বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল কি আসলেই আন্তর্জাতিক ? নাকি বিরোধী মত দমনের আওয়ামী-ক্যাঙ্গারু ট্রাইব্যুনাল?
লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৪৫:৫৩ রাত
বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল কি আসলেই আন্তর্জাতিক ? নাকি বিরোধী মত দমনের আওয়ামী-ক্যাঙ্গারু ট্রাইব্যুনাল?
আজ বুধবার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল The Hague, Netherlands, বসনিয়ার সাবেক সার্ব আর্মি নেতা Ratko Mladic কে বসনিয়া যুদ্ধে ৯২-৯৫ সালে যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত করার জন্য আজীবন কারাবাসের রায় দিয়েছে।
সুত্রঃ http://edition.cnn.com/…/eu…/ratko-mladic-verdict/index.html
অথচ বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল (!) ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল আজ থেকে ২ বছর আগে ২১ নভেম্বর ২০১৫- পাকিস্তান- বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় কোন যুদ্ধাপরাধ নয় বরং রাজনৈতিক ভাবে ''ইউনাইটেড পাকিস্তান'' সমর্থন করায়- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জনাব আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদী এবং বি এন পির স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে অন্যায় ও নির্মমভাবে ফাঁসি দেয়।
এটি সেই ইন্টারন্যাশনাল (!) ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল যার তৎকালীন প্রধান বিচারপতি নাসিম স্কাইপি কেলেঙ্কারি দোষে দুষ্ট, যেখানে পত্রিকা- জার্নাল, উপন্যাস, কাব্য, নাটক - সিনেমা প্রভৃতি থেকে সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে, যেখানে সরকার পক্ষের সাক্ষীদের সেফ হোমে রেখে সাক্ষ্য রেকর্ড করে আদালতে অনুপস্থিত থেকেও গ্রহণ করা হয়েছে, যার বিচারপতি যিনি সাম্প্রতিক কালে ১১ টি অভিযোগের ভিত্তিতে ( আর্থিক দুর্নীতি সহ) সরকারের চাপে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন - এটি সেই ইন্টারন্যাশনাল (!) ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল যেখানে সন্দাহাতীতভাবে চাক্ষুস সাক্ষী দ্বারা অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় বিচারপতি এসকে সিনহা কর্তৃক এটর্নি জেনেরেলকে '' সাক্ষী- খুন করতে দেখেন নি, এমতাবস্থায় ফাঁসি কি দেয়া যায়?'' মর্মে প্রশ্ন করেও - সরকারকে খুশি করতে শেষে ফাঁসিই দিয়েছে। বিচার ব্যবস্থার সাথে এমন প্রহসন!
জামায়াতের রাজনীতিকে আদর্শিক ভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে ,দলীয় সেবা-দাস বিচারপতিদের ( স্কাইপি কেলেঙ্কারি বিচারপতি নাসিম, আর সাম্প্রতিক দুর্নীতির দায়ে অপসারিত এস কে সিনহা) ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য হাসিল করেছে। অন্যায় খুন তথা ফাঁসির মাধ্যমে।
১৯৭১ সালে " অবিভক্ত পাকিস্তানের সমর্থক" কি শুধু জামায়াতের কেউ কেউ করেছিল ? শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের বেয়াই-এর বাব রাজাকার ছিলেন, ৯৬ সালের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী জামাল্পুরের নুরুল ইসলাম রাজাকার ছিলেন, এরকম নাম বিএনপি তে আছে, ছিল বাম দলেও, মুসলিম লীগেও। তাহলে তাদের ফাঁসি হল না কেন?
এটি যদি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল হবে তাহলে মামলাগুলো ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল The Hague, Netherlands এ কেন উত্থাপন করা হয়নি?
কেন আসামী পক্ষের বিদেশী আইনজীবীদের দেশে ঢুকতে দেয়া হয়নি?
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল The Hague, Netherlands- বিচার করছে যুদ্ধে অপরাধ সংগঠনের মূল হোতা আর্মি সদস্য ও জেনেরেলদের। আর বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল (!) ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল বিচার করছে আওয়ামীলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক নেতাদের।
এটি যদি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল-ই হত তাহলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল The Hague, Netherlands ও অন্যান আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলোর সমন্বয়ে দেশ পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ৭১ সালে যুদ্ধাপরাধ সংগঠনকারী জীবিত পাক আর্মিদের বিচারের আওতায় আনা যেত, পাকিস্থান মৃত শাসক যারা এই যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল তাদেরও মরণোত্তর শাস্তির ব্যবস্থা করা যেত।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর নজীর আছে, একই দেশ যখন ভাগ হয়, সবাই একপক্ষে - এক মতে আসতে পারেনা। বহ হিসেব বহু ফ্যাক্টর কাজ করে। রাজনৈতিক অমিল হয়।
দেশ ভাগের সময় " অবিভক্ত পাকিস্তানের সমর্থক" থাকা আর মানবতা বিরোধী অপরাধ এক নয়।একটি দেশ যখন ভাগ হয় তখন সবাই একই মতের একই প্লাটফর্মে একত্রিত হওয়াটা চিন্তা করা সহজ কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছিল পাকিস্তানি আর্মি ও তৎকালীন সরকার। কিন্তু ৭১ এর পরপরই স্বাধীন দেশে সেই যুদ্ধাপরাধী নেতাদের শেখ মুজিব সাহেব সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। জামায়াত নেতারা যুদ্ধাপরাধ করেছেন এমন কোন প্রমাণ সরকার দিতে পারেনি।
সম্প্রতি স্কটল্যান্ডের ৫৫% মানুষ দেশ ভাগ না চেয়ে "নো" ভোট দিয়েছে, ৪৫% ইয়েস বলে ইংল্যান্ড থেকে আলাদা হতে চেয়েছিল। তাহলে কি "নো" ভোট প্রদানকারী সবাই রাজাকার? ঠিক একই রকম ঘটেছে উনাদের বেলায়ও। হ্যাঁ বলতে পারেন ইংল্যান্ড- স্কটল্যান্ড তো যুদ্ধও হয়নি, রেফারন্ডাম হয়েছে। হ্যাঁ, যুদ্ধ চাপিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গণহত্যা আর যুদ্ধাপরাধ করেছে। একজন সিভিল লোক হয়ে জামায়াত নেতারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করা সম্ভব নয়।
ইদানিং স্পেনের ক্যাটালোনিয়া স্বাধীনতা চেয়ে আন্দোলন করছে- এমন ক্ষুদ্র একটা সংখ্যা সেখানেও রয়েছে যারা স্বাধীনতা না চেয়ে বরং ''ইউনাইটেড স্পেনের'' সমর্থক।
এরকম নজীর দুনিয়ায় নতুন নয়। তাই বলে কি তাদের ফাঁসি দেয়া যায়?
কেন তাহলে বাংলালিংক দরে ফাঁসি? উত্তর এখানে-
২০০১ সালের আগ পর্যন্ত জামায়াত ছিলেন নিছক স্বাধীনতা বিরোধী (!), বা রাজাকার। বিএনপির সাথে জোট করার পর থেকে আওয়ামিলীগ ও বামরা ভোটে পরাজিত হয়। জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে রুপান্তরিত হয়, যা তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশকে Constitutionally এবং Institutionally ধর্মহীন তথা ইসলামহীন- হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বড় ও একমাত্র বাঁধা হল এই জামায়াতে ইসলামী। তাই জামায়াতের কণ্ঠ রোধ এবং সৎ ও আদর্শ নির্ভর ইসলামী মতাদর্শে ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত গঠন করা হয় আওয়ামি- ট্রাইব্যুনাল। আর আদর্শবান নেতাদের বানানো হয় যুদ্ধাপরাধী। আর এ কাজটি করেছে ভারতের পরামর্শে। বিনিময়ে ভারত আওয়ামিলীগকে অবৈধ উপায়ে ক্ষমতায় রাখার নিশ্চয়তা দেয়, যার প্রমাণ ৫ জানু ২০১৪, ১৫৩ আসনে বিনা নির্বাচনে ক্ষমতা পাওয়া। সেই থেকে ভারতের এমন কোন দেশবিরোধী দাবী নেই যা আওয়ামিলীগ করেনি।
এস কে সিনহাকে সিনিওরিটি ডিঙ্গিয়ে প্রধানবিচারপতি করা , তাকে ব্যবহার করে ফাঁসির রায় ঘরে আনা আবার তাকেই ছুড়ে ফেলে দেয়া- ইত্যাদির মাধ্যমে জাতি কি বুঝতে পারেনি যে এসব-ই রাজনৈতিক ফাঁসি? আদালত কি আওয়ামিলীগের প্রভাবমুক্ত?
দেশবাসি একবার ভোটের সুযোগ পেলেই তার সমুচিত জবাব দেবে ইনশা আল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১২৯১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন