নিরপেক্ষতা থেকে বস্তুিনষ্ঠতা ও সাহস অপসারিত হলে তা হয়ে পড়ে স্রেফ সুবিধাবাদ

লিখেছেন লিখেছেন মিনার রশীদ ০৯ মার্চ, ২০১৪, ০৫:৫৩:১৭ বিকাল

কয়েক বছর আগে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত একটি কার্টুনের কথা বেশী করে মনে পড়ছে। কার্টুনটিতে দেখানো হয়েছিল বিএনপির কারাবন্দী নেতা সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরী মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছেন। আর একটি পানির হোজপাইপ থেকে পানির ছিটা বা স্প্রে দিয়ে দুর্গন্ধ ছড়ানো সেই মাইক্রোফোনটি পরিস্কার করা হচ্ছে। কার্টুনটি তখন বেশ সাড়া জাগিয়েছিল এবং কার্টুনিস্ট ও পত্রিকাটির সুনাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল।

আজ তার চেয়েও উচু জায়গা থেকে এবং এর চেয়েও ভয়াবহ শব্দ একই ধরনের মাইক্রোফোন থেকে ভেসে এসেছে। তারপরেও জাতির মরাল ব্রিগেইড কিংবা ফায়ার ফাইটাররা কোন রূপ পানির হোজ নিয়ে সেই মাইক্রোফোন ও বক্তাটিকে ধুয়ে দিচ্ছেন না।

পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় পানির হোজ মারতে না পারলেও এই কথার দুর্গন্ধ সরাতে অন্তত দুয়েকটা এয়ার ফ্রেশনার তো মারা উচিত ছিল।

বিষয়টি নিয়ে নিজেদের পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য করা তো দূরের কথা, শেখ হাসিনার কুমন্তব্য নিয়ে জনাব বদরুদ্দোজা চৌধুরী যে প্রতিবাদটি করেছেন সেই সংবাদটি প্রকােশও টিভি চ্যানেল ও পত্রিকাগুলি চরম শৈথিল্য ও কার্পণ্য দেখাচ্ছে।

বিএনপি নেত্রী কালেভদ্রে খেপে গিয়ে কাউকে 'বেয়াদব' বললে টিভি চ্যানেল গুলি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেটাই বার বার দেখান। অথচ এই ধরনের ভয়ানক কথা নিয়েও এরা আজ নির্বিকার।

' মুই কার খালু ' ডেকে ব্যারিস্টার রফিকের মতো লোকের মনেও সম্ভবত ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি এখন কোন বিষয়ে কথা বলতে গেলে দুই নেত্রীর নাম এক সঙ্গে রেখেই বলেন । গতকালও একটি সমাবেশে বলেছেন, ' দুই নেত্রীরই মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে এবং দুই টার্মের পর আর কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। ' মনে হচ্ছে , এই কথাটি বলাও এখন যথেষ্ট নিরাপদ হয়েছে। কারন দুই নেত্রীই এখন দুই টার্ম শেষ করেছেন। এদের মধ্যে এক জন দুই টার্ম শেষ করতে না পারলে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ কথাটি বলার সাহস করতেন কিনা তা নিয়েও কেন যেন সন্দেহ হচ্ছে।

জাতির মুরব্বীয়ানার এই নিরাপদ সিলসিলাতে বিশেষ কারও খালু বা ভাগ্নে বলে চিহ্নিত হওয়ার ভয় থাকে না। তবে এই সব 'কমন মলম' দিয়ে জাতির মারাত্মক রোগটি কখনই সারবে না । কাউকে না কাউকে এই কঠিন কথাগুলি বলতে হবে। ব্যথাটি হয় মাথায়, না হয় পেটে। যেখানে ব্যথা , সেখানেই অষুধটি লাগাতে হবে। এখন বুদ্ধি করে পেট ও মাথার মাঝামাঝি নিরপেক্ষ জায়গা খুজে গলা বা স্কন্ধ ব্যথার অষুধ প্রয়োগ করলে তা নিরপেক্ষ চিকিৎসা হলেও সুিচকিৎসা হবে না। দিন দিন একটি হাড্ডিসার জাতিতে পরিণত হওয়ার পেছনে মূল কারন সম্ভবত এটি। সত্যিই এক কানাওয়ালার খপ্পরে পড়ে গত প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে অন্ধকার রাত্রিতে বিলের পাশ দিয়ে শুধু চক্কর দিচ্ছি।

আমাদের পচন বা বিভ্রান্তি তাই মূল মগজে। নিরপেক্ষতা থেকে বস্তুিনষ্ঠতা ও সাহস অপসারিত হলে তা সুিবধাবাদের নামান্তর হয়ে পড়ে। তখন কারো কারো ব্যক্তিগত সুনাম বা গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি পেলেও তা থেকে জাতির কোন স্থায়ী কল্যাণ হয় না।

নিরপেক্ষ মিডিয়ায় মাইক্রোফোন সহ সালাহ উদ্দীন কাদের চৌধুরীর মুখ ধৌতকরণটিও ছিল বেশ কৌতুহলোদ্দীপক ও চাঞ্চল্যকর। তিনি তখন ওআইসির মহাসচিব হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের যে কয়জন নেতা এতে আপত্তি জানান তাদের মধ্যে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অন্যতম। এ ব্যাপারে তার মাথাটি যেন সত্যিই খারাপ হয়ে যায়।

ওআইসি সম্পূর্ণ মুসলিম স্বার্থ সংশ্লিষ্ট একটি সংস্থা। এটা নিয়ে সুরঞ্জিত বাবুর খোঁচা মারা কথাগুলি তখন অনেকের কানেই বেজেছিল। কিন্তু মনে জমা সেই ভাব কিংবা অনুভূতিটুকু নিরাপদে প্রকাশ করার কোন রাস্তা কেউ যেন খুঁজে পাচ্ছিল না ।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সুরঞ্জিত বাবু এই ধরনের আচরন করছিলেন সেটা ধরে নেয়াও কষ্টকর হচ্ছিল । কারন ওআইসি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের কোন সংস্থা ছিল না বরং এটা ছিল পুরাপুরি উল্টা চেতনার । কাজেই এটা নিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সুরঞ্জিত বাবু মাত্রাতিরিক্ত কথা বলতে শুরু করলে জনাব চৌধুরী যারপরনাই রেগে যান। তখন তাঁর বক্তব্যটি ছিল এরকম, ' আমি যা কেটে এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি, সুরঞ্জিত বাবু তা আগে কেটে পরে এর প্রতিবাদ করুক। '

এটুকু বলাতেই সারা দেশেরর মরাল ব্রিগেইড কেঁপে ওঠে। ' ছি-ছি-ছি ' পার্টি পুরো বাদকদল সহ নেমে পড়ে। সম্পাদকীয়,উপসম্পাদকীয় এবং মন্তব্য প্রতিবেদনের বন্যা বয়ে যায়।

জাতির সেই একই মরাল ব্রিগেইড ও স্পর্শকাতর ফায়ার ফাইটারদের আজ এই নির্লিপ্ততা চিন্তার উদ্রেক করে বৈকি !

সেই চিন্তা থেকেই মনে মনে একটি কার্টুন আকার চেষ্টা করেছি। প্রায় একই ধরনের একটি কার্টুন। সালাহ উদ্দীন কাদের চৌধুরীর জায়গায় মাইক্রোফোনের সামনে আছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পানির হোজপাইপটিও ঠিক আছে কিন্তু তা দিয়ে কোন পানি বের হচ্ছে না। কারন মনমোহন সিং হোজপাইপটির গোড়ায় বসে ভালবটি বন্ধ করে দিয়েছেন ।

বিষয়: বিবিধ

৮৮৪ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

189478
০৯ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৫
189482
০৯ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৯
Democratic Labor Party লিখেছেন :
جلالے پادشاہی ہو
یا زمہوری تماشا ہو

جب زودا ہو دین سیاست سے
تو رہ جاتی ہیں چنگیزی
---
علامہ اقبال
--------------------

Jlạlے pạdsẖạہy̰ ہw
Y̰ạ zmہwry̰ tmạsẖạ ہw

Jb zwdạ ہw dy̰n sy̰ạst sے
Tw rہ jạty̰ ہy̰ں cẖngy̰zy̰

-------------Allama iqbal
189516
০৯ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:১৮
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, জাজাকাল্লাহুল খাইরান, সহমত পোষন করছি
189600
০৯ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:১৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মরাল ব্রিগেড এর মরালিটি শুধু এক চোখে। অন্যচোখে মরালির বিষ্ঠাও সুন্দর।
189837
১০ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:৫৬
সজল আহমেদ লিখেছেন : সহমত।
189991
১০ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৩
আবু আশফাক লিখেছেন : প্রথম আলোর সেই কার্টুনের চেয়ে বরং আপনার কার্টুনই মানানসই হয়েছে।
কারণ মনমোহন সিং যে হোজপাইপটির গোড়ায় বসে ভালবটি বন্ধ করে দিয়েছেন তা এক কথায় অসাধারণ!
190225
১১ মার্চ ২০১৪ রাত ০২:৪১
ইকুইকবাল লিখেছেন : আপনার লেখার মাঝে কি যেন খোঁজে পাই। বলতে গেলে সাহিত্যের পুরো রস। আসল কথা হল বর্তমান সরকার নড়বড়ে। আর এই নড়বড়ে রাজ্যকে চাড়া দিয়ে খাড়া করার কত বিধান তৈরি করছে তার ইয়ত্তা নেই। বিরোধীদের দমন করেই বুকচিতিয়ে গণতন্ত্রের কথা বলে গিয়ে কেল্লাফতে ভাবলে কিন্তু আর জনতা বাকশাল ভুলে যাবেনা।
190673
১১ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৯
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : মাথাটা বিক্রি করা কালূ,কাও,মামু সবাই একই কাতারে। সত্যিই আপনি জায়গাটা চিহ্নিত করতে পেরেছেন। আমাদের কি শোনার মত চোখ কান আছে? আপনাকে মোবারকবাদ।
190794
১১ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:০৯
১০
190798
১১ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:১১
১১
191082
১২ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:২৩
হতভাগা লিখেছেন : http://www.amardeshonline.com/pages/details/2014/03/12/238381

মরাল ব্রিগেডের রিয়েকশন একই রকম দুটো ঘটনায় ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File