হে দুর্বৃত্ত শাসকের দল, নিচের ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো। অন্যথায় জাহান্নামই হোক তোমাদের পরিণতি।
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান বিন আনোয়ার ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:০৮:১৪ সকাল
হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাহঃ) কে নিয়ে আসা হল হাজ্জাজের বিচারালয়ে।
হাজ্জাজ তাঁকে ব্যঙ্গ করে বলল, ‘তুমি কি শাকী বিন কাসীর?’ (সাঈদ-এর নামের অর্থকে বিকৃত করে হাজ্জাজ এভাবে প্রশ্ন করে)
জবাবে সাঈদ রাহঃ বলেন, ‘আমার মাতা যে নামটি আমার জন্য পছন্দ করেছেন তা তিনি খুব ভালো করেই জানেন!’
হাজ্জাজ রেগে গিয়ে বলে, ‘তুমি নিজেও দুর্ভাগা। তোমার মা-কেও দুর্ভাগা বানিয়েছো!’
এবার ইবনে জুবায়েরের বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর। তিনি বলেন, ‘আরে, যে জাহান্নামে যাবে সে-ই তো দুর্ভাগা! তুমি কি অদৃশ্যের খবর জানো নাকি?’
হাজ্জাজ ঔদ্ধত্যের সঙ্গে বলে, ‘আমি তোমার পৃথিবীকে নরক বানিয়ে দেব।’
সাঈদ কিছুটা কৌতুকবোধ করলেন! তিনি বলেন, ‘আমার যদি মনে হত, এসব নিপীড়ন আর ক্ষমতার উৎস তোমার হাঁতে রয়েছে, তাহলে আমি তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমাকেই উপাসনা করতাম!!!’
হাজ্জাজ কৌতূহলে জিজ্ঞাসা করে, ‘আমার ব্যপারে তোমার অভিমত কী?’
‘এককথায়- অত্যাচারী। মানুষের রক্তের ঋণ নিয়ে তুমি আল্লাহ'র কাছে পাকড়াও হবে।’
হাজ্জাজ ক্রুদ্ধ হয়। বলে, ‘নিজের মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও।’
চোখে চোখ রেখে অদম্য বীর সাঈদ বলে দেন, ‘বরং তুমি-ই প্রস্তুতি নিয়ে রাখো। তুমি আমাকে হত্যা করলে আল্লাহ তায়া'লাও তোমার প্রাণনাশ করবেন।'
হাজ্জাজের চোখ দুটো অগ্নিশর্মা হয়ে যায়। বলে, ‘তোমাকে আমি এমন নৃশংসভাবে হত্যা করব যা আমি আর কাউকে করিনি এবং ভবিষ্যতেও করবনা।’
সাঈদ এবার হাসেন। বলেন, ‘তাহলে তো ভালোই! তুমি আমার দুনিয়া ধ্বংস করবে। আমি তোমার আখিরাত ধ্বংস করব!’
হাজ্জাজ আর নিজেকে সংবরণ করতে পারেনি। হুঙ্কার ছেড়ে তার প্রহরীদের ডাকতে থাকে। কেউ একজন দৌড়ে এলে তাকে চেঁচিয়ে বলতে থাকে, ‘একে আটক করে হত্যা করো।’
সাঈদ হাসতে হাসতে জল্লাদের সাথে রওয়ানা দেন। হাজ্জাজের সহ্য হয়না। সে শ্লেষের সাথে জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি হাসছো কেনো?’
জবাবে সাঈদ বলেন, 'তোমার অহমিকা আর আল্লাহ কে নিয়ে তোমার ধৃষ্টতা দেখে হাসছি।’
এ কথায় হাজ্জাজ হিতাহিতজ্ঞান-শূন্য হয়ে পড়ে। বলে ওঠে, 'এই ত্যাঁদড়টা কে এখনি জবাই করে মারো'।
নিজেকে গুটিয়ে নিলেন হযরত সাঈদ। কিছুটা অনুরোধের সুরে বললেন, ‘আমার চেহারাটি কেবলার দিকে রাখো।’ বলে তিনি নিজেই নিজের গ্রীবায় তরবারি টেনে নিলেন। অতঃপর দোয়া পড়লেন, إنى وجهت وجهت وجهى للذى فطر السموت والأرض حنيفا وما أنا من المشركين.
হাজ্জাজ নির্দেশ দিল। ‘এই, ওর চেহারাটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দাও।’
প্রতিউত্তরে সাঈদ বললেন, ‘সমস্যা নেই। সবদিকেই আল্লাহ আছেন।’ أينما تولوا قثم وجه الله.
হাজ্জাজ যেন উন্মাদ হয়ে যায়! নির্দেশ দেয়, ‘ওকে মাটিতে পুঁতে দাও।’
এ দেখে বিজ্ঞ সাঈদ আবারো কুরআনের আয়াত পাঠ করেন। منها خلقناكم وفيها نعيدكم ومنها نخرجكم تارة أخرى ‘মিনহা খালাকনাকুম, ওয়া ফীহা নুঈদুকুম, ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা।’
আর সহ্য হয়না পাপাচারী হাজ্জাজের। বিকট হুঙ্কারে সে বলতে থাকে, ‘ওকে জবাই করো। ওকে জবাই করো। তোমার মুখে এত দ্রুত কুরআনের আয়াত আসে কিভাবে, সাঈদ!’
ইসলামের উজ্জ্বল নক্ষত্র হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের তখন তাঁর শেষ বাণীটুকু উচ্চারণ করেন, أ شهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا رسول الله
'আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ। এই ধরো, হাজ্জাজ, আমার জীবনের শেষ সম্বলটুকু। কেয়ামতের দিন এই কালেমা সঙ্গে নিয়েই তোমার সাথে আমি দেখা করব। ও আল্লাহ, আমার পরে আর কেউ যেন এই নরপশুর হাঁতে অপদস্থ না হয়'।
শহীদ হয়ে গেলেন ইসলামের এক জ্যোতিষ্মান তারকা। আশ্চর্যের বিষয় হল, তাঁর শাহাদাতের পর থেকে প্রতিরাতে হাজ্জাজ চিৎকার-চেঁচামেচি করত। বারবার কপাল চাপড়ে বলত, ‘আমি এটা কী করলাম। সাঈদের সাথে এ আমি কী করলাম? যতবার আমি ঘুমাতে যাই, সে আমার পা টেনে ধরে!!!’
এরমাত্র ১৫ দিন পরই জালিম হাজ্জাজের মৃত্যু হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় বান্দা সাঈদ বিন জুবায়েরের দোয়া কবুল করেন। কারণ তাঁর শাহাদাতের পর হাজ্জাজের হাঁতে আর কোনও মানুষ নিগৃহীত হয়নি।
বিষয়: বিবিধ
১৪৭১ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
স্মরণ করিয়ে দিলেন,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ . .
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
হাজ্জায বিন ইউসুফ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে আগ্রীহ।
জাযাকাল্লাহ খাইর
মন্তব্য করতে লগইন করুন