দেশের প্রথম প্রেসিডেন্টঃ বোধ ও ভাবনার সংশোধন
লিখেছেন লিখেছেন মিনার রশীদ ৩০ মার্চ, ২০১৪, ০২:২২:১০ দুপুর
প্রেসিডেন্ট কেনেডি যখন নিহত হন তখন লিন্ডন বি.জনসনকে এয়ার ফোর্স ওয়ানে থাকা অবস্থাতেই প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ পড়ানো হয়। দেশ ও জাতির জন্যে কিছু কিছু 'ড্রাইভিং সিট' রয়েছে যা এক মুহুর্তের জন্যেও খালি রাখা যায় না। যুদ্ধাবস্থায় বা আপদকালীন সময়ে তা আরও বেশি প্রযোজ্য।
২৬শে মার্চ আমরা স্বাধীনতা ঘোষণা করি। এই ঘোষণার পর পর এক জন কমান্ডার বা নেতা নিয়োগ অপরিহার্য হয়ে পড়ে যা আমরা করেছি ১৭ই এপ্রিলে এসে। তাহলে মাঝখানের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে নেতৃত্বের এই মশালটি কার হাতে ছিল ?
আমাদের আওয়ামী বন্ধুরাও মনে করেন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল কাজ
যুদ্ধের ময়দান থেকে অনেক দূরে অবস্থানরত কারাবন্দি নেতার কারিশমা থেকেই হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে সশরীরে নেতৃত্বদানকারী তাজউদ্দীন আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম.এ.জি ওসমানী এবং স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া এই তিনজন বেশি অবহেলা ও অবমূল্যায়নের শিকার হয়েছে।
আমাদের অপরাপর সকল বীরদের খাটো করে একজনকে দেবতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে। সাথে সাথে পাশের দেশের অবদানকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে আমাদের মনে বেহিসাবী ও সর্বনাশা কৃতজ্ঞতাবোধ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সকাল বেলা যে একজন ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা করেছে সন্ধায় সে নিজেই ধর্ষণে নিয়োজিত হয়েছে। সকালের সেই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে মুখটিও খুলতে পারছি না। কিন্তু জিয়ার স্পিরিটটি উজ্জীিবত ও প্রভাবটি বহাল থাকলে এই ধর্ষণ কর্মটি খুব আরামদায়কভাবে করা সম্ভব হতো না।
এরা সবচেয়ে আক্রমণ করেছে জাতীয়তাবাদী শক্তির গৌরব ও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াকে। তাকে শুধু স্বাধীনতার ঘোষক হিসাবেই অস্বীকার করা হচ্ছে না। তাকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে মানতেও রাজি নয় - একেবারে পাকিস্তানের এজেন্ট বানিয়ে ফেলা হয়েছে।
এই প্রবণতা বন্ধ করার জন্যে শহীদ প্রেিসডেন্ট জিয়াকে বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসাবে দাবি করেছেন বিএনপির টপ নেতৃত্ব। এই উচ্চারনটি এই দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্যেই প্রয়োজন হয়ে পড়েৃছে। কারন স্বাধীনতার পর পরই এক নেতা এক দেশ শ্লোগান দিয়ে আমাদের সর্বনাশ করা হয়েছে। তখন যদি এক নেতার পরিবর্তে বহু নেতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতাম তবে আজ আমাদের ইতিহাস অন্য রকম হতো। আমাদের এই দুর্বলতার কারনেই দেশের গনতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা সম্ভব হয়েছিল।
প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে সেই একই বাকশাল আবারো ফিরে এসেছে। কাজেই এই বাকশালেরর পুনরুথ্থান প্রতিহত করতেই আমাদের অন্যান্য বীরদের প্রতিষ্ঠিত করা জরুরী হয়ে পড়েছে। আমরা ইতিহাসকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছিলাম। ১৭ই এপ্রিল থেকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছে মূলত সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এর আগের ২১ দিন অবশ্যি প্রেসিডেন্ট জিয়া। তৃতীয় প্রসিডেন্ট হিসাবে আসবে শেখ মুজিবের নাম। আমরা যদি সাহস করে এই কথাগুলি বলতে পারতাম তবে কখনই এই দেশটি এক নেতার এক দেশ হতে পারতো না। আর আমরা কখনই বর্তমান এই শোচনীয় অবস্থায় পড়তাম না ।
স্বাধীনতার ঘোষণা বা ডিক্লারেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্সের আগেই একটি বিপ্লবী পরিষদ, তার নেতা এবং আপদকালীন নেতৃত্বের একটি তালিকা প্রস্তুত করে রাখা হয়। কিন্তু ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের এখানে এই ধরনের কোন প্রস্তুতিই চোখে পড়ে নি।
এখন যদি স্বীকার করে নেয়া হয় যে শেখ মুজিব প্রথমেই স্বাধীনতা চান নি, তবে সবকিছু সহজ হয়ে পড়ে। কিন্তু বিপরীত দাবি করলেই অনেকগুলি জটিল প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। শেখ মুজিবকে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে একমাত্র হিরো বানাতে গিয়ে আওয়ামী লীগ পুরো বিষয়টিকে আরো জটিল করে তুলেছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামটিকে আমার কাছে মনে হয় একটা রিলে রেইসের মত। এখানে একক কোন দৌড়বিদ ছিলেন না। এই রিলে রেইসের কাঠিটি বিভিন্ন পর্যায়ে মাওলানা ভাসানী,বঙ্গবন্ধু,জিয়া, ওসমানী,তাজউদ্দীন প্রমুখ নেতাগন বহন করেছেন। কিন্তু সব কৃতিত্ব একজনকে দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ পুরো দেশ ও জাতিকে অস্থির করে ফেলেছে।
২৬শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষনা করা হয়েছে । কিন্তু প্রথম প্রবাসী সরকার বা বিপ্লবী পরিষদ গঠণ করা হয়েছে ১৭ই এপ্রিল। যে কোন যুদ্ধের শুরুর সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম রাত্রিতে যে পক্ষ বিড়াল মারতে পারে বিজয়ের পাল্লাটি সেদিকেই হেলে পড়ে। পাক বাহিনী সেই বিড়ালটি প্রায় মেরে ফেলেছিল। কিন্তু শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার আচমকা হস্তক্ষেপে সেই বিড়ালটি হাতছাড়া হয়ে যায়।
স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই স্বাধীনতা যুদ্ধকে সশরীরে নেতৃত্ব দেয়ার জন্যে একটি পরিষদ কিংবা এক জন নেতার নিয়োগ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের কান্ডাির গণ এই ধরনের পরিষদ আগে থেকে ঠিক করে রাখেন নি। গ্রেফতার বরন করার আগে বঙ্গবন্ধু তাঁর সহচরদের নিরাপদ স্থানে সরে পড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ঘুণাক্ষরেও আপদকালীন কোন পরিষদ গঠণ করে যান নি ।
একটি দেশকে যদি একটি যাত্রীবাহী জাহাজের সাথে তুলনা করা যায় তবে বলতে হয় জাহাজের নেভিগেটররা জাহাজের নেভিগশন ব্রিজ বা কম্যান্ড সেন্টার ফেলে রেখে সবাই পালিয়ে গেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে সেই জাহাজকে বলা হয় পরিত্যক্ত জাহাজ। তখন পাইরেটস বা অন্য যে কেউ এই জাহাজটির মালিকানা বা কর্তৃত্ব নিয়ে নিতে পারে। ১৯৭১ সালে ২৬শে মার্চ এম.ভি বাংলা নামক জাহাজটির ক্যাপ্টেন ও অন্যান্য নেভিগেটররা কম্যান্ড সেন্টার থেকে পালিয়ে গেলে তখনকার পাইরেটস বা পাকবািহনীর হাত থেকে এই জাহাজটিকে রক্ষা করেছিলেন অসীম সাহসী এক তরুণ মেজর।
তিনি তাঁর স্বাধীনতার সেই ঘোষনায় স্পষ্ট উল্লেখ করেছিলেন, I have taken the command as temporary head of the state. ২৬শে মার্চ শেখ মুজিবের নাম উল্লেখ না থাকলেও পরের দিন তা উল্লেখ করেন, কিন্তু বিবৃতিতে এই কথাটি বহাল থাকে।
কাজেই এটা ইতিহাসের বিকৃতি নয়। বরং বোধ ও ভাবনার সংশোধন।
বিষয়: বিবিধ
১৫৩৬ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যা হবার হয়েছে এখন আমরা আশা করবো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে বাঁচাতে তিনি এগিয়ে আসবেন । ধন্যবাদ
দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের কাছে প্রধান সেলিব্রিটি পুজনীয় ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান। তেমনি বিএনপি’র নিকট দলীয় প্রচার-প্রচারণায় প্রধানতম কেন্দ্রীয় চরিত্র হচ্ছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমান এবং শহীদ জিয়াউর রহমান ছাড়াও আমাদের রয়েছেন আরো অনেক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব সহ অনেক বিখ্যাত সেলিব্রিটি। উল্লেখিত সেলিব্রিটিদের কর্মকান্ড ও অবদান কিংবা অপকর্মের কারণে দেশ ও জাতি যেমন উপকৃত হয়েছে তেমনি ক্ষতিগ্রস্থও হয়েছে বিভিন্নভাবে। আর এই ক্ষতিগ্রস্থ কিংবা লাভমানের দৃশ্যটা হচ্ছে অনেকটা আপেক্ষিক। যারা নিজেদের সিলিব্রিটি ব্যক্তিত্বকে ফেরেস্তার আসনে বসাতে চেষ্টারত তাদের কাছে প্রতিপক্ষের সেলিব্রিটিকে শয়তানের আসনে নামিয়ে ফেলার কারণে তার সব ভাল কর্মকান্ডই অপকর্ম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে প্রতিপক্ষের নিকট। এজন্যই আওয়ামী লীগের চোখে বিএনপির সব কর্মকান্ড খারাপ, দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিরোধী। অপর দিকে বিএনপির’ চোখে আওয়ামী লীগের সব কর্মকান্ড দেশপ্রেমহীন জনবিরোধী ও ফ্যসিবাদী আচরণ। এই দুই রাজনৈতিক গোষ্টীর একে অপরকে দোষারোপের মাধ্যমে ক্ষমতা আখড়ে থাকার জন্য বা ক্ষমতা থেকে বিতাড়নের জন্য এমন সব গর্হিত কাজকর্ম করে যাচ্ছে যার ফলে এদেশের সাধারণ মানুষের দুর্গতি ও দুর্ভোগের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আখড়ে থাকার জন্য এমন নিষ্ঠুর ও ফ্যসিবাদী পন্থা বেচে নিয়েছে যার ফলে আমাদের দেশের অনেক মহান সেলিব্রিটি ব্যক্তিত্ব সীমাহীন জুলুমের শিকার হয়ে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বলির পাঠা হিসেবে আজ দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার আয়োজন চলছে।
১৯৭১ সালের আওয়ামী নেতাদের মধ্যে যারা নিরাপদ ও বিলাসী জীবন বেচে নিয়েছিলেন তারা তো আছেনই, তাদের পরবর্তীতে যারা আওয়ামী নৌকায় ভিড়েছেন তারাও জাতে উঠার জন্য এবং শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যই মুলতঃ শহীদ রাষ্ট্রপ্রতি জিয়াউর রাহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা কুৎসা রটিয়ে আধা জ্বল খেয়ে থাকে। যদি ঘটনাচক্রে ৭৫ সালের মত অনাকাংখিত কিছু ঘটে যায় তবে আজ যারা শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার গুণমূগ্ধ হয়ে মখে ফেনা তুলছেন তারাই হয়তো হয়ে উঠবেন একেকজন খন্দকার মুশতাক, মালেক উকিলসহ বড় বড় সমালোচনাকারী চৌদ্দগোষ্টী উদ্ধারকারী।
বিদেশী গোয়েন্দা নামের ইস্রাঈলী গোযেন্দা সংস্থা মোসাদ আর 'র' এর কৌশলী গোয়েন্দারা যে এদেরকে পেট্রোনাইজ করছে না তাও না নিশ্চিত হওয়া যাবে কেমনে?
এসব ক্রিমিনাল সাম্প্রদায়িক ডাঙ্গবাজগুলো উপমহাদেশের শান্তি শৃঙ্খলা নষ্টের মূল হোতা। এদেরকে মোসাদই প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে সন্দেহ জাগে মনে।
যেখানে আওয়ামীলীগ মিথ্যাটাকেও সত্যের মত বলতে থাকে!
মন্তব্য করতে লগইন করুন