৭ই মার্চের ভাষণ থেকে গায়েব হওয়া ' জিয়ে পাকিস্তান ' এবং বুদ্ধিবৃত্তিক লাঠিয়ালদের হাতে জিম্মি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

লিখেছেন লিখেছেন মিনার রশীদ ০৭ মার্চ, ২০১৪, ০২:১৩:২৯ দুপুর

প্রখ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদ মৃত্যুর আগে ইতিহাসের প্রতি বিবেকের একটি দায় আদায় করে গেছেন। তিনি জানিয়েছেন ৭ই মার্চের এই বিখ্যাত ভাষণে জয় বাংলার পর শেষ শব্দটি ছিল ' জিয়ে পাকিস্তান। ' অর্থাৎ পাকিস্তান দীর্ঘজীবি হোক।

শুধু মাত্র এই ভাষণেই পাকিস্তানের দীর্ঘ জীবন কামনা করা হয়নি - ৭ই মার্চের এই ভাষণের পর ২৫শে মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়ার সঙ্গে লম্বা গোলটেবিল বৈঠক করে পাকিস্তানকে দীর্ঘ জীবন দিতে চেয়েছিলেন। ভুট্টোর কুটচালের জন্যে তা সম্ভব হয় নি। কাজেই আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে ভুট্টোর এই কারসাজি ( অন্যকথায় অবদান) অস্বীকার করা যাবে না।

আ.স.ম.আব্দুর রব,তাজউদ্দীন আহমেদ প্রমুখ নেতাগণ বঙ্গবন্ধুর নিজের মুখ থেকে একটি স্বাধীনতার পরিপূর্ণ ঘোষনা রেকর্ড করে রাখার জন্যে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাদেরকে ধমক দিয়েছেন, তোরা কি আমাকে এখন রাষ্ট্রদ্রোহী হিসাবে অভিযুক্ত হতে বলিস ?

এক পর্যায়ে ইয়াহিয়া খাঁনকেও বলেছিলেন, ' আমি যদি আপনার কথা শুনি, তাহলে ছাত্রনেতারা আমাকে মেরে ফেলবে। আবার ছাত্রনেতাদের কথা শোনলে আপনি আমাকে মেরে ফেলবেন। '

পাকিস্তান সরকারের আওতায় থেকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে এই ধরনের ভাবনা ও শব্দ উচ্চারন অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু অস্বাভাবিক কাজটি হলো , পরবর্তী সময় সেই ভাষণ থেকে এই শব্দ দুটি গায়েব করা দেয়া। তার চেয়েও অস্বাভাবিক হলো বিষয়টি নিয়ে এখনও আমাদের সার্বিক নীরবতা।

স্বাধীনতা পরবর্তীতে অামাদের নতুন ভাবনা ও নতুন চেতনার সাথে বিষয়টি এডজাস্ট করার দরকার হলেও সেই গায়েবের রেকর্ডটিও তো সংরক্ষণ করে রাখা দরকার। অামাদের অন্যান্য মুরব্বীদের প্রতি অনুরোধ, এই দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার অাগে আপনারাও জাতিকে এই সত্য কথাটি জানিয়ে যান।

কেন এবং কী কারনে এই শব্দ দুটি ভাষণের রেকর্ড থেকে উধাও করা হলো তা বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। এটি একজন মানুষের আল-জিহ্বা থেকে সৃষ্ট শুধু কয়েকটি অর্থহীন ধ্বনীমাত্র ছিল না। এটি তাঁর স্লিপ অব টাং ও ছিল না। এর সঙ্গে একটি জাতির লম্বা ইতিহাস( Continuous Synopsis Record) জড়িয়ে আছে। আজকের বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্যে সেদিনের পাকিস্তান সৃষ্টির ঐতিহাসিক বাস্তবতাটি এই শব্দ দুটির মাধ্যমে ফুটে উঠেছিল।

পাকিস্তান শব্দটি শোনা মাত্রই লাফিয়ে উঠা যে প্রজন্মটি সৃষ্টি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কন্ঠে 'জিয়ে পাকিস্তান ' শব্দ দুটি রেখে দিলে তা হয়তোবা সম্ভব হতো না । অন্ধ চেতনার নামে একটি ক্রুদ্ধ ও ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ সৃষ্টিও সম্ভব হতো না।

এরাই আজ এদেশে সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে মূল অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা গণতন্ত্র চায় শুধু নিজেরা ক্ষমতায় আসার জন্যে । এরা বাকস্বাধীনতা চায় শুধু নিজেদের কথাগুলি বলার জন্যে। অন্যের বাকস্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের ব্যাপারে এদের নিজেদের সেন্সরগুলি পুরাপুরি ভোতা হয়ে গেছে।

এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক লাঠিয়াপনার মাধ্যমে স্বাধীন কোন গবেষকের জন্যে গবেষণার সকল রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে স্বাধীন গবেষণা করেছে অথচ রাজাকার গািল খান নি, এমন খুব কম হয়েছে। এমনকি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ভাইয়ের নাত্নী শর্মিলা বসুও এই ধরনের গালির হাত থেকে বাঁচতে পারেন নি।

আজকে সিঙ্গেল ইউনিটের এই চমৎকার রাষ্ট্রটিকে যেভাবে ভাগ করা সম্ভব হয়েছে, এই শব্দ দুটি সেই ভাষণের সাথে সংযুক্ত রাখলে তা সম্ভব হতো না। আজকে স্বাধীনতার চেতনার দোহাই দিয়ে আমাদের গনতন্ত্রকে যে সংকটে ফেলা হয়েছে, এই শব্দ দুটি সংযুক্ত থাকলে তা সম্ভব হতো না। কারন এই দুটি শব্দ আমাদেরকে স্বাধীনতার মূল চেতনাটিকে বার বার স্মরণ করিয়ে দিত । সেই চেতনাটি হলো গণতন্ত্র, গণতন্ত্র আর গণতন্ত্র। কাজেই বেখেয়ালে কিংবা বঙ্গবন্ধুকে শুধু রাজাকার হওয়ার লজ্জা থেকে বাঁচানোর জন্যেই এই কাজটি করা হয় নি। এর পেছনে অনেক সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা কাজ করেছে।

বিষয়: বিবিধ

১৩১৯ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

188398
০৭ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:২৬
হতভাগা লিখেছেন : ৭ই মার্চ সেই ভাষনের পরও ৮-২৫ মার্চ উনি কি কারণে / কিসের জন্যে ইয়াহিয়া - ভুট্টোর সাথে ঢাকা-করাচি আলোচনা করে যাচ্ছিলেন সেটা নিয়ে কাউকেই যুক্তিযুক্ত উত্তর দিতে দেখা যায় না ।
188404
০৭ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৩৬
গেরিলা লিখেছেন : মাইনাস
০৭ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৫২
139722
আবু আশফাক লিখেছেন : গেরিলার মাইনাসে কিচ্ছু আসে যায় না।
188409
০৭ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৫৪
আবু আশফাক লিখেছেন : ''এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক লাঠিয়াপনার মাধ্যমে স্বাধীন কোন গবেষকের জন্যে গবেষণার সকল রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে।''
কারণ স্বাধীন কোন গবেষক গবেষণা করলে তো থলের বিড়াল বেরিয়ে যাবে; চেতনাবাজী আর চলবে না।
188416
০৭ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:২০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই প্রশ্নটি আমি অনেককেই করেছি। কিন্তু কেউই এর জবাব দেননি। সবচেয়ে হাস্যকর হচ্ছে শেখ মুজিবর রহমান এর জিয়ে পাকিস্তান বলা এবং স্বাধিনতার ঘোষনা না দেয়া তার জন্য অসন্মান নয় বরং সন্মান ই বৃদ্ধি করে। তাকে মাথা গরম নেতা নয় বরং একজন নিয়মতান্ত্রিক নেতার বলেই ইতিহাসে প্রমান করে। পাকিস্তান ভাঙ্গার দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেয়। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান কে স্বাধিনতার ঘোষক বানাতে গিয়ে কিন্তু পাকিস্তানে তার আটক থাকা এবং বিচারের মুখোমুখি হওয়াকে বৈধতা দেয়া হচ্ছে এবং ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টোকে পাকিস্তান ভাঙ্গার দায় থেকে মুক্তি দিচ্ছে তা এর দাবিদার রা বুঝছেন না।
১২ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:৫৫
142122
হতভাগা লিখেছেন : ৭ই মার্চের ভাষনে নিশ্চয়ই এমন কিছু বলা ছিল ( যা এখন আমাদেরকে এডিট করে শোনানো হয় ) যাতে পাকিস্তান (ইয়াহইয়া-ভূট্টো) ৮ই মার্চ থেকেই যুদ্ধ শুরু করে দেয় নি ।

বঙ্গবন্ধু যদি ৭ই মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনাই দিয়ে থাকেন তাহলে ৮-২৫ তারিখ আলাপ-আলোচনার দরকারই পড়ে না । একমাত্র পথই ছিল যুদ্ধ ।

যুদ্ধ না করে এই এসময় উনাদের আলাপ-আলোচনা খেলা খুবই সন্দেহ জনক মনে হয় --আসলেই কি স্বাধীনতার ঘোষনা তথা স্বাধীনতা চাওয়া হয়েছিল কি না ।
188420
০৭ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৬
নানা ভাই লিখেছেন : ভাষনটা ভালভাবে শুনলেই বুঝা যায়......কতা কইলেই রাজাকার...।।
এই ৭ই মার্চে নতুন জিনিস আবার পাইলাম। পড়েন....।
তিনি শুধু তথ্যবিজ্ঞানীই নন,বুদ্ধি প্রতিবন্ধীও।
http://abuls.blogspot.com
188451
০৭ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:২১
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : বেশ কয়েকবছর পূর্বে এই একই বিষয়ে একটি লিখা পড়েছিলাম।
প্রশ্ন হল - রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় তো ছিলেন - বিএনপি জামায়াত। বিষয়টা হাইলাইট করা যেতে পারতো না।
বর্তমান চেতনার নামে যে ব্যবসা চলছে তার একটা ইতি হতে পারতো।
আপনাকে ধন্যবাদ। আরো লিখতে হবে। লিখা প্রয়োজন।
188489
০৭ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৭
আহমদ মুসা লিখেছেন : ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ততকালীন দুনিয়ার বিশ্বশুক্তিগুলোর ভুমিকাসহ অনেক পক্ষ নিজেরদের স্বার্থেই বাংলাদেশ নিয়ে অতি উৎসাহী ছিলেন। অথচ এসব বিষয়গুলোর অনেক ইতিহাসকে ধামা চাপা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশকে দুনিয়ার বুকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে হলে নতুন প্রজন্মকে এসব ইতিহাস জানতে দিতে হবে। কিন্তু দেশের অস্থিত্ব বিনাশী প্রকাশ্য স্বাক্ষাৎ শত্রুদের নগ্ন হস্তক্ষেণ আগ্রাসীসূলভ ভুমিকা এবং তাদের অনুগত গোলাম দাসীগুলোর দেশপ্রেমহীন একবার সুযোগ দে মা লুটে পুটে খাই স্বভাবের হায়েনাদের খপ্পরে পড়ার কারণে সব অর্জনই আজ ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টারত। কিন্তু বিপরীতক্রমে বাংলাদেশপন্থীদের সার্বিক ও বহুমূখী মোকাবিলা করার প্রস্তুতি দেখা যায় না। এটাই খুবই বেদনাদায়ক। তারাও আজ শুধু কিভাবে সহজে ও আরাম আয়েশে থেকে ক্ষমতার কুরসি হাসিল করা যায় সেই ফিকিরে আছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File