ষাড়ের বলদ করন এবং এইডস আক্রান্ত একটি দেশ
লিখেছেন লিখেছেন মিনার রশীদ ০৯ মে, ২০১৪, ০৬:০৬:১৫ সন্ধ্যা
দুটি গোলাকৃতির অঙ্গ কেটে ফেলে ষাড়কে বলদ বানানো হয়। ফলে ষাড়ের শরীরে যে তেজ থাকে বলদের গতরে তা থাকে না। ষাড়ের জন্যে ব্যাপারটি অমানবিক ও বেদনাদায়ক হলেও মনিবের জন্যে খুবই উপকারী। এই প্রক্রিয়ায় ষাড়টি বলদ হয়ে মনিবের একান্ত বাধ্য হয়ে পড়ে। তাই এর নাম হয়েছে বলদ। অনেকেই বলদ বলে গালি খেলেও জানে না যে কেন বলদকে বলদ বলা হয়। সমাজে আজ এই ধরনের বলদের সংখ্যাও অজস্র।
একটি ষাড় বা মানুষকে যেমন বলদ বানানো যায় একটি দেশকেও তেমনভাবে বলদ বানানো যায়। ইউরোপে অনেকগুলি ষাড়(দেশ) পাশাপাশি রয়েছে। কিন্তু আজব কারনে ইন্ডিয়া তার চারপাশে কোন প্রতিবেশীকে ষাড় হিসাবে দেখতে চায় না। সবাইকে বলদ করে রাখতে চায়। ১৯৭১ সালের যুদ্ধকে আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ হিসাবে গণ্য করি। কিন্তু ইন্ডিয়ার কাছে এটা ছিল একটি ষাড়কে এক জায়গা থেকে ছুটিয়ে বলদ বানানোর মহা সুযোগ বা Opportunity of the Century.
এই বলদ করনের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে প্রবাসী সরকারকে যে ৭দফা চুক্তি গেলানো হয়েছিল , তা ছিল নিম্নরূপ-
১. যারা সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে শুধু তারাই প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োজিত থাকতে পারবে। বাকীদের চাকুরীচ্যুত করা হবে এবং সেই শুন্যপদ পূরণ করবে ভারতীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
২. বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করবে (কতদিন অবস্থান করবে, তার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি)। ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাস থেকে আরম্ভ করে প্রতি বছর এ সম্পর্কে পুনরীক্ষণের জন্য দু'দেশের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
৩. বাংলাদেশের কোন নিজস্ব সেনাবাহিনী থাকবে না।
৪. অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মুক্তিবাহিনীকে কেন্দ্র করে একটি প্যারামিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হবে।
৫. সম্ভাব্য ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অধিনায়কত্ব দেবেন ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নন এবং যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর অধিনায়কত্বে থাকবে।
৬. দু'দেশের বানিজ্য হবে খোলা বাজার (ওপেন মার্কেট) ভিত্তিক। তবে বাণিজ্যের পরিমান হিসাব হবে বছর-ওয়ারী এবং যার যা পাওনা, সেটা স্টার্লি-এ পরিশোধ করা হবে।
৭. বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রশ্নে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলবে এবং ভারত যতদূর পারে এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে।
এটা ছিল ষাড়ের অন্ডকোষ কেটে সরাসরি বলদ বানানোর মতই বেদনাদায়ক। এই বেদনাটি এতই তীব্র ছিল যে এই বলদ করনের পর প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বেহুশ হয়ে পড়েছিলেন। এই বলদকরন প্রক্রিয়াটি ভুলিয়ে রাখার জন্যে বিভিন্ন চেতনার ফেরিওয়ালারা রং বেরংয়ের চেতনা ফেরি করে বেড়ায়।
পরবর্তী সময়ে এই বলদটি আবারো ষাড় হতে শুরু করলে ভারতের টেনশন বেড়ে যায়। এরপর শুরু হয় এইডস রোগী বানিয়ে ফেলার প্রকল্প। এটি অনেক নিরব ও নিরাপদ পদ্ধতি।
একজন মানুষ যেমন এইডসে আক্রান্ত হতে পারে তেমনভাবে একটি জাতিও তাতে আক্রান্ত হতে পারে। একজন মানুষের immune system এর সাথে একটি জাতির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মিল রয়েছে। এই immune system টি যদি ধ্বংস করে দেয়া যায় তবে রোগ প্রতিরোধক শক্তি না থাকাতে সামান্য সর্দি জ্বরেও সেই রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তেমনি একটি জাতির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেতর থেকে নষ্ট করে দিতে পারলে অতি সহজেই সেই জাতিকে পদানত করে রাখা সম্ভব।
বর্ডার গার্ডকে একটি দেশের স্কিন হিসাবে গণ্য করলে সেনাবাহিনী হলো সাদা রক্ত কণিকা বা হোয়াইট ব্লাড সেল। রোগের জীবাণুর সাথে এরাই যুদ্ধ করে। এই সাদা রক্ত কণিকাকে দুর্বল করতে পারলে কোন্ রোগের জীবাণু দিয়ে ঘায়েল করা হবে সেটা কোন ব্যাপার নয়। কাজেই আমাদের স্কিন ও হোয়াইট ব্লাড সেল কে ধ্বংস বা দুর্বল করার জন্যেই সমস্ত আয়োজন।
রাজনৈতিক,প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক জগতের কিছু মীর জাফর নিজেদের স্বার্থের কারনে জাতিকে বলদ করন অথবা এইডস রোগী বানানোর পরিকল্পনায় সহযোগিতা করে যাচ্ছে। কেউ যদি তাদেরকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার নিশ্চয়তা দেয় তবে এরা যেকোন কিছু দিয়ে দিতে রাজি। ক্ষমতার সাথে সাথে এদের টাকার লোভটিও মারাত্মক।
তজ্জন্যে প্রথমেই টার্গেট করা হয় দেশের স্কিনস্বরূপ বিডিআর বা বর্ডার গার্ডকে। মূল ভিসনটি উল্লেখ আছে উপরে উল্লেখিত সাত দফা গোলামি চুক্তিতে। আর এই ভিসন বাস্তবায়নের জন্যে রয়েছে বিভিন্ন মিশন। একটি মিশনের গাইডবুক হিসাবে কাজ করেছে সজীব ওয়াজেদ জয় ও CARL CIOVACCO এর লেখা একটি আর্টিকেল। সেখানে অভিযোগ করা হয় বাংলাদেশ আর্মির ত্রিশ শতাংশ মাদ্রাসা থেকে এসেছে ইত্যাদি ইত্যাদি । এই পরিসংখ্যানটি কোথা থেকে পেয়েছে তা আজো রহস্যাবৃত।
বাংলাদেশ আর্মিকে ধর্মনিরপেক্ষ বানানোর প্রেসক্রিপশনটি সেখান থেকেই নেয়া হয়েছে। তিন বাহিনীর উপর একজন উপদেষ্টা বসানো হয়েছে সেই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্যে। ইতিমধ্যেই এই পরিকল্পনায় অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে।
এক-এগারো থেকেই কাজটি শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকার সেই মিশনেরই একটি এক্সটেনশন মাত্র। এক এগারোর পর বিডিআরকে দিয়ে মুদির কাজ করানো হয়েছে । একটা বিদ্রোহ সৃষ্টির জন্যে অসন্তোষের বীজটি এখান থেকেই বপন করা হয়েছে । এর মাধ্যমে দুই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বিডিআরকে শেষ করে দেয়া হয়েছে । এখানে এক ঢিলে অনেক পাখি মারা হয়েছে।
প্রতিরক্ষা বাহিনীর অফিসার এবং সাধারন সৈনিকদের মাঝে যে অবিশ্বাস ও অনাস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে তা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা আর কোনদিন সম্ভব হবে না।
সম্প্রতি নারায়নগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় র্যাবের সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ উঠেছে তাতে সুশৃঙ্খল এই বাহিনীটির বর্তমান করুণ অবস্থা ফুটে উঠেছে। র্যাবের সুনাম যেভাবে সেনাবািহনীর সুনাম বৃদ্ধি করেছিল তেমনি র্যাবের এই দুর্নাম থেকে সেনাবাহিনী নিজেও রক্ষা পাবে না। পলিটিকেল যোগাযোগ থাকলে কীভাবে চেইন অব কম্যান্ড ভেঙে পড়ে তাও করুণভাবে প্রদর্শিত হয়েছে। দলীয় করন ও আত্মীয় করনের থাবা থেকে প্রতিরক্ষা বাহিনীও যে মুক্ত থাকতে পারে নাই সেই অপ্রিয় সংবাদটি সাতটি লাশের মতই ভেসে ওঠেছে। আমরা জানি দলীয় করন ও আত্মীয় করনে যে কোন সংগঠনে অযোগ্যতা,অদক্ষতা ও দুর্নীতি সম্প্রসারিত হয়। স্পর্শকাতর সংস্থা হলে তার মনোবল ও শৃংখলাটিও ভেঙে পড়ে। এই খুটিনাটি সবকিছু করা হয়েছে উপরের ঐ বলদকরনের টার্গেট থেকে। অর্থাৎ দেশের সামরিক ও বেসামরিক সকল ইনস্টিটিউটগুলিকে ভেতর থেকে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে।
কয়দিন আগে একজন ডন টিভি ক্যামেরার সামনে বলেন, " আমার রক্ষার জন্যে আমার জনগন ও আমার সেনাবাহিনীই যথেষ্ঠ ।"
একজন গড ফাদার যতটুকু নির্ভরতার সাথে সেনাবািহনীকে আমার সেনাবািহনী বলতে পারে সাধারন জনগণ ততটুকু আস্থা ও নির্ভরতার ভাব নিয়ে এই কথাটি বলতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক পান্ডা, সামাজিক গুন্ডা ও শীর্ষ সন্ত্রাশীদের সাথে স্পর্শকাতর বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অফিসারদের এই ভাবগত, আত্মিক ও রক্তের সম্পর্কের কথা শুনে আতংকিত না হয়ে পারা যায় না।
কোন ধরনের রাজনৈতিক সেনসেশন সৃষ্টি করা কিংবা স্পর্শকাতর বাহিনীর মধ্যে কোনরূপ অস্থিরতা সৃষ্টি করা আমার এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। ষোলকোটি অাত্মার নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে এই বিষয়টি নিয়ে ভাবা জরুরী। কারন আমাদের এই দেশটি আওয়ামী লীগের নয়, এই দেশটি বিএনপির নয়, এই দেশটি জামায়াতেরও নয়। এই দলগুলি না থাকলেও দেশটিকে টিকে থাকতে হবে। কাজেই দলের ভাবনার উপরে দেশটিকে নিয়ে ভাবতে হবে, দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে।
যে সব সাংবাদিক বন্ধুগণ নিজেদের জীবনের ঝুকি নিয়ে এসব প্রকাশ করছেন তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি । আপনারা এই কলমযুদ্ধ অব্যাহত রাখুন। আল্লাহ আপনাদের সহায় হবেন। ষোলকোটি আত্মার দোয়া থাকবে আপনাদের জন্যে।
সরকারের ভাবসাব ও অতীত কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে যুদ্ধাপরাধী বিচারের একটি স্পর্শকাতর রায় প্রকাশ করে জনগণ ও সুশীল সমাজের দৃষ্টিকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে । সাংবাদিক সমাজ সহ দেশের সকল সচেতন মানুষের উচিত হবে দেশের immune system কে নষ্ট করার জন্যে যে সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তা যে কোন পরিস্থতিতে দেশবাসীর উপলব্দিতে জিইয়ে রাখা।
সরকারের সকল অপকর্ম ও তজ্জন্যে জনগণের মনে সৃষ্ট ক্ষোভ একসাথে পাইল করে বিরোধী দলগুলিকে সম্মিলিত আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। আগের ক্ষোভটি যেন জনগণ ভুলে না যায় বরং নতুন ক্ষোভের সাথে পুরণোটি যোগ হয় তেমন কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।
দেশ ও জাতিকে বাচাতে দুর্বার আন্দোলন ছাড়া এই মুহুর্তে বিকল্প কিছু নেই।
বিষয়: বিবিধ
১৫১৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন