বাংগালরে হাইকোর্ট দেখায় সরকার !!! তারা দেবে বিদ্যুৎ যাদের ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং!
লিখেছেন লিখেছেন নানা ভাই ১৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০৬:২৭:১৩ সন্ধ্যা
বিদ্যুৎহীন পোখরার এক সন্ধ্যা (ছবিটি ৯ অক্টোবর তোলা)
পানি সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ব্যাপক বিদ্যুৎ ঘাটতিতে রয়েছে নেপাল। সারা দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ সুবিধা পায় না নেপালবাসী। বিদ্যুৎ পায় মাত্র ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা।
এ প্রসঙ্গে নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির (এনইএ) কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। শীতকালে এটি আরো বাড়বে। দেশটিতে প্রতিনিয়তই বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়ছে। অথচ বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে সামান্য। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতের উৎপাদন না বাড়ায় এমনটি হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলেন, ৬৫ বছর আগে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা যা ছিল এখনও প্রায় সেটাই রয়ে গেছে। এ খাতে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। আর সফলতা না পাওয়ার মূলে রয়েছে প্রতিবেশি দেশের নানান চাপ ও নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা।
কর্মকর্তারা আরো বলেন, এতো প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও কিছু ছোট এবং বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে ১৪ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন খুলেখানি- ৩ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ৩২ মেগাওয়াটের খুলেখানি-২ প্রকল্পের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ এগিয়েছে। এছাড়া ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন চামেলিয়া জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, ত্রিশুলি ৩/এ, থামাকুশিসহ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলছে। যা সম্পন্ন হলে বিদ্যুৎ সমস্যা কিছুটা ঘুচবে।
এনইএ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুতের ৯৪.৩৭ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে গৃহস্থালির কাজে, অবাণিজ্যিক কাজে ০.৫৮ শতাংশ, বাণিজ্যিক কাজে ০.৫৪, শিল্পে ১.৪৭ ও অন্যান্য কাজে ৩.০১ শতাংশ।
নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার ও পাঞ্চাযানিয়া হাইড্রো পাওয়ার প্রাইভেট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক গোবিন্দ শর্মা পোখারিয়াল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘প্রায় শত বছর আগে এখানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হয়। এরপর ধীরে ধীরে এ খাতের কিছুটা প্রসার ঘটে। তবে যে হারে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে, তার চেয়ে অনেক কম হারে উৎপাদন হচ্ছে। দেশটিতে বর্তমানে মোট বিদ্যুৎ চাহিদা তিন হাজার মেগাওয়াট, এর বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৭০৩ মেগাওয়াট। তবে শীতকালে উৎপাদন নেমে আসে ৩০০ মেগাওয়াটে। তখন লোডশেডিং প্রকট আকার ধারণ করে।’
তিনি বলেন, ‘নেপালে জলবিদ্যুতে বিনিয়োগ করতে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই আগ্রহী হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তবে প্রতিবেশি দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেপাল সফরের পর এ খাতের বিস্তার খানিকটা ঘটতে পারে। কেননা, মোদি সরকার চাইছে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে।
নেপালে দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়টি সমাধানে না আসা পর্যন্ত এ খাতে তেমন কোন সফলতা আসবে না বলে মনে করেন গোবিন্দ শর্মা পোখারিয়াল।
পোখারা মাউন্ট রিসোর্টের মালিক প্রেম চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যুৎ সুবিধা কম থাকায় আমাদের জেনারেটর ও সোলারের উপর নির্ভর করতে হয়। যা অনেক ব্যয়বহুল। এতে হোটেল ব্যবসা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।’
থামেলে অবস্থিত শ্রি-লাল ইন হোটেলের কর্ণধার শান্তি ডংগল বলেন, ‘এখন গ্রীষ্মকাল তাই লোডশেডিং কম হয়। তবে শীত এলে সারা দিনে ৪ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়া যায় না।’
পোখাড়ার লেক সাইডে অবস্থিত হোটেল ডোনোস্টির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম লামিচ্চানে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এখানে বিদ্যুৎ সমস্যা এতো প্রকট যে, হোটেলের রুম ভাড়ার প্রায় এক তৃতীয়াংশই খরচ হয় বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পেছনে। যা হোটেল ব্যবসায়ীদের ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ না থাকায় এখানে বড় কোন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কল কারখানা, গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারছে না। এতে প্রতিবেশি দেশের প্রতি আমরা আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। যার কারণে নেপালের সামগ্রিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এখানে বিদ্যুতের অনেক ঘাটতি রয়েছে। তাই নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি দিনে কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা লোড শেডিং দিতে বাধ্য হয়। দেশটিতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকায় গড়ে উঠতে পারেনি কোন বড় ইন্ডাস্ট্রি বা কারখানা। ছোট ছোট যে সব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তারা সবাই সোলার পাওয়ার, বড় জেনারেটর দিয়ে কোন মতে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। যা বেশ ব্যয়বহুল। এতে তারা অনেক খাতেই পিছিয়ে পড়ছে।’
মাশফি বিনতে শামস বলেন, ‘তারা যে পিছিয়ে পড়ছে এটা তারা নিজেরাও উপলব্ধি করতে পারছে না। তবে যারা দেশের বাইরে যায় তাদের বিষয়টি ভিন্ন। কেননা, তারা বিভিন্ন দেশ ঘুরে নিজ দেশের দুর্বলতা অনুভব করে এবং চলমান এ পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য নিজ দেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে।’
Click this link
বিষয়: রাজনীতি
১১৩৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন