মা ছেলেকে মেরে ফেলে

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আরিফুল ইসলাম শাওন ১৮ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:১৬:৩৩ রাত

বেহায়া নজরুল ইসলাম দরিদ্র কৃষক, তিন ছেলে মেয়ের বাপ। পরিবারের খাবার জোগাতে কৃষিকাজের পাশাপাশি মানুষের কামলা খাটে, মাছ ধরে।কাজ না করলে পরিবারের উপোস না করে গতি নেই।বড় ছেলে নয়ন,চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র,বাবার কাজে সাহায্য করা ছাড়াও বাড়ীর যে যাই বলুক তার সাহায্য ও নিয়মিত লেখাপড়া করাই নয়নের কাজ । সবার অসাবধানতায় মেজো মেয়ে মিম

পানিতে পরে মারা যায় । নজরুলের বউ আবার গর্ভবতী হয়েছে । সংসার আবার যেন আনন্দে ভরে উঠে । নয়ন কে সবাই একটু বেশি ভালবাসত । কারন কথনই কারো কথার অবাধ্য হত না । পরিবার দরিদ্র থাকায় কখনোই নতুন পোশাক জোটেনি নয়নের কপালে । বাবার ছেড়া লুঙ্গি আর নিজের ময়লা শার্ট পরেই দিন চলে যেত নয়নের । এজন্য কখনই ওকে অবহেলা করতে পারতনা । কারন ওর চেহারাটি ছিল মায়ায় পরিপূর্ন । নয়ন প্রতিদিন সকালে মাদ্রাসায় যেত । একদিন মাদ্রাসার শিক্ষক পরীক্ষা নেবে বলে পাঁচ

টাকা দাবী করে । টাকা চাইলে কাল দেবে বলে জানায় নয়ন । ছোট

ছেলে টাকা নিতে মনে না থাকায় আবার কাল দিবে বলে জানায় ।

তৃতীয় দিন টাকা না নেয়ার কারনে শিক্ষক বলে মাত্র পাঁচ টাকা দিতে পারবিনা, জামা কাপড় দিয়ে নোংরা গন্ধ বের হচ্ছে যা দূরে গিয়ে বস । পাঁচ টাকা দিতে পারবিনা মাদ্রাসায় এসেছিস কেন ?

মরতে পারলিনা । নয়নের মুখে কোন কথা নেই । মাদ্রাসা ছুটি হল,নয়ন দোকানের কাছে গিয়ে হাজির। পিতাকে বল্লঃ -আব্বা আমারে দশটা টাহা দেও। নজরুলঃ বাপরে মাছ এহনো বেঁচতারিনায়! নয়ন নাছোড় বান্দা,বেহায়ার মতন বসেই আছে! নজরুল বাজারে মাছ নিয়ে যাওয়ার সময় নয়ন পথ আটকালো! এবং বল্লঃ আব্বা টাহা লাগবেই,হুজুরে নিতে কইছে ৫ টাহা! আর আমার ক্ষুধা লাগছে ১টা কেক খামু। নজরুল বিনয়ের সাথে বল্লঃ বাজান আমার কাছে ১০টা টাহাই আছে।এই টাহা আমার গাড়ি ভাড়া দিতে হইবো! আমি বাজার থেইক্কা আইসা তোরে১০টাহাই

দিমু।তুই এহন বাড়ি যা কিছু খাইয়া ল। খালি হাতে বাড়ি এলো নয়ন! নয়নের মা গর্ভবতী থাকায় এখনো ঘুমুচ্ছে।নয়ন এসে তার

মাকে বল্লঃ -মাগো খিদা লাগজে কি খামু? -মাঃ ঘরে ভাত নাই কৌটা থেইক্কা চাউল ভাজা খা। -না আমি ঐ শুকনা চাউল

ভাজা খামু না,দাঁতে বেতা করছে। মায়ের পাশে রাখা মোবাইলটা নিয়ে টিপাটিপি শুরু করল নয়ন। ওর মা রেগে আগুন!বল্লঃ ঐ

ছ্যামড়া তুই জাননা আরাক বাড়িদ্দা মোবাইল চার্জ কইরা আনতে হয়, টিপাটিপি কর ক্যা?থো কইতাছি।নয়ন তারপরও বেহায়ার মতো মোবাইল টিপতেছিল। এক দিকে ওর মা অসুস্থ,মেজাজ

এমনিতেই কড়া,অন্যদিকে নয়ন ক্ষুধার্থ ওর ও একই অবস্থা!

মা ছেলের মধ্যে সামান্য তর্ক হল। নয়ন একপর্যায়ে তার মাকে মোবাইলটা ছুড়ে মেরে বল্ল ক্যাচ ধরো।নয়নের মা ধরতে না পারায়

মোবাইলটা মাটিতে আঁছাড় খায় এবং পার্ট বাই পার্ট খুলে যায়। নয়নের মা অসুস্থ,পেটে প্রচন্ড ব্যাথা এবং কষ্টের টাকার মোবাইল ভাঙ্গার কারনে,রেগে গিয়ে নয়নকে একটা লাথি দেয়! নয়ন মাটিতে গড়িয়ে পরে! -অনেক ডাকাডাকি কিন্তু নয়নের কোন সাড়া নেই!

-একে তো খালি পেট,তার উপরে লাথি খেয়ে,চিরবিদায় নিলো নয়ন! ডাকাডাকি শুনে বাড়ির সকলে হাজির হল!নয়নের মাকে বাঁচাতে বাড়ির সকলে প্রকাশ করল নয়ন ফাঁসি দিয়েছে!নজরুল বাজার থেকে ফিরে তার ছেলের মৃত্যু খবর শুনে বেহুঁশ হয়ে গেল। হুঁশ ফিরে এলে নজরুল কান্নায় মুখোরিত করে ফেল্ল পুরো বাড়ি। তার মুখ থেকে সেই করুন কথাটি বের হয়ে আসতে লাগলোঃ আমার মতন বাপের বাঁইচ্চা থাইকা লাভ কী?যে কিনা পোলার

দশটা টাকা দিতে পারেন!হুহু করে কাঁদছিলো নজরুল! তার

কান্নায় মুখোরিত হয়ে যাচ্ছিল পুরো বাড়িটা! সবার চোখের কিনারায় যে আর পানি ধরেনা!বুকে শত কষ্ট আর চোখে পানি নিয়েই সমাধি হলো নয়নের! সমাধী হলেও কেউ যেন ভুলতে পারছে না মিষ্টি করে ডাকা কাকা,ফুফু, দাদা, দাদী ডাক গুলি ।

কবরের পাশ থেকে হেঁটে গেলে নজরুল আজো যেন শুনতে পায় নয়ন বেহায়ার মত বলছেঃআব্বা আমারে দশটা টাহা দেও আমি একটা কেক খামু আর হুজুরের টাকা দিমু

বিষয়: বিবিধ

১৪৩৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

209679
১৮ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:৩৬
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : খারাপ লাগেলো খুব Sad Sad
209680
১৮ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:৩৭
অজানা পথিক লিখেছেন : গল্পের বিষয়বস্তু কেন এত মর্মান্তিক হলো!!
209682
১৮ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:৫১
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : Sad Sad Sad Sad Sad গল্পটা পড়ে এত কষ্ট পেলাম ক্যারে
209695
১৮ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:০৭
নীল জোছনা লিখেছেন : Sad Sad Sad মর্মান্তিক
209737
১৮ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১১:০১
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : মাদ্রাসার শিক্ষক ৫ টাকার জন্য এমন কথা বলবেন?(!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!) আপনার গল্পের উদ্দেশ্যটা কি?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File