রাষ্ট্রযন্ত্রে ভদকার প্রভাব এবং ২০৪১ এর সুখ( ভদকা)-স্বপ্ন

লিখেছেন লিখেছেন মিনার রশীদ ১০ এপ্রিল, ২০১৪, ০৭:৪০:৫৮ সন্ধ্যা

"Call me what you like, only give me some vodka" এটি একটি রাশিয়ান প্রবাদ।

বলা হয়ে থাকে যে রাশিয়ানদের চাহিদামত ভদকা ( জনপ্রিয় রাশিয়ান পানীয়) সরবরাহ করা গেলে কম্যুনিজম আরো কিছুদিন টিকে থাকতে পারতো।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দফতর সহ অন্যান্য সকল জায়গায় এই ভদকার প্রভাব স্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।   গত কিছুদিনের মধ্যে দু- দুটি ডিপ্লোমেটিক ব্লান্ডার করা হয়েছে । দেশের মানুষের ইচ্ছা ও স্বার্থের বিরুদ্ধে দেশটিকে একটি পশ্চাৎমুখী ও সর্বনাশা নষ্টালজিক বিদেশনীতির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দলীয় বা ব্যক্তিগত স্বার্থ এখানে স্পষ্টতই জাতীয় স্বার্থের মুখোমুখি দাড়িয়ে পড়েছে।

যে গাই বেশি দুধ দেয় তার প্রতি বেশি যত্নবান হওয়া কুটনৈতিক বিদ্যার প্রথম ছবক। পররাষ্ট্র নীিততে প্লেটোনিক লাভ বা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা বলে কিছু নেই। এখানে সবকিছুই 'গিভ এন্ড টেইক' এর উপর নির্ভরশীল।

এই গিভ এন্ড টেইকের কারনে এক্সপো ২০২০ এর নির্বাচনে আমাদের ভোট দেয়া উচিত ছিল দুবাইকে। কিন্তু এক ধরনের নষ্টালজিক কুটনীতি ( কয়েকজন কম্যুনিষ্ট ব্যতিত যা জনগণকে স্পর্শ করে না) বা প্লেটোনিক ভালোবাসার কারনে আমরা ভোট দিয়েছি রাশিয়াকে। দুনিয়াতে বেকুব জাতির চেয়ে আক্কেলবুদ্ধি সম্পন্ন জাতির সংখ্যা অধিক হওয়ায় দুবাই সিটি সেই ভোটাভুটিতে জিতে যায়। আর তাতে আমরা আরো ফাটা বাশে আটকে পড়ি। কারন আমাদের এই 'চশমখুরি' আরব আমিরাত 'ফরগেট' করলেও 'ফরগিভ' করে নি। সকল বাংলাদেশীর জন্যে ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দিয়েছে। এই লাখ লাখ মানুষের জন্যে who cares? তাদের চাপা কান্না ও যন্ত্রণার খবরগুলি নব্য ভদকা-খোর প্রশাসনের কাছে পৌছাচ্ছে না।

সর্বনাশা চেতনা বা ভদকার প্রভাবেই সরকারের নীিত নির্ধারকরা কমন সেন্স বা প্রয়োজনীয় বোধটি হারিয়ে ফেলেছেন । লেখার শুরুতেই রাশিয়ান প্রবাদটির মত এই সরকার কোন সমালোচনাই কানে তুলছে না।

বাস্তবকারনেই আমাদেরকে মধ্যপ্রাচ্য সহ পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। কিন্তু ক্রিমিয়া নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সাধারন পরিষদে ভোটদানে বিরত থেকেছে কম্যুনিষ্ট প্রভাবিত এবং ভদকাক্রান্ত এই সরকার । এখানেও আরেকটি ব্লান্ডার করা হয়েছে। ভদকার এই প্রভাবটি কত তীব্র ও আত্মবিধ্বংসী তা স্পষ্ট হয়েছে । কপাল চাপড়ানো ছাড়া আমাদের যেন এখন আর কিছুই করার নেই।

এমন এক গাইয়ের পেছনে আমরা ছুটেছি যার উনুনটি লোভনীয় হলেও ভেতরে কোন দুধ নেই। গত ৪২ বছর টেনেও কয়েক ফোটা দুধ বের করতে পারি নি। আরেক গাই দুধের লোভ দেখিয়ে বরাবর চানা(প্রশ্রাব) খাইয়েছে এবং এখনও খাওয়াচ্ছে। বেকুবের মত ' দুধবিহীন গাই' রাশিয়াকে খুশি করতে গিয়ে বিরক্ত ও হতাশ করেছি বর্তমান সময়ের অনেক দুধ ওয়ালা গাইকে।

যাদের পরামর্শে এই ব্লান্ডার করেছি তাদের কিন্তু কোন সমস্যা হবে না। বিশ্ব কুটনীিততে তারা এক জনের কাছে বিয়ে বসে দিব্যি অন্যজনের ঘর করতে পারে। গার্মেন্টস ও জনশক্তি রফতানীর মতো অনেক জায়গায় আমরা তাদের শক্ত প্রতিপক্ষ। এমন প্রতিপক্ষকে যদি এমনভাবে ভদকা খাইয়ে রাখতে পারে, তবে তো কেল্লা ফতেহ! সমস্ত চেতনা, সমস্ত ভালোবাসার আড়ালে আসলে সেই ধান্ধাটিই কাজ করছে।

সবকিছু মিিলয়ে দেশের মানুষ বর্তমানে কোন জাহান্নামে আছে - তার কোন খোঁজ- খবর নেই। অথচ ঢাকঢোল পেটানো হচ্ছে ২০৪১ সালে আমরা নাকি উন্নত দেশ হয়ে পড়বো।

হাসিনা-তোফায়েল- আমুরা স্বপ্ন দেখাচ্ছে "আর কটা দিন সবুর কর রসুন বুনেছি। "

হাসিনা আর আমুদের বোনা এই রসুন খেতে দেশের কয়েক কোটি বেকারকে আরো ২৭ বছর অপেক্ষা করতে হবে!

কিন্তু জীবন যৌবন কি এই সাতাইশ বছর একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবে? ত্রিশের কোঠায় এখন যে স্ত্রী ২৭ বছর অপেক্ষা করতে হলে সে যে ষাট বা সত্তর বছরের বুড়ি হয়ে পড়বে!

দেশের জনগণকে নিয়ে কী কঠিন মশকরা! এই স্বপ্নটি ঠিকভাবে উপভোগের জন্যে বক্তাদের সাথে সাথে শ্রোতাদেরকেও ভদকা খাওয়া দরকার।

 বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ইকোনমিস্ট-এর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে এই সব সুখ স্বপ্নের বিপরীতে বাস্তব নমুনাটি বেরিয়ে এসেছে। পরিসংখ্যানটিতে দেখানো হয়েছে যে বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র আফগানিস্তান আমাদের উপরে রয়েছে। উচ্চ শিক্ষিত বেকারের হার সেখানে ৬৫ শতাংশ। ভারতে এই হার ৩৩ শতাংশ, নেপালে ২০ শতাংশের বেশি, পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ২০১২ সালের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তরসহ উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ।

বেকারদের মধ্যে চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের হার ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ মধ্যে নারী চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের অবস্থা আরও খারাপ। তাঁদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ৩১ শতাংশ। এর পরেই আছেন উচ্চমাধ্যমিক পাস করা ব্যক্তিরা। তাঁদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর বেকারদের মধ্যে তৃতীয় স্থানে আছেন স্নাতকোত্তররা, ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্যমতে, বেকারত্বের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৫ সালে মোট বেকারের সংখ্যা ছয় কোটিতে দাঁড়াবে। সংস্থাটির মতে, বেকারত্ব বাড়ছে—এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১২তম।

দেশীয় সম্পদ ও কর্ম সংস্থান দিয়ে এই বিশাল বেকারত্বকে মোকাবেলা সম্ভব কি না তা এক বিরাট প্রশ্ন। ভদকা বা এই ধরনের কিছু সামনে নিয়ে বসলে উপরের এই পরিসংখ্যানগুলি কখনই মাথায় ঢুকবে না। এই বিরাট বেকার জনগোষ্ঠির কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হলে অবশ্যি অবশ্যি বাইরের জব মার্কেটে জায়গা করে দেয়া ছাড়া অন্য কোন গত্যন্তর নেই। আর এই বিশাল জব মার্কেটের প্রকৃত লোকেশনটি কোথায় ?

কাজেই মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম ইউরোপ,আমেরিকাকে ছেড়ে রাশিয়ার সাথে নতুন এই পিরীতি কার স্বার্থে এবং কেন করা হচ্ছে, তা বোধগম্য হচ্ছে না।

কাজেই My Dear Countrymen! Please wake up before it is too late.

বিষয়: বিবিধ

১৩৪২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

205797
১০ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৪
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : ভালো লাগলো । ধন্যবাদ ।
205811
১০ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:০৭
আঁধার কালো লিখেছেন : ধন্যবাদ । পিলাচ ।
205814
১০ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:০৮
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : দেশীয় সম্পদ ও কর্ম সংস্থান দিয়ে এই বিশাল বেকারত্বকে মোকাবেলা সম্ভব হতো যদি শুধু মাত্র ঘুষ বন্দ করা যেত ।

সচেতন মুলক পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ ।

205859
১০ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:৫৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : পৃথিবীর রাজনিতির একটি মেরুকরন হয়েছিল ১৯৯০ সালের পর। এখন আবার নতুন করে একটি মেরুকরন হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান সরকার পৃথিবীর অবস্থা আর দেশের স্বার্থ কিছূই বুঝেনা।
205893
১০ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১১:৫৩
মাটিরলাঠি লিখেছেন : ধন্যবাদ সত্য কথাগুলো তুলে ধরবার জন্য।
205939
১১ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:৫৬
নূর আল আমিন লিখেছেন : জয় বাবা ভদকা মালের কি কারিশমারে ভাই
206124
১১ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:০৬
ইবনে হাসেম লিখেছেন : ভেরী গুড। খুব সুন্দর উপমা দিয়ে আমাদের বিদেশ নীতির বেহাল দশার চিত্র তুলে ধরেছেন, যার মা্ধ্যমে দেশটাকে যে ক্রমেই ধ্বংসের অতলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেটাও বুঝা যাচ্ছে আর দেশপ্রেমিকদের বুকে কাঁপন ধরছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File