"পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতি বনাম আসল সংবাদ"

লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ০৭ নভেম্বর, ২০১৫, ০৫:৫২:৩১ সকাল



কদিন ধরে প্রথম আলো তাদের ১৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে ধারাবাহিক সংবাদ ও উদযাপনের চিত্র তুলে ধরছে। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কলামিস্ট জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদ সাহেবের নিজেকে পাঠক হিসেবে তুলে ধরে "প্রথম আলোর একজন পাঠকের পর্যবেক্ষণ" শিরোনামে প্রশংসা মূলক কলামের কিছু জায়গায় চোখ আটকে গেল। মনের ভেতরে কিছু ভাবনার উদয় হল। যদিও আগেও ভেবেছি এ নিয়ে।

১। আমার প্রশ্ন দিয়েই শুরু করি। আচ্ছা পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতি কী হওয়া উচিৎ? আমি সাংবাদিকতার ছাত্র নই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সাংবাদিকতা বিভাগের সামনের বারান্দা দিয়ে যাতায়াত করেছি বলতে পারেন। প্রতিদিন যা ঘটে এবং ঘটছে তাই যদি সংবাদ হয় তাহলে সেই সংবাদ ছাপানোর কাজই তো হওয়া উচিৎ পত্রিকার, তাই না? কিন্তু যদি পত্রিকা ও যারা এর পিছনে রয়েছেন তারা বা তাদের যদি কোন এজেন্ডা থাকে তাহলেই বোধ হয় নীতি বা পলিসির প্রশ্ন আসে তাই না? সেই এজেন্ডা যদি সৎ ও ভালো উদ্দেশ্যে হয় যা দেশ দশ ও মানুষের উপকার করবে তাহলে বোধ হয় এটি সেই সংবাদ যা মূলত স্বাভাবিক, সত্য ও সুন্দরের পক্ষে। আর যদি সেই এজেন্ডা হয় কুচক্রী মূলক, পক্ষপাত মূলক, সত্য ও সন্দরের সাথে সাংঘরসিক, কোন দল বা পক্ষ বা মতের মুখপাত্র তাহলে সেই সম্পাদকীয় নীতি বা পলিসি নিয়ে প্রশ্ন করাই যায়। এটি তখন আর সংবাদ থাকে না। তাদের সম্পাদকীয় নীতি তখন রাজনীতি হয়ে উঠে, সত্য ও সুন্দরের সুঘ্রানের বিপরীতে তা অসত্যের গন্ধযুক্ত হয়ে পড়ে। গত ১৭ টি বছর সংবাদ পরিবেশনের পরিবর্তে প্রথম আলো এই এজেন্ডা যুক্ত সম্পাদকীয় নীতির মাধ্যমে সচেতন দেশ প্রেমিক জনতার কাছে কোন একটি মত ও পক্ষের দালালী মূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের সরব উপস্থিতি-ই শুধু প্রমাণ করে গেছে।

২। জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদ সাহেব প্রশংসা মূলক কলামে লিখেছেনঃ "১৭ বছরে দেশের বহু বিশিষ্ট ও খ্যাতিমান ব্যক্তি প্রথম আলোয় উপসম্পাদকীয় নিবন্ধ ও কলাম লিখেছেন। প্রথম বছর খানেকের মতো বাদ দিলে গত ১৬ বছরে এমন একটি সপ্তাহ নেই যে সপ্তাহে প্রথম আলোয় আমার রচনা প্রকাশিত হয়নি। মাথামুণ্ডু যা-ই লিখি না কেন, গুণ নয়, সংখ্যা ও পরিমাণের দিক থেকে বিচার করলে—ছাত্রজীবনে রোল নম্বর নিচের দিকে থাকলেও—আমি প্রথম আলোয় ফার্স্টবয়।"

আমার মতে আপনি ১৭ বছরে প্রথম আলোয় ফার্স্টবয় হয়েছেন, আরো ৩৪ বছর ফার্স্ট বয় হয়েই থাকবেন কারণ আপনি তাদের ওই তথাকথিত সাম্পাদকীয় নীতি অনুযায়ী লিখেন বা আপনার লেখা তাদের সম্পাদকীয় পলিসির মধ্যে পড়ে যায়। আমি গত ৬ বছরে দুই শব্দের মন্তব্য লিখে ২ মিনিটও তা স্থায়ী হতে দেখিনি। সংবাদের পাঠক হিসেবে হয়তো আমার মন্তব্য তাদের সম্পাদকীয় পলিসির মধ্যে পড়ে না। আমিতো আপনার মত বড় মাপের লেখক নই, তবে আমিও একজন পাঠক। আমার বিবেচনা বোধ আছে। চিন্তা করতে পারি। তবে আজো চিন্তা করে পাইনা অনলাইন সংস্করণে প্রথম আলো আমার একটি মন্তব্যও ছাপে না। তবে এ কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আগামীকাল সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও সাংবাদিক নেতা জনাব শওকত মাহমুদ কী অপরাধে জেলখানায়- এ বিষয়ে সাহস করে একটা লেখা লিখে দেখেন প্রথম আলোয় আমার চেয়ে লাস্টবয়ে পরিণত হবেন আপনি।

৩। বহুদিন ধরে আমারদেশ পত্রিকার সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমান জেলখানায়। গাড়ী পোড়ানোর একটি মামলায় সম্প্রতি চার্জশীট দিয়ে তাঁকে চুড়ান্ত সাজা দেওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলেছে যালিম এই সরকার। প্রথম আলো কি আজ পর্যন্ত কেন জনাব মাহমুদুর রহমান কে আটক করেছে- এ ব্যাপারে একটি লেখাও লিখেছে? বা ছাপিয়েছে? সম্প্রতি সাংবাদিক জনাব শওকত মাহমুদ কে কেন আটক করে রাখা হয়েছে- এ ব্যাপারে সংবাদপত্র হিসিবে প্রথম টু শব্দটিও করেছে? ও হ্যাঁ, এটি তো প্রথম আলোর সম্পাদকীয় নীতির মধ্যে পড়ে না। কেন লিখবে?

৪। অস্র সন্ত্রাসী যেমন রয়েছে, তেমনি কলম সন্ত্রাসীও আছে। যদি সংবাদকে রঙ মেখে সম্পাদকীয় নীতির দোহাই দিয়ে তাদের কুচক্রী এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত থাকে তা কি কলম সন্ত্রাস হবে না? এই জায়গায় নীতিবোধ বা নৈতিকতার সাথে জড়িত। সাংবাদিক ও সংবাদপত্র যদি আন্তরিক ও নীতিবান না হয় তাহলে দেশের সুসজ্জিত আর্মি থাকা স্বত্বেও সেই দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে যেতে বাধ্য। এই বিচারে প্রথম আলোর ভুমিকা কেমন? অনেকেইতো বলে থাকেন তারা মোসাদের অনুচর।

৫। একবার আমার এলাকার এক সাংবাদিক(!) আমার আব্বার ( যিনি একটি মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন) বিরুদ্ধে একপেশে সংবাদ লিখলো যুগান্তরে। খুবই একপেশে ও মিথ্যা। রাগে ক্রোধে আব্বার এক ছাত্র সেই সাংবাদিকের কাছে নাকের উপর আঙ্গুল উচিয়ে উচ্চকণ্ঠে তাকে শাসালেন- জানেন আপনি কার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়েছেন? হাজার হাজার সৎ ছাত্র যিনি নিরলস পরিশ্রমে তৈরি করে যাচ্ছেন। এতোই যদি পারেন তাহলে পৌরসভা মেয়রের দুর্নীতি নিয়ে একটা রিপোর্ট লিখেন তো দেখি কত পারেন? সম্ভবত আমারা প্রতিবাদ দিয়েছিলাম যুগান্তরে, ছাপায়নি। মানবজমিনে পরে ছাপানো হয়েছিল। পরে সে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চায়।কিন্তু যা হবার তা তো হয়ে যায়। সে এখন নাকি আমাদের এলাকার প্রেস ক্লাবের বড় নেতা(!)।

তাহলে বোধ হয় সম্পাদকীয় নীতি বা পলিসি হতে হবে সত্যের উপর ভিত্তি করে। নৈতিকতা হবে যার মানদণ্ড। কোন এজেন্ডা নয়। তাইতো মানুষ বলে যা "কিছু ভালো তার সঙ্গে প্রথম আলো"- তাকে খারাপ করার জন্যে।

বিষয়: বিবিধ

১৩৯৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

348752
০৭ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ০৯:০৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
348761
০৭ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:১১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : প্রথম আলোর সম্পাদকিয় নিতিটাই হচ্ছে দূর্নিতি!! আজকের কাগজ এর মালিক কাজী শাহেদ আহমদ মতিউর সাহেবের চরিত্র সম্পর্কে তার আত্মজীবনিতে বিশদ লিখেছেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File