'বুজুর্গানে শয়তান' জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং তাঁর এদেশীয় মুরীদগণ
লিখেছেন লিখেছেন মিনার রশীদ ১৭ মার্চ, ২০১৪, ০১:৪২:২৯ দুপুর
স্বাধীনতার এই মাসটিতে যে নামটিকে আমাদের ঘৃণাভরে স্মরণ করা উচিত তাহলো বুজুর্গানে শয়তান জুলফিকার অালী ভুট্টো। তবে এই লেখায় উক্ত বুজুর্গের নামটি এসেছে ভিন্ন একটি প্রেক্ষাপটে।
পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরেই তিনি তার খায়েশমত পাকিস্তানের ক্ষমতায় আরোহন করতে পেরেছিলেন । বান্ধবী ইন্দিরাকে শতাব্দীর সেরা সুযোগটি সৃষ্টি করে দিয়ে নিজের ক্ষমতারোহনটিও সহজ করে ফেলেন ।
ক্ষমতায় বসে তাকে আরেকটু নিস্কন্টক করার জন্যে প্রতিপক্ষ নেতাদের জেলখানায় আটক করে তাদের কেবিনে সুন্দরী ললনাদের ঢুকিয়ে দিতেন । বিশেষভাবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত সেই সুন্দরীদের সঙ্গে সেই সব নেতাদের প্রশ্নবোধক (?) ভঙ্গিমার ছবি তুলে রাখা হয় । পরবর্তি সময়ে সেই ছবিগুলি দিয়ে রাজনৈতিক ব্ল্যাক মেইলিং বা চরিত্র হননের কাজগুলি করতেন এই শয়তানের শয়তান ও তার সাগরেদগণ।
১৯৭১ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসাবে শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা অর্পন না করতে ইয়াহিয়াকে কুমন্ত্রণা দেয়ার পেছনে মূল ব্যাক্তি ছিলেন এই বুজুর্গানে শয়তান। ১৯৭১ সালে এদেশে যে ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত হয় তারও মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই জঘন্য ব্যক্তিটি। কিন্তু এদেশে একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে সোচ্চার অংশটি কেন যেন এই জঘন্য ব্যাক্তিটিকে সেভাবে তুলে ধরেন না। এমনকি যুদ্ধের মাত্র দুই/তিন বছরের মধ্যেই ১৯৭৪ সালে ভুট্টোর সাথে শেখ মুজিবের সেই অন্তরঙ্গ ও কোলাকুলির ছবি আজো অনেককে কষ্ট দেয়।
এই ঐতিহাসিক কোলাকুলির পেছনেও কিছু কারন রয়েছে। ভুট্টোর পিপিপি এবং শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ - এই দুটি দলের রাজনৈতিক আদর্শ হুবহু এক। মুসলিম প্রধান একটি দেশে উভয়েই রাজনৈতিক আদর্শে মধ্যবাম ঘরানার । সমাজতন্ত্রের প্রতি দুটি দলই সমানভাবে দুর্বল ছিল । ইন্ডিয়ার প্রতিও এরা একইভাবে দুর্বল, যদিও মাত্রায় পার্থক্য রযেছে।
কাজেই একই পথের দিশারী হিসাবে এই বুজুর্গের সিলসিলাটি এদেশে চালু রেখেছেন এবং নিজেদের উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহার করে এটাকে আরো ফুলে ফলে সুশোভিত করেছেন।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে এরকম একটি ডিজিটাল উদ্যোগ গ্রহন করা হয় । কিন্তু জাতীয়তাবাদের পক্ষের সাইবার যোদ্ধারা সেই পরিকল্পনাটি অংকুরেই বিনষ্ট করে দিয়েছেন । এই সাইবার যোদ্ধারা দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে একটি সমাবেশের ছবি থেকে তারেক রহমানের ছবি কাট করে নাইট ক্লাবের অন্য একটি ছবির সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছিল। একইভাবে মাওলানা সাঈদীর একটি টেিলফোন সংলাপ ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু উভয়ের লাইফ স্টাইলের সাথে প্রচারনাটির মিল না থাকায় পাবলিক তা সেভাবে গ্রহণ করে নি। বরং এর পেছনে ভুট্টোর প্রেতাত্মাদের নোংরা চেহারাগুলি আরেকটু স্পষ্ট হয়েছে।
স্বাধীনতার এই মাসটিতে সাইবার জগতের এই যোদ্ধাদের জন্যে এটি একটি অন্যরকম বিজয়। কারন একই শয়তানে বুজুর্গের চ্যালাদের তারা এই মার্চ মাসেই পরাস্ত করেছেন। হলুদ সাংবাদিকতার দিন আসলেই শেষ হয়ে পড়েছে । এর ফলে এদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে। কনভেনসনাল মিডিয়া হস্তী বাহিনী হলে বিকল্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে এরা হয়ে পড়েছেন এই যুগের আবাবিল বাহিনী।
প্রতিপক্ষের চরিত্রহনন কিংবা একই উদ্দেশ্যে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে বসানোর এই ভুট্টীয় ডকট্রিনটি শুরু হয়েছিল জহির রায়হানকে দিয়ে। তিনি গুম হয়েছিলেন ১৯৭২ সালের জানুয়ারী মাসের শেষ দিকে । কিন্তু কোনরূপ অনুসন্ধান ছাড়াই ঘাতক হিসাবে সেই একই রাজাকার আলবদরদের ছবি পেষ্ট করে বসিয়ে দেয়া হয়েছে । অথচ আমরা সবাই জানি যে সেই সময় ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এক ইঞ্চি জায়গাও রাজাকার আলবদরদের দখলে ছিল না ! এরা সবাই তখন আপন আপন প্রাণ বাচাতেই ব্যস্ত ছিল।
কাজেই মাথায় অনেক প্রশ্ন এসে যায়।
পাক বাহিনী ও তাদের দোসররা শেষ ক্ষোভটি মিটালেন এমন একজন নিরীহ চীনপন্থী বুদ্ধিজীিবর উপর যিনি বেঁচে থাকলে এই রাজাকার সম্প্রদায় বা সমভাবাপন্ন মানুষের বিশেষ উপকার ছাড়া কোন ক্ষতি হতো না !
কারন জহির রায়হানের কাছে এমন কিছু তথ্য ছিল যা প্রকাশিত হলে কলকাতার হোটেলে বসে কেউ কেউ কীভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন সেই গোমরটি প্রকাশ হয়ে পড়তো।
তাছাড়া ১৪ই ডিসেম্বরের দিনটিতে যে সব বুদ্ধিজীিবগণ নিহত হয়েছেন তাদের নিয়ে সৃষ্ট অনেক প্রশ্নের কোন জবাব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । এই সব বুদ্ধিজীিবদের প্রায় সবাই যুদ্ধের পুরো সময়টি পাক বাহিনীকে পরম বিশ্বাস করেই ঢাকার বুকেই পরিবার পরিজন নিয়ে অবস্থান করছিলেন। যাদের উপর তাদের এত আস্থা ছিল, সেই সব নিরস্ত্র বুদ্ধিজীিব গণকে কেন তারাই আবার শেষ মুহুর্তে হত্যা করবে?
সমর বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিজয়ের প্রাক্কালে পলায়নপর বাহিনীর পক্ষে এই ধরনের হত্যা -অপারেশন চালানো কঠিন । এই কাজগুলি করে সাধারনত সামনে অগ্রসরমান বাহিনী, পথের সম্ভাব্য কাটাগুলি আরো ভালোভাবে সরানোর নিমিত্তে। বিষয়টি নিয়ে নিরপেক্ষ গবেষণা হলে আরো অনেক সত্য বেরিয়ে আসতে পারে।
জানি না, সেই সত্যের মুখোমুখি হতে আমরা কতটুকু প্রস্তুত ।
বিষয়: বিবিধ
১২৭৬ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বুদ্ধিজীবী হিসেবে আমরা সে সময় যাদেরকে চিনি তাদের ম্যাক্সিমামই ছিলেন সরকারী পদে কর্মরত । কেউ সাংবাদিক , কেউ ডাক্তার , আবার কেউ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ।
সে সময়ে কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ছিল না আজকের মত যে তারা সেখানে চাকরি করবেন ।
আর যুদ্ধের সেই ডামাডোলে যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল দুস্প্রাপ্য এবং দুর্মূল্য - সেখানে সরকারী চাকরি তথা পাকিস্তানী সরকারের গোলামী তারা যে ছাড়েন নি তা তাদের সে সময়ে ঢাকাতে অবস্থানই বলে দেয় ।
অথচ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন '' যার যা কিছু আছে তা দিয়েই শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে ''
জিয়ারা কোর্ট মার্শালের খড়গ মাথায় নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন । উনারা নামলেন না কেন ?
সে সময়ে কোন চেতনা তাদের জিয়াদের মত সন্মুখ সমরে যুদ্ধে যেতে বাঁধা দিয়েছিল ?
ভুট্টোর উপাধিটা ভাল লাগল। ভুট্টো সম্পর্কে যা যেনেছি যে তার পিতা স্যার শাহ নেওয়াজ ভুট্টো সর্দার প্যাটেল এর সাথে আঁতাত করে জুনাগড় ভারতে হাতে তুলে দিয়েছিলেন। যুলফিকার আলি ভুট্টো যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা শেষ করে প্রথমে ভারতেই গিয়েছিলেন এবং সেখানে চাকরির চেষ্টা করেছিলেন। ব্যার্থ হয়ে পাকিস্তানে যান এবং সামরিক শাসক আইয়ুব খানের সহায়তায় জমিদারপুত্র থেকে কৃষক-শ্রমিক নেতা হয়ে যান। পাকিস্তানি সামরিক অফিসার যারা ১৯৭১ সালের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তাদের স্মৃতিচারন থেকে এটা পরিস্কার যে ভুট্টোর সমর্থক সামরিক অফিসাররাই জনরায় কে অমান্য করে জোড় করে ক্ষমতা দখল করতে বাধ্য করেছি। আর ভুট্টো এবং মুজিব দুজনেই মুলত একই মানসিকতার মানুষ ছিলেন। ৭০ এর নির্বাচনের পর ভুট্টোসুস্পষ্টই বলেছিলেন"ইধার হাম উধার তুম"। মানে তারাই ভাগ করেনিয়েছিলেন পাকিস্তান। উভয় দেশের অসংখ্য সৈনিক আর সাধারন মানুষের রক্তের উপর তারা বানিয়েছিলেন নিজেদের ক্ষমতার প্রাসাদ। তবে আল্লাহর বিচার। উভয়েরই একই নির্মম পরিনিতি হয়েছে।
সত্যি বৈকি .. সুন্দর কথা বলেছেন।
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন