"সোলার সিস্টেম, পৃথিবী তথা আমরা এবং আল্লাহর দয়া"
লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ২০ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:০০:৪২ রাত
আমরা জানি যে পদার্থের ৩ অবস্থা। কঠিন, তরল ও বায়বীয়। কখনো কী প্রশ্ন করেছেন এটি কেন? এটি তাপের কারণে। যে কোন পদার্থ তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে এই ৩ অবস্থায় পরিণত হতে বাধ্য। যেমন পানি সাধারণ তাপে তরল, বেশী তাপে বায়বীয় এবং মাইনাস তাপমাত্রায় বরফ তথা কঠিন অবস্থায় থাকে। যদি প্রশ্ন করি পদার্থ কী? সহজ উত্তর হল যার আয়তন আছে ও জায়গা দখল করে এমন বস্তুই হল পদার্থ। এখন বায়বীয় অবস্থা পদার্থ কিনা? যেমন গ্যাস? উত্তর হল- হ্যাঁ, কারণ এর আয়তন আছে এবং জায়গাও দখল করে। সুতরাং পৃথিবীর যাবতীয় কিছুই এই ৩ অবস্থায় আছে।
এই যে পদার্থের বিভিন্ন অবস্থা যা তাপমাত্রার কারণে হয়ে থাকে, এই তাপের উৎস কী? নিঃসন্দেহে সূর্য। মানুষের কাছে এ পর্যন্ত অর্জিত জ্ঞান আমাদেরকে বলছে যে সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহগুলো ঘুরছে ( কোরআন কী বলছে একটু পরেই বলছি), এখন একটু ছবি গুলোর দিকে খেয়াল করে দেখুন বুধ/Mercury এবং শুক্র/Venus এই দুটি গ্রহ সূর্যের সবচেয়ে কাছে। নেপচুন/Neptune এবং প্লুটো Pluto সবচেয়ে দূরে নিজ নিজ কক্ষপথে । পৃথিবী তথা Earth গ্রহ অনেকটা মাঝামাঝি দুরুত্তে অবস্থিত।
আবার আসুন আরেকটু মাথা খাটাই। বুধ এবং শুক্র গ্রহদুটি সূর্যের কাছে তাই এত বেশী তাপমাত্রা ওখানে পৌঁছায় যে প্রানী তথা মানুষ বসবাসের উপযোগী নয় আবার দুরের গ্রহ নেপচুন যা পৃথিবীর তুলনায় ২৯ গুণ বেশী দুরুত্তে অবস্থিত ফলে সূর্যের কাছ থেকে তাপ কম পৌঁছায় যে কারনেই নেপচুন গ্রহে তাপমাত্রা মাইনাস ২০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস, ফলে পুরো গ্রহই একটি বৃহৎ বরফের টুকরা।http://www.bbc.co.uk/iplayer/episode/b04lpvzv/the-sky-at-night-ice-giants
একমাত্র পৃথিবী তথা Earth গ্রহ এমন একটা ব্যালান্সড দুরুত্তে অবস্থিত ফলে তাপমাত্রা এখানে সহনীয় পর্যায়ে যদ্দরুন পদার্থ এখানে কঠিন, তরল ও বায়বীয় অবস্থায় আছে যা আমাদের জীবনের জন্য তথা গোটা প্রাণীকুলের বসবাসের অনুকূলে এবং এ কারনেই পৃথিবী এত সবুজ,সুন্দর এবং সতেজ।
এই বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে আসুন এবার আমরা আরো কিছু বিষয় পর্যালোচনা করি।
১, এই বিষয় গুলো মানুষের মস্তিষ্ক প্রসূত চিন্তা তথা জ্ঞান। আর জ্ঞান আল্লাহর দান। পৃথিবীর প্রথম মানব ( সব ধর্মের মানুষই স্বীকার করে যে আদম আঃ প্রথম মানুষ) আদমকে আঃ আল্লাহ তা'য়ালা জ্ঞান শিক্ষা দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন। যার ধারাবাহিকতায় সকল যুগে প্রত্যেকটি মানুষ জ্ঞান লাভ করেছে, আমারা এবং আমাদের সময়ের নিউটন, আইনস্টাইন, গ্যালাক্সি আবিষ্কারক ইবনুল কাইয়ুম আল যাউজিয়া, আল খাওয়ারিজমী, ইবনে সিনা, আঃ সালাম, স্টিফেন হকিং সহ সবাই কিছুটা হলেও জ্ঞানের অধিকারী হয়েছি।
আল্লাহ বলেনঃ "আর আল্লাহ তা'য়ালা শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম......।"
( সুরা বাকারাঃ ৩১ অংশ বিশেষ)
২, এই যে এতক্ষণ সূর্য, তাপ, পৃথিবী তথা মহাবিশ্ব নিয়ে আমরা একটুখানি চিন্তা করলাম, এটি আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীনের পরিকল্পিত সৃষ্টি। আজকের মানুষ জেনেছে পৃথিবী ছাড়াও আরো ৮টি ( যদিও আরো আবিষ্কৃত হতে পারে) জগত তথা গ্রহ আছে, কিন্তু আল কোরআন ১৪০০ বছর আগেই নবী মুহাম্মদের সাঃ মুখে ঘোষণা করেছেন জগত শুধু একটি নয়, বরং বহু।যেখানে তিনি আ'লামীন তথা বহুবচন উল্লেখ করেছেন মানে জগতসমুহ। তাইতো আল্লাহ তায়ালা সুরা আল ফাতিহায় বলেছেনঃ "যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার যিনি সৃষ্টিজগত সমুহের পালনকর্তা"।
- সুরা আল ফাতিহাঃ ০১
এখানে খেয়াল করার মত বিষয় হল হয়তো এটিও আল্লাহ তায়ালার হিকমত যে, তিনি কোরআনের মত জ্ঞান সমৃদ্ধ এমন একটি পথ নির্দেশিকা গ্রন্থ একজন পড়ালেখা না জানা ব্যক্তি তথা হজরত মুহাম্মাদের সাঃ উপর নাজিল করেছেন, যাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ না থাকে যে এটি মানুষের কোন জ্ঞানলব্দ বাণী হতে পারে।
৩, এখন পর্যন্ত অর্জিত জ্ঞান বলছে যে পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহগূলো সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে।ছবিতে খেয়াল করে দেখুন। কোরআন বলছে শুধু গ্রহগুলোই নয় বরং সূর্যও তার কক্ষপথে ঘুরছে। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।
"সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ।"
-সুরা ইয়াসিনঃ ৩৮
"চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জূর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়।''
-সুরা ইয়াসিনঃ ৩৯
"সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।"
সুরা ইয়াসিনঃ ৪০
৪, এই যে সবগুলো গ্রহের তাপমাত্রার উৎস সূর্য, আপাতঃ দৃষ্টিতে যাকে গ্রহ- নক্ষত্রের মাঝে খুব শক্তিশালী বলে মনে হয়; এটি স্রষ্টা কিনা- মানুষ এমন প্রশ্নও করেছে। আজ থেকে সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে হজরত ইব্রাহীম আঃ এমন প্রশ্ন করেছিলেন অবশেষে তিনি প্রকৃত রবের সন্ধান পেয়ে গেলেন।
সুরা আল আনয়ামঃ ৭৫-৭৯
আমি এরূপ ভাবেই ইব্রাহীমকে নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের অত্যাশ্চর্য বস্তুসমূহ দেখাতে লাগলাম-যাতে সে দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে যায়।
অনন্তর যখন রজনীর অন্ধকার তার উপর সমাচ্ছন্ন হল, তখন সে একটি তারকা দেখতে পেল, বললঃ ইহা আমার প্রতিপালক। অতঃপর যখন তা অস্তমিত হল তখন বললঃ আমি অস্তগামীদেরকে ভালবাসি না।
অতঃপর যখন চন্দ্রকে ঝলমল করতে দেখল, বললঃ এটি আমার প্রতিপালক। অনন্তর যখন তা অদৃশ্য হয়ে গেল, তখন বলল যদি আমার প্রতিপালক আমাকে পথ-প্রদর্শন না করেন, তবে অবশ্যই আমি বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।
অতঃপর যখন সূর্যকে চকচক করতে দেখল, বললঃ এটি আমার পালনকর্তা, এটি বৃহত্তর। অতপর যখন তা ডুবে গেল, তখন বলল হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা যেসব বিষয়কে শরীক কর, আমি ওসব থেকে মুক্ত।
আমি এক মুখী হয়ে স্বীয় আনন ঐ সত্তার দিকে করেছি, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরেক নই।
৫, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, তারকারাজি তথা সামগ্রীক অর্থে মহা বিশ্ব যা কিছুই মানুষ জানে আর যা জনেনা- সকল কিছুই মহান আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি, তাঁর অধীন, আজ্ঞাবহ এবং কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। সুতরাং আজকের বিজ্ঞান যদি পৃথিবী পেরিয়ে মঙ্গল গ্রহ কিংবা চাঁদেও বসবাস শুরু করে সেটা আল্লাহ প্রদত্ত ঠিক ততটুকুই যতটুকু তিনি মানুষকে জানার সুযোগ দিয়েছেন। দেখুন নিচের আয়াতটিঃ
"হে জিন ও মানবকূল, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের প্রান্ত অতিক্রম করা যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায়, তবে অতিক্রম কর। কিন্তু ছাড়পত্র ব্যতীত তোমরা তা অতিক্রম করতে পারবে না"
- সুরা আর রাহমানঃ ৩৩
বুধ Mercury
শুক্র Venus
পৃথিবী Earth
মঙ্গলগ্রহ Mars
বৃহস্পতি Jupiter
শনি Saturn
ইউরেনাস Uranus
নেপচুন Neptune
প্লুটো Pluto
পরিশেষে দুটি কথাঃ
একঃ মহাবিশ্ব নিয়ে এত গবেষণা যারা করলেন তাঁরা জগতখ্যাত বিজ্ঞানী হলেন, কিন্তু যিনি এসব সৃষ্টি করলেন- সেই আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন কে যদি তাঁরা না চেনেন, তাহলে প্রকৃত জ্ঞান থেকে বহু দুরেই নিজেদের গবেষণা সীমাবদ্ধ রাখলেন।তাঁদের মধ্যে যারা বলে যে এগুলো এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে, তাদের বলবো- মুখোমুখি দুটি ট্রেন এক্সিডেন্ট করলে অসংখ্য লোহার টুকরা পড়ে থাকে কিন্তু আপনার জুতায় লাগানো যাবে এরকম একটি "পিন" কী তাৎক্ষণিক প্রস্তুতকৃত পাওয়া যাবে? বাসে-বাসে সংঘর্ষ হয়ে অসংখ্য কাঁচের টুকরা পড়ে থাকে কিন্তু আপনার চশমায় লাগানো যাবে এমন সাইজ করা একটিও কী পাওয়া যাবে? তাহলে বুঝা গেল এক্সিডেন্টলি যা হয় সেটা মানুষের কোন কাজে আসে না। তেমনি গোটা বিশ্ব এমনি-এমনি এক্সিডেন্টলি তৈরি হয়ে যায়নি। যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই সর্ব শক্তিমান আল্লাহ।আল্লাহু আকবর। আল্লাহু আকবর। আল্লাহু আকবর।
দুইঃ যে কোরআনের প্রথম বাণী হল "পড়" এবং আমাদেরকে সেই ১৪০০ বছর আগেই জানিয়ে দিয়েছে যে পৃথিবীই শুধু গ্রহ নয়, আরো গ্রহ আছে; সেই গ্রন্থে বিশ্বাসী মুসলিম হয়ে "পড়া ও গবেষণা" সিকেয় তুলে রেখেছি আমরা। বর্তমান কালের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় সমুহ কোথায় এবং কারা গবেষণায় ব্যস্ত আর কারা আরাম আয়েশ, সিংহাসন, রাজ্য , ক্ষমতার আত্ন-লড়াই আর ভোগে লিপ্ত- সেদিকে একটু খেয়াল করলে সহজেই বুঝা যায়। তাই পদার্থের এই পৃথিবীতে নিজেদেরকে শুধু অপদার্থই মনে হয়। নিজেকে অপদার্থের কাতারে আবিস্কার করেছি " অন্তর মম বিকশত করো" এই বইটি পড়ার পরে- বhttp://www.ziaulhaque.co.uk/published_books/Ontor%20momo%20Bikoshito%20koro%20he.pdf ।
উৎসঃ আল কোরআন, বিবিসি ডকুমেন্টারি।
বিষয়: বিবিধ
২৮৬৩ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন