"ভাষা আন্দোলন, জনাব ভাষা মতিন ও আমাদের স্বাধীনতা"

লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ১০ অক্টোবর, ২০১৪, ০১:২৩:০৬ রাত



চলে গেলেন ইতিহাস আর সংগ্রামের জীবন্ত সাক্ষী জনাব আব্দুল মতিন তথা ভাষা মতিন। আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য প্রতিদান কামনা করছি।

তিনি চলে গেছেন তাই তাঁর মুখ থেকে আর ৫২'র স্মৃতিকথা শুনতে পাবো না। ভাষা সৈনিক আরো কজন এখনও জীবিত। এইযে যারা চলে গেছেন আর যারা বেঁচে আছেন- আমরা কি তাঁদের মূল্যায়ন করতে পেরেছি? অত্যাচারের বিরুদ্ধে শোষিতের পক্ষে তাঁদের যে সংগ্রাম ও আদর্শ ছিল, আমরা কি জাতি হিসেবে সেটা ধারন করতে পেরেছি? না, আমি বলছি না যে গাড়ি- বাড়ি আর চিকিৎসা সুবিধা দিয়ে তাঁদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। বরং তাঁরা আমাদের কাছে এগুলো চাননি। যদি তাই চাইতেন তাহলে ৫২ সালে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করে বরং উল্টো সুবিধা নিতে পারতেন বৈকি! বরং তাঁরা চেয়েছিলেন এই সমাজকে এমনভাবে দেখতে যেখানে ভাষা, অর্থনীতি ও সামাজিক ন্যায়নীতি এর কোন ক্ষেত্রে কেউ বৈশম্যের শিকার হবে না। আমরা কি তাঁদের এই আদর্শ ধারন করবো নাকি শুধু বছরে একটি দিনে তাঁদের সমাধী ও স্মৃতিসৌধে খালি পায়ে ফুল হাতে অশ্রুসজল নয়নে নির্বাক শোক প্রকাশ করে যাবো?

আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখনই, আমরা কোনটি করবো। আর এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদেরকে সেইসব আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আরেকবার ভালো করে ভেবে দেখতে হবে।জীবন দিয়ে করা ভাষা আন্দোলন মানে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের স্বীকৃতি নয় বা এটি শুধু কোন স্লোগান নয় বরং ২১ ফেব্রুয়ারি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সামাজিক ন্যায়নীতির পক্ষে দৃড়ভাবে আপোষহীন আন্দোলনের ও সে মোতাবেক সমাজ বিনির্মাণের একটি উজ্জ্বল স্মরণিকা, আর এটিই হলো সেই মূল্যায়ন- আজ যা খুবই প্রয়োজন।

দুদিন ধরে জনাব ভাষা মতিনের টেলিভিশনে দেওয়া একটি সাক্ষাতকার খুব বারবার মনে পড়ছে। করণ তাঁরা জীবিত থাকতেই যেভাবে ইতিহাস চুরি, বিকৃতি ও ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে ও হচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই যে তাঁদের অবর্তমানে তা আরো ভয়াবহ রুপ ধারন করবে শীঘ্রই। জনাব আব্দুল মতিন থেকে আমার নিজ কানে শুনা.........

"২০ ফেব্রুয়ারি একটি পার্টি অফিসে বিকেল বেলা পাকিস্তান সরকারের ১৪৪ ধারা নিয়ে আলোচনা হয়। উপস্থিত ১৫ জন নেতার মধ্যে একটি দলের ৪ জন পরের দিনের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার এবং ১১ জন ভঙ্গ করার মৌখিক ভোটাভুটির মাধ্যমে মত দেন। সেখানে এই ১১ জনের নেতৃত্ত দেন জনাব ভাষা মতিন। সেমতে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২, ক্যাম্পাসে যেয়ে তাঁরা ঘোষণা করেন যে আমরা ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে মিছিল করবো; সাথে সাথে ছাত্র-শিক্ষক-জনতা গর্জে উঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অতঃপর পুলিশের নির্মম গুলি, আহত, লাশ......পরিশেষে বিজয়"।

অথচ খেয়াল করে দেখবেন, একটি দল সব অর্জনকে নিজেদের বলে চালিয়ে দিচ্ছে সব সময়। ১১/৪ ভোটে সেদিন হ্যা/না ভোটে যারা মতামত দিয়েছিল, সেমোতাবেক দলীয় বিবেচনায় নিলে আমাদের অর্জন কতটুকু হতো তা আজ সহজেই অনুমেয়।একটি দলের পক্ষ থেকে ইতিহাসের সব অর্জনকে নিজেদের বলে চালিয়ে দেবার সেই যে ব্যাধি তা আজ মারাত্মক পর্যায়ে উপনীত, জাতি আজ বিভক্ত।

১৯৭০ এর নির্বাচনে যেই দলটি সর্বাধিক ভোট পেয়ে ইউনাইটেড পাকিস্তানের নেতৃত্তের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল, ২০১৪ সালে সেই দলটিই মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে অগণতান্ত্রিকভাবে গায়ের জোড়ে ক্ষমতায়। ৪৪ বছরে কী পেল বাংলাদেশ। আমরা কী এগিয়েছি নাকি আরো পিছিয়েছি? কোথায় থাকতে পারতাম আমরা, আর আছি কোথায়???

বিষয়: বিবিধ

১২১৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

272782
১০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৯:৪০
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : আমরা যদি যার যার কৃতিত্ব তাকে তাকে দিতে পারতাম তাহলে হয়তো জাতি আজ বিভক্ত হতো না এবং দেশও অনেক উন্নতি লাভ করতো। ভালো বিশ্লেষণ করেছেন ধন্যবাদ
১০ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:০৬
216982
রঙ্গিন স্বপ্ন লিখেছেন : খাঁটি কথাই বলেছেন
ধন্যবাদ
272790
১০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:০৮

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File