যে স্মৃতি আজও কাঁদায়

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান বিন ফয়েজ ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০১:২৪:৪২ দুপুর

আসসালামু'আলাইকুম,

আমার বাড়ি কুমিল্লা জেলার দক্ষিনে ছোট্ট একটি গ্রামে, যা সবুজে শ্যামলে ঘেরা। অতীত স্মৃতি কেবলই টেনে নিয়ে যায় স্বপ্নের সেই গ্রামে। যেখানে প্রতিদিন সকালে ছোট্ট বাচ্চারা ছুটে যেত মক্তবে, দিন শুরু হত কোরআন তেলাওয়াতের সুমধুর ধ্বনির মাধ্যমে, এক এক গ্রুপের এক এক ধরনের সিলেবাস, কোন গ্রুপ পড়ত কায়দা, কোন গ্রুপ আমপারা, আর সবচেয়ে বড়্গ্রুপ পড়ত মাখরাজ সহ কুরআন তিলাওয়াত। আর সন্ধ্যা মুখরিত থাকত পাখির কলকাকলিতে। চলার পথে যার সাথেই দেখা হত, প্রশ্ন হত কেমন আছ ? বাড়িতে আসলে কবে? কতদিনের ছুটি তোমার, আরো কত প্রশ্ন! আমি আমার এই ছোট্ট গ্রামে হিংসার কোন কিছুই দেখিনি আমার শৈশবে, কৈশোরে। (উল্লেখ্য,আমি ৫ম শ্রেনির পর আম্মা ও আব্বাকে ছেড়ে সূদূর লক্ষিপুরের ঐতিহ্যবাহি টুমচর মাদ্রাসায় পড়া লিখার জন্য পাড়ি জমাই।)

গ্রামের এই সহজ সরল মানুষ গুলোর মাঝে হঠাৎ ঘটে গেল এক বিশাল পরিবর্তন, সেই দুঃখজনক সময়টি ছিল ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর। আমি তার দু দিন পূর্বে বাড়িতে আসি সবার সাথে দেখা করতে।বাজারে রওয়ানা হলাম সবার সাথে রাতের সংবাদ দেখব বলে, কিন্তু পৌছার আগেই সংবাদ শেষ। দোকানে গিয়ে দেখি কেউ চুপ করে বসে আছে, কেউ একটু পর পর চোখ মুছতেছে, কেউ হালকা শব্দ করে কান্নাকাটি করছে। আবার বিপরীতে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ হাসছে। আমি ব্যপারটা বুজলাম না, কি হল? আমি একজন কে প্রশ্ন করলাম, কি হল? ওরা কাঁদছে কেন? বলল খবর দেখনাই? আমি বললাম না। বলল খবর দেখ। দেখলাম, এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য, যা আজও আমাকে কাঁদায়। সেই রাতে ঘুমাতে পারলামনা। অনেক রাত হয়ে গেল, আস্তে আস্তে মসজিদের দিকে গেলাম গিয়ে দেখি কয়েক জন মানুষ গুমরে গুমরে কাঁদছে, আমিও গেলাম তাদের সাথে নামাজ পড়লাম মুনাজাতে শরিক হলাম। কিছুক্ষন পর মুয়াজ্জিন আজান দিল , ফজরের নামাজ আদায় করলাম।

মসজিদ হতে বের হয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। বাজারে গিয়ে দেখি অন্য রকম চিত্র, বাজার যেন আজ দুভাগে বিভক্ত। যেন মানুষ আর অমানুষের নীরব যুদ্ধ। এক ভাগ মজলুমের পক্ষে কথা বলে অন্যায়েরে প্রতিবাদ করছে, আর অন্যরা এই মজলুমদের নিয়ে হাসির মাতামাতি, যেন বিরাট কোন কাজের ফলাফল তাদের হাতে এল। সেই যে বিভাজনের ধারায় বিভক্ত হল আমাদের ছোট্ট গ্রামটি, তা আজ আরও প্রকট হয়েছে। মানুষ আর অমানুষের মাঝে ভাগ হয়ে গেল আমাদের সেই গ্রামটি। আস্তে করে ভাগ হয়ে গেল গ্রামের মাতব্বরি, তার পর মসজিদ, তার পর বন্ধ হয়ে গেল সেই অনেক বছরের স্মৃতি বিজড়িত আমার শৈশবের প্রিয় মক্তবটি, যেখানে আমার কুরআন শিক্ষার প্রথম পাঠশালা। আজ চার বছর হয়ে গেল দেশের বাইরে। এখন শুনি গত বছর থেকে শুরু হয়েগেছে আস্তিক আর নাস্তিকের দ্বন্ধ । এখন আর কেউ কারো ভালোর কথা জিজ্ঞাসা করেনা। আগের মত আন্তরিকতা নেই। সালাম দেয়া হয় গ্রুপ দেখে । আজ ইসলাম টাও নাকি ভাগ হয়েগেল। বুঝলাম না কেন সব এমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে? তবে সব কিছু ছাপিয়ে একটা জিনিস খুব ভালো লাগছে আমার কাছে, ইসলামের পক্ষের আর বিপক্ষের শক্তি চিনতে এখন আর অসুবিধা হয়না। প্রকৃত মানুষ চিনা আজ বড়ই সহজ হয়ে গেছে।

বিষয়: বিবিধ

১৩১৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

183394
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৮
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ঠিকই বলেছেন ইসলামের পক্ষের আর বিপক্ষের শক্তি চিনতে এখন আর অসুবিধা হয়না। প্রকৃত মানুষ চিনা আজ বড়ই সহজ হয়ে গেছে।২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর যারা খুনির ভূমিকায় ছিল তাদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতে হবেই হবে ,ইনশা আল্লাহ
183423
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভাই শুধু দুঃখ করলেই হবেনা। চেষ্টা করতে হবে সেই দিন এর মত করে নতুন দিন প্রতিষ্ঠা করার।
183425
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১২
রিদওয়ান বিন ফয়েজ লিখেছেন : ধন্যবাদ প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ভাই
সেই প্রত্যাশার প্রহর গুনছি লাখো কুটি মানুষের সাথে আমরাও ।
183813
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:২৮
রিদওয়ান বিন ফয়েজ লিখেছেন : ধন্যবাদ রিদওয়ান কবির সবুজ ভাই
ইন্সাআল্লাহ দোয়া করবেন, সবসময় মহান আল্লাহ যেন এই পথে চলার তৌফিক দান করে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File