সাঈদীর ফাসির রায় এবং কাঠালের বহুবিধ ব্যবহার

লিখেছেন লিখেছেন মিনার রশীদ ২১ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:১৩:১৮ দুপুর

কাঠালের বহুবিধ ব্যবহারের মত যুদ্ধাপরাধের বিচারটিকেও বহুবিধ রাজনৈতিক ধান্ধায় ব্যবহার করা হচ্ছে। বিচার করে আদালত কিন্তু রায় প্রকাশের খবর ঘোষণা করে সরকারের মন্ত্রী বর্গ ! অর্থাৎ এই বিচারটি সরকারের জন্যে রাজনৈতিক কাঠাল ফল হয়ে পড়েছে।

বর্তমান সরকার হয়েছে গ্রামের সেই মোড়লের মত যে ঘোড়ার পিঠ থেকে চিৎপটাং হয়ে পড়ে যাওয়ার পরেও বলে, ' আরে না না, আমি পড়ে যাই নি। ইচ্ছে করেই নেমে পড়েছি। কারন কাছেই কুটুম বাড়ী।... '

গ্রাম বাংলার এই সব সরস কৌতুকগুলিকে এই সরকার অত্যন্ত জীবন্ত করে তুলেছে।

উপজেলা নির্বাচনে সরকারের চূড়ান্ত নৈতিক পরাজয় ঘটে গেছে । অর্থাৎ ঘোড়ার পিঠ থেকে চিৎপটাং হয়ে সরকার পড়ে গেছে । কিন্তু এই মোড়লের মত সরকার বলতে চাচ্ছে যে পড়ে যায় নি, নেমে পড়েছে।

প্রধান মন্ত্রী সহ আরো কয়েকজন মন্ত্রী যুক্তি দেখাচ্ছেন যে উপজেলা নির্বাচনে কারচুপি হলে সাঈদীর ছেলে পাশ করতে পারতো না।

উপজেলা নির্বাচনে জামায়ােতর সাফল্য নির্বাচনটির স্বচ্ছতা তুলে ধরে না। বরং নির্বাচনটি স্বচ্ছ হলে সরকারের অবস্থা আসলেই কত করুণ হতো সেই হিসাবটি মানুষ তাদের বাস্তব পর্যবেক্ষণে ধরে ফেলেছে।

সরকারের এই চরম নির্যাতন দল হিসাবে জামায়াতের জন্যে শাপে বর হয়েছে । কাজেই বলা যায় সরকারের জামায়াত বিরোধী সকল প্রচারণা ভেস্তে গেছে।

সরকারের জামায়াত বিষয়ক পলিসির এই ব্যর্থতাকে এখন অন্যভাবে সফলতা হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে। অর্থাৎ সরকার পড়ে যায় নি - নেমে পড়েছে।

সংখ্যালঘু অধ্যুষিত একটি এলাকা থেকে সাঈদীর ছেলের পাশ করে আসা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পুরো মেকানিজমটিকে নতুনভাবে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা নিশ্চয় চান্দে সাঈদীর মুখ দেখে তার ছেলেকে এভাবে ভোট দেয় নি? সরকার বাস্তব পরিস্থিতি যত ঢেকে রাখতে চাচ্ছে, তা আরও করুণভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়ছে।

দেইল্যা রাজাকার আর মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী যে এক ব্যক্তি নন তা এই ভোটের মাধ্যমে এলাকার জনগণ জানিয়ে দিয়েছে। এটা সরকারকে সবচেয়ে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।

তাছাড়া যে দুটি মামলায় সাঈদীর ফাসি দেওয়া হয়েছে সেখানেও অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে । বিশাবালীর ছোটভাই সরকার পক্ষের সাক্ষ্মী সুখরঞ্জন বালী অনেক আগেই হাটে হাড়ি ভেঙে দিয়েছেন । সুখরঞ্জন বালীকে নিয়েও যে উপাখ্যান সৃষ্টি হয়েছে তা পুরে বিচার প্রক্রিয়ার ন্যূনতম গ্রহনযোগ্যতাকেও নষ্ট করে ফেলেছে। অপর হত্যা মামলা যেটিতে ফাসির আদেশ হয়েছে সেখানেও একই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর পরই নিহতের স্ত্রী যে মামলা করেছিলেন সেখানে সাঈদীর নাম নেই। সাঈদীর মামলা নিয়ে স্কাইপ কেলেংকারী থেকে শুরু করে এত কিছু হওয়ার পরেও যদি সরকার এই ফাসি নিয়ে অগ্রসর হয়

তবে আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও দেশের ভেতরে সাঈদী ভক্তদের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া সামলানো সরকারের পক্ষে সত্যিই কঠিন হয়ে পড়তে পারে । সাঈদী এমন এক ব্যক্তিত্ব যার ভক্ত সমর্থক খোদ আওয়ামীলীগেও রয়েছে। ১৯৯৬ সালে মাওলানা সাঈদীর একটি মাহফিলে জেনারেল নুরুদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি নিজেকে সাঈদীর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত হিসাবে তুলে ধরেন। এর কিছুদিন পর তিনি আওয়ামীলীগের মন্ত্রী হয়েছিলেন।

এসব গণনায় নিয়ে যদি আপিল বিভাগ তাঁর ফাসি মওকুফ করে দেন তবে সেই পরিস্থিতি থেকেও কিভাবে ফায়দা নেয়া যায় সরকার সেই চেষ্টা করছে। যেমন সাঈদীকে মাফ করলে অন্যদের বিচার ন্যায্য হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচারের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এজন্যে মিডিয়ার একটা অংশ সরকারের ইশারাতেই সম্ভবত ক্ষেত্র প্রস্তুত শুরু করেছে। কয়েকদিন যাবত আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যকার অাঁতাতের খবর বিভিন্ন জায়গা থেকে কায়দা করে ছড়ানো হচ্ছে। কাজেই রায়টি সাঈদীর পক্ষে হলে টক-শোতে এই ধরনের সমালোচনায় সয়লাব বয়ে যাবে। ইমরান সরকারের গণ জাগরনমঞ্চকে আগেভাগেই একটু টাইট দিয়ে রাখা হয়েছে যাতে টক দইয়ের জন্যে গালি দিতে গিয়ে সত্যি সত্যি (বামদের রাম একটু বেশি খেয়ে) সরকারকে থাপ্পড় মেরে না বসে।

আওয়ামীলীগ এক ঢিলে যেমন কয়েকটি পাখি মারে, মাঝে মাঝে বিনা ঢিলেও পাখি মারে । বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যে অবিশ্বাস বা দূরত্ব সৃষ্টি করা এই সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমূহের একটি । কাজেই সাঈদীর অনুকূলে রায় হলে তা এই মহৎ কাজটিতে ব্যবহার করা হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

এতে শুধু বিএনপির সাথেই দূরত্ব সৃষ্টি হবে না - তৃণমূলের কর্মী সমর্থকগণও জামায়াত নেতৃত্বের উপর থেকে তাদের বিশ্বাস ও অাস্থাটি হারিয়ে ফেলবেন। এই প্রচারণার মাধ্যমে জামায়াত নেতৃত্বকে সুবিধাবাদী হিসাবে প্রচার করে তাদের অত্যন্ত অনুগত ও ডিসিিপ্লন্ড কর্মী সমর্থকগনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হবে।

এ লক্ষ্যেই বিভিন্ন জায়গা থেকে জামায়াত শিবিরের কর্মী সমর্থকগণের আওয়ামী লীগে যোগদানের খবর মহা সমারোহে ও মহা উদ্দীপনায় প্রকাশ করা হচ্ছে। নিজের গ্রামের মানুষ যাকে চিনে না সেই ধরনের ধুরন্ধর ও আতর আলী মার্কা নেতাকে জাতীয় নেতা বানিয়ে ফেলছে সরকারের কাছ থেকে ইশারাপ্রাপ্ত মিডিয়া।

এই সব বিভিন্ন আলামত দেখে অনেকেই অনুমান বা আশা করছেন যে হয়তোবা সাঈদীর ফাসি হবে না।

কিন্তু অগত্যা যদি ফাসি হয়েই যায় তখন বিএনপি খুশী হবে এই ভেবে যে তারা যা সন্দেহ করেছিল তা ঠিক ছিল না। সাঈদী তখন কি মরিয়া প্রমাণ করিবে যে আওয়ামীলীগের সাথে জামায়াতের কোন আঁতাত ছিল না ।

চরমভাবে আশান্বিত জামায়াত না পাওয়ার বেদনায় তখন অারো দুর্বল ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়বে !

কাজেই সরকারের হাতের ক্রীড়নক না হয়ে উনিশ দলের উচিত হবে পুরো জোটের শক্তি নিয়ে সরকারের সকল অপরাজনীিত ও কৌশলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। আইন চলবে আইনের নিজস্ব গতিতে । যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে এইভাবে রাজনৈতিক গেইম খেলা থেকে সরকারকে বিরত রাখতে হবে। সরকার এটা নিয়ে উনিশ দলকে যে চিপায় ফেলেছে তা থেকে বের হওয়ার কোন উপায় উনিশ দল কখনই খুজে নি। এই 'চিপায়' ফেলার জন্যে শত শত থিংক ট্যাংক কাজ করলেও তা থেকে বের করার জন্যে উনিশ দলের পক্ষ থেকে একটি থিংক ট্যাংকও কাজ করে নি ।

একটা কথা মনে রাখা দরকার আওয়ামীলীগ ও সেই ঘরানার সুশীলদের কাছে বিএনপি আর কোনক্রমেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি হতে পারবে না। বিএনপি নেতাদের কারো কারো এই ধরনের প্রচেষ্টা বা অভিলাষ দেশবাসীকে হতাশ করে।

কোন মানুষকে কোন জুলুম থেকে রক্ষা করার অর্থ তার দলকে সমর্থন করা নয় । একজন হিন্দুর উপর জুলুম হলে তার পক্ষে দাঁড়ানার মানে কোন মুসলমানের হিন্দু হয়ে যাওয়া নয় ।

কাজেই বিএনপিকে তার নিজের রাজনীিত নিয়েই অগ্রসর হওয়া দরকার । বিএনপিতে থেকে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীিত করতে চান তারা শুধু বিএনপির মরণ নয় - দেশের মরনটিও এগিয়ে আনছেন।

কারন সাঈদীকে যদি এভাবে দেইল্যা রাজাকার বানিয়ে ফাসিতে ঝুলিয়ে দিতে পারে কালকে তারেক রহমান বা খালেদা জিয়াকে অন্য কোন ছলে ফাসিতে ঝুলানো এই ফ্যাসিবাদি সরকারের পক্ষে মোটেই কোন কঠিন কাজ হবে না। কারন সাঈদীর জন্যে কয়েকশ বা কয়েক হাজার ভক্ত জীবন দিতে প্রস্তুত থাকলেও খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের জন্যে কতজন জীবন দিতে প্রস্তুত থাকবে তা সত্যিই ভাবনার বিষয় ! হাসিনার জন্যেও এই হিসাব খুব বেশি হেরফের হবে না। কাজেই সবার জন্যে নিরাপদ হলো এই দেশটিকে আরো মগের মুল্লুক হওয়া থেকে রক্ষা করতে সময় থাকতে রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তির পুরোটা ব্যবহার করা।

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

211139
২১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:১৮
নূর আল আমিন লিখেছেন : হয়তো সাইদীর ফাসি হবে তবে সেখ হাসিনাকে কেউ বাচাতে পারবেনা
211157
২১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:৩৫
গেরিলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
211176
২১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:১৪
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : বিএনপি যদি এটা অনুধাবন করতে পারে তাহলে তারাই সবার আগে এ ইস্যূতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তো। তাদের সুমতি হোক।
211184
২১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:২৯
এমরুল কায়েস ভুট্টো লিখেছেন : সাইদীর মুক্তি চাই
211192
২১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:৪১
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : সাঈদীর মামলার রায়ের বিষয়টি ভারতের লোকসভা নির্বাচনের উপর কিছুটা মনে হয় সম্পর্কযুক্ত। 'র' প্রভাবিত থিং ট্যাং সম্প্রদায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সাঈদীকে লটকানোর জন্য। কিন্তু আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ এ নিয়ে প্রচন্ড যে মতবিরোধ রয়েছে তা মাঝে মধ্যে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। সম্প্রতি লন্ডনে এক আওয়ামী নেতা এ নিয়ে নিজের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশও করে ফেলেছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অপরাধী ট্রাইবুনালের পক্ষে তাদের সাফাই গাওয়া এবং তথাকথিত যুদ্ধপরাধীদের বিচার চাওয়ার মৌখিক স্লোগান থামালেই তাদের উপর ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে। যেমন ইলিয়াছ আলীসহ গুম হওয়া সরকার বিরোধী নেতাদের পরিনতির ট্র্যাক পরিবর্তন হয়ে আওয়ামী রামপন্থীদের দিকেই ধাবিত হওয়ার হয়তো ইংগিত রয়েছে।
211231
২১ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:০৭
ডাঃ নোমান লিখেছেন : ভালো বিশ্লেষণ।
211355
২১ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বিএনপির বড় সমস্যা হচ্ছে আওয়ামি মিডিয়াকে তাদের শুভাকাংখি মনে করা। জামায়াত-সরকার আপোষের প্রচারনা চালিয়ে লাভ কিন্তু শুধু আওয়ামি রিগের হচ্ছে।
211678
২২ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:০৮
egypt12 লিখেছেন : বিএনপি জামায়াতের ভালো কোন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক নেই...সাংগঠনিক নেতারা থিঙ্কের ধার ধারেন না...বরং একেকজন ময়লার ট্যাঙ্ক হয়ে আছেন ফলে ভালো কোন সমন্বিত কৌশল প্রনয়ন করতে না পেরে সবাই আওয়ামী অপকৌশলের শিকার হচ্ছেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File