গল্পঃ পরম প্রতিদান (দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব) অনুবাদঃ ইমরান আনোয়ার =============================
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান বিন আনোয়ার ০৩ অক্টোবর, ২০১৯, ০৮:০৬:৪৯ রাত
সঙ্গী হাজী কাঁদছেন। তার মন আবেগাপ্লুত। কম্পিত ঠোঁটে তিনি ডক্টরের কাছে ঘটনার বাকি অংশ জানতে চাইলেন। জিজ্ঞেস করলেন, সবকিছু দান করার পরও আপনার পক্ষে হজ্ব করা কিভাবে সম্ভব হল?
ডক্টর জবাব দেন, আমার সারাজীবনের সঞ্চিত অর্থে হজ্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে মন আমার বিষণ্ণ হয়ে ছিল। তবে অন্য কারণে প্রশান্তিও পাচ্ছিলাম। একজন অসহায়কে যথাসময়ে সাহায্য করতে পেরেছি; তার পরিবারের ঘোর বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছি; আমার মন এসবেই সান্ত্বনা খুঁজে নিচ্ছিল। সেদিন রাতে আমি স্বপ্ন দেখলাম, কা'বার চারপাশে আমি তাওয়াফ করছি; মানুষজন আমাকে সালাম জানাচ্ছে; এবং সবাই আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলছে, অভিনন্দন সাঈদ! জমিনে হজ্ব করার পূর্বে তুমি আকাশে হজ্ব সম্পন্ন করেছ। আমাদের জন্য দোয়া কর সাঈদ! আমাদের মুবারকবাদ গ্রহণ কর।
আমি চমকে জেগে উঠলাম। এক অপার্থিব সুখ আমায় ঘিরে ধরল। মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে আমার জন্য তিনি যা কল্যাণ ভেবেছেন তাতেই সন্তুষ্ট রইলাম।
ঘুম থেকে জেগে উঠার খানিক বাদে আমার ফোনটি বেজে উঠল। স্ক্রিনে ম্যানেজারের নাম্বারটি ভাসছে। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সে আমায় বলল, দ্রুত আমার সঙ্গে দেখা করুন। এবার আমাদের হাসপাতালের প্রধান কর্তা হজ্বে যেতে চাইছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছাড়া তিনি সাধারণত কোথাও যান না। এদিকে আবার সেই চিকিৎসকের স্ত্রী প্র্যাগনেন্ট। তাই ডাক্তার ছুটি নিয়েছেন। আমরা চাইছি, এ হজ্ব-যাত্রায় আপনি মালিকের সঙ্গী হোন। আমাদেরকে একটু সহযোগিতা করুন প্লীজ!
ম্যানেজারের কথাগুলো শুনলাম। আমার পা দুটো কাঁপছে। মুখে কথা ফুটছে না। এক অবিশ্বাস্য স্বপ্নপূরণের হাতছানি আমায় বিমূঢ় করে দিয়েছে। কোনরকমে ম্যানেজারকে সায় জানিয়ে আমি সিজদায় লুটিয়ে পড়লাম। কিভাবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। দীর্ঘ সময় সিজদায় অতিবাহিত হলে মন কিছুটা শীতল হল।
মহান আল্লাহ তাঁর অশেষ দয়ায় কোনরকম ব্যয়ভার ছাড়াই আমাকে হজ্ব পালনের সুযোগ করে দিয়েছেন। উপরন্তু এই সফরে মালিকের সঙ্গী হওয়ায় তাঁর পক্ষ থেকে বকশিশও পেয়েছি। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হল, একদিন কথা প্রসঙ্গে হাসপাতালের মালিককে সেই নারীর অসুস্থ সন্তানের কথা বলেছিলাম। তিনি আমার কথায় প্রভাবিত হয়ে সেই রোগীকে হাসপাতালের নিজস্ব খরচে চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি গরিব-দুঃস্থদের জন্য বিশেষ ফান্ড নির্মাণেরও পরিকল্পনা করেছেন।
মহত্ত্বের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে সেই নারীর স্বামীকে একটি কোম্পানিতে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি। এছাড়া শিশুটির চিকিৎসার জন্য আমি যে ফী জমা দিয়েছিলাম তা-ও আমাকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। আমি যেন খোদার অফুরন্ত দয়া ও অনুগ্রহে আকণ্ঠ ডুবে গিয়েছি।
প্রথম হাজী বসা থেকে উঠলেন। ডক্টরের কপালে চুমু খেয়ে বললেন, আল্লাহর কসম! জীবনে এতটা হতবুদ্ধি ও বিহ্বল আমি হইনি! আমি প্রতিবছর হজ্ব পালন করি আর ভাবি যে, জীবনে অনেক কিছু করে ফেলেছি। প্রতিটি হজ্বের পরেই আমার এই অনুভূতি হয় যে, আল্লাহর দরবারে আমার মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পেয়ছে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, আপনার একটি হজ্ব আমার হাজার হজ্বের সমতুল্য হিসেবে আল্লাহর কাছে গ্রহণীয়। আমি তো প্রতিবছর আল্লাহর ঘরে যাত্রা করি। আর আল্লাহ আপনাকে স্বয়ং তাঁর ঘরে ডেকে নিয়েছেন। আপনার জন্য আমার বড় ঈর্ষা হচ্ছে। আল্লাহ আপনার পাশাপাশি আমার হজ্বকেও কবুল করুক। "তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম সালিহাল আ'মাল"।
বিষয়: বিবিধ
৯১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন