"নামাজ আরো ভালো হতে পারে যেভাবে": কমন মিস্টেকস ইন নামাজ
লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ২৯ জুন, ২০১৫, ১১:১৮:২৭ সকাল
নামাজ ফরজ এটা সকল মুসলিমই জানে। কিন্তু আদায় করেন কয়জন? যারা আদায় করছেন তাঁদের সবারই আবার নামাজের কোয়ালিটি খুব বেশী উন্নত নয়। নামাজের কোয়ালিটি তখনই যথাযথ হতে পারে যখন এটাকে শুধু আল্লাহর হুকুম না মনে করে বরং মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসা এবং এর হক যথাযথভাবে সংরক্ষণে তৎপর হওয়া যাবে। একজন স্কলার তাইতো বলেছিলেন "We have to pray and fast, this is not like that; rather We Love Praying and Fasting because we Love Allah." আর এটা সবারই জানা যে, যে জিনিষের প্রতি ভালোবাসা মনে তৈরি হয় তার প্রতি মানবমনে একধরনের সম্মান বোধ ও তার হক আদায়ে স্বতঃস্ফূর্ত চেতনা জাগ্রত হয়। তবে এর জন্য প্রয়োজন ওই বিষয়ের সঠিক জ্ঞান।
আসুন তাহলে নামাজের কোয়ালিটি উন্নত করতে কিছু জ্ঞানের বিষয়ে আলোচনা করি।
১, মোবাইল ব্যাবহারঃ ভালো করে অজু করা। তারও আগে আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি নেওয়া। মোবাইল বন্ধ/ সাইলেন্ট রাখা। মোবাইল ভাইব্রেশনও ব্যাঘাত ঘটায়। নামাজের মধ্যেই মনে হবে যে, ও বোধহয় দুবাই থেকে আমার ভাই ফোন করেছে ......xyz । এমনকি ঘরে একা নামাজেও মোবাইল বন্ধ/ সাইলেন্ট রাখলে নামাজের একাগ্রতায় সহায়তা করবে।
২, নামাজে পঠিত আয়াত গুলোর অর্থের দিকে মনোনিবেশ করে আল্লাহ কে বেশী বেশী স্মরণ করা।
৩, ডানে, বামে, উপরে না তাকানো। নিজ সিজদার দিকে নজর দেওয়া।
৪, জামা'য়াতে নামাজ আদায় করাঃ হাদীস কর্তৃক জামা'য়াতে ফরজ নামাজ আদায়ের নির্দেশ রয়েছে। একা নামাজে সেই পরিমাণ হক, একাগ্রতা ও বিনয়ী মনোভাব তৈরি হয়না।
৫, জামা'য়াত শুরু হয়ে গেছে দেখেও দৌড়ে শরীক না হওয়াঃ হাদীসে এটি নিষেধ রয়েছে, কারণ দৌড়ে ও তাড়াহুড়া করে নামাজে শরীক হলে ওই রাকা'য়াত সহ পুরো নামাজে একটা প্রভাব পড়ে। নামাজে দণ্ডায়মান মুসুল্লীদেরও এতে ব্যাঘাত ঘটে। আগেই পৌঁছে যাওয়া ভালো, আর দেরী হয়ে গেলেও স্বাভাবিক কদমে হাঁটা উচিৎ।
৬, কাতার সোজা ও দুই নামাজীর মাঝে ফাকা না রাখাঃ এটি সবাই জানে, অথচ এখানেই ভুল হয় বেশী, বিশেষ করে দুই নামাজীর মাঝে ফাকা না রাখার বিষয়টি। কোন ফাকা রাখা যাবে না, অথচ নামাজে যেয়ে দেখবেন ২,৪, ৬ এমনকি ৮ ইঞ্চি পরিমাণ গ্যাপ দিয়েই দাঁড়িয়ে গেছেন কিছু ভাই। বাংলাদেশে এই বিষয়ে চরম অবহেলা এবং জ্ঞানের অভাব পরিলক্ষিত হয়। কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা রেখে দাঁড়াতে হবে। টেনে কাছে আনলেও আবার একই অবস্থা। কেউ সামনে, কেউ পেছনে, দুই নামাজীর মাঝে বিশাল গ্যাপ- এ অবস্থায় নামাজে কখনই মন বসবে না।
৭, ধীরস্থীর ভাবে রুকু করাঃ ধীরস্থীর ও পরিপূর্ণভাবে ভাবে রুকু না করলে নামাজ আদায় হবে না। পীঠ ও মাথা সমান্তরাল ভাবে ভুমির সাথে সোজা রেখে কিছু সময় অবস্থান করতে হবে। সুন্দর করে রুকুর তাসবীহ পড়তে হবে।
৮,রুকুর পর সোজা হয়ে দাঁড়ানোঃ রুকুর পর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে "سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ" বলে সিজদায় যাবার আগে "رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ، حَمْداً كَثِيراً طَيِّباً مُبَارَكاً فِيهِ” বলার সময়টুকু দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।কমপক্ষে "رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ" বলতেই হবে।
৯, সময় নিয়ে সিজদা করা ও দো'য়া পড়াঃ অনেকেই খুব দ্রুত সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে ফেলে। এত দ্রুত যে ৩ বার " سبحان ربی الأعلی" বলাতো দূরে থাক একবার বলার সময় টুকুও অবস্থান করেন না। দুই সিজদার মাঝখানে স্থীর হয়ে বসে اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي، وَارْفَعْنِي পড়া, কমপক্ষে اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي এতটুকু বলা জরুরী। যারা দুই সিজদার মাঝখানে কোন বিরতি দেন না তারা এই দোয়া পড়ার আমল করেন না মুলত। সিজদার তাসবীহ তিন বার বলার পর অন্যান্য দোয়া পড়ার আমল করলে নামাজের হক আদায় হয়। "হাদীস অনুযায়ী বান্দা যখন সিজদায় অবস্থান করে তখন আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়ে যায় আর এই সময়ে দোয়া কবুল হয়", এ সময়ে কোরআন- হাদীসে শেখানো অন্যান্য দোয়া পড়লে নামাজের আসল তৃপ্তি ও মজা পাওয়া যায়।
১০, সালাম ফেরানোর পর এস্তেগফার, অন্যান্য দোয়া ও ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবর পড়া।
আর এভাবে ধীরে ধীরে যথাযথভাবে নামাজ আদায় করলেই কেবল নামাজের হক আদায় হয় এবং মনে শান্তি পাওয়া যায়, সর্বোপরি সেই নামাজ জীবনের উপর প্রভাব ফেলে যা বান্দাকে আল্লাহর খাঁটি গোলামে পরিণত করে দেয়। অন্যথা আমাদের নামাজ হয়ে যাবে মৃত। আল্লাহ আমাদেরকে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত নামাজ আদায়ের তাওফিক দিন।
আরো জানার জন্যঃ প্রফেসর গোলাম আজম সাহেবের " জীবন্ত নামাজ" বইটি সহায়ক হতে পারে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৯ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ফরয নামাজের সময় যতটুকু বুঝি যে ঈমাম সাহেব '' سبحان ربی الأعلی" ৩ বার পড়েই উঠে বসেন/ আসেন।
সিজদার সময়ে যদি দোয়া কবুল হয় তাহলে ঈমান সাহেবেরা সেখানে এত অল্প সময় কেন অবস্থান করেন ? ৫-৬ সেকেন্ড ?
ফরজের সময়ে যখন সিজদা দোয়া পড়ার সুযোগ হয় না জামাতে নামাজ পড়ার সময় সেটা কি সুন্নতের সময় পড়া যাবে ?
নামাজে দাড়াবার সময় শুনেছি যে দুই পায়ের মাঝে ৪ আঙ্গুল ফাঁক রেখে দাঁড়াতে হবে ।
কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা রেখে দাঁড়াতে হবে।
মানে একজনের ডান কাঁধ আরেকজনের বাম কাঁধ ছুঁবে এবং একজনের ডান পা আরেকজনের বাম পা ছুঁবে ।
আমার কাছে মনে হয় , কাঁধ কাছাকাছি আনলে পা খিচাতে হবে , ফলে পায়ে পায়ে মেলানো কঠিন হয়ে যাবে। দাঁড়ানোটাও অস্থিরকর লাগবে । এরকম হলে দুই পায়ের মাঝে ৪ আঙ্গুল ফাঁক রাখাও কঠিন হবে।
হ্যাঁ, এটা ইমামদের ভুল। এত তাড়াতাড়ি ঠিক নয়। হতে পারে জামায়াত নামাজে দুর্বল ও শিশুও দাঁড়ায় তাই কিছুটা দ্রুত পড়ার বিধান রয়েছে- তবে এতটা নয়।
হ্যাঁ, সুন্নত ও নফল নামাজেও সিজদায় দোয়া পড়া যাবে।
না ভুল শুনেছেন। কোন ফাকা রাখা যাবে না। এটা বাংলাদেশে বেশী হয়। একদম মিলে মিলে দাঁড়াতে হবে। কাঁধে কাঁধ, পায়ে পা মিলিয়ে।
জাযাকাল্লাহ খাইর
মন্তব্য করতে লগইন করুন