এমন সন্তান থাকার চেয়ে না থাকা ও অনেক ভালো! গাজীপুরে বয়স্ক ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে অশ্রুজলে ভেজা ঈদ !!!

লিখেছেন লিখেছেন নানা ভাই ০৯ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:০২:০৮ রাত



গাজীপুরে বয়স্ক ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসীরা চোখের জলে স্বজনদের জন্য অন্তহীন প্রতীক্ষায় পবিত্র ঈদ উল আজহা উদযাপন করেছেন। স্বজনহারা ও স্বজন-বঞ্চিত নিবাসীরা ঈদের আগেরদিন ও ঈদের পরেরদিন অপেক্ষার প্রহর গুণেছেন প্রিয় সন্তান ও স্বজনরা এসে ঈদ করতে বাড়ি নিয়ে যাবে। কিন্তু ঈদের দুদিন পার হলেও স্বজনদের দেখা নেই। তাই দুঃখ ভরাক্রান্ত হূদয়ে তারা পুনর্বাসন কেন্দ্রেই ঈদ কাটিয়েছেন।

নিবাসে ঈদের দিন তারা পোলাও, গরু ও মুরগির মাংস, সেমাই, দই-মুড়িসহ নানা খাবার খেয়েছেন। কিন্তু এত আয়োজনের পরও তাদের মন পড়ে ছিল প্রিয়জনের কাছে। অতীত স্মৃতি হাতড়ে বার-বার চোখের পানি মুছছেন বৃদ্ধ নিবাসীরা। কেন্দ্রের নিবাসী কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানার শিমুলিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের স্ত্রী হারেছুন নেছা ৫ বছর ধরে এ নিবাসে আছেন। একমাত্র পুত্র ছাড়া তার আর কেউ নেই। মিরপুর ১০ নম্বরে এক বাসায় তিনি ঝিয়ের কাজ করতেন। সেখান থেকে তিনি এ নিবাসে আসেন। ছেলে তার কোন খবর নেয় না কখনো দেখতে আসে না।

জয়নব বেগম (৬৫)। তার বাড়ি খুলনার নিউ মার্কেট এলাকায়। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এক ছেলে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার থাকেন দেশের বাইরে। ভাতিজারা তাকে এ নিবাসে এসে রেখে যান। গত ঈদে তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জমি লিখে দেয়ার জন্য। কিন্তু এবারও তিনি আশা করেছিলেন বাড়িতে যাওয়ার। কিন্তু তাকে ভাই ভাতিজারা নিতে আসেনি। ছেলে মেয়েরা তার কোন খবর নেয়নি। তিনি তার সন্তানদের ফোনের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু কোন ফোন আসেনি। ঈদে নিবাসে দেয়া খাবার খেয়ে তিনি তৃপ্তি পেয়েছন। এজন্য আল্লাহর দরবারে শোকর আলহামদুলিল্লা বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসী ময়না বেগম (৮০)। তার স্বামীর নাম মৃত ওয়াহেদারী ইজারী। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানার সরবেরচর গ্রামের বাসিন্দা। নদীতে তার ভিটেমাটি নিয়ে গেছে। দুই বছরে ধরে তিনি এ নিবাসে আছেন। রোজার ঈদে এক ছেলে এসে তাকে একটি কাপড় দিয়ে গেলেও এবার তার খবর কেউ নেয়নি। ছেলে আসবে সে প্রতীক্ষায় তিনি প্রহর গুণছিলেন। চোখের জলে দিন কাটিয়েছেন।

পুরুষ নিবাসের বাসিন্দা ৮৫ বছরের বৃদ্ধ রংপুরের কাউনিয়া থানার বেটুবাড়ী গ্রামের আবু বকর খন্দকার গত এক মাস ধরে আছেন নিবাসে। তিনি হূদযন্ত্রে আক্রান্ত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তার একমাত্র মেয়ে তাহমিনা বকুল তাকে এ নিবাসে রেখে যান। বুধবার তিনি তার স্বামী নূরল ইসলামকে নিয়ে দেখতে আসেন। এ সময় বাবা তার মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে ঠিকমতো চিনতে পারছিলেন না। তার তিন ছেলে থাকলেও তাদের কেউই পিতার খোঁজ-খবর নেয় না বলে জানান জামাতা নূরুল ইসলাম।

নরসিংদী সদরের শিল্পনগরীর বাসিন্দা মজনু মিয়া (৭৪)। তিনি এক বছর ধরে এ নিবাসে আছেন। তার দুই ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। তারা তার কোন খোঁজ-খবর নেয় না। তিনি পাইকারি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। চোখে কম দেখেন। তার জামাই তাকে এ নিবাসে রেখে গেছেন। ছেলেরা তার কোন খোঁজ-খবর নেয় না। ঈদের দিন নিবাসের দেয়া খাবার খেয়ে সন্তুষ্ট। বাকী জীবন তিনি এ নিবাসেই থাকতে চান।

বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ থানা সদরের ৮৮ বছরের বৃদ্ধ সাখাওয়াত্ হোসেন জানান, তার তিন ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে। ৬ বছর ধরে তিনি এখানে আছেন। কেউ তার খোঁজ-খবর নেয়নি। আক্ষেপ করে বলেন তার এক ছেলে সৌদি প্রবাসী, এক ছেলে থাকেন সিলেটে অপর ছেলে ঢাকায় চাকরি করেন। কিন্তু তার খবর কেউ নেয় না। নিবাসে স্বজনদের প্রতীক্ষায় তার দিন কাটে।

সফি মহিউদ্দিন (৭৫) ঢাকার সিদ্দিরগঞ্জে খাদ্য অধিদপ্তরে সুপারভাইজার পদে চাকরি করতেন। ১৯৭৭ সালে চাকরি থেকে অবসরগ্রহণ করেন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলেটি শাহরিয়ার অস্ট্রেলিয়ায় লেখাপড়া করেন। এক মেয়ে ডাক্তার ও অপর মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার তারা স্বামীর সঙ্গে যশোহর স্যাটেলাইট টাউনে বসবাস করেন। স্ত্রী যশোহরের একটি হাইস্কুলের শিক্ষিকা। তিনি জানান, কারো উপর বোঝা না হয়ে এ নিবাসে স্বেচ্ছায় চলে এসেছেন। বাকী দিনগুলো এখানেই কাটানোর ইচ্ছে আছে তার। স্বজনরা মাঝে মধ্যে তাকে ফোন দিয়ে খোঁজ-খবর নেন।

নিবাসের হোস্টেল সুপার হাবিবা খন্দকার বেলী জানান, এ নিবাসে মোট ২০৪ জন নারী-পুরুষ রয়েছেন, ১০১ জন পুরুষ ও ১০২ জন মহিলা।

সুত্রঃ ইত্তেফাক

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৭ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

272412
০৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৪:০৩
কাহাফ লিখেছেন :

মানবতাহীনতার চরম লজ্জাকর চিহ্ন হয়ে আধুনিকতার ধ্বজাধারী সমাজকেই উপহাসে জর্জরিত করছে 'বৃদ্ধাশ্রম'গুলো। সমাজের নৈতিকতা কে প্রশ্নবিদ্ধ করে আমাদের অধঃপতনের চুড়ান্ত পরিণতির ইশারা করছে যেন। একজন সন্তান কর্তৃক স্বীয় পিতা-মাতা কে ওখানে পাঠাতে বুকটা কি একবারো কেপে উঠে না......?নিজের বেলায়ও এমন ঘটতে পারার চিন্তাও আসে না মনে.....?
ধিক শত ধিক এমন কুলাংগার সন্তানদের!!!
বৃদ্ধাশ্রমে স্বীয় মা-বাবা কে পাঠানো সকল সন্তানদের ভাগ্যেও যেন এমন ঘটে খোদার কাছে এই প্রার্থনা!
অনেক ধন্যবাদ .......।
272422
০৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৪:৩৩
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ইসলাম না-কি বৌ-দের জন্য ঐচ্ছিক করেছে, শ্বশুর-শ্বাশুরীর সেবা করার ব্যাপার – বলে অনেক ইসলামিষ্ট দাবীও করেন! তো বুড়া-বুড়ীদের পালবে কে ইসলামের আলোকে?

এইরকম জ্ঞানী-ইসলামিষ্ট যে সমাজে থাকবে, তাদের আর কি হবে?

আমাদের সবার বউদেরকে বোঝাতে ববে, না বুঝলে পিটিয়ে তাদের বাধ্য করতে হবে বুড়া-বুড়ীদের পালতেঃ পরিবার-নামক ইনষ্টিটিউশন ভালোভাবে পরিচালনার জন্য; নয়তো বৃদ্ধাশ্রম নামক ইনষ্টিটিউশনেই বুড়া-বুড়ীদেরকে ফেলে আসতে হবে!

পছন্দ আমাদের, যা খুশী তা করতে পারি!
০৯ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৩
216754
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..


সমস্যা ওখহাএ নয়, সমস্যা হলো শিক্ষায়

আমার মন্যাকে যথার্থ শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুললে সে তো সওয়াব ও আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং জান্নাতের লোভে শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমতের সুযোগ পাওয়াকে জান্নাতী নেয়ামত মনে করেই তার সদ্ব্যবহার করবে

আপনার মন্তব্যটি রোগের কারণ উপেক্ষা করে উপসর্গকে বিবেচনা করেছে
এবং
সমাধানের জন্যও এমন শব্দমালা প্রয়োগ করা হয়েছে যা আপাতঃদৃষ্টে আল্লাহতায়ালার দেয়া বিধানকে ব্যঙ্গ করার মত মনে হয়!

ভারসাম্যহীনতা কখনো কল্যান বয়ে আনেনা!!
০৯ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৪
216756
আবু সাইফ লিখেছেন : সংশোধনী -

ওখহাএ = ওখানে

আমার মন্যাকে = কন্যাকে
০৯ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৫
216757
বুড়া মিয়া লিখেছেন : আবু সাইফ ভাই, এই ব্লগে আমি এ ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে একজনের একটা প্রশ্নের শিকার হয়েছিলাম, প্রশ্নটা ছিলো অনেকটা এমনঃ

আপনি কি একজন সাহাবী বা রাসূল (সাঃ) এর জীবনী থেকে দেখাতে পারবেন, যে সেখানে শ্বশুর-শ্বাশুরীর সাথে থেকেছিলো?

আমি আমার জানামতে উত্তর দিয়েছিলাম সে প্রশ্নের, প্রশ্ন যিনি করেছিলেন, আর কোন উত্তর দেন-নি সেখানে! এছাড়াও এবং এর পরেও অনেকের লেখায়ও আপনি পাবেন যেখানে সরাসরি অনেকেই বলেছে, শ্বশুর-শ্বাশুরীর খেদমত মুসলিম বউদের ইচ্ছাধীন!

এ ব্লগেই পুরোনো লেখাগুলো খুজলে পাবেন – আমি যা বলেছি তার সত্যতা!

শিক্ষায়-ই সমস্যা আসলে, তাই আমি ঐরকম শিক্ষিত বা জ্ঞানী ইসলামিষ্টদের থেকে ইসলামের শিক্ষা-গ্রহণ করার বিপক্ষে!

আমার মন্তব্যের কোথাও আল্লাহর বিধানকে ব্যঙ্গ করা হয় নি একটুও।
272425
০৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৪:৫১
দ্য স্লেভ লিখেছেন : এসব সন্তানরাও তাদের বৃদ্দ বয়সে এমন আচরণ পায়। ভাল হত যদি সন্তানরা বুঝত। আর বৃদ্ধাশ্রমে বুড়া বুড়িদের বিয়ের ব্যবস্থাও রাখা যেতে পারে। ইসলামে বাধা নেই,সমাজে আছে
272436
০৯ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:২৭
অসহায় মুসাফির লিখেছেন : বৃদ্ধাশ্রম মুসলিম সমাজের নৈতিক অধঃপতন ও কলঙ্কের প্রতীক।মা-বাবা কে লালন করাটা যদি বোঝা মনে হয়, তাহলে সেই সন্তান মায়ের পেঠে কেনো বোঝা হয়ে ১০মাস ১০দিন পড়ে থাকে? শিশু অবস্তায় মায়ের কোলে আর বাবার বুকে কেনো আশ্রয় খোঁজে বেড়ায়??
272659
০৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৯:৪৪
পুস্পিতা লিখেছেন : পরিবার থেকে নিয়ে সমাজের সকল স্তরে যদি নৈতিক শিক্ষার প্রচলন থাকতো তাহলে এই ধরনের অবস্থা তৈরি হতো না। আর নৈতিকতার নামে যা কিছু আছে তার সবকিছুই এসেছে ধর্ম থেকে। কিন্তু এখন সেই ধর্মীয় শিক্ষার সকল পথ প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File