"জান্নাতী পুরুষ হুর পেলে জান্নাতী রমনী কী পাবেন?"

লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৭:৪২:২৬ সন্ধ্যা

কোরআনে ৪ বার হুরের আলোচনা এসেছে। কিন্তু প্রত্যেকবার আমরা ভুল তরজমা পড়েছি, পড়ানো হচ্ছে।হুর শব্দগত এবং কোরআনে প্রায়োগিক অর্থে পুরুষও না মহিলাও না। এটি আপেক্ষিক, অর্থাৎ জান্নাতী লোকটি পুরুষ হলে মহিলা হুর পাবেন, আর জান্নাতী লোকটি মহিলা হলে পুরুষ তথা বিপরীত লিঙ্গের হুর পাবেন।

আসলে হুর ( حُورٍ) অর্থ আপনি যখন মহিলা বা মেয়ে তথা স্ত্রী লিঙ্গ করবেন ( যা আসলে কোরআন বিরোধী) তখনই এই প্রশ্নটি আসে যে জান্নাতী পুরুষ হুর পেলে জান্নাতী রমনীরা কী পাবেন?

আমাদের বাংলা তরজমা করীরা জেনে বা না জেনে এই মহা ভুল অনুবাদটি করেছেন- যা স্পষ্ট কোরআন বিরোধী, যেখানে হুর মানেই রমনী তথা স্ত্রী লিঙ্গ। প্রকৃত অর্থে আরবী আয়াতের দিকে খেয়াল করে দেখুন, কোথাও এমন অর্থ বহন করে না।

আসলে হুর মানে হল "সঙ্গী- সঙ্গীনি" অর্থাৎ- জান্নাতী লোকটি পুরুষ হলে আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী হুর তথা রমনী পাবেন, আর জান্নাতী লোকটি মহিলা হলে আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী হুর তথা উৎকৃষ্ট সঙ্গী পাবেন।

আরো বুঝতে আপনাকে একটু সময় ব্যয় করতেই হবে।

১ম আয়াতঃ প্রশঙ্গ হুর= সুরা আদ-দোখানঃ ৫৪

নিশ্চয় খোদাভীরুরা নিরাপদ স্থানে থাকবে- ৫১

উদ্যানরাজি ও নির্ঝরিণীসমূহে।- ৫২

তারা পরিধান করবে চিকন ও পুরু রেশমীবস্ত্র, মুখোমুখি হয়ে বসবে।-৫৩

كَذَٰلِكَ وَزَوَّجْنَاهُم بِحُورٍ عِينٍ

এরূপই হবে এবং আমি তাদেরকে সুন্দর চক্ষুওয়ালা হুর সঙ্গী-সঙ্গীনি দেব। ( সুরা আদ-দোখানঃ ৫৪)

মন্তব্যঃ ৫১, ৫২, ৫৩ এই ৩টি আয়াতের দিকে খেয়াল করে দেখুন, এখানে খোদাভীরুদের নিয়ে কথা হচ্ছে মানে খোদাভীরু পুরুষ এবং মহিলা, যারা উদ্যানরাজি ও নির্ঝরিণীসমূহে অবস্থান করবেন এবং "তারা পরিধান করবে চিকন ও পুরু রেশমীবস্ত্র, মুখোমুখি হয়ে বসবে", এই আয়াতের খোদাভীরু শুধুমাত্র পুরুষ নন, খোদাভীরু তিনি মহিলাও হতে পারেন। তাহলে জান্নাতী মহিলাও হুর পাবেন, এতে সন্দেহ আছে কি??? ৫৪ নং আয়াতে زَوَّجْنَاهُم অর্থ হলো তাদেরকে আমি বিয়ে দেবো তথা জোড়া বানিয়ে দেবো তথা সঙ্গী- সঙ্গীনি করে দেবো।

অথচ, অথচ, অথচ= আমাদের অনুবাদ কারীরা زَوَّجْنَاهُم অর্থ করেছেন "আমি তাদেরকে আনতলোচনা স্ত্রী দেব", আর আমরাও শিখেছি স্ত্রীতো পুরুষদেরই দেওয়া হয়। আমরা ভুল শিখেছি, মানে হল জান্নাতী পুরুষদের আল্লাহ হুরদের সাথে বিয়ে দেবেন। زَوَّجْنَاهُم মানে স্ত্রী নয়, এর মানে হল জোড়া, মানে সঙ্গী- সঙ্গীনি।প্রকৃত অর্থে আল্লাহ তায়ালা زَوَّجْنَاهُم মানে বলেছেন "তাদেরকে আমি বিয়ে দেবো তথা জোড়া বানিয়ে দেবো তথা সঙ্গী- সঙ্গীনি করে দেবো।" আর তাঁরা মানে ঐ ৫১ আয়াতের খোদাভীরু অর্থাৎ জানাতী পুরুষ এবং মহিলা।

২য় আয়াতঃ প্রশঙ্গ হুর= সুরা আত তুরঃ২০

নিশ্চয় খোদাভীরুরা থাকবে জান্নাতে ও নেয়ামতে।- সুরা আত তুর ১৭

সুরা আত তুর ১৮ =তারা উপভোগ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদের দেবেন এবং তিনি জাহান্নামের আযাব থেকে তাদেরকে রক্ষা করবেন।

তাদেরকে বলা হবেঃ তোমরা যা করতে তার প্রতিফলস্বরূপ তোমরা তৃপ্ত হয়ে পানাহার কর।- ১৯

সুরা আত তুরঃ২০

مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ سُرُرٍ مَّصْفُوفَةٍ وَزَوَّجْنَاهُم بِحُورٍ عِينٍ

"তারা শ্রেণীবদ্ধ সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। আমি তাদেরকে "আয়তলোচন-আয়তলোচনা হুরদের" সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দেব"

মন্তব্যঃ এখানেও সুরা আত তুরের ২০ আয়াতের হুর বুঝতে ১৭, ১৮ এবং ১৯ আয়াত পড়ে আসতে হবে। এখানেও খোদাভীরু পুরুষ এবং মহিলাদের ( শুধু পুরুষ নয় কিন্তু, আবার পড়ে দেখুন) হুর দেওয়া হবে। এখানেও অজ্ঞ অনুবাদ কারীরা زَوَّجْنَاهُم তথা "তাদেরকে আমি বিয়ে দেবো তথা জোড়া বানিয়ে দেবো তথা সঙ্গী- সঙ্গীনি করে দেবো" অর্থ না করে মনগড়া زَوَّجْنَاهُم মানে করেছেন " আমি তাদেরকে স্ত্রী দেবো"- যা প্রকাশ্য কোরআন বিরোধী। তার মানে হল জান্নাতী রমণীগনও হুর পাবেন।

৩য় আয়াতঃ প্রসংগ হুর= সুরা আর রাহমানঃ৭২

حُورٌ مَّقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ

"তাঁবুতে অবস্থানকারিণী হুরগণ।" - এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা হুর বলে মহিলা তথা স্ত্রীলিঙ্গ বুঝিয়েছেন কেননা হুর শব্দের পরে স্ত্রীলিংগ বাচক مَّقْصُورَاتٌ উল্লেখ করেছেন। এবং ৭০ নং আয়াতেও "সেখানে থাকবে সচ্চরিত্রা সুন্দরী রমণীগণ" বলে স্ত্রীলিঙ্গ বুঝিয়েছেন।

চতুর্থ আয়াতঃ প্রসংগ হুর= সুরা আল ওয়াকিয়াঃ ২২

وَحُورٌ عِينٌ

"তথায় থাকবে সুন্দর চক্ষু বিশিষ্ট হুরগণ" , এখানে হুর দেওয়া হবে জান্নাতী পুরুষদের তেমনটি কোত্থাও বলা হয়নি। " জান্নাতী পুরুষ এবং মহিলা" উভয়ের জন্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন "হুর" শব্দ উল্লেখ করেছেন। বিস্তারিত জানতে এই সুরার ১০ নং আয়াত থেকে পড়ে দেখুন।

আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে কোরআন বুঝার এবং সে অনুযায়ী কাজ করার তাওগীক দিন। -আমীন।

বিষয়: বিবিধ

১৫৯৫ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

298368
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:০১
আফরা লিখেছেন : আমার উদ্দেশ্য আল্লাহর জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে আগে জান্নাত পাওয়া ।
০২ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:১৯
241811
রঙ্গিন স্বপ্ন লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের নসীব করুন।
298370
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:০৬
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনার সাথে সহমত রইল৷
০২ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:১৯
241812
রঙ্গিন স্বপ্ন লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইর
298377
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:২৯
এ কিউ এম ইব্রাহীম লিখেছেন : আমি জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত চাই।
আল্লাহর নেয়ামতের শোকর করে যেন মরতে পারি অন্তত! তবে আপনার লেখা স্বার্থক।
০২ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:২০
241813
রঙ্গিন স্বপ্ন লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের নসীব করুন।জাযাকাল্লাহ খাইর
298394
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:০৮
sarkar লিখেছেন : ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
০২ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:২০
241814
রঙ্গিন স্বপ্ন লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইর
298425
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:২১
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম.....। সুন্দর উপস্থাপনা ও তথ্যবহুল গুরুত্বপূর্ণ লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর
০১ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৫:৩১
241642
রঙ্গিন স্বপ্ন লিখেছেন : সালাম,
জাযানা ওয়া ইয়য়াকুম।
298503
০১ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:০১
পুস্পগন্ধা লিখেছেন : ভালো লাগল, ধন্যবাদ..। Good Luck
০২ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:১২
241809
রঙ্গিন স্বপ্ন লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইর, পড়ার জন্য।
298523
০১ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১১:০৮
আল সাঈদ লিখেছেন : জানার মতো পোষ্ট। ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০২ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:১৩
241810
রঙ্গিন স্বপ্ন লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইর, আপনাকেও ধন্যবাদ
298525
০১ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১১:১৬
হতভাগা লিখেছেন : আল্লাহ হুরদের সাথে তার নেক বান্দাদের বিয়ে করিয়ে দেবেন বলে বলেছেন ।

শোনা যায় যে একজনের জন্য ৭০ জন হুর থাকবে ।

দুনিয়াতে একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী রাখার নিয়ম আছে । আমাদের ধর্মেও সে রকমই বলা আছে ।

তাই একজন নেক পুরুষ বান্দার সাথে যদি তার নেককার স্ত্রীর সাথে আরও ৭০ জন হুর থাকে স্ত্রী হিসেবে সেটা যেরকম মানান সই , আর

সেই নেককার স্ত্রীর সাথে তার নেককার স্বামী ছাড়াও ৭০ জন হুর থাকে স্বামী হিসেবে থাকে , সেটা কি তেমন মানান সই?

মানে দুই জনেরই ৭১ জন স্ত্রী/স্বামী ?

দুনিয়াতে তো আমরা এরকম দেখি না যে একজন স্ত্রীর একাধিক স্বামী আছে এট এ টাইম যেমনটা একজন স্বামীর থাকে ।

বেহেশতে যদি একজন নেককার মহিলার ৭০ জন হুর স্বামী থাকে তাহলে দুনিয়াতে তো এরকম কিছু নমুনা (নেক ভাবে ) আমরা দেখতে পেতাম ।
298690
০২ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:১৮
রঙ্গিন স্বপ্ন লিখেছেন : ১, কোরআনে কোথাও ৭০ হুরের কথা উল্লেখ নেই, আমি এটি জানি না।
২, আল্লাহ হুর দেবেন "জান্নাতী খোদাভীরুদের", আর আয়াতে উল্লেখিত খোদাভীরু বলতে মহিলাও শামিল, যেটা আমি পূর্বের আয়াত উল্লেখ করে ব্যাখ্যা করেছি। সুতরাং জান্নাতী রমনীও হুর পাবেন।

৩, দেখুন, জাখেরাতের জীবন দুনিয়ার মত নয়। সেখানে কারো আর মৃত্য হবে না- এটা কী দুনিয়ার সাথে মিলে? জান্নাতে সুখ সুখ আর সুখ, দুনিয়ায় কী সেটা সম্ভব? তাহলে কি করে আপনি তুলনা করছেন?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File