আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস
লিখেছেন লিখেছেন আকরামস ১০ অক্টোবর, ২০১৪, ১১:০০:৪৭ সকাল
বাংলাদেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত প্রায় দুই কোটি মানুষের চিকিৎসার জন্য সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন হাসপাতালে মাত্র ৮১৩টি শয্যা রয়েছে। বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথক কোনো সেবাকেন্দ্র নেই। হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওপর এ রোগের চিকিৎসা নির্ভরশীল। এ ছাড়া এ রোগের চিকিৎসার জন্য দেশে মাত্র ১৯৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। এতে করে মানসিক রোগে আক্রান্তরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত। অথচ বিশাল এই জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় মাত্র ১৯৫ জন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রয়েছেন।
তাদের মধ্যে প্রায় একশ' চিকিৎসক রাজধানীতে অবস্থান করছেন। জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। সরকারি পর্যায়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের কয়েকটি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সীমিত পরিসরে মানসিক রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে রোগী ভর্তির জন্য মাত্র ৮১৩টি শয্যা আছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১৬ শতাংশ এবং শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১৮ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এ ছাড়াশিশু-কিশোরদের মধ্যে প্রতি হাজারে আটজন অটিজমে আক্রান্ত। এর মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া রোগীর সংখ্যা দুই কোটি ৬০ লাখ।
এ বিষয়ে মনোবিদ অধ্যাপক ডা. মুহিত কামাল বলেন, সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার এবং সামাজিক কারণে অসুস্থতার চেয়ে সমাজই আক্রান্তদের বেশি নিগৃহীত করে। ভ্রান্ত ধারণা বর্জন করে সঠিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে এ অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব।
সিজোফ্রেনিয়া রোগে রোগীর চিন্তা, প্রত্যক্ষ ও আচরণের অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। অলীক প্রত্যক্ষণ (হ্যালুসিনেশন) :যেমন কানে অদৃশ্য কারও কথাবার্তা শোনা, বদ্ধমূল ভ্রান্তবিশ্বাস (ডিল্যুশন), অহেতুক সন্দেহ, অস্বাভাবিক আচরণ, নিজের চিন্তা ছড়িয়ে যাচ্ছে বা চুরি হয়ে যাচ্ছে বা অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এমন বিশ্বাস, ঘুমের সমস্যা, একা একা কথা বলা, নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকা, কর্মক্ষমতা নষ্ট হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ থাকতে পারে। সাধারণত ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। পঞ্চাশের দশকের পর থেকে মানসিক রোগের ওষুধের আবিষ্কার ও ব্যবহার বাড়তে থাকায় বিশ্বব্যাপী এ রোগের লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা বহুলাংশে সম্ভব হয়েছে। হতাশ না হয়ে সিজোফ্রেনিয়াসহ যে কোনো মানসিক রোগকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। সবার আগে প্রয়োজন সিজোফ্রেনিয়া রোগটি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা ও বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা। অনেক সময় নানা কুসংস্কারের কারণে বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসার বিপরীতে অপচিকিৎসা গ্রহণের কারণে রোগটি আরও জটিল হয়ে ওঠে। মনে রাখতে হবে যে, সিজোফ্রেনিয়া একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ, তাই দীর্ঘসময় এমনকি কখনও কখনও সারাজীবন ওষুধ খাওয়াতে হবে। রোগী ওষুধ না খেলেতাকে দোষারোপ করা যাবে না; বরং স্বজনদেরই দায়িত্ব নিতে হবে।
বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণায় আকৃষ্ট হয়ে ওষুধ বাদ দিয়ে কেবল কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসা করা যাবে না। রোগ লক্ষণগুলোকে গোপন না করে রোগীর সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে হবে, আত্মহত্যার প্রবণতা থাকলে তাকে নিরাপদে রাখতে হবে। রোগীর যত্ন নেওয়া তার খাদ্যগ্রহণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিতে হবে। রোগীকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন না করা, তাকে ব্যঙ্গ বা উপহাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে। রোগীর সক্ষমতার ওপর নজর রেখে তাকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি না রেখে পরিবার ও সমাজের মধ্যে রেখে তার চিকিৎসা করতে হবে। রোগের লক্ষণ দূর করার উদ্দেশ্যে সুস্থ হওয়ার আগেই তাকে বিয়ে দেওয়া যাবে না। রোগী যাতে মাদকাসক্ত হয়ে না পড়ে সে ব্যবস্থা নেওয়া ও মাদকাসক্ত হয়ে গেলে চিকিৎসা নেওয়া এবং মানসিক রোগীর প্রতি সহমর্মী দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে, যাতে সমাজের মূলস্রোতে থাকতে পারে। সে জন্য চিকিৎসক, অভিভাবক, সমাজকর্মী, নীতিনির্ধারক সবাইকেই হতে হবে সচেতন।
নেট থেকে
এখানে আরো পড়ুনঃ http://www.psychobd.comClick this link
বিষয়: বিবিধ
১৩৪২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সত্যিই মানসিক রোগির জন্য প্রয়োজনিয় চিকিতসক ও সাইকোলজিস্ট এর অভাব আছে। বিশেষ করে সিজোফ্রেনিয়াক এবং পার্সিকিউশনম্যানিয়াক এর রোগি অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমার এক ভাই ও বেশ সিজোফ্রেনিয়াক এবং আমার স্ত্রির মধ্যেও ডিলুশন আছে। কিন্তু ভাল চিকিৎসক এর অভাবে চিকিৎসা সহজ হচ্ছেনা। ডাক্তার সহজে এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চাননা। আর সাইকোলজি বিভাগে অনেকে পড়লেও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট খুবই কম।
ভাই এবং স্ত্রীর জন্য ডাক্তার-থেরাপিস্ট দেখান। এইগুলো এমন রোগ যে, সহজে ছাড়ে না! রোগী আস্তে আস্তে ক্রনিক হয়ে যায়।
বলেছেন-
দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত।
আমার পর্যবেক্ষণে ১৫ থেকে ৫০ বয়সের এক তৃতীয়াংশ বা তারও বেশী মানুষ কোন না কোন মানসিক রোগী
তাঁদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন আচরণ থেকে এমনটাই প্রমানিত মনে করি!
পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে এমন কিছু অদ্ভূত বিকৃত আচরণ প্রকাশিত ও প্রকট হয়ে উঠেছে যেগুলো মানসিক পঙ্গুত্ব ছাড়া কোন সুস্থ্য মানুষ- এমনকি আকাট মূর্খ হলেও- করতে পারেনা!
তাই চিকিতসা দিয়ে এসবের আরোগ্য সম্ভব নয়- এজন্য প্রয়োজন সুস্থ্য মানসিকতা গড়ে তোলার মত শিক্ষাব্যবস্থা এবং সামাজিক শৃংখলা!
এজন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাও অপরিহার্য!!
পড়া এবং কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন