মিঃ সজীব ওয়াজেদ জয়ের লেখা প্রসঙ্গে Unmasking terrorists in Bangladesh নয়, বরং "Unmasking Tyrant in Bangladesh" ( বাংলাদেশে স্বৈরশাসকের চেহারা উন্মোচন)

লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৬:৪৭:৪৪ সন্ধ্যা

সম্প্রতি মিঃ সজীব ওয়াজেদ Unmasking terrorists in Bangladesh শিরোনামে The Washington Times এ সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কে নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখেছেন। আর্টিকেলটি ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষা- ই পড়েছি। অনেক বাংলা অনলাইন সেটা অনুবাদ করে ছাপিয়েছে। প্রথমে অবাক হয়েছি পরেই আবার নিজেকে সামলে নিয়ে মিঃ জয়ের করা আগের মন্তব্য ও লেখা মনে করে শুধু এই ধারনায় উপনীত হতে হয়েছে যে, বরাবরের মতই তাঁর এই আর্টিকেল মিথ্যা, অপরাজনীতি, আক্রোশ আর জ্ঞানপাপীর পরিচায়ক, আর পশ্চিমাদের কাছে শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকার ব্যর্থ প্রচেষ্টা, মানে আমরা অনির্বাচিত তাতে কি সন্ত্রাসবাদ দমনে(!) বাংলাদেশ তাদের সাথে আছে এই সুর মিলিয়ে নিজেদের স্বৈরতন্ত্রকে ঢেকে আমেরিকার কাছে নিজেদের সাধু সাজার ভান করা এবং আওয়ামিলীগকে ক্ষমতায় রাখা দরকার এ মর্মে দয়া ভিক্ষার নির্লজ্জ মিথ্যাচার। মূলত আমেরিকা কর্তৃক জামায়াতকে জঙ্গী সংগঠন আখ্যা দেয়া নয় বরং মিঃ জয় সাহেবের উদ্দেশ্য হল আমেরিকাকে দিয়ে বলানো যে, আওয়ামিলীগকে বাংলাদেশে ক্ষমতায় রাখা দরকার- এই ভিক্ষা প্রার্থনা করা; যা কক্ষনোই হবার নয় কেননা পশ্চিমারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ইতোমধ্যেই ত্রুটিপূর্ণ, অগ্রহণযোগ্য ও অবৈধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বহুবার। তাই আপনাদের সামনে আমার যুক্তিগুলো তুলে ধরছি এখানে ।

প্রথমতঃ মিঃ জয় শুরুতেই মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক বলে উল্লেখ করেছেন এই বলে "As a proud ally of the United States, Bangladesh is widely viewed as a secular, democratic model for all of South Asia......... " একটি ডাহা মিথ্যাচার। ৫ জানুয়ারি ২০১৪'র ভুয়া ও গাঁয়ের জোড়ে ১৫৩ আসনে নির্বাচন বিহীন এবং বিরোধী দল বিহীন হাস্যকর সংসদ , অবৈধ এবং নীতিহীন নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ কী করে একটি "democratic model" হয় তা পঞ্চম শ্রেণীর একজন ছাত্র এবং গ্রামের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিহীন একজন কৃষক ও বুঝতে পারে। এটি বুঝার জন্য Prothom Alo কিংবা Washington Times পড়ার দরকার পড়েনা। ঘাড়ের সাথে মাথা আছে এমন জ্ঞানবান প্রতিজন নাগরিক তার বাস্তব সাক্ষী। শুধু democratic Practising country নয়, বাংলাদেশ নাকি democratic model হয়ে গেছে। এসব নির্লজ্জ মিথ্যাবাদী ও জ্ঞানপাপীদের কী বলা যায়? মার্কিন কংগ্রেস, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট, ই ইউ পার্লামেন্ট সহ গণতান্ত্রিক চর্চা হয় এমন প্রতিটি দেশ ও সংস্থা বর্তমান আওয়ামি স্বৈরশাসক কে অনির্বাচিত বলে আখ্যায়িত করেছে, শুধু ভারত ছাড়া। বাংলাদেশী দৈনন্দিন পত্রিকা গুলোই উৎকৃষ্ট রেফারেন্স এ ক্ষেত্রে। সেগুলো উল্লেখ করতে গেলে এই অল্প জায়গায় ধরবেনা। প্রতিজন সচেতন দেশপ্রেমিকই তা জানেন।

দ্বিতীয়তঃ মিঃ জয়ের এই বক্তব্য দেশ প্রেমিক কোন মিডিয়ায় জায়গা হবে না। কারণ দেশে তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যাত এবং ষড়যন্ত্রমূলক হিসেবেই খ্যাত। এর আগেও তিনি আমেরিকান পত্রিকায় লিখেছিলেন বাংলাদেশ আর্মির একটা বিরাট অংশ নাকি মাদ্রাসা পড়ুয়া এবং তার গবেষণা(!) মোতাবেক দেশে নাকি ৫০০% বোরখা বিক্রির হার বেড়ে গেছে- তাই মাদ্রাসা বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও তার অপ্রাসঙ্গিক ও বেসামাল ও মিথ্যাচার সম্পর্কে সচেতন মানুষ মাত্রই অবগত। সুতরাং আমাদের বক্তব্য বিদেশী মিডিয়ায় স্থান পাক বা না পাক, আমাদের প্রধান শক্তি ও সঙ্গ হলো সচেতন ও দেশপ্রেমিক জনতা, যারা জুলুম ও অন্যায়ের দীর্ঘ মেয়াদী ষড়যন্ত্র রুখে দেবে ইনশাআল্লাহ। তাই সঙ্গত কারণেই মিঃ জয়দের দেশ বিরোধী সকল মিথ্যাচারের মাধ্যমে বিদেশী প্রভুদের সাময়িক খুশী করাতে আমরা মোটেও চিন্তিত নই, ইনশাআল্লাহ।

তৃতীয়তঃ ৭ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মজিবুর রহমান ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি গোলাম পরওয়ারসহ ১৩ নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হারুণ-অর রশিদ নামে এক জামায়াত নেতার পল্লবীর ১০ নম্বর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে, গ্রেপ্তারের সময় সেখানে কোন বোমা ছিল না, অথচ পরে গোপালী পুলিশ বোমা নাটক সাজিয়ে মিডিয়ার সামনে হাজির করে। বোমা বানানো বা নিক্ষেপের পরিকল্পনার সময় একটি দলের নায়েবে আমির বা সহসভাপতি উপস্থিত থাকবেন- এটা কি কোন পাগলেও বিশ্বাস করবে? এর আগেও আমরা খবরে দেখেছি রোজার সময় ইফতারের আগে কোরআন হাদীস ও ইসলামিক বই সহ হিজাবী মেয়েদের ধরে জিহাদী বই আখ্যা দেওয়া হয়েছে। জিহাদ, বোমা আর জঙ্গী নাটক আওয়ামিলীগের বহু পুরনো অভ্যাস। মিঃ জয় লিখেছেন "Police in Bangladesh’s capital of Dhaka recently raided a second-floor apartment and discovered 20 crudely assembled explosive devices, 25 bamboo bludgeons and extremist literature linked to Jamaat-e-Islami."

তাহলে কি ৭ তারিখের বোমা নাটক আর মিঃ জয় সাহেবের আমেরিকান পত্রিকায় জামায়াতের জঙ্গিবাদ বিষয়ক আর্টিকেল একই সূত্রে গাঁথা? কারণ এর আগেও তিনি একইভাবে আর্মি, বোরখা ও মাদ্রাসা নিয়ে আর্টিকেল লিখেছিলেন।

চতুর্থতঃ জামায়াত বাংলাদেশের সকল স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে মানুষের মতামতের ভিত্তিতে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠন করতে চায়। এ লক্ষ্যে তাঁদের গণমুখী কর্মসূচি দিনের আলোর ন্যায় পরিষ্কার এবং সে লক্ষ্যে তাঁরা সেই ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যবধি স্বধৈর্য কর্মপন্থায় ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। জামায়াত কোন গোপন সংগঠন নয়। সমকালীন আইএসআইএস বা জেএমবি মুলক কোন কর্মকান্ড তাঁদের দ্বারা দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। তাহলে কীসের ভিত্তিতে মিঃ জয়েরা জামায়াত কে সন্ত্রাসবাদের সাথে একই সরলীকরণে ব্যস্ত? উত্তর একদম সোজা, আওয়ামিলীগ বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রাখতে চায় না। আর তাই ইংরেজী প্রবাদের মত " To kill a Dog give a Bad name".

পঞ্চমতঃ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমেরিকা ও ব্রিটেন কর্তৃক " সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ" একটি রাজনৈতিক ফ্যাসনে পরিণত হয়েছে। মানে আপনার অসংখ্য দোষ থাকলেও যদি খালি আপনি সেই সুরে সুর মেলাতে পারেন! মিঃ জয় সাহেব ও তার অবৈধ স্বৈরাচার সরকার কি সেই ফ্যাসনের মডেল হবার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় লিপ্ত? এই আর্টিকেল কি তার পূর্বাভাষ? শুনে রাখুন মিঃ! আপনাদের মুখে গন্ধ আর অন্তরে ক্যান্সার নিয়ে দামী কোট আর চুলে দামী জেল লাগিয়ে সেই ফ্যসনে যতই লম্ফ জম্ফ করুন না কেন- আমেরিকা ও ব্রিটেন কিন্তু মধ্যবর্তী ও স্বচ্ছ সেই নির্বাচনের দাবী তুলতেই থাকবে। সুতরাং অযথা কিছু ঘাম ঝড়াবেন কেন? বরং গরীব মানুষের টাকায় বিলাসী প্রাসাদে আর কয়দিন না হয় মত্ত থাকলেন। অসব করে কোন লাভ হবে না ইনশা আল্লাহ। নীরিহ সকল প্রজা এক হলে দুর্দান্ত প্রতাপশালী শাসক পেছনের দরজা দিয়ে পালায়- পালিয়েছে, আপনার মুরুব্বীদের জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে পারেন।

ষষ্ঠতঃ মিঃ জয় কিছুদিন আগে ৪ জন ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগার খুন হওয়াকে জামায়াতের সাথে সম্পর্কিত করেছেন তার লেখায়। হ্যাঁ মিঃ, ভালো পয়েন্ট মনে করিয়ে দিলেন। খুন হওয়া ৪ জন ব্লগার মৃত্যুর সাথে দেশের কোন মিডিয়া পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা আজ পর্যন্ত জামায়াত সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে? না পায়নি। বরং বিশেষজ্ঞ মহল বার বার প্রশ্ন তুলেছেন সরকারের এ ব্যাপারে নির্লিপ্ততা নিয়ে। কেন আজো সরকার পারলোনা একটি ঘটনারও সুরাহা করতে? বাংলা একাডেমীর কাছে পুলিশের সামনে অসংখ্য মানুষের সামনে ব্লগার খুন হয় যা জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাহলে কি সরকার এটাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে ব্যাবহার করতে চায়? সরকার কি তাহলে এমন পরিস্থিতি তৈরি করে যাতে সহজেই সস্তা ব্লেম দেওয়া যায় বিরোধীদের উপর? মিঃ, আপনার লেখার খোরাক কি তাহলে ওখান থেকেই উদয় হয়?

সপ্তমতঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন কমিশনে আইন মোতাবেক নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল। সারা দেশব্যাপী তাঁদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেশবাসির সামনে পরিষ্কার। সারা দুনিয়া ব্যাপী বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষের সাথে সরকারি দল রাজনৈতিক সুলভ আচরণ করে থাকে। শুধু বাংলাদেশে আওয়ামিলীগ তাদের বিরোধীদের সাথে রাজনৈতিক মোকাবেলা না করে তাদের বিদেশী প্রভুদের কাছে প্রপাগান্ডা ছড়ায়- দেশ নাকি ভরে গেছে জঙ্গী সংগঠনে। আওয়ামিলীগ বিরোধী দলে থাকলেও জঙ্গী জঙ্গী শ্লোগান তুলে, আবার সরকারে ( যদিও অবৈধ) থেকেও জঙ্গী জঙ্গী আওউয়াজে বিদেশীদের কান ভাড়ি করে। মিঃ জয়ের এই লেখা তারই ধারাবাহিকতা মাত্র, সচেতন দেশবাসি সামান্য স্মৃতিচারণেই তা মনে করতে সক্ষম হবেন। প্রকৃত কথা হচ্ছে বাংলাদেশীদের কাছে আওয়ামিলীগ কে নিয়ে একটি বিপদ হয়ে দাড়িয়েছে- এই দলটিকে বিরোধী দলে রাখলেও দেশের জন্য সমস্যা, আবার সরকারে রাখলেও সমস্যা। আর চালাক আওয়ামিলীগ তা টের পেয়ে এবার আর জনগণের দ্বারস্থ হয়নি। আসন ভাগাভাগি করে বন্দুকের জোড়ে গদিতে আসীন। তারাও জানেন যে কতদিন আর এভাবে? তাই মিঃ জয় কে দিয়ে পশ্চিমাদের কাছে জঙ্গী জঙ্গী গন্ধ তুলে শক্ত সমর্থন আদায়ের বৃথা চেষ্টা আর কি।

অষ্টমঃ মিঃ জয় জামায়াতকে আল কায়েদার সাথে সম্পৃক্ত করতে চেয়েছেন তার লেখায়। তাহলে কী আল কায়েদা বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল? রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন তো ওবামা প্রশাসন করে না করে বাংলাদেশ সরকার। তাহলে মিঃ জয় কেন আমেরিকায়? বন্ধ করে দিন জামায়াতের নিবন্ধন। না, তা আপনারা করবেন না, করতে পারবেন না। তাহলে কি ওবামা প্রশাসনকে তিনি অন্য কিছু বলতে চান?

নবমঃ মিঃ জয় লিখেছেন ".........As a result, the United States should not hesitate to call Jamaat-e-Islami what it is — a foreign terrorist organization." বাহ কী দারুণ উপসংহার, কী দারুণ উপদেশ মার্কিন প্রশাসনের প্রতি! মার্কিনীদের দ্বারা ঘোষিত এই সার্টিফিকেট যে আজ রাজনৈতিক দেউলিয়া হয়ে যাওয়া আওয়ামী বাকশালের বড়ই প্রয়োজন। রাজনৈতিকভাবে পরাজিত আওয়ামিলীগের কাছে এর চেয়ে আর কী বা আশা করা যায়। কেননা ফাঁসি, জেল- জুলুম আর বন্দুকের মুখেও যে জামায়াত কে রুখা সম্ভব হচ্ছে না।

দশমঃ মূলত আমেরিকা কর্তৃক জামায়াতকে জঙ্গী সংগঠন আখ্যা দেয়া নয় বরং মিঃ জয় সাহেব কর্তৃক আমেরিকার কাছে আওয়ামিলীগকে বাংলাদেশে ক্ষমতায় রাখার ভিক্ষা প্রার্থনা করা; যা কক্ষনোই হবার নয় কেননা পশ্চিমারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ইতোমধ্যেই ত্রুটিপূর্ণ, অগ্রহণযোগ্য ও অবৈধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বহুবার। দেশের মানুষের কাছে জামায়াতের রাজনীতি ও গ্রহণযোগ্যতার বিপরীতে আওয়ামিলীগের ভীত সন্ত্রস্ত হবার বহিঃপ্রকাশ-ই হলো মিঃ জয়ের লেখা এই আর্টিকেল।

http://www.washingtontimes.com/news/2015/sep/15/sajeeb-wazed-unmasking-terrorists-in-bangladesh/

বিষয়: বিবিধ

১২৭৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

342909
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৫:০৭
প্রক্সিমা লিখেছেন : ভালো লাগলো ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File