মিডিয়ায় বিএনপির খাটি বন্ধু আসলেই কম
লিখেছেন লিখেছেন মিনার রশীদ ১৯ মার্চ, ২০১৪, ১১:২১:১৯ সকাল
সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশগুলিতে রাজনৈিতক দলগুলির মধ্যে পারস্পরিক জোটকরাকে বলা যায় political marriage । বিয়ে যেমন দুটি মানবসত্ত্বাকে মিশিয়ে দেয় কিন্তু একজনকে অন্যজনের মাঝে পুরাপুরি দ্রবীভূত করে না। এই জোটগুলিও কেমিকেল গঠণে একইরূপ হয় । একটি বিশেষ ইস্যু বা উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এরা এক হয় বটে তবে পরস্পরের সঙ্গে দ্রবীভূত হয় না। বিএনপি জামায়াতের জোটটিও তাই।
General marriage চরমভাবে ইচছুক মাত্র দুজন নর-নারীর মধ্যে সংঘটিত হয় । তার ফলে অনেক সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধা, অনেক মধুর যািমনী এই দুটি প্রাণের এক সঙ্গে কাটে। এরকম( ৩০ x৩৬৫ =) ১০৯৫০টি সন্ধা ও যািমনী কাটানোর পরেও সবচেয়ে রোমান্টিক ও সর্বাপেক্ষা মানবিক অনুভূতি সম্পন্ন দম্পতির মাৃঝেও বিচ্ছেদ হয়ে যেতে পারে। Near Miss accident বা incident কত হয়, তার তো হিসাবই নেই।
অন্যদিকে পলিটিকেল ম্যারেজে শুধু দুজন নয় , লাখ লাখ ইচছুক/অনিচ্ছুক মনকে এক সঙ্গে যুক্ত করা হয়। শত শত মানুষের স্বার্থ মুখোমুখি হয় পড়ে। একটি দলের মধ্যেই যেখানে স্বার্থের এই সংঘাত তীব্র হয়ে পড়ে সেখানে জোটের মধ্যকার টানাপোড়েন কেমন হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। একটি জোটকে এগুলি বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হয় এবং এই ধরনের প্রেসার নিরাপদে রিলিজের মেকানিজম তৈরি করতে হয়। একটা রাজনৈতিক জোট বা নেতৃত্বের স্বার্থকতা এখানেই।
এরকম জটিল সময়ে দাম্পত্য জীবনে যেমন বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয় স্বজন দরকার পড়ে । তেমনি রাজনৈতিক দল বা জোটগুলির জন্যে মিডিয়া দরকার। এই সময়ে বন্ধু নামক বস্তুটি যেমন উপকারী হতে পারে তেমনি ভয়াবহ ক্ষতির কারনও হতে পারে। বন্ধুর অনেক দরদী কথাও জীবনটাকে ব্ল্যাক হোলে ছুড়ে দিতে পারে।
উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে দৈনিক মানবজমিন তেমনই একটি রিপোর্ট ছাপিয়েছে। শিরোনামটি হলো, জামায়াতকে নিয়ে অস্বস্তিতে বিএনপি। উপজেলা নির্বাচন একটি স্থানীয় নির্বাচন। স্থানীয় স্বার্থের হিসাব নিকাশের এই নির্বাচনটি তাই জোটের স্থানীয় নেতাদের হাতেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে জোট নেতাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ফুটে উঠেছে। উপর থেকে সমঝোতার একটা প্রত্যাশা থাকলেও স্থানীয়ভাবে কোথাও ঐক্য হয়েছে, কোথাও হয় নি।
এখন দরদী কোন মিডিয়া স্থানীয় কোন নেতার স্থানীয় ক্ষোভটিকে জাতীয় ক্ষোভে রূপান্তরিত করে পরিবেশন করেন তাতে বিএনপির ক্ষতি বৈ কোন লাভ হবে না। এই টেনশনটি পরবর্তি আন্দোলনে ছড়ালে উনিশ দলীয় জোটকে আরো বেকায়দায় পড়তে হবে।
বিএনপির প্রতি উক্ত দরদটি প্রথম আলো দেখালে যতটুকু কাজ হতো বর্তমানে মানবজমিন দেখালে লাভের পরিমাণটুক আরেকটু বেশি হবে। হিসাবটিও স্পষ্ট।
কাজেই বিএনপির জন্যে নিরাপদ ভাবনাটি হলো, মিডিয়াতে তার খাঁটি বন্ধুর সংখ্যা আসলেই কম। এব্যাপারে বিএনপিকে মুখটি খোলার দরকার নেই। আপাতত বুঝলেই চলবে।
বিষয়: বিবিধ
১০৪০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল মূল্যায়ন করতে গিয়ে নানা রকম পাণ্ডিত্য জাহির করা হচ্ছে। কেউ কেউ আবিষ্কার করে ফেলেছেন জামায়াতে ইসলামীর কারণে বিএনপি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আসলে এ ধরনের প্রচারণা যারা চালাচ্ছেন, তারা নির্বাচনী ফলাফলও ভালো করে দেখেননি।
১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফার উপজেলা নির্বাচনে ৯৭টি উপজেলার মধ্যে ২৭টি উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামায়াতে ইসলামী। বাকি ৭০টি উপজেলায় জামায়াত চেয়ারম্যান পদে কোন প্রার্থী দেয়নি। এতে ১২টি বিজয়ী হয় জামায়াত।
২৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফার উপজেলা নির্বাচনে ১১৫টি উপজেলার মধ্যে ২৮টি উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামায়াতে ইসলামী। বাকি ৮৭টি উপজেলায় জামায়াত চেয়ারম্যান পদে কোন প্রার্থী দেয়নি। এতে ৮টিতে বিজয়ী হয় জামায়াত।
গত ১৫ মার্চ তৃতীয় দফার উপজেলা নির্বাচনে ৮১টির মধ্যে ২৪টি উপজেলায় প্রার্থী দেয় জামায়াতে ইসলামী। বাকি ৫৭টি জামায়াতে ইসলামী কোন প্রার্থী দেয়নি। এতে বিজয়ী হয় ৮টিতে। অবশিষ্ট ১৬ উপজেলার মধ্যে জামায়াত ১১টি উপজেলায় স্বল্প ভোটের ব্যবধানে ২য় স্থানে থেকে পরাজিত হয়।
৩ দফায় উপজেলা নির্বাচনে ২৯৩টি উপজেলার মধ্যে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী দিয়েছে ৭৯টিতে। অর্থাৎ বাকি ২১৪টিতে জামায়াতে ইসলামীর কোন প্রার্থীই ছিল না। তাই জামায়াতের কারণে বিএনপির বিপর্যয় হয়েছে বলে যারা তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন তারা কেবল আওয়ামী লীগের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করতে চান। তারা মূলত সরকার দলীয় নেতাদের সুরেই কথা বলেন। চারদলীয় জোট ভাঙ্গার যে ষড়যন্ত্র ২০০১ সালে শুরু হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতা মাত্র।
জামায়াতে ইসলামী যেসব উপজেলায় পাস করতে পারবে বা ভালো করবে সম্ভাবনাময় এমন সব উপজেলায়ই কেবল প্রার্থী দিয়েছে। জামায়াত যেখানে প্রার্থী দেয়নি সেখানে বিএনপি বা ১৯ দলীয় জোটের অন্য শরীকরা প্রার্থী দিয়েছে। তাই বিএনপির বিপর্যয় (?) জামায়াতের কারণে হয়নি। এটা বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।
এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পর্যায়ক্রমে সরকার ভোট ডাকাতি, সন্ত্রাস, সহিংসতা বাড়িয়েছে। ১৯ দল সমর্থকরা পাস করতে পারে এমন উপজেলার অনেক কেন্দ্র দখল করে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে তাদের সমর্থক চেয়ারম্যানদের পক্ষে সিল মেরেছে। আওয়ামী সমর্থিতদের ক্রমান্বয়ে বেশি এবং ১৯ দল সমর্থক চেয়ারম্যান ক্রমান্বয়ে কম পাস করার এটাই অন্যতম কারণ। ফল বিশ্লেষণকারীরা এই দিকটা একেবারেই আড়াল করে রেখেছেন।
প্রায় প্রতিদিনই তৃনমুল বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক! নেতারা বিভিন্ন পত্রিকাতে বক্তব্য রাখছেন যে জামায়াতের জন্য নাকি বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেন জামায়াত কে ছাড়লেই বিএনপি সব চেয়ারম্যান জিতত! যাদের নাম প্রকাশের সৎসাহস নাই তাদের কথার গুরুত্ব কি?
আসাদুজ্জামান নূর , হাসান ইমাম এরা যে কঠিন আওয়ামী লীগার এটা কি সে সময়ে কেউ জানতো ?
বিএনপির আমলেই তো বাকের ভাই হিট হয়েছিল ।
বিএনপির উচিত ছিল নূরদের মত এরকম পার্টিজান মিডিয়া কর্মীদের এগিয়ে আনা যাদের সমাজে ভাল গ্রহন যোগ্যতা আছে ।
ধন্যবাদ+ পিলাচ
এন টিভি/ বাংলা ভিশন এগুলো সব নিরপেক্ষ টিভি।
আপনার মূল্যায়নটা সঠিক।
এন টিভি/ বাংলা ভিশন এগুলো সব নিরপেক্ষ টিভি।
আপনার মূল্যায়নটা সঠিক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন