কী ঘটেছিল ১৫ আগস্ট ১৯৬৯?
লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ১৫ আগস্ট, ২০১৫, ০৪:৪২:০৪ বিকাল
১৯৬৯ সালের ২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সেমিনারে সেক্যুলার শিক্ষাব্যাবস্থা প্রণয়নের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ও ইসলামী শিক্ষাব্যাবস্থা চালুর গুরুত্ব নিয়ে যে অকাট্য যুক্তি উপস্থাপন করা হয় তা কি আজ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে? উত্তর অবশ্যই "না"; তাহলে সেরকম যুক্তি ও দাবী আজ আমরা আর দেখি না কেন? আর সেই মেধাবী, দৃঢ় প্রত্যয়ী ও সাদা-সিদে নেতৃত্ব কোথায়? এই রকম দাবী, এই রকম জায়গা থেকে উত্থাপনের প্রয়োজনীয়তা কি শেষ হয়ে গেছে?
অন্যদের বলার আগে যে আমাদের নিজেদেরও ঠিক হতে হবে। পল্টন বা সাময়িক রাজপথ কাঁপানো শ্লোগানের চেয়ে আমাদের সেই রকম সরব, গঠনমূলক ও স্ব া র্থক প্রতিবাদ আসতে হবে সঠিক জায়গা থেকে। আমরা কি সে লক্ষ্যে অনেকাংশে ব্যর্থ নই? শহীদ আব্দুল মালেকের উত্তরসুরী যারা একইভাবে আজো সেই জায়গা থেকে জোড়ালো উপস্থাপন ও প্রতিবাদ করবেন বা করতে পারতেন আমরা কি তাঁদের প্রতি খেয়াল করেছি? আমরা কি তাঁদের কে সেই কাজটি করতে সহযোগিতা করেছি? আমরা কি তাঁদেরকে সরিয়ে দেইনি? আমরা কি রাজপথের সাময়িক শ্লোগান ও বক্তব্যকেই বেশী গুরুত্ব দিচ্ছিনা? আজ যে তা ভাবার সময় এসেছে। নইলে যে সময় ও সঠিক কাজের মূল্যায়ন না করতে পেরে আমরা দায়ী থেকে যাবো!
যা ঘটেছিল ১৫ আগস্ট, ১৯৬৯।
সেক্যুলার শিক্ষাব্যাবস্থা প্রণয়নের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ও ইসলামী শিক্ষাব্যাবস্থা চালুর গুরুত্ব নিয়ে অকাট্য যুক্তি উপস্থাপনের কারণে ১৯৬৯ সালের এই দিনে শাহাদাত বরণ করেছিলেন এদেশের ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম সিপাহসালার, আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীর জন্য একটি প্রেরণার নাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োক্যামিস্ট্রি বিভাগের মেধাবী ছাত্র - শহীদ আব্দুল মালেক ।
শিক্ষা ব্যবস্থার আদর্শিক ভিত্তি কি হবে এই বিষয়ের উপর ১৯৬৯ সালের ২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক জনমত জরিপ বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমেই বক্তৃতা রাখেন বাম সংঘঠনের নেতারা। পরে মেধাবী ছাত্র - শহীদ আব্দুল মালেক ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার উপর পাঁচ মিনিটের একটি অসাধারণ যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার সুবিধা আর সমাজতন্ত্রসহ ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থার কুফল সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য উপস্থাপন করেন তিনি। এই বক্তৃতায় উপস্থিত সকলেই সমর্থন জানালেও বাম নেতাদের ইসলাম বিরোধী শিক্ষা ব্যবস্থার উপর আঘাত হানার কারণে তারা সমর্থন তো জানায়নি বরং তাদের আক্রোশ গিয়ে পড়ে আব্দুল মালেকের উপর।
তাই পরিকল্পিতভাবেই তারা ১২ই আগস্ট ডাকসুর উদ্যোগে টিএসসি মিলনায়তনে সভা ডাকে, সেখানে আব্দুল মালেক সহ কয়েকজনকে বক্তৃতার সুযোগ দেয়া হয়নি, একজন বাম ছাত্র নেতা ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার উপর কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য শুরু করলে উপস্থিত সকল ছাত্র জনতা উত্তেজিত হয়ে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে স্লোগান দিতে শুরু করে, এসময় শহীদ আব্দুল মালেক সহ আরো কয়েকজন মিলে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এরপরে ছাত্রদেরকে হলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। হলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন শহীদ আব্দুল মালেক ও তাঁর দুই জন সাথী। সেই সময় ধর্মনিরপেক্ষবাদী , বাম নেতারা তাদের আক্রোশ মিটাতে তাকে ধরে নিয়ে যায় রেসকোর্স ময়দানে ,সেখানে নিয়ে তাঁর মাথার নিচে ইট রেখে মাথার উপর ইট, হকিস্টিক ও রড দিয়ে আঘাত করতে করতে থেঁতলে দেয় শহীদ আব্দুল মালেকের মাথা। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। পরে ১৫ই আগস্ট তিনি শাহাদাৎ বরণ করেন।
আজও
শহীদ আব্দুল মালেকের উত্তরসূরীরা রয়েছে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তবায়ন করার জন্য। হে আল্লাহ! শহীদ আব্দুল মালেক ভাই যে শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য প্রাণ দিলেন সেই শিক্ষা ব্যবস্থা তুমি প্রতিষ্ঠিত করে দাও এবং উনাকে শহীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করো। আমীন!
শহীদ আব্দুল মালেক ভাইয়ের সেই ঐতিহাসিক বক্তব্য সহ একটি ডকুমেন্টারি "আব্দুল মালেক দ্যা লিজেন্ড" দেখুন ..
https://www.youtube.com/watch?v=cAWbiXSXYKg (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের- "প্রবাহ সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের" উদ্যোগে তৈরি যা শহীদ আব্দুল মালেক ফাউন্ডেশনের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান)।
আব্দুল মালেকের বক্তব্যঃ https://www.youtube.com/watch?v=RcG6a41DI2g
বিষয়: বিবিধ
১২৩১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন