নাগরিকত্ব মামলার রায়ে যুদ্ধাপরাধী নন, তাহলে কেন এই জঘন্য রাজনীতি?

লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ২৭ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:৫৮:৩১ রাত



"মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যেসব বর্বরতার অভিযোগ রয়েছে, তা সংঘটনের সাথে অধ্যাপক গোলাম আযম কোনোভাবে সরাসরি জড়িত ছিলেন, এমন কোনো কিছু আমরা পাইনি।"

১৯৯৪ সালে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে দেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে এ কথা উল্লেখ রয়েছে।

রায়ে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘পাকিস্তানি আর্মি ও তাদের সহযোগী বাহিনী রাজাকার, আলবদর কিংবা আলশামসের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে যেসব বর্বরতার অভিযোগ রয়েছে, তার একটির সাথেও অধ্যাপক গোলাম আযমের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।’

আপিল বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি হাবিবুর রহমান, বিচারপতি এ টি এম আফজাল, বিচারপতি মুস্তাফা কামাল ও বিচারপতি লতিফুর রহমান এ ঐতিহাসিক রায় দেন। এই চার খ্যাতিমান বিচারপতির সবাই পরে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির আসন অলঙ্কৃত করেন এবং তাদের মধ্যে বিচারপতি হাবিবুর রহমান ও বিচারপতি লতিফুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৯৯৪ সালের ২২ জুন দেয়া ৫৪ পৃষ্ঠার রায়ে অধ্যাপক গোলাম আযম সম্পর্কে ১৯৭১ সালের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বিচারপতিদের করা মন্তব্য ছিল এ রকম : "There is nothing to directly implicate the petitioner (Golam Azam) in any of the atrocities alleged to have been perpetrated by the Pakistani Army or their associates the Rajakars, AL Badrs or the AL Shams. Except that the petitioner was hobnobbing with the Military Junta during the war of liberation, we do not find anything that the petitioner was in any way directly involved in perpetuating the alleged atrocities during the war of independence."

১৯৭৪ সালে আবুল মনসুর আহমেদ দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় লেখা এক কলামে লিখেছিলেন "১৯৭১ এ মুসলিম লীগ স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল রাজনৈতিক কারনে।সেটা কোন অপরাধ না। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর তারা যদি বাংলাদেশ কে অস্বীকার করতো সেটা হোত রাষ্ট্রদ্রোহীতা- সেটা অপরাধ।

২০০১ সালের আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন নিছক স্বাধীনতা বিরোধী (!), বি এন পির সাথে জোট করার পর থেকে আওয়ামিলীগ ও বাম রা ভোটে পরাজিত হয়। জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে রুপান্তরিত হয়, যা তাঁদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।বাংলাদেশকে Constitutionally এবং Institutionally ধ্রমহীন তথা ইসলামহীন হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বড় ও একমাত্র বাঁধা হল এই জামায়াতে ইসলামী। তাই জামায়াতের কণ্ঠ রোধ এবং সৎ ও আদর্শ নির্ভর ইসলামী মতাদর্শে ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত গঠন করা হয় আওয়ামি- ট্রাইব্যুনাল। আর আদর্শবান নেতাদের বানানো হয় যুদ্ধাপরাধী।

আর যে সমস্ত করণে তিনি দেশ ভাগের সময় ঐ নেতৃত্বকে মেনে নেন নি সেগুলোর অন্যতম ছিল- ভারত এই ছোট দেশের উপর করায়ত্ত করবে ও দেশের সার্বভৌমত্ব ভারতের কাছে নতজানু হয়ে থাকবে, যা ৪৩ বছরে বাস্তবে রুপ লাভ করেছে এবং তিনি নিজ চোক্ষে তা দেখেও গেলেন।

তিনি ১৯৭১ সালে প্রেডিক্ট করেছিলেন বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হলে পরে ভারতের দখলে চলে যাবে। তার সেই এনালাইসিস অনেক দিক থেকেই সঠিক ছিল। একজন রাজনীতিক এনালিস্ট বা নেতার জীবনে ৪৩ বছর আগে করা এনালাইসিস ৪৩ বছর পরে সঠিক হতে দেখার চাইতে গর্বের কোন বিষয় হয় না। সেই গর্বের অনুভুতিকে ইংরেজির পরিভাষায় বলে, "I told you so!"

এটি তৎকালীন অনেকের মত তাঁরও ছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। দেশ ভাগের সময় " পাকিস্তানের সমর্থক" থাকা আর মানবতা বিরোধী অপরাধ এক নয়।একটি দেশ যখন ভাগ হয় তখন সবাই একই মতের একই প্লাটফর্মে একত্রিত হওয়াটা চিন্তা করা সহজ কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছিল পাকিস্তানি আর্মি ও তৎকালীন সরকার। কিন্তু ৭১ এর পরপরই স্বাধীন দেশে সেই যুদ্ধাপরাধী নেতাদের শেখ মুজিব সাহেব সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। প্রফেসর গোলাম আজম যুদ্ধাপরাধ করেছেন এমন কোন প্রমাণ সরকার দিতে পারেনি।

সম্প্রতি স্কটল্যান্ডের ৫৫% মানুষ দেশ ভাগ না চেয়ে "নো" ভোট দিয়েছে, ৪৫% ইয়েস বলে ইংল্যান্ড থেকে আলাদা হতে চেয়েছিল। তাহলে কী "নো" ভোট প্রদানকারী সবাই রাজাকার? ঠিক একই রকম ঘটেছে উনার বেলায়ও।

তিনি ৭১ এর আগে যেমন দেশের জন্য ৪৮-৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের কাজ করেছেন- অনেকবার কারাবরণ করেছেন, কারমাইকেল কলেজের চাকরী হারিয়েছেন, আর স্বাধীনতার পরেও তিনি দেশের স্বাধীনতা মেনে নিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রাক্কালে যখন ক্ষমতা পালাবদল নিয়ে রাজনৈতিক সমস্যা তুঙ্গে ঠিক তখনই এই মহান নেতা- শ্রদ্ধেয় প্রফেসর গোলাম আজম স্যার স্বীয় প্রজ্ঞার মাধ্যমে কেয়ার টেকার সরকারের প্রস্তাব পেশ ও তার প্রয়োগ জাতিকে হাতে- কলমে দেখিয়ে গেলেন, যার মাধ্যমে গণতন্ত্র পেয়েছিল পূর্ণতা, রাজনীতি ফিরে পেয়েছিল তার নিজস্ব-চরিত্র; যার ফল জাতি পেয়েছে।

বিষয়: বিবিধ

১২২১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

278508
২৭ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:৪৮
স্বপ্নচারী মাঝি লিখেছেন : পিলাচ পিলাচ পিলাচ পিলাচ পিলাচ
278667
২৭ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:২৮
ইবনে হাসেম লিখেছেন : ধন্যবাদ সুন্দর বিশ্লেষণধর্মী এ লিখাটির জন্য। মরহুম অধ্যাপক সাহেব ইন্তেকাল করে প্রমাণ করলেন যে তিনি মরেন নাই, তিনি লাখো মানুষের অন্তরে ঈমানের যেই অগ্নি প্রজ্জলিত করে গিয়েছেন, সেই অগ্নি ক্রমে ক্রমে বাংলার প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে তার প্রভাব বিস্তার করে ইনশাআল্লাহ একদিন দেশে ইসলামী শাসনের সূচনা করবেন, হায়াতে বেঁচে থাকলে ইনশাআল্লাহ আমরা সেটা দেখে যাবো। আমার আপনার কাজ হবে, আর সময়ের অপচয় না করে ব্যক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে সমাজ বিপ্লবের জন্য নিজ গৃহ থেকে বিপ্লবের বাণী চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই মরহুম নেতার আত্মার প্রতি আমরা সুবিচার করতে পারবো।
২৭ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৯
222426
রঙ্গিন স্বপ্ন লিখেছেন : জাযাকাললাহ খাইর, ভাই

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File