সাবধানঃ এবার বাংলাদেশে এসেছে আফ্রিকার ‘ভয়ঙ্কর পোকা’ জায়ান্ট মিলিবাগ
লিখেছেন লিখেছেন নানা ভাই ২১ এপ্রিল, ২০১৪, ০৪:৪০:১৩ বিকাল
Click this link
রাজধানী ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো পোকার নাম জায়ান্ট মিলিবাগ। গত কয়েকদিন ধরে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে পোকা আতঙ্ক দেখা দেয়।গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ চত্বর সম্পূর্ণ পিচঢালা। পোকাগুলো ডিম পাড়ার জন্য মাটি খুঁজে না পেয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে।
এ পোকা কী করে রাজধানীর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে এলো, তা এক বিস্ময়!
বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এসব পোকার গায়ের পাউডার মানুষের গায়ে লাগলে চুলকানি, এলার্জি ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। পোকায় আক্রান্ত স্থান লাল হয়ে ওঠে, ফোস্কা পড়ে। প্রকৃতি ও ফসলের জন্য এ পোকা মারাত্মক ক্ষতিকর।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জায়ান্ট মিলিবাগ আফ্রিকান দেশের পোকা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মাটির নিচে থাকা ডিম থেকে বের হয়ে পোকাগুলো আশেপাশের গাছে ওঠে।
মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত আক্রান্ত গাছ থেকে খাবার খেয়ে বড় হয়। এরপর তারা ডিম পাড়ার জন্য আবার মাটিতে ফিরে আসে। সাধারণত ১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার মাটির নিচে তারা ডিম পাড়ে। প্রতিটি পোকা ২০০ থেকে ৪০০টি ডিম পাড়ে। পোকার গায়ে মোম জাতীয় পদার্থ থাকায় সাধারণ কীটনাশক কার্যকরী হয় না।
এসব পোকা বহু উদ্ভিদভোজী। অপ্রাপ্ত ও প্রাপ্তবয়স্ক পোকা আম, জাম, নারিকেল, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, বেগুন, লেবু জাতীয়, রেইনট্রিসহ বিভিন্ন উদ্ভিদের কচি পাতা, কচি ডগা, ফুলের কুঁড়ি ও ফলের রস চুষে খায়। এদের আক্রমণে মুকুল ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ফল ঝরে পরে। আক্রান্ত গাছ ক্রমান্বয়ে নিস্তেজ হয়ে মারা যায়। ফলের ফলন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এই পোকা দেশে আসার বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রজ্জব আলী সাংবাদিকদের বলেন, জায়ান্ট মিলিবাগ ভারতে ও পাকিস্তানে দেখতে পাওয়া যায়। সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গাছজাতীয় জিনিস আনার মাধ্যমে এ পোকা দেশে আসতে পারে। এ ছাড়া জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ফেরা সদস্যদের মাধ্যমেও পোকাটি এ দেশে ঢুকে থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বাশার নতুন কোথাও এ পোকা দেখা দিলে পানি ছিঁটানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পানি ছিঁটালে এ পোকার শরীরের পাউডারজাতীয় ধোলায় মানুষের ক্ষতি হবে না। পোকার বংশবিস্তারও হবে না।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. আবুল মঞ্জুর খান বলেন, এখনই যদি আমরা এ পোকা দমনের ব্যবস্থা নিই, তাহলে তা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারবে না।
তিনি পরামর্শ দেন, এসব পোকা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে পোকা সংগ্রহ করে মাটিতে দেড়-দুই ফুট গর্ত করে পুতে রাখতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। গাছের গোড়ার চারদিকে মসৃণ এসএস শিট বা প্লাস্টিক ব্যান্ড দিয়ে ঘিরে দিতে হবে।
এছাড়া ক্লাসিক বা ডার্সব্যান ২০ ইসি বা ফিপরোনিল প্রতি লিটার পানিতে ৫ এমএল মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে বলে জানান বাকৃবির এই শিক্ষক।
গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে লাখ লাখ ‘জায়ান্ট মিলিবাগ’। এ পোকার আক্রমণে অতিষ্ট হয়ে গত ১৬ এপ্রিল কলেজের অধ্যক্ষ ইফফাত আরা নার্গিস শিক্ষামন্ত্রীর শরণাপন্ন হন।
এরপর শিক্ষামন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টিম গঠন করেন। বিশেষজ্ঞরা তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেন।
রোববার বিকেলে সচিবালয়ের সভাকক্ষে জায়ান্ট মিলিবাগ পোকা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এসব তথ্য জানান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন কীট বিশেষজ্ঞরা।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পোকার সংক্রমণ যাতে মারাত্মক আকার ধারণ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক হবে। তা না হলে আমাদের ফসল, প্রকৃতি, ফুল, ফল ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। আশা করি, সবাই যার যার অবস্থান থেকে বিষয়টি গুরুত্ব দেবেন।
বিষয়: বিবিধ
১৭০০ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নানী আছে ভালাই।
তুমিই খালি বুঝলা.......
ঝগড়া কি আর সাধে করি?
সারাদিন প্যান প্যান.....
পোকাটি গত ৫ বছর ধরে দেখা যাচ্ছে। সাধারণ বিষে এর কিছু হয় না। গত দু'বছর ধরে এর সংক্রমণ ব্যপকহারে দেখা যাচ্ছে। পানি ছিটালেও এর কিছু হয় না। তাহলে বৃষ্টির পানিতেই হতো। কাঠালের গাছে আক্রমণ বেশী। আম, লিচু ও অন্যান্য গাছেও দেখতেছি। গতদুবছর ধরে গাছে কাঁঠাল টিকছে না এই পোকাগুলোর জন্য। এটা কচি ডাল থেকে রস শুষে খায়। শরীরে পাউডার ও আঠালো পদার্থ আছে। একজন কৃষিবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বললেন, সাধারণ বিষে কিছু হবে না, সিস্টেমেটিক বিষ (এমন একটা টার্মই বলেছেন) লাগবে, অর্থাৎ যে বিষ গাছের ডাল ও পাতাকে বিষাক্ত করে দেয়। তিনি একটি বিষের নামও সাজেস্ট করেছেন নাম স্টরক/স্টক, নতুন এসেছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন