জামায়াত নেতারা মুক্তিযোদ্ধা ছিল যখন......

লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ০২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:২৩:২২ সন্ধ্যা



যদি কিছু সময়ের জন্য ধরেও নেই যে, জামায়াত নেতারা যুদ্ধাপরাধ করেছেন এবং আওয়ামিলীগ একটি স্বচ্ছ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ন্যায় বিচার করছে, (কিন্তু সারা দেশ ও সারা দুনিয়া জানে যে এটি রাজনৈতিক ট্রাইব্যুনাল, এর গঠন, বিচার প্রক্রিয়া ত্রুটি পূর্ণ যা জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, আন্তর্জাতিক বার এ্যাসোসিয়েশন, বারাক ওবামার বিশেষ দূত স্টিফেন র‍্যাপ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ বহু আন্তর্জাতিক সংগঠন কর্তৃক সমালোচিত; ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশ্যও রাজনৈতিক চরিতার্থ প্রণোদিত- যা স্কাইপ কেলেঙ্কারীর মাধ্যমে পরিষ্কার )......

তাহলেও দেখবেন...... তাদের রায়ে উল্লেখ আছে-

গোলাম আযম খুন করেছেন ১৫-২০ জন

মতিউর রহমান নিজামী খুন করেছেন ১২-১৫ জন

দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী খুন করেছেন ১০-১২ জন

মুহাম্মদ কামারুজ্জামান খুন অরেছেন ১০-১২ জন

আব্দুল কাদের মোল্লা খুন করেছেন ১০-১২ জন

অথচ ,

১, ১৯৭২ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড নিয়ে ৪২টি মামলা হয়েছিল | এই মামলাগুলোর একটিতেও মাওলানা নিজামীকে কেউ আসামী করেনি | জামায়াত নেতারা কেউ এখানে ছিলেন না।

২, বিগত ৪০ বছরে জামায়াত নেতাদের নামে একটি মামলাও হয়নি। এমনকি স্বাধীনতার পরে যে ৩৭,০০০ লোককে আসামী করা হয়েছিল, শেখ মুজিব সাহেবের আমলে- জামায়াত নেতাদের কেউ সেখানে ছিলেন না।সুতরাং সহজেই অনুমেয় সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

৩, ১৯৯৪ গোলাম আজম সাহেবের নাগরিকত্ব মামলার ৫৪ পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়েছেঃ

১৯৯৪ সালে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে দেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে এ কথা উল্লেখ রয়েছে।

রায়ে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘পাকিস্তানি আর্মি ও তাদের সহযোগী বাহিনী রাজাকার, আলবদর কিংবা আলশামসের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে যেসব বর্বরতার অভিযোগ রয়েছে, তার একটির সাথেও অধ্যাপক গোলাম আযমের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।’

আপিল বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি হাবিবুর রহমান, বিচারপতি এ টি এম আফজাল, বিচারপতি মুস্তাফা কামাল ও বিচারপতি লতিফুর রহমান এ ঐতিহাসিক রায় দেন। এই চার খ্যাতিমান বিচারপতির সবাই পরে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির আসন অলঙ্কৃত করেন এবং তাদের মধ্যে বিচারপতি হাবিবুর রহমান ও বিচারপতি লতিফুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত হয়েছিলেন।

৪, স্কাইপ কেলেঙ্কারী- যেখানে পরিষ্কার যে সরকার বিচারপতিকে চাপ দিচ্ছে এবং ২/৩ টি রায় দিলেই প্রমোশনের প্রলোভন, ৪ বার আইন সংশোধন, রায়ের পরে আইন সংশোধন, আসামী পক্ষের সাক্ষী অপহরণ - যেমন শুখরঞ্জন বালী, সরকার পক্ষের সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে কথিত রেকর্ড করা সাক্ষ, ইত্যাদিই প্রমাণ করে এই ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে আওয়ামিলীগ "পলিটিক্যাল গেম" খেলছে। যেমন ২ নং অভিযোগে জনাব নিজামীকে মৃত্যদন্ড দেয়া হয়েছে | একজন সাক্ষী বলেছেন রাত ৩.৩০ টার সময় চাঁদের আলোতে তিনি দেখেছেন যে, নিজামীসহ অন্যরা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে | অথচ সেটি ছিল অমাবস্যার রাত |



এখন প্রশ্ন হলোঃ

১, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন ৩০ লক্ষ, সব মিলিয়ে জামায়াত নেতারা ১০০ লোকও মারেনি- তাহলে বাকী মানুষ মারলো কারা? তাদের বিচার হচ্ছে না কেন? কেন শুধুই জামায়াত নেতাদের বিচার?

২, এটি যদি " আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালই " হবে তাহলে কেন সেই কুখ্যাত পাকিস্তানি আর্মির হুকুম দাতা ও বর্বর খুনী- যারা এখন জীবিত, তাদের বিচারের দাবী তোলা হচ্ছেনা? যেহেতু ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক, সেহেতু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তথা পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধীদের কেন বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে? আর এ ক্ষেত্রে কেনইবা আন্তর্জাতিক আইন ও আইন বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হচ্ছে না?

৩, যেহেতু রায়ে উল্লেখ জামায়াত নেতারা ১০০'র মত মানুষ মেরেছে, তাহলে মুসলিম লীগ, আওয়ামিলীগ, বি এন পির যুদ্ধাপরাধীরা কোথায়? কেন শুধুই জামায়াত নেতাদের বিচার?

কিন্তু আসল বিষয়টি এখানেঃ

১, ২০০১ সালের আগ পর্যন্ত তাঁরা ছিলেন নিছক স্বাধীনতা বিরোধী (!), বি এন পির সাথে জোট করার পর থেকে আওয়ামিলীগ ও বাম রা ভোটে পরাজিত হয়। জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে রুপান্তরিত হয়, যা তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।বাংলাদেশকে Constitutionally এবং Institutionally ধর্মহীন তথা ইসলামহীন হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বড় ও একমাত্র বাঁধা হল এই জামায়াতে ইসলামী (সম্প্রতি সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তমও এমনটিই বলেছেন) তাই জামায়াতের কণ্ঠ রোধ এবং সৎ ও আদর্শ নির্ভর ইসলামী মতাদর্শে ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত গঠন করা হয় আওয়ামি- ট্রাইব্যুনাল। আর আদর্শবান নেতাদের বানানো হয় যুদ্ধাপরাধী।

২, এটি তৎকালীন অনেকের মত তাঁদেরও ছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। দেশ ভাগের সময় " পাকিস্তানের সমর্থক" থাকা আর মানবতা বিরোধী অপরাধ এক নয়।একটি দেশ যখন ভাগ হয় তখন সবাই একই মতের একই প্লাটফর্মে একত্রিত হওয়াটা চিন্তা করা সহজ কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছিল পাকিস্তানি আর্মি ও তৎকালীন সরকার। কিন্তু ৭১ এর পরপরই স্বাধীন দেশে সেই যুদ্ধাপরাধী পাক-নেতাদের শেখ মুজিব সাহেব সংবর্ধনা দিয়েছিলেন।

৩, ১৯৭৪ সালে আবুল মনসুর আহমেদ দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় লেখা এক কলামে লিখেছিলেন "১৯৭১ এ মুসলিম লীগ স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল রাজনৈতিক কারনে।সেটা কোন অপরাধ না। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর তারা যদি বাংলাদেশ কে অস্বীকার করতো সেটা হোত রাষ্ট্রদ্রোহীতা- সেটা অপরাধ।

৪, সম্প্রতি স্কটল্যান্ডের ৫৫% মানুষ দেশ ভাগ না চেয়ে "নো" ভোট দিয়েছে, ৪৫% ইয়েস বলে ইংল্যান্ড থেকে আলাদা হতে চেয়েছিল। তাহলে কী "নো" ভোট প্রদানকারী সবাই রাজাকার? ঠিক একই রকম ঘটেছে উনার/ উনাদের বেলায়ও। তাহলে কী ইংল্যান্ড সরকার ঐ ৪৫% জনতার বিচার করবে? কিংবা তাদের লিডারদের? নাকি ভবিষ্যতে সুযোগ আসলে স্কটল্যান্ড ঐ ৫৫% জনতা ও তাদের লিডারদের বিচার করবে?

যেহেতু তাঁরা বাংলাদেশ মেনে নিয়েছেন এবং কাজ করেছেন, স্বাধীন দেশ গঠনে গত ৪৩ বছরে অনেক ভুমিকা রেখেছেন, সাংসদ- মন্ত্রী হয়েছেন, সুতরাং দেশ ভাগের সময় " পাকিস্তানের সমর্থক" থাকা মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছেন তা প্রমাণ করেনা।

আসলেই এটি সত্য কথাঃ আওয়ামীলীগে থাকলে সঙ্গী না থাকলেই জঙ্গী।

যেমন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকি, সম্প্রতি একে খন্দকার সহ আরো অনেকেই............ রাজাকারের তালিকা দিন দিন লম্বাই হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধার তালিকাও বড় হচ্ছে, আওয়ামিলীগ করলেই মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট পাওয়া যাচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধ মন্ত্রণালয়ও সম্প্রতি তা খুঁজে পেয়েছে...।

বিষয়: বিবিধ

১৪৮২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

280613
০২ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪০
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : স্বার্থের দুনিয়া। স্বার্থ ছিলো তাই দরকার ছিলো আজ স্বার্থ ফুরিয়ে গেছে তাই দুরে ছুড়ে মারছে। Sad Sad
০৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:৩২
224307
রঙ্গিন স্বপ্ন লিখেছেন : আপনি ঠিকই বলেছেন
280622
০২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪০
শেখের পোলা লিখেছেন : সঙ্গী নইলে জঙ্গী তো আছেই সেই সাথে ইসলাম নিধন৷ অবাক হতে হয়! এই ভূখণ্ড একদিন ইসলাম কায়েমের জ্ন্যই স্বাধীন হয়েছিল৷ আজ কোথায় সেই চেতনা?
০৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:৩২
224308
রঙ্গিন স্বপ্ন লিখেছেন : রাইট, ধন্যবাদ
280644
০২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৩৮
সত্যের সেনানী লিখেছেন : আমার সঙ্গে থাকলে সঙ্গী
আর বিরুদ্ধে থাকলে জঙ্গি
এটাই সেক হাসিনার নীতি
০৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:৩২
224309
রঙ্গিন স্বপ্ন লিখেছেন : একদম ঠিক বলেছেন
281236
০৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৪
হতভাগা লিখেছেন : হায়রে বোকা জামায়াত ! যে তত্ত্বাবধায়কের ফর্মুলা তোরাই আনছিলি ১৯৯৫ এ , সেটা কাজে লাগিয়ে এবং তার ফলে ব্রুট মেজরিটি পেয়ে এখন আওয়ামী লীগই তোদের সাইজ করছে ।

আওয়ামী ছিল জামায়াতের ফর্মুলার প্রথম বেনিফিশিয়ারী ।

জামায়াত সবসময়ই ভুল করে , যেটা তারা ৭১ থেকে শুরু করেছে । ১৯৯৫ এ শরীক বিএনপির সাথে যদি তারা বিট্রে করে এই ফর্মুলা আওয়ামীগের মাথায় না ঢুকাতো তাহলে এত হাঁপানীর মধ্যে দিয়ে তাদের নাও যাওয়া লাগতো ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File