর্জনকে নিজেদের বলে চালিয়ে দেবার সেই যে ব্যাধি তা আজ মারাত্মক পর্যায়ে উপনীত, জাতি আজ বিভক্ত।
১৯৭০ এর নির্বাচনে যেই দলটি সর্বাধিক ভোট পেয়ে ইউনাইটেড পাকিস্তানের নেতৃত্তের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল, ২০১৪ সালে সেই দলটিই মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে অগণতান্ত্রিকভাবে গায়ের জোড়ে ক্ষমতায়।
কোথায় ১৯৭০ এর নির্বাচন!
আর কোথায় ৫ জানুয়ারি 2014, 30 Dec 2018!
যেখানে শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধেই ছিল ৫২'র ত্যাগ ও হুঙ্কার,
যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতই ছিল আমাদের ভাষার দাবী ও স্বাধীনতা-সংগ্রামের ভিত্তি;
সেখানে, 49 বছরে কী পেল বাংলাদেশ?
এ কোন বাংলাদেশ?
এ কেমন মুক্তি?
বিষয়: বিবিধ
৮৯৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন