শিবিরের ক্রান্তিকালঃ১৯৮২ সালের কথকতা/ পরিপ্রেক্ষিত ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৫:১১:৫৫ বিকাল
জনাব ফরীদ আহমদ রেজা ভাইয়ের "শিবিরের ক্রান্তিকালঃ১৯৮২ সালের কথকতা" লেখা গুলো (৭ পর্বের) এক সাথে এক বসায় গতকাল পড়লাম। আমার জন্ম ১৯৮২ সালের পর। সঙ্গত কারণেই আমার পক্ষে ওই সময়ে ঠিক কী ঘটেছিল তার চাক্ষুস চিত্র বা বর্ণনা জানা আমার পক্ষে অসম্ভব। তাঁর লেখার আলোকে যদি পক্ষ- বিপক্ষ দাঁড় করিয়ে নিজেকে কোন এক পক্ষের ধরে নিয়ে অপর পক্ষকে শুধুমাত্র এই লেখার আলোকে দোষী সাব্যস্ত করি তাহলেও বোধ হয় আমার চেয়ে বয়সে ও অভিজ্ঞতায় অনেক সিনিয়রদের প্রতি অবিচার করা হতে পারে, (আবারো বলছি শুধুমাত্র এই লেখার উপর ভিত্তি করে)। কেননা, ১৯৮২ সাল নিয়ে এই প্রথম এ রকম কোন লেখা পড়লাম।যদিও শুনেছি অনেক। রেজা ভাইয়ের ধারাবাহিক লেখার উপর অনেকেই মন্তব্য করেছেন, অনেক মন্তব্য পড়েছি। এর বাইরে ধারাবাহিক এবং প্রতি উত্তর বা প্রশ্ন মুলক আরেক জন ভাইয়ের "১৯৮২ ও ২০০৯; ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার একটি সমীকরণ (প্রথম পর্ব )" শিরোনামের লেখাও মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। এটি লিখেছেন এবং লিখছেন জনাব মাহবুব সালিহী ভাই।
আগেই বলেছি যে আমার জন্ম ১৯৮২ সালের পরে। আমার এই লেখা বা মন্তব্য উপরোক্ত দুই লেখার পরিপ্রেক্ষিত। মোটেও ১৯৮২'র মূল্যায়ন নয়। ওই লেখা গুলো পড়ার আগে আমি ১৯৮২ সাল সম্পর্কে কী ধারনা পোষণ করতাম বা কতটুকু জানতাম বা আমার মূল্যায়ন কী ছিল- তার একটুও আমি এখানে তুলে ধরছিনা।
প্রথমত সম্বোধন সম্পর্কেঃ শ্রদ্ধেয় জনাব ফরীদ আহমদ রেজা ভাই তাঁর নিজস্ব মতামত তুলে ধরেছেন একটি ব্লগে। যার নাম হচ্ছে Islamic Movement Bangladesh blog (IBBD Blog)। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি এবং ইসলামি ছাত্রশিবির কে নিয়েই মূলত যেখানে লেখালেখি করা হয়। যতদূর আমি বুঝতে পেরেছি। এখানে সমালোচনা মুলক লেখা থাকলেও আমার দৃষ্টিতে সমালোচনাকারী আপাত দৃষ্টিতে জামায়াতে ইসলামি এবং ইসলামি ছাত্রশিবিরের কল্যাণ কামনার জন্য এবং আরো এগিয়ে নেয়ার জন্য করে থাকেন। যদিও উপস্থাপনা এবং বিষয় বস্তুর সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন। এক কথায় সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন বা আছেন লেখকরাই এখানে পোস্ট করে থাকেন। রেজা ভাই লিখেছেন এই ব্লগে, এটি কোন পত্রিকা বা ম্যাগাজিন নয়। পত্রিকায় লিখলে সাধারণত ছোট বড় সবার ক্ষেত্রেই নাম ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ যাদেরকে নিয়ে লেখা হচ্ছে। সম্ভবত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা বিচারপতিদের নামের আগে আলাদা সম্মান সূচক সম্বোধন দেখা যায়। অন্য সবার ক্ষেত্রে শুধু নাম উল্লেখ করা হয়, যদিও তিনি সিনিয়র হোন না কেন। সম্মানীত রেজা ভাই পত্রিকায় লিখেন নি। অথচ তিনি তাঁর চেয়ে সিনিয়র ভাইদের নামের আগে সম্মানীত, শ্রদ্ধেয়, জনাব, মুহতারাম, সাহেব, সাব কিংবা ভাই প্রভৃতি ছাড়াই সম্বোধন করেছেন। তাঁর সময়ের বা বয়সে ছোট অনেকের ক্ষেত্রে হয়তো তিনি এমন টা করতে পারেন। সংগঠন করেন এমন লেখকদের ব্লগে সংগঠন সম্পর্কে ও এর দায়িত্বশীলদের সম্বোধনের ক্ষেত্রে এতটুকু সৌজন্যতা দেখাবেন- এটা সবাই প্রত্যাশা করেন। তাঁদের নাম সম্বোধনে যদি অসম্মান ও অসৌজন্যতা দেখানো হয় তাহলে বক্তব্য ও লেখায় যুক্তি থাকলেও কিন্তু তার গ্রহণযোগ্যতা ও সার্বজনীনতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। বক্তব্য উপস্থাপনের আগেই তাঁর লেখায় এক ধরনের রাগ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যেমন "আমি সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের সাথে পরামর্শ করতে চেয়েছি ......", " বিরতির সময় আবার আলী আহসান মুজাহিদ আমাকে ডাকলেন......", " ‘আমি শাহজাহান চৌধুরীর চিঠি পেয়ে মতিউর রহমান নিজামীর সাথে আলাপ করেছি......" ইত্যাদি। এই অসৌজন্যতা বোধের কিন্তু একটি প্রভাব আছে লেখার গ্রহণ যোগ্যতার ব্যাপারে। অপরদিকে একই ভাবে অনেক ভাই বিভিন্নভাবে হেয় মুলক মন্তব্য, সম্বোধন এবং গালিগালাজের পর্যায়ে পড়ে- এমন ভাবে সম্মানীত রেজা ভাইকে আক্রমন করে যাচ্ছেন, যেটিও গ্রহণযোগ্য নয়। যুক্তি, পাল্টা যুক্তি, বিতর্ক হতে হবে সুন্দর পন্থায়। তাঁর সন্তানের চেয়ে বয়সে ছোট অনেকেই যে ভাষায় আক্রমন করছেন! অথচ দুই পক্ষই আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করছেন।
দ্বিতীয়ত লেখার সমকাল সম্পর্কেঃ জনাব রেজা ভাই লিখেছেন, "প্রশ্ন উঠতে পারে, এতোদিন পর এ সকল পুরানো কথা আলোচনার কী কোন প্রয়োজন আছে? আমার মতে অন্য কোন প্রয়োজন না থাকলেও ইতিহাসের একটা দায় আছে। সে দায় মুক্তির খাতিরেই এর অবতারনা।" হ্যাঁ, সেটা তিনি মনে করতেই পারেন। তবে শ্রদ্ধেয় প্রফেসর গোলাম আযম ও শ্রদ্ধেয় মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের সাথে সম্পর্কিত যে ঘটনা গুলো তিনি তুলে ধরেছেন- টা তাঁদের জীবদ্দশায় তুলে ধরা দরকার ছিল। কারণ তাঁদের ব্যাপারে তিনি এমন কথা বলেছেন যা সংগঠিত হয়েছিল রেজা ভাই ও তাঁদের দুইজনের মধ্যে একান্তে গোপনে। অনেক বৈঠক হয়েছে যেখানে তৃতীয় কোন ব্যক্তি ছিলেন না। তাহলে তাঁর লেখার আলোকে যদি ধরে নেই তিনি সত্য বলেছেন তাহলে তাঁদের ব্যাপারে কোন বক্তব্য পাওয়া যাবে না, কারণ তারা বেঁচে নেই। কেন তাহলে রেজা ভাই তাঁরা বেঁচে থাকতে এই ইতিহাস লিখেন নি। যেখানে তাঁর বক্তব্যের সত্যতা জাচাই করা সম্ভব নয়। যদি প্রশ্ন আসে তাঁরা আপনাকে এভাবে বলেন নি, তাহলে রেজা ভাই সেটা কীভাবে প্রমাণ করবেন? রেজা ভাই এও লিখেছেন- " “১৯৮২ সালের কথকতা” নিয়ে আমার সাম্প্রতিক লেখা নিয়ে অনেকে মন্তব্য করছেন। আমার লেখা সবার পছন্দ হবে না এটা আমার জানা। ফেইসবুকে অনেকে মন্তব্য লেখে আমাকে ট্যাগ করছেন। কেউ কেউ সমালোচনা করে ইন-বক্সে মেসেজ দিচ্ছেন। আপনাদের সকলের অবগতির জন্যে জানাচ্ছি, এই লেখা কারো সমালোচনা নয় বরং এটা আমার আত্মকথার অংশ। আমার আত্মকথা কখন প্রকাশ করবো, সেখানে কী থাকবে বা থাকবেনা তা আমার নিজস্ব ব্যাপার।" এখন আমার কথা হলো- সম্মানীত ফরীদ আহমদ রেজা ভাই শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল। তাঁর কথায় প্রতিক্রিয়া হবে না বা গুরুত্ব পাবে না এমনটি আশা করা ভুল।তিনি জানেন জামায়াত- শিবিরে এটা নিয়ে আলোচনা হবে। যদি তিনি কে কী বলল যায় আসে না- এমন মনোভাব দেখিয়ে থাকেন তাহলে - তাকে সমর্থনকারীদের তিনি সাধুবাদ দিচ্ছেন আর যারা একমত হচ্ছেন না তাঁদের ব্যাপারে ভিন্ন ধারনা পোষণ করছেন কেন? তাহলে তাঁর বক্তব্য সঠিক হয়ে থাকলেও যাদেরকে জড়িয়ে তিনি লিখেছেন আমরা সঠিক তথ্য পেটে তাঁদের বক্তব্য পাচ্ছি না, কারণ তাঁরা বেঁচে নেই। সুতরাং এই সময়ে কেন লেখা হল, এমন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। আর প্রশ্ন এলে পুরো বিষয়টিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, কারণ অনেক বিষয় অধ্যাপক গোলাম আযম স্যারের সাথে জড়িত।
তৃতীয়ত যুব শিবির সম্পর্কেঃ তিনি তাঁর লেখায় যুব শিবির নিয়ে লিখেছেন খুবই সামান্য। অল্প টাচ করেছেন। যুব শিবির গঠনের ফলে জামায়াতে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তা লিখেছেন খুব সামান্যই। অথচ যুব শিবির গঠন সক্রান্ত লেখা পুরো লেখার মিনিমাম ৫০% থাকা জরুরী ছিল তৎকালীন পরিস্থিতি ব্যাখ্যা ও পরিষ্কার করার জন্য। তাহলে কী তিনি এখানে কিছু লুকাচ্ছেন? অথচ এ বিষয়ে লেখা আছে ১০% এর কম। অথচ যুব শিবির গঠনে তাঁর ভুমিকা, শিবিরের পরিষদের অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে তিনি কিছুই উল্লেখ করেন নি। ৭ পর্বের ৪ নং পর্ব থেকে তাঁর লেখা অনুযায়ী আধ্যাপক গোলাম আযম স্যার তকে প্রশ্ন করেছিলেন- " আচ্ছা বলতো, তোমরা যুব সংগঠন কেন করতে চাও?" এই বলে অতি সামান্যভাবে উল্লেখ করেছেন- জামাতের প্রতিক্রিয়া হিসেবে। বিস্তারিত বলেন নি। ৫ম পর্বে আছে, কিন্তু খুব সামান্য ও অপর্যাপ্ত ।
চতুর্থত শ্রদ্ধেয় মাহবুব সালিহী ভাইয়ের লেখা সম্পর্কেঃ সম্মানীত সালিহী ভাই লিখেছেন " আমি আমার সাংগঠনিক জিবনে কোনদিনও (১৯৯৫-২০০৯ October)ফরিদ আহমেদ রেজা ভাইয়ের নাম শুনিনি, এমনকি ৮২ সাল নিয়ে কাউকে কথা বলতে দেখেনি।সুতরাং আমি সহ আমাদের জেনারেশন এর কাছে ১৯৮২ নিয়ে কোনও বিতর্ক একেবারেই মূলহীন। কিন্তু এর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নিয়ে কিছু মতামত থাকাটা খুবই স্বাভাবিক।"
আসলে ছাত্রশিবিরে সেক্রেটারি থেকে সভাপতি হয়েছেন এমন সংখ্যাই বেশী। আমার জানা মতে জনাব ফরীদ আহমদ রেজা ভাই, ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম ভাই এবং জনাব শিশির মুহাম্মদ মনির ভাই ছাড়া। বাকী ভাইদের পরিচিতি সাবেক সেক্রেটারির চেয়ে সাবেক সভাপতিই মুখ্য। এই জন্যই হয়তো সাবেক সেক্রেটারির নাম ওভাবে উল্লেখিত নয়।
বিষয়: বিবিধ
১১৫২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পড়লাম, দোয়া করি..
মিলন অপরাধী ছিল।
:\
আমি জামায়াতে ইসলামীকে আর দোষ দেই না।জামায়াত ৪২ বছর আগে যা বুঝেছিল আমরা ৪২ বছর পর তা বুঝেছি।দেশের অবস্থা এমন হবে জানলে মুক্তিযুদ্ধ করতাম না --- বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম।
তবে এটি না বললেও অবিচার করা হবে যে, ১৯৮২ আর ২০১০ এক কথা নয়।
‘’১৯৮২ সালের কথকতা’’ লিখনিতে অনেক ইতিহাস লিখা হলেও কয়েকটা বিষয় অনুল্লিখিত থেকেছে বিশেষ করে কোন কোন অভিযোগে সদস্যগণ "অনাস্থাপত্র" দিয়েছিলেন। এই প্রশ্নের আলোকে সংগঠনের ভেতরে বিশৃংখলা করে যুবশিবির গঠনের মাধ্যমে আর একটা shadow শিবির বানিয়ে তাঁরা ছিটকে পড়েছিলেন।
আর ২০১০ সালে অধিকাংশ কার্যকরী পরিষদের ( সম্ভবত ২৭ জন, ৪২ জনের মধ্যে) সদস্যবৃন্দ অনাস্থা দেওয়ার পরও সেই অনাস্থাকৃত নেতৃবৃন্দ ছিটকে পড়েননি, বরং অধিকাংশই ( পরিষদ মেম্বার) ছিটকে পড়েছেন।এটি অনুধাবনে ভুল করলে ভবিষ্যতে আরো ভুল হবার সমুহ আশঙ্কা রয়েছে। ২০১০ এর ঘটনায় আমরা প্রত্যেকে কষ্ট পেয়েছি। অনেককে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখেছি। চাপা কষ্ট বুকে চেপে ধরেছেন অনেকেই, আর অনেকেই মাফ করেছেন, মাফ চেয়েছেন। কারণ সময়টা প্রতিকূল।
"১৯৮২ বা ২০১০ এর ঘটনা বার বার আলোচনা ইতিহাসের দ্বায়বদ্ধতা হতে পারেনা" কথাটি সত্য নয়।কারন Natural Laws and Processes এর একটা principle আছে যাকে বলা হয় Uniformitarianism আর সেটা হল ‘‘The present is the key to the past’’ সুতরাং বলা যায় ১৯৮২ এর পরে ২০১০ ঘটলো কী করে আর এই শেষ বারে জামায়াত আগের বারের মত সুবিচার করেনি।
ফলে অনেক কূড়ি অংকুরেই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, অসংখ্য গোলাপের সৌন্দর্য ও সুঘ্রাণ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, অথচ কথা ছিল মালীর সযত্ন দায়িত্ব পালনের; তারপরও বোধ হয় বলা ঠিক নয় যে ইতিহাসের দ্বায়বদ্ধতা নেই।
আজকের কর্মী যেহেতু আগামীর কান্ডারী আর আমরা বিশ্বাস করি তাঁদের রয়েছে সঠিক বোধশক্তি আর পরিবেশ- পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের সক্ষমতা, সুতরাং সেটাই আমাদের আগত দিনে সোনালী সম্ভাবনা ও প্রত্যাশা, ইনশাআল্লাহ।
যারা ব্যাক্তিগত কারণে করে তারা তাদের নিজেকে নিয়েই ব্যাস্ত থাকে। রেজা সাহেবের ব্যাপারটা পরিস্কার। তার সবকিছুই ব্যাক্তিগত কারণ।
আমি কোনো দলের সাথেই জড়িত না, নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকেই এটা মনে হল।
মন্তব্য করতে লগইন করুন