আহমাদ মুহাম্মাদ ও আমার ভাতিজা হানজালাঃ হয়ে যাক মেধার তুলনা !
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান বিন আনোয়ার ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:১৫:৩১ দুপুর
প্রসঙ্গ এক... আমেরিকার ঘটনাটি সবাই জেনে গেছেন, তাই না? ওই যে ১৪ বছরের আহমাদ মুহাম্মাদ, স্কুলের সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবে বলে নিজেই উদ্ভাবন করে বসল এক বিস্ময়কর ঘড়ি। অতঃপর ক্লাস টিচারকে সেটি দেখাতে যেয়েই শিশুটি বিপাকে পড়ে যায়। টিচার, প্রিন্সিপাল, সবাই ভেবে বসে সে বুঝি স্কুলে বোম্ব নিয়ে এসেছে। এরপর বেঁধে গেল হুলস্থূল কাণ্ড! ১৪ বছরের কোনও মুসলিম শিশু একটি চমকদার আবিষ্কার নিয়ে স্কুলে উপস্থিত, এ যেন মেনে নিতে পারছিলনা কুলাঙ্গার শিক্ষকেরা! ব্যস, পুলিশকে তারা খবর দিয়ে বসল! এরমাঝে দু-একবার ঘড়িটি ডেকে ওঠলেও কেউ বুঝতে চাইলনা এটি আসলে একটি ঘড়ি-ই। পুলিশ এল। একটি ১৪ বছরের নিষ্পাপ শিশুকে 'মহা ভয়ঙ্কর' বোমা বানানোর 'অপরাধে' হাতকড়া পরিয়ে গ্রেপ্তার করা হল। শেষমেশ বহু 'ইন্টারোগেশনের' পর পুলিশ 'কান ধরে' স্বীকার করল, আসলে বোমা নয়, অদ্ভূত আবিষ্কৃত বস্তুটি একটি আধুনিক টেবল ঘড়ি!
এবার দৃশ্যপটে উপস্থিত ধোঁকাবাজ মানবতাবাদীরা! নিজেদের সকল অভিনয় দক্ষতা আর ছলনামাখা মমতা নিয়ে তারা দাঁড়িয়ে গেল আহমাদের পাশে। 'স্ট্যান্ড উইথ আহমাদ' নামে হ্যাস্ট্যাগে পুরো ভার্চুয়াল জগত তারা মাতিয়ে ফেলল। অবজ্ঞাত আহমাদ এবার হয়ে গেল বিশ্ব নায়ক। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, ফেসবুকের প্রেসিডেন্ট (পড়ুন প্রতিষ্ঠাতা) এবং নাসা থেকেও তাকে আমন্ত্রণ জানানো হল তার পদস্পর্শে নিজেদের 'ধন্য' করবে বলে!
পৃথিবীতে ভাঁড়ামি কিংবা ছ্যাবলামির একটা সীমা থাকা দরকার। একটি চৌদ্দ বছরের শিশুকে শুধু মুসলিম পরিচয়ের কারণে তার মহনীয় শিক্ষকেরা যেভাবে পুলিশের হাঁতে তুলে দিল, তার আবিষ্কৃত ছোট্ট বস্তুতি ভালোভাবে পরখও করলনা, এরপরে ওই গর্দভের দল এতটা ভাঁড়ামি না করলেও পারত। আমরা জেনে গেছি, শুধু মুসলিম হওয়ার অপরাধে একটি নিষ্পাপ শিশুকেও তারা কতটা ঘৃণা আর সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে!
প্রসঙ্গ দুই... হানজালা আল-ইয়ামান। আমার তেরো বছয় বয়সী ছোট্ট ভাতিজা ও প্রখর মেধার অধিকারী এক 'বিস্ময়বালক'। বয়স ১২ পেরিয়ে সবেমাত্র তেরো'র কোটায় পা রেখেছে। সে কুরআনের হাফেজ এবং বর্তমানে স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছে।
আপনার ইলেক্ট্রনিক যেকোনও পণ্য, মোবাইল, টেলিভিশন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, আইফোন, আইপ্যাড, এয়ার কোলার, এমনকি ফ্রিজ, এসবে কোনও সমস্যা হলে আপনি নির্দ্বিধায় চলে আসতে পারেন তার কাছে। হার্ডওয়্যারজনিত সমস্যা সমাধানে এখনও সে খুব পটু নয়। তবে সাধারণ কাজ চলে যাবে- এমন একটি উপায় আপনাকে বের করেই দিবে! আর সফটওয়্যারজনিত প্রব্লেমগুলো সে যেন 'তুড়ি মেরে উড়িয়ে' দেয়। মুহূর্তেই আপনাকে এমন একটি সল্যুশন দিয়ে দিবে যে আপনি দু'চোখ বড় করে তাকিয়ে ছাড়া আর কিছুই ভেবে পাবেননা!
আপনার ল্যাপটপটি নতুনভাবে সেট-আপ দেওয়া প্রয়োজন, অথবা ভেতরের সফটওয়্যারগুলো ভালোভাবে কাজ করছেনা, মোবাইলটি বারবার হ্যাংগ হয়ে যাচ্ছে; এসব সমাধান যেন ওর বাঁ হাতের খেল। এছাড়া কত বিচিত্র কাজ যে সে করে বসে তা না দেখলে বিশ্বাস করার নয়! তার নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। আরবি ভাষা নিয়ে সে একটি অ্যাপ-ও তৈরি করেছে। আমরা মাঝেমাঝে হয়রান হয়ে যাই, সে এ কাজগুলো কীভাবে করে, কোথায় শিখল, কখন শিখল???
আমার বন্ধুরা কখনো সখনো তার কাছে ল্যাপটপ দিয়ে যায়! সে সীমাহীন আনন্দের সাথে যন্ত্রগুলোর অসুখ সারিয়ে দেয় এবং বিনিময়ে সে কী চায় জানেন? তাকে মনের আনন্দে গেমস খেলতে দিতে হবে!
তাকে নিয়ে আমাদের বড় স্বপ্ন কাজ করে। জানিনা আল্লাহ তার ভবিষ্যত কিভাবে সাজিয়ে রেখছেন! তবে আমাদের সাধ্য অনুযায়ী তাকে আমরা সর্বোচ্চ পরিচর্যার মাধ্যমে গড়ে তোলার চেষ্টা করব। ইনশাআল্লাহ। সবার কাছে অনুরোধ রইল, প্রখর ধীশক্তিসম্পন্ন আমার এ ভাতিজার সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য দোয়া করবেন।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৮ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দুআ সবসময়।
আপনার ভাতিজা যদি বাংলাদেশে থাকে তাহলে তার মেধার অপব্যবহার হবে । ওকে বাইরে নিয়ে ইলেক্ট্রনিক্সের লাইনে নিয়ে যান - ইন শা আল্লাহ সেখানে সে ভাল কিছু করে দেখাতে পারবে।
আমেরিকানরা এখন সবাইকে শত্রু মনে করে । এই সংশয় তাদের নিজেদের কৃত অপকর্মের ফল । অন্যের এত সম্পদ তারা লুটে এনেছে যে এগুলো সামলানোর ভয় সামনের দিনগুলোতে তাদেরকে ঘুমাতে দেবে না।
"আমেরিকানরা এখন সবাইকে শত্রু মনে করে । এই সংশয় তাদের নিজেদের কৃত অপকর্মের ফল । অন্যের এত সম্পদ তারা লুটে এনেছে যে এগুলো সামলানোর ভয় সামনের দিনগুলোতে তাদেরকে ঘুমাতে দেবে না।" দারুণ বলেছেন।
ঈমানী দৃঢ়তা আর উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়েই যার মোকাবেলা করতে হবে! 'আহমদ' কে অান্তরিক ধন্যবাদ!
আপনার ভাতিজার জন্যে আল্লাহর দরবারে বিনীত দুয়া যেন,সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে আজীবন!আমিন!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন