আবারো পদ্মায় লঞ্চডুবি/ প্রতিকার না আহাজারি?
লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১২:৪৭:২২ রাত
আবারো পদ্মায় লঞ্চডুবি, রাত ১০টা পর্যন্ত ৪১ জনের লাশ উদ্ধার। কতজন এখনো নিখোঁজ, তা জানা যায়নি।
যদিও খবরে বলা হচ্ছে এমভি মোস্তফা নামের ওই লঞ্চটিকে কার্গো জাহাজ নার্গিস-১ ধাক্কা দেয় ফলে লঞ্চটি ডুবে যায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। কিন্তু পাটুরিয়া ঘাটের সুপারভাইজার জুয়েল রানা জানান, দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল, যদিও লঞ্চটি ১৪০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন।
ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় ধাক্কা লাগা কার্গো জাহাজ নার্গিস-১-এর লস্কর শাহিনুর রহমান (২১), শহিদুল ইসলাম (২৪) ও জহিরুল ইসলামকে (১৬) আটক করেছে শিবালয় থানার পুলিশ।
লঞ্চডুবি কোন রাজনৈতিক ঘটনা বা ইস্যু নয়। না আওয়ামিলীগ না বিএনপি।
সব সরকারের আমলে একই ঘটনার পুনঃরাবৃত্তি ঘটছে।
কিন্তু কেন? আর কত?
এর সমাধান কোথায়?
মানুষের জীবন কি এতই সস্তা?
কৈ কোন বিচারক কে তো দেখি না লঞ্চডুবির ঘটনায় "সপ্রনোদিত হয়ে রুল জারী করতে?
অথচ চোখ তুলে কোর্ট ভবনের দিকে তাকালেও মাঝে মাঝে আদালত অবমাননার রুল জারী হয়।
দেখিনি কোন সরকারের কোন মন্ত্রীকে দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করে মিনিমাম সৌজন্যতা দেখাতে।
লঞ্চ মালিক, চালক, ঘাট পরিদর্শক, পুলিশ - কাউকেই শাস্তি পেতে দেখিনি।
তাহলে কী করা যায়? আসুন তাহলে কিছু মতামত জেনে নেই-
১) খুব কষ্টের খবর। আমরা যদি দূর্ণীতিগ্রস্থ না হতাম, তাহলে এত দিনে পদ্মা সেতু হয়ে যেত , হয়ত এই মানুষ গুলোও এইভাবে মারা যেত না ।
২) আমরা এমন এক দেশে বাস করছি যেখানে না ঘরে, না রাস্তায়, না বাসে, না লঞ্চে......কোথাও কারো জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে, কিন্তু আমাদের কি কিছুই করার নেই? পদ্মা সেতু নিজেরা করবেন করেন , আজ করেন না হয় পঞ্চাশ বছর পরে করেন আপত্তি নাই, কিন্তু পদ্মার পারের এই অবহেলিত লোকগুলি কিভাবে পারাপার হয় একটু দেখেন.........।
৩) যাত্রীদের জোর করেই লঞ্চে উঠানো হয়, লঞ্চে যতক্ষণ অতিরিক্ত যাত্রী না হয় ততক্ষণ লঞ্চ ছাড়ে না। শরিয়তপুর থেকে ঢাকা আসতে হলে এই ভয়ঙ্কর পদ্মা পাড়ি দেওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ নাই। মানুষ জিম্মি!!! আমরা জিম্মি!! আমরা জিম্মি!
৪) এসব লঞ্চঘাটে ইজারাদার, লঞ্চ মালিক, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলের কিছু হোতাদের সমন্বিত সিন্ডিকেটই এর জন্য দায়ি । অনেকে বলেন যাত্রী কেন বোঝা হয়ে ওঠেন ? কিন্তু বাস্তব হল, এই সিন্ডিকেট তাদের ইচ্ছামত লঞ্চ না পুরে ছাড়েই না , তখন সাধারণ যাত্রীদের কীইবা করার থাকে ? সুতরাং এ সমস্যার মূলে আঘাত করুন, নয়তো চিরকাল এভাবেই মানুষ মরবে ।
৫) আর কত কত লাশ দেখলে কর্তা ব্যাক্তিদের ঘুম ভাংবে বলতে পারেন,প্রতিবছর দুর্ঘটনা ঘটছে তারপরও এ মৌসুমে কেনো অতিরিক্ত তদারকির ব্যবস্থা করা হয়না।কে/কারা ফিটনেসবিহীন জাহাজের অনুমোদন দেয় তাদের কেনো ধরা হয়না?বিচার আল্লার কাছে আর হারিয়ে যাওয়া সকল যাত্রিদের আললাহ মাফ করুন ।
৬) অনেক সময় দেখা যায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশকে ১৫০- ২০০ টাকা দিচ্ছে আর সে পুলিশ নিজে দাড়িয়ে থেকে অতিরিক্ত যাত্রী লন্ঞে তুলে দিচ্ছে।
৭) টাকার মূল্য এত বেড়ে গেছে যেখানে জীবনের কোন মূল্য নেই। মানুষ সবাই টাকা আর ক্ষমতা অর্জন নিয়ে ব্যাস্ত। মানবতা বোধের কোন স্থান নেই ।
৮) এসব আমাদেরকে বাকরুদ্ধ করে দিচ্ছে। সরকারের দায়িত্ব যেমন আনফিট যান চলাচলে বাধা দেওয়া তেমনি কোন কারনে দূর্ঘটনা ঘটলে তরিত ব্যাবস্থা নিয়ে একটু হলেও স্বস্তি দেওয়া। এসব নানা কারনে দূর্ঘটনা গুলোকে হত্যা বলে ধরে নেয়া হয়।
৯) কিন্তু এর কোন প্রতিকারের ব্যাবস্থা হচ্ছেনা। এই মন্ত্রী ও কর্তা ব্যক্তিরাও পরবর্তী তিন/চার দিন বিভিন্ন সভায় বা টকশোতে আশ্বস্ত করে কিছু বলবে। গোল্ড ফিশের মগজের চেয়েও ক্ষনস্থায়ী স্মৃতিশক্তির আমরা খুব শিঘ্রই অন্যকিছুতে ব্যাস্ত হয়ে যাব।
১১) ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশী যাত্রী যাতে না ওঠে সেই ব্যবস্থা কঠোর ভাবে monitor করা। আমাদের দেশের জনগনকেও আরও সতর্ক হতে হবে। ঢাকায় যেমন দেখি, বাসে যাত্রী উঠতে থাকে তো উঠতেই থাকে, নিষেধ করলেও শোনেনা। জোর করে ঠেলা গুতা দিয়ে ওঠে।
১২) বেশী করে উন্নত মানের দ্রুতগতির লঞ্চ সরবরাহ করা।
১৩) লিফটের মত alarm system install করা যাতে ধারণক্ষমতার বেশী যাত্রী উঠলেই alarm বেজে ওঠে।
১৪) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সব মন্ত্রণালয়েই ভাল বেতন ও সুযোগ সুবিধা সহ কিছু Inspector নিয়োগ দেয়া যাদের First and prime priority হবে honesty; যারা ঘুষ খাবেনা, যাদের মানবিক এবং ন্যয়নীতি বোধ থাকবে এবং এদের নিয়োগ, ঘুষ বানিজ্য কিংবা স্বজনপরিতির মাধ্যমে হবেনা। এই Inspector রা সব ধরনের অব্যাবস্থাপনার বিরুদ্ধে কাজ করবে স্বাধীনভাবে।
১৫) লঞ্চে CCTV install করা।
১৬) লঞ্চে জায়গা নেই তাও তারা জোর করে যাত্রী উঠাচ্ছে অথচ ঘাটে পুলিশ দিব্যি পাহাড়া দিচ্ছে। যদিও তাদেরও কিছু করার নেই কারণ পুলিশের চেয়ে লঞ্চ মালিকদের হাত অনেক লম্বা। মানুষ এইভাবে ঝুঁকি নিয়েই সবসময় পার হয়, কিন্তু কার কাছে অভিযোগ করব, করেই বা কি লাভ......কয়দিন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হবে তারপর হয়তো আস্তে আস্তে মানুষ হাজারও ঘটনার ভীরে ভুলে যাবে। কিন্তু যে মা তার সন্তানকে হারিয়েছে, যে সন্তান তার পিতা-মাতাকে হারিয়েছে তার এই ক্ষত কি কোনদিন মুছবে?
আসছে বছর বা ক'মাস পর ঈদেও আবার এমনই ঘটবে; প্রতি বছরই ঘটছে; আসুন সামনের দিনে খেয়াল রাখি,সুতরাং সাবধান হওয়া লাগবে বৈ কি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন।
বিষয়: বিবিধ
৯৭৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন