উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহঃ আমাদের গর্বের ধন

লিখেছেন লিখেছেন ইমরান বিন আনোয়ার ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০১:০৭:০৪ দুপুর

ইসলামের প্রসিদ্ধ খলিফা, হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ)। সততা, নিষ্ঠা, ন্যায়বিচার, এবং খোদাভীরুতা সহ সকল মানবীয় গুণে মহিমান্বিত ছিলেন যিনি। তাঁকে বলা হয় চার খলিফার সুযোগ্য উত্তরসূরি।

একবার হয়েছে কী, মুসলমানদের সবচেয়ে বড় আনন্দের উপলক্ষ পবিত্র ঈদের দিনে তাঁর মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে তাঁর কাছে ছুটে এল। ‘কাঁদছ কেন মা’ বলে পিতার মমতা নিয়ে যখন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন; অমনি অভিমানী কন্ঠে ছোট্ট মেয়েটি বলে ওঠে, "আজ ঈদের দিনে সবাই নতুন জামা-কাপড় পরেছে। অথচ আমি বাদশার মেয়ে হয়েও পুরোনো কাপড়েই ঈদ করছি!" মেয়ের এহেন অনুযোগ বাদশাহকে খুব মর্মাহত করে তুলে। ছুটে যান রাষ্ট্রের কোষাধ্যক্ষের বাড়িতে। গিয়ে তাঁর কাছে আরজি জানালেন, "আমাকে কি একমাসের অগ্রিম বেতন দেওয়া যাবে? দিলে খুব ভাল হত। মেয়েটা আমার...!" যে হুকুমতের কীর্তিমান খলিফা মহামান্য ইবনে আব্দুল আজিজ, তাঁর কোষাধ্যক্ষ তো তাঁর মতনই হবে, নাকি? তাই সামান্যতম নতজানু না হয়ে খাজাচি বলে দিলেন, "বাদশাহ নামদার, একমাসের অগ্রিম বেতন দিতে তো আমার কোন সমস্যা নেই। তবে এর আগে আপনাকে একটি ছোট্ট শর্ত পূরণ করতে হবে!" "কী শর্ত, বলো"- বিনয় ঝরে পড়ে বাদশাহ'র কন্ঠে। বলিষ্ঠ সুরে তখন রাষ্ট্রের কোষাধ্যক্ষ তাঁরই শ্রদ্ধাভাজন সম্রাটকে বলেন, "যে সময়গুলোর অগ্রিম মজুরি আপনি নিতে চাইছেন; সে পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন- আমাকে তেমন নিশ্চয়তা দিতে পারলে আমি এখুনি আপনাকে চাহিদামত মজুরি দিয়ে দিচ্ছি।"

কথা শুনে হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন বাদশাহ। রিক্ত মনে ফিরে এলেন গৃহে। এদিকে প্রিয় সন্তা্নেরা তাঁর অপেক্ষায় অধীর হয়ে আছে। কখন বাবা তাদের জন্য নতুন জামা-কাপড় নিয়ে আসবে- এই আকাঙ্ক্ষায় অস্থির! অথচ পিতার বিবর্ণ মুখ দেখে তারা কোন আশার আলো দেখতে পেলনা। কাঁচুমাচু স্বরে একজন জিজ্ঞেস করল, "কী হয়েছে বাবা?" প্রশ্নের আবহে উমরের কলজেটা ছিঁড়ে যায়! মুসলিম বিশ্বের অধিপতি, মহামান্য বাদশাহ ছলছল চোখে বললেন, "মা রে, তোমরা কি একটু ধৈর্য ধরতে পারবে? তাহলে দেখো, আমরা সবাই একসাথে জান্নাতে প্রবেশ করব। আর যদি এই সামান্য অভাব মানিয়ে নিতে তোমাদের কষ্ট হয়, তাহলে হয়ত তোমাদের পিতাকে তোমরা জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে দেখবে!" একথায় মোহ ভেঙ্গে যায় সবার। সমস্বরে বলে ওঠে , 'না বাবা, আমাদের কোন কাপড়চোপড়-উপঢৌকনের প্রয়োজন নেই। আমরা আল্লাহ'র উপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণ করব'।

হুম... এই ছিলেন উমর ইবনে আব্দুল আজিজ। আমাদের গর্বের ধন। ইসলামের সুপরিচিত পঞ্চম খলিফা। তিনি ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর আল-ফারুক এর দৌহিত্র। তাঁর ইনসাফ ও নিরপেক্ষতা আজো কিংবদন্তী হয়ে আছে প্রতিটি সত্যপিয়াসী মানব-হৃদয়ে। এমনই ছিল তাঁর শাসনকাল যে, বাঘেরা সেখানে ভেড়ার পালকে সাথে নিয়ে চড়ে বেড়াত। কথায় বলেনা, "যেমন গাছ তেমন ফল"! ঠিক; যেমন ছিল শাসন, তেমনি এর আনুগত্য।

বিষয়: বিবিধ

১৪৫৬ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

360498
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:৫৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু সুহৃদ ভাইয়া।

সুন্দর লিখনি।

মূল্যবান লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:১৯
298772
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ইমরান বিন আনোয়ার লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকেও শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১২:১৬
298795
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু সুহৃদ ছোট ভাইয়া।

কী ভুল দেখছি নাতো??!!
360503
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৩৯
ইমরান বিন আনোয়ার লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকেও শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:১৭
298769
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : আপনার জবাব কিন্তু মন্তব্যকারী পায়নি।
360509
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:০৩
আফরা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ ।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:১৮
298771
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ইমরান বিন আনোয়ার লিখেছেন : স্বাগতম
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:২৯
298774
আফরা লিখেছেন : এখন কি রাত নাকি দিন আপনি প্রক্সি দিলেন মনে হয় তাহলে এখনো রাত হয় নাই ।ধন্যবাদ সাকা ভাইয়া ।
360510
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:০৪
ইমরান বিন আনোয়ার লিখেছেন : স্বাগতম
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:১৮
298770
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : আপনার জবাব কিন্তু মন্তব্যকারী পায়নি।
360511
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:১৭
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ওহ, কি যে ভালো লাগল পড়ে, বলে বুঝাতে পারবো না।
জাযাকাল্লাহু খাইর।
360512
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:২১
ইমরান বিন আনোয়ার লিখেছেন : @ গাজী সালাউদ্দিন ভাই, আমার জবাব কেন যে মন্তব্যকারী পায়নি তা তো বুঝতে পারছিনা! আপনার সুন্দর অনুভূতি প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ রইল। বারাকাল্লাহু ফীকা!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File