"সময় ব্যবহারে সামান্য কিছু কথা "
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান বিন ফয়েজ ১৬ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:৩০:২৫ দুপুর
বস্তুবাদীদের মতে Time is money । তাই তারা সময়কে টাকা উপার্জনের সুযোগ হিসেবে দেখে। কিন্তু ইসলাম বলে সময় হলো জীবনকাল মানে হায়াত। দুনিয়ার জীবনটি মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত সময়ের সমষ্টিমাত্র। সময় ও জীবন একাকার। নির্ধারিত সময়ে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় অনিবার্য বিধায় সময় সচেতনতা অপরিহার্য। সময় সচেতনতা ও সাফল্য অনেকটাই সময়ানুপাতিক। এ বিষয়ে সেক্যুলার ও ধার্মিক উভয়ের কাছে সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব থকলেও ইসলাম জীবনকে মূল্যায়ন করেছে ভিন্নবাবে। ইসলাম সময়কে চিহ্নিত করে একটি শব্দে, তাহলো হায়াত। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে অনেক জায়াগায় সময়ের কসম খেয়ে সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে তার প্রিয় বান্দাদের সময়ের গুরুত্ব অনুধাবন করার তাগিদ দিয়েছেন।
# চোট্ট একটি সময়ের হিসাব
সপ্তাহে ১৬৮ ঘন্টা সময়কে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
১. (ব্যক্তিগত কাজ) খাওয়া, ঘুমানো, পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান, পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু কাজ।
২. (কর্মরত সংগঠনে)সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন।
৩. (মুক্ত সময়) আত্ম-গঠনঃ পড়াশোনা ইত্যাদি। অবসর/অবকাশ কিছু পারিবারিক কার্যক্রম।
# সাপ্তাহিক সময় সঞ্চয় এর একটি নমুনা।
প্রতি সপ্তাহের সময় = ৭*২৪=১৬৮
আমাদের কাজ দিনে ৮ ঘন্টা করে সপ্তাহে ৬ দিন- ৬*৮=৪৮ ঘন্টা
বাকি থাকে- ১২০ ঘন্টা
ঘুম এবং বিশ্রাম প্রতিদিন ১০ ঘন্টা- ৭*১০=৭০ ঘন্টা
বাকি থাকে- ৫০ ঘন্টা
বিনোদন,বাজার,খাওয়া-দাওয়া গোসল অতিথি সেবা ও সামাজিক কাজ ইত্যাদি প্রতিদিন -৫ ঘন্টা। ৭*৫= ৩৫ ঘন্টা
অবশিষ্ট= অতিরিক্ত সময়= ১৫ ঘন্টা
এ ১৫ ঘন্টা অতিরিক্ত সময় অপচয় না করে যদি মহান আল্লাহর সৃষ্টির রহস্য, আমাদের করনীয় কি, কেন আজ মুসলিম জাতির নাজুক অবস্থা, নিজ আত্মোন্নয়ন অথবা নিজ পেশার পাশাপাশি অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টিশীল কাজে ব্যয় করা যায় তাহলে চলার পথে মন সতেজ থাকবে এবং সহজে সফলতা আসবে।
সময়কে রক্ষকরার জন্য কিছু প্রিয় জিনিস কে না বলুন।
# টিভি’র নেশাকে না বলুন ( বিনোদনের হাতিয়ার হিসাবে রিমোট হাতে না রেখে একটি ইসলামিক বই, বাগান করা, কম্পিউটার গেমিং কিংবা আড্ডাকে বেছে নেয়া যেতে পারেন।।
# মনে রাখুন শেষ বিচারের দিনের মুক্তির লক্ষ্য বাস্তবায়নই প্রতিটি বুদ্ধিমান লোকের প্রধান কাজ। অতএব তার প্রয়োজনেই সব সময় বরাদ্দ রাখুন। বাড়তি বিষ্যগুলোতে কাল্কষেপন নূন্যতমে আনুন।
# সব কাজ নিজে করতে গেলে সময় পাবেন না। যথাযথভাবে ডেলিগেট করুন।
# কোন তাড়াহুড়ো করে কাজ করবেন না। ভুলসংশোধনে আরো বেশি সময় নষ্ট হবে। কাজের জন্য কোয়ালিটি সময় দিন।
# শৃঙ্খলাময় কাজ সময়ের সাশ্রয় করে। - চমৎকার ফাইলিং সিস্টেম গড়ে তুলুন যাতে চট করে প্রয়োজনীয় কাগজ খুঁজে পাওয়া যায়। ‘জরুরি’,‘নিয়মিত’ ‘বকেয়’ ইত্যাদি ট্রের ব্যবস্থা রাখুন। টেবিল পরিষ্কার রাখুন, নইলে কলম খুজতে সময় লাগবে।
অকারণ কর্মক্লান্ত হবেন না। আনন্দ ও উৎসাহের সঙ্গে কাজ শেষ পর্যন্ত সময় বাঁচায়।
# আপনার অনিচ্ছাতেই বা অজান্তেই আপনার সময় চুরি হতে পারে; যেমন অপ্রয়োজনীয় বা লক্ষ্যহীন সভা, সাক্ষাৎকারী, টেলিফোন।
আপনি সাক্ষাতকারীর কাছে যান। তিনি অকারণ সময় বেশি নিলে দাঁড়িয়ে কথা বলুন। সাক্ষাতের আগে জেনে নিন এটি কেন? ঠিক করিন আদৌ এটি দরকার কি না।
বলুন, পরে তাঁর কাছে গিয়ে আপনিই আলাপ করবেন। তখন সময় আপনার নিয়ন্ত্রেণে থকবে।
দরজা বন্ধ রাখুন।
# বিভিন্নজনের ফোনের ম্যাসেজ নিন যাতে তাঁদেরকে কথা না বলতে হয়, ফোন ব্যাকও না করতে হয়।
আপনার পক্ষ থেকে অন্যকে কথা বলতে দিন।
আপনার কথার শুরুই হবে ‘আপনার জন্য কি করতে পারি? তাতে গৌরচন্দ্রিকার সুযোগ থাকবে না।
একটি ইতিবাচক মানসিকতা গঠন করতে ও বজায় রাখতে বর্তমানের মধ্যে বাঁচার এবং হাতের কাজগুলো করার এখনই (NOW) অভ্যাস করুন।
এই মুহূর্তে কাজ শেষ করার অভ্যাস করুন। দীর্ঘসুত্রিতা আমাদের বড় শত্রু। দীর্ঘসূত্রিতা আমাদের নেতিবাচক মনোভাবের জন্ম দেয়। প্রকৃতপক্ষে পরিশ্রম করে কাজটি শেষ করতে যত না ক্লান্তি আসে, দীর্ঘসূত্রিতার অভ্যাস তার থেকে বেশি ক্লান্ত করে।
ব্যক্তি জীবন, ছাত্র জীবন, জীবিকার ক্ষেত্রে, সামাজিক জীবনে এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রিয় জীবন (Attitude) এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
একটি বিখ্যাত বানী রয়েছে নেপলিয়ান বলেছিনে,
“আমি অস্টিয়ারে পরাজিত করেছি তার প্রধান কারন হলো,
তারা পাঁচ মিনিট সময়ের মূল্য অনুধাবন করতে পারেনি”।
সূরা আসরে মহান রাব্বুল আলামিন বলেছেন
১.) সময়ের কসম।২.) মানুষ আসলে বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।৩.) তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে।
বিষয়: বিবিধ
১১৫৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন