"লঞ্চডুবিঃ কারণ, প্রতিকার ও আগামীর ভাবনা"
লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ০৮ আগস্ট, ২০১৪, ০৫:৪২:১৯ বিকাল
যে ৩০০ জন যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি ডুবে গেল সেই ৩০০ জনের জীবন কী মানুষ হিসেবে ৩০০ জন সাংসদের চেয়ে কোন অংশে কম মূল্যবান?
লঞ্চডুবি কোন রাজনৈতিক ঘটনা বা ইস্যু নয়। না আওয়ামিলীগ না বিএনপি।
সব সরকারের আমলে একই ঘটনার পুনঃরাবৃত্তি ঘটছে।
কিন্তু কেন? আর কত?
এর সমাধান কোথায়?
মানুষের জীবন কী এতই সস্তা?
কৈ কোন বিচারক কে তো দেখি না লঞ্চডুবির ঘটনায় "সপ্রনোদিত হয়ে রুল জারী করতে?
অথচ চোখ তুলে কোর্ট ভবনের দিকে তাকালেও মাঝে মাঝে আদালত অবমাননার রুল জারী হয়।
দেখিনি কোন সরকারের কোন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করে মিনিমাম সৌজন্যতা দেখাতে।
লঞ্চ মালিক, চালক, ঘাট পরিদর্শক, পুলিশ - কাউকেই শাস্তি পেতে দেখিনি।
তাহলে কী করা যায়? আসুন তাহলে কিছু মতামত জেনে নেই-
সুলতানাঃ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিনা। কয়েকটি বিষয় সরকার করতে পারে কি ?
১) ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশী যাত্রী যাতে না ওঠে সেই ব্যবস্থা কঠোর ভাবে monitor করা। আমাদের দেশের জনগনকেও আরও সতর্ক হতে হবে। ঢাকায় যেমন দেখি, বাসে যাত্রী উঠতে থাকে তো উঠতেই থাকে, নিষেধ করলেও শোনেনা। জোর করে ঠেলা গুতা দিয়ে ওঠে।
২) বেশী করে উননত মানের দ্রুতগতির লঞ্চ সরবরাহ করা।
৩) লিফটের মত alarm system install করা যাতে ধারন ধারণক্ষমতার বেশী যাত্রী উঠলেই alarm বেজে ওঠে।
৪) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সব মন্ত্রণালয়েই ভাল বেতন ও সুযোগ সুবিধা সহ কিছু Inspector নিয়োগ দেয়া যাদের First and prime priority হবে honesty; যারা ঘুষ খাবেনা, যাদের মানবিক এবং ন্যয়নীতি বোধ থাকবে এবং এদের নিয়োগ, ঘুষ বানিজ্য কিংবা স্বজনপরিতির মাধ্যমে হবেনা। এই Inspector রা সব ধরনের অব্যাবস্থাপনার বিরুদ্ধে কাজ করবে স্বাধীনভাবে।
৫) লঞ্চে CCTV install করা।
মাসুদঃ খুব কষ্টের খবর । আমরা যদি দূর্ণীতিগ্রস্থ না হতাম, তাহলে এত দিনে পদ্মা সেতু হয়ে যেত , হয়ত এই মানুষ গুলাও এইভাবে মারা যেত না ।
তামিমঃ আমার একটা জিনিস ভাবতে খুবই কষ্ট লাগে, ৮৫ জন ধারন ক্ষমতার লঞ্চে যারা 'অতিরিক্ত' যাত্রী হয়ে লঞ্চে উঠেছিল, তারা কোন ভরসায় লঞ্চে উচেছিল? আপনি অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে না উঠলে কে আপনাকে জোর করে লঞ্চে উঠাবে?
রাশেদঃ @তামিম-
আপনারা যারা এই পথে যাতায়াত করেন না তাদের কিন্তু আসল অবস্থাটা জানা নাই। আমি গত ৩ আগস্ট(দুর্ঘটনার আগের দিন) বিকেলে এই পথ দিয়েই লঞ্চ পারাপার হই। নদীতে যে পরিমাণ ঢেউ ছিল আমি মনে হয় গত সাত-আট বছরে এমন ঢেউ এর কবলে পরেছি বলে মনে পড়ে না। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছিল এই বুঝি কাত হয়ে গেল......, অবশেষে আল্লাহ্ তা’লার মেহেরবানীতে পার হতে পেরেছি।
তামিম ভাইদের হয়তো জানা নেই লঞ্চ ততক্ষণ পর্যন্ত ছাড়বে না যতক্ষণ না পর্যন্ত কানায় কানায় পরিপূর্ণ হবে। আপনার বলার কিছুই নেই। নেমে গিয়ে পরেরটায় উঠবেন...... একি অবস্থা। আমি যেদিন আসলাম ওইদিনও লঞ্চে জায়গা নেই তাও তারা জোর করে যাত্রী উঠাচ্ছে অথচ ঘাটে পুলিশ দিব্যি পাহাড়া দিচ্ছে। যদিও তাদেরও কিছু করার নেই কারণ পুলিশের চেয়ে লঞ্চ মালিকদের হাত অনেক লম্বা। আমরাও এইভাবে ঝুঁকি নিয়েই সবসময় পার হই, কিন্তু কার কাছে অভিযোগ করব, করেই বা কি লাভ......কয়দিন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হবে তারপর হয়তো আস্তে আস্তে মানুষ হাজারও ঘটনার ভীরে ভুলে যাবে। কিন্তু যে মা তার সন্তানকে হারিয়েছে, যে সন্তান তার পিতা-মাতাকে হারিয়েছে তার এই ক্ষত কি কোনদিন মুছবে...... খুব কান্না পাচ্ছে......ওই লঞ্চটায় তো আমিও থাকতে পারতাম......
আমরা এমন এক দেশে বাস করছি যেখানে না ঘরে, না রাস্তায়, না বাসে, না লঞ্চে......কোথাও কারো জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে, কিন্তু আমাদের কি কিছুই করার নেই.........পদ্মা সেতু নিজেরা করবেন করেন , আজ করেন না হয় পঞ্চাশ বছর পরে করেন আপত্তি নাই, কিন্তু আমরা পদ্মার পারের এই অবহেলিত লোকগুলি কিভাবে পারাপার হই একটু দেখেন.........
আরিফঃ @ তামিমঃ যাত্রীদের জোর করেই লঞ্চে উঠানো হয়, লঞ্চে যতক্ষণ অতিরিক্ত যাত্রী না হয় ততক্ষণ লঞ্চে ছারে না। শরিয়তপুর থেকে ঢাকা আসতে হলে এই ভয়ঙ্কর পদ্মা পাড়ি দেওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ নাই। আমরা জিম্মি!!! আমরা জিম্মি!! আমরা জিম্মি!
দস্তগীরঃ এসব লঞ্চঘাটে ইজারাদার, লঞ্চ মালিক, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলের কিছু হোতাদের সমন্বিত সিন্ডিকেটই এর জন্য দায়ি । অনেকে বলেন যাত্রী কেন বোঝা হয়ে ওঠেন ? কিন্তু বাস্তব হল, এই সিন্ডিকেট তাদের ইচ্ছামত লঞ্চ না পুরে ছাড়েই না , তখন সাধারণ যাত্রীদের কীইবা করার থাকে ? সুতরাং এ সমস্যার মূলে আঘাত করুন, নয়তো চিরকাল এভাবেই মানুষ মরবে ।
মামুনঃ এসব আমাদেরকে বাকরুদ্ধ করে দিচ্ছে। সরকারের দায়িত্ব যেমন আনফিট যান চলাচলে বাধা দেওয়া তেমনি কোন কারনে দূর্ঘটনা ঘটলে তরিত ব্যাবস্থা নিয়ে একটু হলেও স্বস্তি দেওয়া। এসব নানা কারনে দূর্ঘটনা গুলোকে হত্যা বলে ধরে নেয়া হয়।
সোহাগঃ আর কত কত লাশ দেখলে কর্তা ব্যাক্তিদের ঘুম ভাংবে বলতে পারেন,প্রতিবছর দুর্ঘটনা ঘটছে তারপরও এ মৌসুমে কেনো অতিরিক্ত তদারকির ব্যবস্থা করা হয়না।কোন জানোয়াররা এসব ফিটনেসবিহীন জাহাজের অনুমোদন দেয় তাদের কেনো ধরা হয়না?বিচার আল্লার কাছে আর হারিয়ে যাওয়া সকল যাত্রিদের আললাহ মাফ করুন ।
টিটুঃ ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় দেখেছি দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশকে ১৫০- ২০০ টাকা দিচ্ছে আর সে পুলিশ নিজে দাড়িয়ে থেকে অতিরিক্ত যাত্রী লন্ঞে তুলে দিচ্ছে।
শফিকঃ টাকার মূল্য এত বেড়ে গেছে যেখানে জিবনের কোন মূল্য নেই। মানুষ সবাই টাকা আর ক্ষমতা অর্জন নিয়ে ব্যাস্ত। মানবতা বোধের কোন স্থান নেই ।
রাজিবঃ কখন বুঝবে একটি দেশ ও সমাজ নষ্ট হয়ে গেছে, যখন দেখবে দরিদ্ররা ধৈর্যহারা হয়ে গেছে, ধনীরা ক্বৃপন হয়ে গেছে, মূর্খরা মঞ্চে বসে আছে, জ্ঞানীরা পালিয়ে যাচ্ছে এবং শাসকরা মিথ্যা কথা বলছে।
আসুন সামনের দিনে খেয়াল রাখিঃ সুতরাং সাবধান হওয়া লাগবে বৈ কি
আশেকঃ আসছে বছর বা দুমাস পর কোরবানীর ঈদও এমনই ঘটবে; প্রতি বছরই ঘটছে;
কিন্তু এর কোন প্রতিকারের ব্যাবস্থা হচ্ছেনা। এই মন্ত্রীও পরবর্তী তিন/চার দিন বিভিন্ন সভায় বা টকশোতে টক, টক করে কিছু বলবে। গোল্ড ফিশের মগজের চেয়েও ক্ষনস্থায়ী স্মৃতিশক্তির আমরা খুব শিঘ্রই অন্যকিছুতে ব্যাস্ত হয়ে যাব।
জিল্লুর রহমান লিখেছেনঃ
আপনাদের মাধ্যমে আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, টেকনাফ টু সেন্টমার্টিন রুটে কেয়ারি সিন্দাবাদ কত যাত্রী পরিবহনের অনুমতি নিয়েছে? আমার জানামতে ২৫০ যাত্রীর অনুমতি আছে। কিন্তু তারা কখনোই ৫০০- ৭০০ যাত্রীর কম নেয়না। একই অবস্থা এই রুটের অন্য জাহাজগুলোর ।
বিষয়: বিবিধ
১২৬৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন