থানায় স্বামীকে নির্যাতন, স্ত্রীকে যৌন হয়রানিঃ ডিজিটাল বাংলাদেশে রক্ষক এখন ভক্ষকের ভূমিকায়।

লিখেছেন লিখেছেন নানা ভাই ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:৪৯:১৪ রাত





ঢাকার ধামরাই উপজেলায় এক যুবককে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর আরও নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে তার স্ত্রীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের এক উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে। তার নাম হাফিজুর রহমান। তিনি ধামরাই থানার সেকেন্ড অফিসার। শুধু তাই নয়, ঘুষ হিসেবে তিনি এরই মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকাও নিয়েছেন বলে যুবকের স্বজনরা জানিয়েছেন।

পুলিশের হাতে আটক ওই যুবকের নাম ফেরদৌস আহমেদ সোহেল। গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে এসআই হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে সাদা পোশাকের একদল পুলিশ আশুলিয়ার গোকুলনগরের বাসা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি মোটরসাইকেল চোর চক্রের সদস্য বলে পুলিশ জানায়। চোরাই মোটরসাইকেলের সন্ধানে সোহেলকে নিয়েই পুলিশ গোডাউন, দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। তবে কোথাও কিছু পায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সোহেলকে মিথ্যা মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিম্মি করে ঘুষ নেয়ার পাশাপাশি তার স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এ বিষয়ে দীর্ঘ ফোনালাপের একটি রেকর্ড এসেছে আমাদের হাতে। এতে সোহেলকে নির্যাতন, ঘুষ দাবি ও যৌন হয়রানির প্রমাণ মিলেছে।

সোহেলের ভগ্নিপতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নঈম আক্তার সিদ্দিক অভিযোগ করেন, আমার শ্বশুরের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা দাবি করেন এসআই হাফিজুর রহমান। ইতিমধ্যে তিনি এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা নিয়েছেন।

তিনি জানান, সম্প্রতি ধামরাইয়ের ফোর্ডনগর এলাকায় অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় সন্দেভাজন আসামি হিসেবে চালান করা হয় সোহেলকে। পরে তাকে রিমান্ডে নেয় ধামরাই থানার পুলিশ। সেখানে তার ওপর চলে নির্যাতন। আর পাশাপাশি সোহেলের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার শম্পার মুঠোফোনে কল করে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলা শুরু করেন এসআই হাফিজুর।

সোহেলের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার শম্পা বলেন, আমার নিরীহ স্বামীকে গ্রেফতার করে নানাভাবে অনৈতিক ইঙ্গিত দিয়ে আমাকে যৌন হয়রানি করেন ধামরাই থানার সেকেন্ড অফিসার হাফিজুর রহমান।

এসআই হাফিজুর রহমান ফোনালাপের কথা অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সমাধান করছি’। এছাড়া তিনি দাবি করেন, ‘সোহেলকে গ্রেফতারের অভিযানে আমি ছিলাম না।’ তবে থানার আরেক এসআই মাসুদুর রহমান জানান, হাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়েই যৌথভাবে অভিযান চালানো হয়।

ফোর্ডনগর এলাকা থেকে উদ্ধার করা লাশের পরিচয় এখনও মেলেনি। যে খুন হয়েছে তারই নাম ঠিকানা নেই। অথচ সেই ঘটনায় মোটরপার্টস ব্যবসায়ী আসামি হয় কিভাবে- এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি। এসআই মাসুদ বলেন, ‘আমরা এভাবেই কাজ করি। আমাদের সোর্সদের দেয়া তথ্য মতেই আমরা কাজ করি।’

সাভার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রাসেল শেখ বলেন, এসপি স্যারের নির্দেশে বিষয়টির বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। সোহেলের বাবার কাছে এসআই হাফিজুর রহমান টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এতেই প্রতীয়মান হয়, ওই কর্মকর্তা ঘুষ নিয়েছেন। সোহেলের স্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়টিও অত্যন্ত অনৈতিক।

যোগাযোগ করা হলে ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন, তাই এ নিয়ে ফোনে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

এদিকে শনিবার দুপুরে সহকর্মীদের নিয়ে ধামরাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাফিজুর রহমান দেখা করেন সোহেলের বাবার সঙ্গে। সোহেলের বাবা মোহাম্মদ আলী যুগান্তরকে বলেন, ‘আপনাদের অনুসন্ধানের বিষয়টি জানতে পেরে এসআই হাফিজুর সহকর্মীদের নিয়ে এসে বলেন, ’আমি ভুল করেছি, আমি আপনার ছেলে, ছেলে ভুল করলে বাবা মাফ করে’- এ কথা বলেই তিনি আমার পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চান। তিনি বলেন, ‘আমি যে টাকা নিয়েছি তাও ফিরিয়ে দেবো’। তবে আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছি, আগে আমার ছেলে জামিনে আসুক। মুক্তি পাক। সে মাফ করলে তবে মাফ করা হবে, তার আগে নয়।

এ ঘটনার বিচার দাবি করে মোহাম্মদ আলী বলেন, সোহেলের মতো যাতে কাউকে বিনা অপরাধে কারাভোগ না করতে হয়। আমার মতো কোনো বাবাকে যেন ছেলের মুক্তির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে না হয়।

যুগান্তরের হাতে আসা রেকর্ডে কথোপকথনের কিছু অংশ তুলে ধরা হল-

এসআই হাফিজ : আপনি কি বাসায় একা?

শম্পা : না। শাশুড়ি আছে।

হাফিজ : সে কোথায়?

শম্পা : পাশের ঘরে।

হাফিজ : আপনি তো অনেক সুন্দরী

শম্পা : আমার স্বামীকে ছেড়ে দেন।

হাফিজ : আপনিই তো চান না।

শম্পা : কে বললো আমি চাই না।

হাফিজ : আপনি চাইলেই ছেড়ে দিতে পারি।

শম্পা : তাহলে ওকে ধরেছেন কেন?

হাফিজ : ওকে দুই থেকে তিন বছর জেলে রাখবো।

শম্পা : আমার শ্বশুরের কাছে যে টাকা চাইছেন তা কি পুরাটাই আনবো।

হাফিজ : আহা!মোবাইলে এত কথা বলা যায় না। আপনি থানায় আসেন।

শম্পা : কখন আসবো?

দারোগা হাফিজ : সন্ধ্যায় আসেন। আপনাদের সঙ্গে কথা বলাই বিপদ।

শম্পা : কেন?

হাফিজ : আপনি সাংবাদিক হাসানরে (স্থানীয় সাংবাদিক) কী কইছেন?

শম্পা : সে তো আমাদের আত্মীয়।

হাফিজ : বিপদে পড়বেন। ওদের কিছু জানাইলে, আপনার শ্বশুর ফালতু লোক। সাংবাদিকদের সঙ্গে এগুলা নিয়ে কথা বলছে।

শম্পা : রিমান্ডে আমার স্বামীরে মারধর করছেন, সে তো হাঁটতে পারে না।

হাফিজ : তাহলে কি আদর করে। আপনার স্বামী সিন্ডিকেট সদস্য। অনেক বড় অপরাধী। নেশা করে।

শম্পা : আমার স্বামী সিগারেট ছাড়া কিছু খায় না। সে নিরীহ।

হাফিজ : সব স্ত্রীর কাছেই তার স্বামী ফেরেশতা।

শম্পা : আমার স্বামীরে কবে ছাড়বেন?

দারোগা হাফিজ : আমি আপনার বাপরে বলছি, এ রকম অপরাধীর সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিয়ে ভুল করেছেন। আপনি যে সুন্দরী। এত সুন্দর একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হল।

মাহমুদা আক্তার শম্পা : আপনি কইছিলেন, আমার স্বামীরে নির্যাতন করবেন না। এত মারলেন কেন।

হাফিজ : এবার যে চাপাটি (নির্যাতন) খাইলো না। তাতেই ও ভালো হয়ে যাবে। ও এবার যে চাপাটা খাইলো না! আশা করি আপনার জন্যে মঙ্গল হইছে।

শম্পা : আজকেই কি আদালতে পাঠাবেন?

হাফিজ : এখন থানায় আছে। আরও মামলায় ও আসবে... হা হা ।

আরও তিন-চারটা মামলায় ওরে এক দেড় বছর ভেতরে রাখা যাবে। আপনি তো খুব ভালো ঝগড়া করতে পারেন। ভালো ঝগড়া করতে পারেন।

শম্পা : আমার স্বামীরে এভাবে নির্যাতন করলেন!

হাফিজ : .... (অনৈতিক সম্পর্কের আহ্বান) কি করে দেবো। আপনি বলতেছেন, কি করবো বলেন, আপনি যেটা বলেন সেটাই করে দেবো।

শম্পা : তাহলে ছেড়ে দেন।

হাফিজ : এখন বাসায় কে কে আছে। আপনি তো কথার ফুলছড়ি। ওরে এক দেড় বছর ভেতরে রাখবো।

শম্পা : আমার স্বামীকে নিয়ে যা করছেন। এটা অন্যায়।

হাফিজ : আপনিই সমাধান দেন। আপনি বললে, এক বছর রাখবো (অনৈতিক আহ্বান)।

ওকে এক বছর ভেতরে রাখবো আর আপনের সঙ্গে ঝগড়া করবো।

শম্পা : আমার স্বামীরে আর কষ্ট দিয়েন না।

হাফিজ : দেখি! কি করা যায় দেখি! আমি যেটা করবো সেটাই হবে। আমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আজকেই সিদ্ধান্ত নেবো, যা সিদ্ধান্ত নেবার আমিই নেবো।

শম্পা : আপনিই তো বিনা কারণে আটকে রাখছেন। ছাইড়া দেন আমার স্বামীরে।

হাফিজ : শুধু আমার হাতে থাকলে তো একেবারে মাফ করে দিতাম।

শম্পা : আপনিই না ওরে বাসা থেকে নিয়ে গেলেন।

হাফিজ: ... (অনৈতিক আহ্বান) আপনি একবার বললেই আমি ছেড়ে দিতাম।

শম্পা : আপনি তো বাসা, গোডাউন, দোকান। কোথাও তো কিছু পাইলেন না।

হাফিজ : আপনি বললেই আমি ছেড়ে দিতাম।

মাহমুদা আক্তার শম্পা : আমি বললাম দেন ছেড়ে দেন।

দারোগা হাফিজ : ... (অনৈতিক প্রস্তাব) হা হা।

http://www.jugantor.com/last-page/2014/09/28/153556

বিষয়: বিবিধ

১২৪৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

269406
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:১৮
তহুরা লিখেছেন :



269419
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:৪৯
শেখের পোলা লিখেছেন : এরাই রাষ্ট্রের রক্ষক৷ আর এজন্যই প্রয়োজন ছিল বোধহয় স্বাধীনতার৷ ৪৩ বছর পিছনে গিয়ে ডাইরী খুঁজুন দেখি এমন ঘটনা বর্বর হানাদারেরা কয়টা ঘটিয়েছে৷
269514
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:০৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বাংলা সাহিত্যের শৈশবে "হুতুম প্যাচার নকশা" বইটির একটি লাইন।
"দারোগা ভাল মানুষ ছিলেন (অতি কম পাওয়া যায়)"
এখন যদি লেখক সেটা লিখতেন তা হলে বোধহয় লিখতেন পুলিশে ভাল মানুষ বলে কিছু নাই। বা পুলিশ ও মানুষ এ প্রানি নয়!!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File