"বখতিয়ারের ঘোড়া" ও জন্মদিনে কবির কান্না।
লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ১৩ জুলাই, ২০১৪, ০৭:৩১:১১ সন্ধ্যা
"ওহে কবি শুনুন!
শুধু আপনি না, আপনার মত আমি-আমরা অসংখ্য মুক্তিকামী পাঠকেরা,
কেঁদেছি অনেকবার......
"বখতিয়ারের ঘোড়া" পড়েছি যতবার।"
রাশেদ: ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ কবিতাটা শোনাই। শুনে কবিতাটা নিয়ে কিছু বলুন।
আল মাহমুদ: এটা তো আমার ধারণা, ভালো কবিতা। খুবই ভালো লেখা। কবিতাটা যখন লিখছিলাম, তখন হৃদয় উজাড় করে লিখেছিলাম। শোনাও.......
[‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ শুনতে শুনতে আল মাহমুদ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। তাঁর চোখ মুছে দেওয়া হলো। তারপর তিনি বললেন] দ্যাখো কবিতা কী করতে পারে। কবিতার সংক্রাম থেকে মানুষ আত্মরক্ষা করতে পারে না। আসলে আজকে আমি অনেক আবেগাকুল হয়ে আছি।
"আল মাহমুদ"-‘কবিতার সংক্রাম থেকে মানুষ আত্মরক্ষা করতে পারে না’- প্রথম আলো/১১ জুলাই
বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবি আল মাহমুদের বয়স ৭৯ বছর শুরু হলো আজ(১১ জুলাই), তিনি অসুস্থ, চোখে ভালো দেখতে পান না, অনেক কিছু মনেও করতে পারেন না। আগের মেজাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলতে না পারলেও কখনো কখনো ঠিকই জ্বলে উঠেছেন। ৫ জুলাই কবির মগবাজারের বাসায় সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাফর আহমদ রাশেদ ।
রাশেদ: পৃথিবী বদলে যায়। বিশ্বাসও বদলায়। আপনার বিশ্বাস কি বদলেছে?
আল মাহমুদ: না, যেকোনো কারণেই হোক, আমার বিশ্বাস বদলায়নি। আমার ভেতরে যে বিশ্বাস ছিল, তার ওপর আমি অনেক পড়াশোনা করেছি। মার্ক্সবাদ নিয়েও পড়াশোনা করেছি। কিন্তু আমার ভেতর থেকে একজন আমাকে সব সময়ই বলত, প্রে, মানে প্রার্থনা করো।
রাশেদ: আপনার ‘জেলগেটে দেখা’ কবিতার দুটো লাইন শোনাই......
‘আমি কতবার তোমাকে বলেছি,
দেখো, মুষ্টিভিক্ষায় দারিদ্র্য দূর হয় না।
এর অন্য ব্যবস্থা দরকার,
দরকার সামাজিক ন্যায়ের।’
আপনি কি কোনো বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলছেন?
আল মাহমুদ: মুষ্টিভিক্ষায় দারিদ্র্য দূর হয় না। সামাজিক ন্যায়ের দরকার। এখানে তো বোঝাই যাচ্ছে।
রাশেদ: ‘সামাজিক ন্যায়’ বলতে কী বুঝব? ‘আমাদের ধর্ম হোক সম্পদের সুষম বণ্টন’?
আল মাহমুদ: কথাটা আসলে ঠিকই বলেছ। সম্পদের সুষম বণ্টন লাগবে। আমার তা-ই মনে হয়।
"বখতিয়ারের ঘোড়া"
মাঝে মাঝে হৃদয় যুদ্ধের জন্য হাহাকার করে ওঠে
মনে হয় রক্তই সমাধান, বারুদই অন্তিম তৃপ্তি;
আমি তখন স্বপ্নের ভেতর জেহাদ, জেহাদ বলে জেগে উঠি।
জেগেই দেখি কৈশোর আমাকে ঘিরে ধরেছে।
যেন বালিশে মাথা রাখতে চায় না এ বালক,
যেন ফুৎকারে উড়িয়ে দেবে মশারি,
মাতৃস্তনের পাশে দু'চোখ কচলে উঠে দাঁড়াবে এখুনি;
বাইরে তার ঘোড়া অস্থির, বাতাসে কেশর কাঁপছে।
আর সময়ের গতির ওপর লাফিয়ে উঠেছে সে।
না, এখনও সে শিশু। মা তাকে ছেলে ভোলানো ছড়া শোনায়।
বলে, বালিশে মাথা রাখো তো বেটা। শোনো
বখতিয়ারের ঘোড়া আসছে।
আসছে আমাদের সতেরো সোয়ারি
হাতে নাংগা তলোয়ার।
মায়ের ছড়াগানে কৌতূহলী কানপাতে বালিশে
নিজের দিলের শব্দ বালিশের সিনার ভিতর।
সে ভাবে সে শুনতে পাচ্ছে ঘোড়দৌড়। বলে, কে মা বখতিয়ার?
আমি বখতিয়ারের ঘোড়া দেখবো।
মা পাখা ঘোরাতে ঘোরাতে হাসেন,
আল্লার সেপাই তিনি, দুঃখীদের রাজা।
যেখানে আজান দিতে ভয় পান মোমেনেরা,
আর মানুষ করে মানুষের পূজা,
সেখানেই আসেন তিনি। খিলজীদের শাদা ঘোড়ার সোয়ারি।
দ্যাখো দ্যাখো জালিম পালায় খিড়কি দিয়ে
দ্যাখো, দ্যাখো।
মায়ের কেচ্ছায় ঘুমিয়ে পড়ে বালক
তুলোর ভেতর অশ্বখুরের শব্দে স্বপ্ন তার
নিশেন ওড়ায়।
কোথায় সে বালক?
আজ আবার হৃদয়ে কেবল যুদ্ধের দামামা
মনে হয় রক্তেই ফয়সালা।
বারুদই বিচারক। আর
স্বপ্নের ভেতর জেহাদ জেহাদ বলে জেগে ওঠা।
মন্তব্যঃ প্রিয় কবি, আল্লাহ আপনাকে সুসাস্থ্য দান করুন, দুনিয়া- আখেরাতের কল্যাণ করুন।
বিষয়: বিবিধ
১৯৫৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এশিয়ায় কি ঘটবে এ নিয়ে তর্ক করে আপনার যাওয়া পর
পৃথিবির সবকটি সাদা কবুতর,
ইহুদি মেয়েরা রেঁধে পাঠিয়েছে মার্কিন জাহাজে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন