আসুন দুজন ভাষা সৈনিকের জীবন সম্পর্কে জানি।দুজনই তৎকালীন " দেশ ভাগের সময় পাকিস্তানের সমর্থক" ছিলেন, যা ছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ( সম্প্রতি স্কটল্যান্ডের ৫৫% মানুষ দেশ ভাগ না চেয়ে "নো" ভোট দিয়েছে), কিন্তু যুদ্ধাপরাধ/মানবতা বিরোধী অপরাধ তাঁরা করেন নি। সেটাতো করেছিল পাকিস্তান আর্মি। (অনুগ্রহ করে পড়ে দেখুন শেষ পর্যন্ত) ।

লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ২৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০৭:৫৭:২৬ সন্ধ্যা



★ ১ম জন ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সরকার ঘোষিত ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে ১১/৪ সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত অমান্য করার পক্ষে অবস্থান গ্রহণকারী ছাত্রদেরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার সভায় ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্তটিই পাস হয়েছিল তাঁর জ্বালাময়ী ভাষণের প্রভাবে।

আর ২য় জন:

@ ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ একদল ছাত্র নিয়ে ভাষা আন্দোলনের পক্ষে পিকেটিং করার সময় সদলবলে গ্রেফতার হন এবং তেজগাঁও থানায় বেড়া-বিহীন টিনের ঘরে সাত দিন রোদ বৃষ্টিতে অসহনীয় যন্ত্রণায় ভুগেছেন।

@১৯৪৮ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকায় সফররত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে গোলাম আযম রাষ্ট্রভাষা ও পূর্ব পাকিস্তানের সামগ্রিক দাবী সম্বলিত ঐতিহাসিক ‘অভ্যর্থনা স্মারকলিপি’ প্রদান করেন। উল্লেখ্য, ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ঢাকসু) জি.এস. ছিলেন।

@ ১৯৫২ সালে মার্চের ৬ তারিখে রংপুরে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে গ্রেফতার হয়ে একমাস রংপুর জেলে অন্তরীণ ছিলেন।

@২১ ফেব্রুয়ারী যাতে পালন করতে না পারেন তার জন্য ১৯৫৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং দু মাস পরে হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তি লাভ করেন।

@ ১৯৫৫ সালে কারান্তরীণ অবস্থায় রংপুর কারমাইকেল কলেজের চাকুরী থেকে তাকে অব্যহতি দেয়া হয়। গভর্নিংবডির পক্ষ থেকে জেলে তাকে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয় যে, বার বার গ্রেফতার হওয়ায় ছাত্রদের পড়ার ক্ষতি হয় বলে কলেজে তাকে আর প্রয়োজন নেই।

অথচ উনাকে এখন ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতিও দেওয়া হয়নি।ডাকসুর অফিস থেকে উনার ছবিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

★ ১৯৫৪ সালের দিকে প্রথম জন কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। আর দ্বিতীয় জন তাবলীগ জামাত থেকে যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীতে।



★১৯৭১ সালে দুজনই দেশ বিভাগের বিরোধিতা করেন। ১ম জনের বিরোধিতার কারন হলো, উনি ছিলেন চিনপন্থী কমিউনিস্ট। আর চিনমুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। আর ২য় জন বিরোধিতা করেছিলেন, কারন উনার আশঙ্কা ছিল দেশ ভাগ হলে এদেশটি একসময় ভারতের তাবেদার রাজ্যে পরিণত হবে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ১ম জন এ স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেননি, এরপরও তিনি নিজের দলের নাম পুর্ব-পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি বলে পরিচয় দিতেন এবং নব গঠিত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যান।

ভাষা আন্দোলনের পরের বছর মতিন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু এর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়ে কৃষকদের সংগঠিত করার সাধনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ষাটের দশকের শেষের দিকের ‘লালটুপি’ কৃষক আন্দোলনেরও প্রাণপুরুষ ছিলেন মতিন। কমিউনিস্ট পার্টির ভাঙন-পুনর্গঠন, আবারও ভাঙনের ওই ধারায় তাঁর অবস্থান যে একপর্যায়ে ভুল ছিল, সেটা তিনি নিজেই স্বীকার করেছিলেন। ভারতের নকশালবাড়ী আন্দোলনের চরমপন্থী কৌশল দ্বারা প্রভাবিত মতিন-আলাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী গ্রুপের তৎপরতা স্বাধীনতা-পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের জন্যও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ফলে ১৯৭২ সালেই শেখ মুজিব সাহেবের আমলে মতিন গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন প্রায় চার বছর, ১৯৭৬ সালে তিনি মুক্তি পান।( রাষ্ট্র ও রাজনীতি/ ভাষা–মতিন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পেলেন না, রাষ্ট্রটি কার?

মইনুল ইসলাম | প্রথম আলো অক্টোবর ২২, ২০১৪)

আর অপর জন দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের স্বাধীনতা মেনে নেন। সক্রিয় রাজনীতিতে বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখেন। এমনকি কেয়ার টেকার সরকারের প্রথম প্রস্তাবও তিনিই করেছিলেন। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর ভালোবাসা দিয়ে তিনি সবাইকে আপন করে নেন এবং স্বাধীন দেশের জন্য অবিরাম কাজে আত্তনিয়োগ করেন। দেশ গঠন, রাজনীতি ও লেখালেখি তাঁর প্রিয় কাজ হয়ে উঠে। তিনি ৯৯টির মত বই লিখেছেন। উনার ছেলেরা দেশের বাইরে প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু কখোনই তিনি বিদেশে অবস্থান করার পক্ষে ছিলেন না । তাঁর বক্তব্য পরিষ্কার- মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মত কোন অপরাধ করি নি। ২০০১ সালের আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন নিছক স্বাধীনতা বিরোধী (!), বি এন পির সাথে জোট করার পর থেকে আওয়ামিলীগ ও বাম রা ভোটে পরাজিত হয়। জামায়াতে ইসলাম রাজনীতিতে একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে রুপান্তরিত হয়, যা তাঁদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।তাই জামায়াতের কণ্ঠ রোধ এবং সৎ ও আদর্শ নির্ভর ইসলামী মতাদর্শে ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত গঠন করা হয় আওয়ামি- ট্রাইব্যুনাল। আর আদর্শবান নেতাদের বানানো হয় যুদ্ধাপরাধী। সর্ব শেষ তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করার আহবান করে গেলেন।

★ ১ম জন হলেন সদ্য প্রয়াত ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন এবং ২য় জনও সদ্য প্রয়াত ভাষাসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম। ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন সসম্মানে মৃত্যুবরণ করেন, এবং তাঁকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয় আরেক ভাষাসৈনিক গোলাম আযম জঘন্য সব অভিযোগের বোঝা মাথায় নিয়ে বৃদ্ধ বয়সে অন্তরীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেন । তাহলে গোলাম আযম সাহেবের অপরাধ কি? ইউনাইটেড পাকিস্তান সমর্থন ? সেটাতো ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন সাহেবও করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধ/মানবতা বিরোধী অপরাধ ? সেটাতো করেছিল পাকিস্তান আর্মি

@ একজন বাম রাজনীতি করেছেন বলে সব মাফ, আরেক জন ইসলামের আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করেছেন- তাই সব দোষ তাঁর ঘাড়ে; বাংলাদেশের মানুষ এই খেলা বুঝে গেছে অনেক আগেই।

আল্লাহ তায়ালা এই উভয় বীর কে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন।

( লেখাটিতে ভাই মাহদী হাসান মুয়াজ থেকে সহায়তা নেওয়া হয়েছে)

বিষয়: বিবিধ

১৫৯৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

277888
২৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:১৮
আবু জারীর লিখেছেন : ওদের ভাষায় এদেশ স্বাধীন হয়েছে ধর্মহীন হওয়ার জন্য তাই ওরা ধর্মহীনদের বন্ধু ভাবে তা সে শত্রু মিত্র যাই হোক আর ধার্মিকদের সাথে শত্রুতা করে তা সে নিকট আত্মীয়ই হোক বা দূরের কেউ।
277920
২৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৫৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন :
তার একটি বই এর নাম "খাঁটি মুমিন হতে গেলে তাগুতের পাক্কা কাফির হতে হবে"। আজকে তার ইন্তিকালের পর আমি নিশ্চিত তিনি তাই ছিলেন। দেশের এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তার জানাজা ও দোয়া নিয়ে হলুদ মিডিয়াগুলির কোন খবর নাই। শুধু কয়েকজন নিন্মরুচির লোকের সাক্ষাতকার দিয়ে তাকে অপরাধি প্রমানের চেষ্টা! তার প্রতি তাগুতি শক্তির এই আচরন তার প্রতি শ্রদ্ধাকে নিঃসন্দেহ করছে।






277941
২৫ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০২:২৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : Chalam. Heart touching. Jajakallahu khair.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File