''শুধুই কি উদযাপন! একটু যে হিসেবও মেলাতে হয়!''
লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ২৫ মার্চ, ২০১৬, ১০:০৬:৪৭ রাত
স্বাধীনতা যুদ্ধে আহত, শহীদ ও জীবিত সকল বীরদের প্রতি সম্মান ও সালাম জানাই।
২৬ মার্চ ১৯৭১ আমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়া হানাদারদের পৈশাচিক অমানবিক নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার সংগ্রাম। তবে শুরুটা হয়েছিল তারও অনেক আগে, ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। সে ইতিহাস আমরা সবাই জানি।
তবে স্বাধীনতা আন্দোলন প্রকাশ্যে গর্জে উঠার রুপ নেয় পূর্ব পাকিস্থানের জনমত কে কোণঠাসা তথা অবজ্ঞা করার কারণে।অর্থাৎ ১৯৭০ সালের নির্বাচন কে পাকিস্থানীরা মেনে না নেওয়া কে কেন্দ্র করে। এক কথায় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবার পরও আওয়ামিলীগের নেতৃত্বে তথা বাঙ্গালীদের কাছে পাকিস্থানীরা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার সূত্র ধরেই আন্দোলন বজ্রের রুপ নেয়। সেদিন গণদাবী মেনে নিলে জনাব শেখ মুজিবুর রহমান হতেন তৎকালীন পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী, আর সেটা হলে হয়তো ওই সময় ওই ভাবে দেশ স্বাধীন হতো কি না সেটা অনেকেই বলে থাকেন, যদিও দেশ স্বাধীন হবার লক্ষণ ও প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়েছিল বহু আগেই।
আজো একইভাবে গণদাবী উপেক্ষা করে ভোটার বিহীন ১৫৪ টি আসনে নির্বাচনহীন ৫ জানুয়ারি ২০১৪ পার করলো বাংলাদেশ। মাঝখানে কেটে গেল ৪৪/৪৫ টি বছর। জনমত তথা গণদাবী উপেক্ষা করা হচ্ছে আজো। যেখানে শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধেই ছিল স্বাধীনতার হুঙ্কার, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতই ছিল স্বাধীনতা-সংগ্রামের ভিত্তি, সেখানে আজো সেই একই অবস্থা বিরাজমান।
সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার স্বাধীনতার চেতনা
অথচ,
এখানে ব্যাংক ডাকাতি হয়
এখানে এখনও শেয়ার বাজার লুট হয়
এখানে এখনও পদ্মা সেতু খেয়ে ফেলা হয়
এখানে এখনও সোনালী ব্যাঙ্কের ৪ হাজার কোটি টাকা নাই হয়ে যায়
এখানে এখনও ডেস্টিনি কেলেঙ্কারি হয়
এখানে আজো মানুষ আগুনে ঝলসে মরে
এখানে আজো পুলিশের গুলি চলে
এখানে আজো নাগরিক গুমে
এখানে তনুরা ধর্ষিতা
এখানে আজো কারাগারগুলো ভর্তি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষে
এখানে যার আছে তারই আরো হয়
আর যার নাই, তার বেঁচে থাকার উপায় নাই
আমরা আজো দুর্নীতিতে চ্যম্পিয়ান।
৪৫ বছর আগে বঞ্চনার শীকার, স্বাধীন হওয়া একটি দেশ আজো সুশাসন, জনমতের গুরুত্ব আর উন্নয়নের মুখ দেখলো না।দাসত্বের শৃঙ্খলায় বন্দি- ই রয়ে গেল। দুই ফ্যামিলির দুইজন নেতার নাম ভাঙিয়ে আজ যারা সস্তা চেতনার রাজনীতি করছেন, তারা কামিয়েছেন অনেক- বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসা আর বিত্তের পাহাড়।তাই দুই দলের রাজনীতির তথাকথিত এই চেতনা ব্যবসায় লোকের অভাব হয়নি, হচ্ছেও না। শুধু অবহেলিত মানুষ, গ্রামীণ জনপদ, রাস্তায়- মাঠে- ময়দানে-উৎপাদনে কর্মঠ শ্রমজীবি বনি আদমের কোন পরিবর্তন হয়নি।
রাস্তা- ঘাট নেই, ভালো স্কুল নেই, পর্যাপ্ত হাসপাতাল নেই, পুরো থানায় একটি মাত্র বিকল অ্যাম্বুলেন্স, দুর্নীতি গ্রস্থ প্রতিটি জনসেবা দপ্তর, শিক্ষা- জ্ঞান- বিজ্ঞান চর্চা অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা, কৃষক ও কৃষির উন্নয়নের অভাব, নাগরিক সুবিধার ছোঁয়া মাত্র নেই, গ্রামীণ- শহুরে বৈষম্য, বেকারত্ব, রাজনৈতিক দুঃবৃত্তায়ন- এ অবস্থায় ডিজিটাল ঠকবাজির মধ্য দিয়ে চেতনার বুলি আওড়িয়ে সত্যিকারের দেশ গঠন সম্ভব নয়।কিন্তু শাসকেরা যুগের পর যুগ তাই করে যাচ্ছেন।
৪৫ বছর বয়স্ক আমাদের প্রিয় মাতৃভুমিতে-
কবে আমরা গণতন্ত্রে বিশ্ব দরবারে রেকর্ড করবো ?
কবে আমাদের রাজনীতিবিদগণ দেশপ্রেমের প্রকৃত দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন ?
কবে দুর্নীতি দূর হবে? কবে আইনের শাসন আলোর মুখ দেখবে ?
কবে মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য নিশ্চিত হবে?
কবে জ্ঞান- বিজ্ঞান, শিক্ষায়, উন্নয়নে, দারিদ্র বিমোচনে বিশ্বে রেকর্ড করবো আমরা ?
সেদিন-ই হবে প্রকৃত বিজয়।নইলে যে কোন অর্জনই অর্জন নয়।
চেতনা ব্যবসা বন্ধ হোক, সত্যিকারের মুক্তি আসুক দেশে, দেশ এগিয়ে যাক উন্নয়নে- এটাই আজকের প্রজন্মের প্রত্যাশা।
নোটঃ ৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ -১৭ জানুয়ারি ১৯৭১ , পাকিস্থানের সংবিধান রচনার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্থানের ১৬৯ টি আসনের ১৬৭ টিই পায় আওয়ামিলীগ।
উৎসঃ স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র, মুজিব নগর সরকারঃ http://www.bpedia.org/P_0289.php
বিষয়: বিবিধ
১০৪৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন