মানসিক রোগঃ আত্মঘাত; দেখুন আপনার আশেপাশে কেউ আছে কিনা?
লিখেছেন লিখেছেন আকরামস ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৬:৪৮:৩৫ সন্ধ্যা
প্রায়ই আমরা দেখতে পাই যে, কোনো কোনো মানুষ কারণ ছাড়াই নিজের ইচ্ছামতো নিজের হাত-পা কাটে বা পুড়িয়ে ফেলেএটাকেই আমরা আত্মঘাত বলতে পারি। সাধারণত এটা শরীরের কোষের ক্ষতি করে। কেন মানুষ নিজেই তার নিজের শরীর কাটে বা পোড়ায় তা বোঝা কষ্টকর। অধিকাংশ মানুষের কাছে এটা ভয়ংকর। কিন্তু এমন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ অবস্হারপরিবর্তন করতে হলে এ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা দরকার।
এ ধরনের রোগে যারা ভুগছে?
সাধারণভাবে কারা ভুগতে পারে তা বলা মুশকিল। একে লিঙ্গ, ঘটনা, শিক্ষা, বয়স, আর্থ সামাজিকতা অথবা ধর্মভেদে বিশ্লেষণ করা যায় না। তবে, এ ক্ষেত্রে কতক সাধারণ বিষয় দেখা যায়।
বেশির ভাগই টিনএজার অর্থাৎ ১৪-১৮ বছর বয়সী মেয়ে
যাদের শারীরিক, আবেগীয় বা যৌন নির্যাতনের ইতিহাস আছে
এদের একই সঙ্গে মাদকাসক্তি বা মানসিক সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়
যে পরিবারে রাগ বা আবেগ প্রকাশের সুযোগ কম এবং যারা আবেগ প্রকাশে অদক্ষ
যাদের বন্ধু-বান্ধব বা সামাজিক বিস্তৃতি কম
যে ধরনের আচরণ করে ঃ
কাটাকাটি করে
পোড়ায় অথবা গরম কিছুর দ্বারা ছ্যাঁক দেয়
খামচে চামড়া বা মাংস তুলে ফেলে
চুল টেনে ছিঁড়ে
হাতুড়ি বা অন্য কোনো জিনিস দ্বারা আঘাত করে
হাড় ভাঙে
দেয়ালে বা শক্ত জিনিসের সঙ্গে মাথা ঠুকে
কষ্টকর প্রক্রিয়ায় উলকি আঁকে
যেভাবে আসক্ত হয় ঃ
প্রথমে কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয় বা অন্যকে দেখে বা শোনে
রাগ, ভয়, উদ্বেগের মতো তীব্র অনুভূতি থেকে
এসব অনুভূতি প্রকাশের সরাসরি কোনো উপায় না থাকায়
কেটে অথবা অন্যভাবে নিজেকে আঘাত করে নিজেকে টেনশন থেকে পরিত্রাণ করে
অপরাধবোধ এবং লজ্জায়
এরা আঘাতের অস্ত্র এবং ক্ষতচিহ্ন লুকিয়ে রাখে
পরবর্তী সময়ে আবার তীব্র অনুভূতি প্রকাশের জন্য একই পথ বেছে নেয়
নিজের ইচ্ছার বিপরীতে লজ্জার অনুভূতি তাকে এ রকম করতে বাধ্য করে
বারবার এ ধরনের আচরণ করার তাড়না অনুভব করে, যা তার ক্ষতির মাত্রা সংখ্যায় ও পরিমাণে আরো বৃদ্ধি করে।
যে কারণে এসব করে ঃ
যদিও এটা জীবনের জন্য ক্ষতিকর তবুও এটা আত্মহত্যার প্রচেষ্টা নয়। ব্যক্তি বুঝতে পারে না তার এই চাপের সময় কী করা উচিত। যে কারণে ব্যক্তি এ ধরনের কাজ করে উদ্বেগ, চাপ থেকে সাময়িকভাবে মুক্তি পায় এবং বাস্তব এবং জীবন্ত সংবেদন সৃষ্টি করে। চেপে রাখা ভেতরের গভীর কষ্টের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাইরে ব্যথা তৈরি করে এবং শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের কষ্টের অনুভূতি থেকে মুক্তি পেতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে। আবেগীয় অসাড়তা ভাঙতে, নিজের স্বস্তির জন্য অন্য কোনো উপায় না পেয়ে, নিজের তীব্র আবেগের জন্য নিজেকে শাস্তি দিতে চায়। তারা মনে করে তাদের এ ধরনের শাস্তি হওয়া উচিত। যে নিজের যত্ন নিতে জানে না বা পারে না। নিজের প্রতি অন্যের মনোযোগ আকর্ষণের বিকল্প হিসেবে এবং অন্যকে আঘাত করার ইচ্ছাকে নিজের ওপর প্রয়োগ করে।
আত্মঘাত বা আত্মহত্যার মধ্যে সম্পর্ক ঃ
এটা আত্মহত্যার কোনো প্রচেষ্টা নয়। ব্যক্তির দুশ্চিন্তা দূরীকরণের পথ হিসেবে এটা কাজ করে। তবে সময়মতো সুচিকিৎসা না হলে এদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। নিজের স্বস্তির জন্য নিজেকে আঘাত করা উত্তম মনে করে এবং পরিশেষে সবচেয়ে বড় ধরনের আঘাতের মাধ্যমে নিজেকে শেষ করা বা আত্মহত্যা করা।
এক্ষেত্রে আপনার বন্ধু অথবা পরিবারের সদস্যকে যেভাবে সাহায্য করবেন ঃ
এদের সাহায্য করা কঠিন। অনেক সময় এ ধরনের প্রচেষ্টা হিতে বিপরীত হতে পারে। তবে কতকগুলো বিষয় খেয়াল রাখলে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। যেমন
বোঝা দরকার যে কতকগুলো সমস্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য এটা একটা ব্যবস্খা এবং নিজেকে শান্ত করার এটা একটি উপায়।
তাকে বুঝতে দেয়া যে আপনি তার প্রতি মনোযোগী এবং আপনি তার সব কথা শুনবেন।
তার যে কোনো ধরনের অনুভূতি প্রকাশে সাহায্য করুন। যা যতই নেতিবাচক হোক না কেন।
আনন্দদায়ক কাজে তার সঙ্গে নিজেকে নিযুক্ত করুন
তাকে সাইকোথেরাপিস্টের কাছে পাঠান অথবা চিকিৎসাব্যবস্খার সঙ্গে সংযুক্ত করুন। তার জন্য সরাসরি কোনো বাধানিষেধ তৈরি করবেন না। কেননা, এটা তার জন্য আরো ক্ষতিকর। তার জন্য কোন বিষয়টি কষ্টদায়ক তা বোঝার চেষ্টা করুন।
রোগীর যা করা দরকার ঃ
প্রায়ই এটা আসক্তি পর্যায়ে উপনীত হয়। ব্যক্তি এটাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, যদিও সে তাতে ব্যর্থ হয়। তবে কতকগুলো বিষয় এ ধরনের কাজ থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে।
বুঝতে চেষ্টা করুন, এটা একটা সমস্যা। এর জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন।
উপলব্ধি করুন। এটা খারাপ বা বোকামি নয় বরং অনুভূতি প্রকাশের ধরন, যা সমস্যায় রূপান্তরিত হয়েছে।
এমন কাউকে খুঁজে বের করুন, যাকে আপনি বিশ্বাস করেন এবং যাকে সব বলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে আপনার বন্ধু, শিক্ষক বা আত্মীয়।
খুঁজে দেখুন কোন কোন পরিস্খিতিতে আপনি এ ধরনের কাজ করেন এবং ওই পরিস্খিতি এড়াতে অন্যের সাহায্য নিন।
উপলব্ধি করুন। নিজেকে শান্ত করার জন্য অন্য কোনোভাবে অনুভূতি প্রকাশের চেষ্টা করুন।
নিজের ক্ষতি করার ইচ্ছা হলে বিকল্প কিছু করুন। যেমনযদি হাত কাটতে ইচ্ছা করে, তবে জোরে চিৎকার করুন, নাচানাচি করুন, দৌড়ান, কিছু ছুড়ে ফেলুন (যা ক্ষতিকর নয়)।
আবেগের অসাড়তা দূরীকরণের জন্য যদি হাত-পা কাটতে চান, তবে বরফ বা বরফজাতীয় জিনিস ধরে রাখুন।
নিয়মিত জোরে জোরে শ্বাস নিন।
ছবি আঁকুন।
মেডিটেশন করতে পারেন।
চিকিৎসা-সহায়তা
আগেই বলা হয়েছে, এটা আসক্তি পর্যায়ে চলে যেতে পারে। ফলে চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে যায়। তাই ভালো চিকিৎসকের সহায়তা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতি হলো
কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি
পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস থেরাপি
ইন্টারপার্সোনাল থেরাপি
থেরাপি
পারিবারিক থেরাপি
শিথিলকরণ কৌশল
হাসপাতালে চিকিৎসা
বিষন্নতা বা উদ্বেগ নিরসন ওষুধ
নেট থেকে
বিস্তারিতঃ http://www.psychobd.com/2012/12/blog-post.html
ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/Psychobd
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
১৩-১৯ বছর বয়সী ছেলে+মেয়ে, অনেকের ৩০+পর্যন্তও থাকে
এটি টীন-এজের অন্যান্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত, তাই অন্যান্য বিষয় গভীরভাবে জেনে সামগ্রিক সমাধানের চেষ্টা না হলে আংশিক সমাধান খুব সামান্যই কার্যকর হয়!
তবে স্থান/পরিবেশ পরিবর্তন সুফল দেয়!
বয়স বৃদ্ধিতেও রোগ সেরে যায়
ঠিক বলেছেন।
পরিবার থেকে সময় এখন অনেক কম দেওয়া হয়। এর ফলে সামাজিক মিথস্ক্রিয়াতে এখন অনেকেই অসস্তি বোধ করেন। তার ফলেও বোদ হয় বাড়ছে এই ধরনের ঘটনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন