আতর মিশ্রিত চা এবং যে কথার কারনে রাজাকার হয়ে যেতে পারেন স্বয়ং ইন্দিরা !
লিখেছেন লিখেছেন মিনার রশীদ ২৮ মার্চ, ২০১৪, ০৪:১৫:১৭ বিকাল
৭ই মার্চের ভাষণকে যারা স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা বলে বিশ্বাস করে না কিংবা যাদের আকার- ইঙ্গিত- বক্তৃতা- বিবৃতি সেরকম সন্দেহের উদ্রেক করে তারা এক কথায় রাজাকার।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি একটি মারাত্মক গুনাহের কাজও বটে । এমনকি সংবিধান লংঘনের দায়ে অভিযুক্ত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। অবস্থা এমন বেগতিক হয়ে পড়েছে যে সিকিম বা হালের ক্রিমিয়ার সংসদের মত আমাদের সংসদও যদি তেমন কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে তারপরেও সংবিধান লংঘনের ভয়ে মুখটি খোলা যাবে না। চতুর্দিক থেকে তেমন করেই যেন হাত পা মুখগুলি বন্ধ করা হচ্ছে। টেস্ট কেইস শুরু হয়ে গেছে।
আস্ত ভাষণটিকে এখন আমাদের সংবিধানের পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে । রেকর্ড, পদক এবং অভিনন্দন শিকারী এই সরকারের থলেতে এই বিশ্ব রেকর্ডটিও আপনাতেই যোগ হয়েছে। কারন পৃথিবীর অন্য কোন সংবিধানে এই ধরনের কোন ভাষণ ঢুকানো হয় নি। এমনকি পৃথিবী বিখ্যাত গেটিসবার্গের ভাষণটিও যুক্তরাষ্ট্রের বা অন্যকোন সংবিধানে এখন পর্যন্ত ঢুকতে পারে নি।
জীবন রক্ষায় অপারেশনের জন্যে 'কাঁচি-ছুরির' গুরুত্ব ও মাহাত্ম বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না । কিন্তু সেই মহা উপকারী কাঁচি-ছুরি রোগীর পেটের ভেতরে রয়ে গেলে বিড়ম্বনাটি সহজেই অনুমেয়। জাতির বর্তমান অবস্থা এই রোগীর চেয়েও করুণ হয়ে পড়েছে। মহা উপকারী জিনিসগুলি পেটের মধ্যে রেখেই সেলাই করে দেয়া হয়েছে। এটাও সম্ভবত টেস্ট কেইস। ভবিষ্যতে আরো বড় কিছু সংবিধানের পেটে ঢুকালে আমরা কী করি, বোধ হয় তা দেখার জন্যে!
এদেশের এক রসিক আমলা এসডিও থাকা অবস্থায় এক এলাকার মাতব্বরের বাড়িতে অাতিথ্য গ্রহণ করেন। মহামান্য অতিথির গুরুত্ব অনুধাবন করে গ্রামের সেই মাতব্বর চায়ের মধ্যে অত্যন্ত দামী আতর মিশিয়ে দেন। ফলে আতর মিশ্রিত সেই তিতা চা পরম তৃপ্তির সাথে পান করতে হয় সারা মহুকুমার(কয়েকটি থানা নিয়ে তখন একটি মহুকুমা হতো) মালিক হিসাবে গণ্য সেই এসডিও সাহেবকে ।
এখন মাতব্বরের এই কাজটি নিয়ে সমালোচনা করলে সেই দামী আতরের অবমূল্যায়ন করা হবে না।
তেমনি ৭ই মার্চের ভাষণ কিংবা জাতীয় সঙ্গীতের মত মহামূল্যবান আতর নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নেই। সমস্যা এই মাতব্বরদের নিয়ে যারা সৎ নিয়তেই এই অাতর(ভাষণ)টিকে অামাদের উপাদেয় চায়ে (সংবিধানে) ঢেলে দিয়েছেন । আমাদের চােয়র কাপে(জাতীয় সঙ্গীত) নব্বই কোটি টাকার আতর( লাখো কন্ঠে সোনার বাংলা) অনেকটা জোর করে মাখিয়ে দিয়েছেন। সেই আতরটি তৈরি করা হয়েছে আবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী সাহেবের নিজের অথবা ব্যবসায়িক পার্টনারদের ফ্যাক্টরি থেকেই। কাজেকাজেই এসডিও সাহেবের মতই পরম তৃপ্তিতেই তা আমাদেরকে ডাইজেস্ট করতে হচ্ছে।
৭ই মার্চের ভাষণটিকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কটিকে সাংবিধানিকভাবে প্রতিহত করা। তবে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে মমতাময়ী মাসি হিসাবে কাজ করেছেন ইন্দিরা গান্ধী। একজন শতভাগ খাটি মাসির মমতায় আমাদের সকল খোজ খবর নিয়েছেন। ১৯৭১ সালের ৬ই নভেম্বর তিনি কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে একটা লেকচার দেন। দেখুন, সেই বক্তৃতায় তিনি আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে কী বলেছিলেন? সেই বক্তৃতার কিছু অংশ নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো।
" Negotiations were begun.We were not in touch with either Sheikh Mujib or his party of East bengal. We did not know what was happening. We read in the papers that there were negotiations.Later, much later, in fact only about a week before I started on this trip, I happened to meet somebody who said he was present at the negotiations. And,on the 24th of march, they thought that they were coming to a settlement, may be not a satisfactory settlement but still something that could be worked out. But this period was in fact used to bring troops from west Pakistan.
অর্থাৎ, আলোচনা শুরু হলো। শেখ মুজিব কিংবা তার দলের সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ ছিল না। কাজেই আমরা জানতাম না সেখানে আসলে কী হচ্ছে। তবে খবরের কাগজ পড়ে জানতে পারি যে একটা আলোচনা চলছে। পরে, আরো অনেক পরে, সত্যি বলতে কি এখানে আসার এক সপ্তাহ আগে একজন লোকের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয় যিনি ঐ আলোচনায় শরীক ছিলেন। এই লোকটি জানালেন যে ২৪শে মার্চ তারা ধারনা করেছিলেন যে একটা সমাধানে পৌছতে যাচ্ছেন। সেই সমাধান (পূর্ব বাংলার জন্যে) খুব সন্তোষজনক না হলেও আপাতত কাজ চালানো যাবে। কিন্তু বাস্তবে এই সময়টিতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য আনা হয়।....
বক্তৃতার এক জায়গায় এসে বিষয়টিকে আরো খোলাসা করে ফেলেন, So,just when we come to a stage where we think we can go ahead much more easily, much faster,we suddenly have problems of another country. They are not our problems.This other country has pushed across the border people who did not vote for their Government, but voted for the regime, they wanted.There is no other crime which these people have committed because the cry for independence arose after Sheikh Mujib was arrested, and not before. He himself,so far as I know, has not asked for independence,even now. But after he was arrested,after there was this tremendous massacre, it was understandable that the rest of the people should say:" After this,how can we live together ? We have to be separate".
অর্থাৎ ' যখন সবেমাত্র নিজেদের সমস্যা সমাধান করে একটু সোজা হলাম, ভাবলাম এখন খুব দ্রুত সামনে এগিয়ে যাব। তখনই অন্যের সমস্যা এসে ঘাড়ে চাপল। সেগুলি আমাদের সমস্যা নয়। এই দেশটি(পাকিস্তান) নিজেদের লোকজনকে বর্ডারের দিকে ঠেলে দিয়েছে যারা তাদের সরকারকে ভোট দেয় নি। তারা নিজেদের পছন্দমত লোকদের ভোট দিয়েছে। এছাড়া এই লোকগুলির অন্য কোন অপরাধ নেই। তারা স্বাধীনতার আওয়াজ তুলেছে শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করার পর, এর আগে নয়। এমনকি শেখ মুজিব নিজেও স্বাধীনতা চান নি, এখনও চাচ্ছেন না। কিন্তু তার গ্রেফতারের পর ম্যাসাকার শুরু হলে সঙ্গত কারনেই লোকজন বলছে, এই লোকগুলির সঙ্গে এখন আর একসাথে থাকা সম্ভব নয় । আমাদেরকে
পৃথক হতেই হবে। "
কাজেই বিভিন্ন চেতনার বড়ি খেয়ে এখনও যারা পুরাপুরি অচেতন হয়ে পড়েন নি তাদের প্রতি অনুরোধ, ইন্দিরার সেই লেকচারটি একটু ভালোভাবে পড়ে দেখুন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৫ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
না >>>>= বুঝলে ¤¤¤~-_-¤ তরমুজ¤¤¤¤]}}}} :-);-)8-)
মন্তব্য করতে লগইন করুন