স্বপ্ন ও রাজকন্যাঃ ক্ষণিকের ছুঁয়ে যাওয়া সুখ
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান বিন আনোয়ার ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:০৭:১৯ সন্ধ্যা
তাকে খুব পছন্দ আমার। যেকোনও মুভি, যেখানে তার উপস্থিতি আছে, আমি সেটি খুব আগ্রহ নিয়ে দেখি। ক্রাশ খাওয়া বলে একটি ব্যপার আছে। শব্দটা আমি ইদানিং শুনছি। ক্রাশ খাওয়া মানে যদি প্রেমে পড়া হয়, তবে আমি তার প্রেমে পড়েছি। বহুদিন ধরে তার প্রেমে মজে আছি। নাম? উঁহু, এই মুহুর্তে মনে করতে পারছিনা! ভার্সিটিতে 'হিস্টোরি' ক্লাস চলছিল। হঠাৎ সে এল ধূমকেতুর মত। পুরো ক্যাম্পাসে খুশির বন্যা। ক্লাসের ফাজিল ছেলেগুলোও মুহূর্তে সুবোধ বালক বনে যায়। আমি তো পাথর হয়ে গেছি। তার রূপ আমাকে পাগল বানিয়ে দেয়। সুন্দর মুখচ্ছবিতে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। আমাদের ইউনিভার্সিটি পরিদর্শনে একজন চিত্রনায়িকাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে- ব্যপারটি আমাদের বিস্মিত করলেও, শেষ অবধি আমরা খুশি মনেই তাকে বরণ করি। ক্লাসের সব ছাত্র দাঁড়িয়ে ইন্ট্রোডিউস করছে। প্রত্যেকে তার নিজের ভাষাতে পরিচয় বলছে। আমি ভাবলাম, এই বিদেশ-বিভূঁইয়ে একজন পরদেশিনী কে ভিন্ন ভাষায় পরিচয় জানানো বোকামি বটে! ফলে ইংরেজিতে নিজেকে উপস্থাপন করলাম। সে কিছুটা খুশি হল মনে হয়! একটু যেন মুচকিও হাসল!
চলে গেল আমার অভিপ্রেত নায়িকা। ক্লাস শেষে আরও একটি ক্লাস শুরু হওয়ার আগে, পা বাড়ালাম রেস্ট হাউজে। আমি জানি, সেখানেই আমার প্রণয়িনী অপেক্ষা করছে। ধীরে ধীরে গিয়ে দরজায় নক করলাম। 'কে?' ভেতর থেকে জিজ্ঞাসা ছুটে এল।
'জী, আমি'। কাঁপা স্বরে উত্তর দিলাম।
'ও, তুমি! ভেতরে এসো'।
তার প্রশ্রয়ী উত্তর আমাকে সাহসী করে তোলে। যেন মনে হল, আমার অপেক্ষাতেই ছিল এতক্ষণ! ভেতরে প্রবেশ করতেই তাকে ব্যস্ত মনে হল। না, কোনও কাজ করছিলনা। কাঁধে তোয়ালে জড়িয়ে কিছুটা অধীর ভঙ্গিতে বলল;
'তুমি একটু বসো। আমি গোসলটা সেরে আসি'। 'নিশ্চই-নিশ্চই' বলে আমি বিনীত আমন্ত্রণ জানাই।
সবকিছু কেমন সাজানো মনে হচ্ছিল। এত সহজভাবে সব ঘটে যাচ্ছে, কোথাও কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই, ব্যপারটি হজম করতে বেগ পেতে হচ্ছে!
একটু পর। আমার চোখ দুটোকে আলোয় ভরে দিয়ে আকাশ থেকে নেমে এল যেন এক অপ্সরা দেবী। ভেজা উদাম চুল, মনোহরি অবয়ব আর আয়ত নয়ন আমাকে যেন খুন করে ফেলবে। এত সুন্দর তুমি!!! মাত্র গোসল সেরে এসেছে। নিজের মাঝে কোনও জড়তা রাখেনি। ঠিক যতটা সুন্দরভাবে সৃষ্টিকর্তা তাকে নির্মাণ করেছেন ততটা প্রস্ফুটিতভাবেই সে নিজেকে আমার সামনে অর্পন করল। মনে কেমন ঘোর লেগে যায়। ভাবনাগুলো অবাধ্য হতে ইচ্ছে করে। তবে কি সে-ও আমাকে...??? নাহ, কী সব ভাবছি আমি? এতটা ধৃষ্টতা উচিৎ নয়!
একটু পর। 'আজ বিকেলে তুমি অবসর আছো তো?' মুচকি হেসে প্রশ্ন করে শ্রী মুখের অধিকারিণী।
'হা, অবশ্যই'। বিলম্ব না করে উত্তর দিই।
'তাহলে আমাকে নিয়ে একটু বেরুতে পারবে? কিছু শপিং করতে হবে'।
আমি চমকিত হই। লোকে বলে, 'মেঘ না চাইতে বৃষ্টি'; আমি দেখি জ্যোতি না চাইতে চাঁদ পেয়ে গেছি! অস্থির মন অনেক প্রশ্ন করতে চায়। 'কখন যাবেন?' 'কিভাবে যাবেন?' আরো কত কী! যেন মনের কথা বুঝে নিয়েছে সে। মুচকি হেসে বলে, 'তাড়াহুড়ার কিছু নেই। বিকেলে আমি তোমাকে ফোনে জানাব।'
সে বিকেল আর আসেনা আমার। অধীর সময়গুলো কেবলই দীর্ঘ হয়। ভেতরে ছটফটানি বাড়তে থাকে। তার পর, সে মধুর অবকাশে ঋদ্ধ হই আমি । আমার আরাধনা সত্যি হতে চলে। বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত সুন্দরী ললনার পাশে বসে আমি শহরের সবচেয়ে বিলাসবহুল বিপণী বিতানে যাত্রা করি। আর তারপরেই,,, স্বপ্ন আর এগোয়না! হঠাৎ করে ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। একটা অতৃপ্তি ও মুচকি হাঁসির রেখা অফুরন্ত জড়িয়ে থাকে।
জীবনটাকে সুন্দর মনে হয়। হোক না কাল্পনিক, তবু ক্ষণিকের তরে যে নিষ্পাপ স্বপ্নটি হৃদয়-মনে দোলা দিয়ে গেছে, তার অকপট স্পর্শে একটু সময় হলেও নিজেকে সুখী মনে হয়। এই বর্ণহীন জীবনে এটাই বা কম কীসে!
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৪ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সবকিছু হিসেবে গোলমাল আছে মনেহয়।
০ এক স্বপ্নেই কত কিছু হল ! গোসল হতে বের হয়ে আসা থেকে গাড়িতে চড়ে শপিং মল ......
স্বপ্ন তো , ইচ্ছেমতই দেখা যায় ।
বাকী অংশ আরেকদিন দেখে নিয়েন , বোঝাই যাচ্ছে খুব শীঘ্রই পজিটিভ আপডেট আসবে ।
ব্লগাররা আপনার স্বপ্নে বেশ বিভোর হয়ে গেছে
শব্দ চয়ন, ভাষা জ্ঞান এবং তার প্রয়োগ চমৎকার হয়েছে। চালিয়ে যান ------
তবে স্বপ্নের মধ্যে গোসলের দৃশ্যটা না আনলেই পারতেন ---- বিষয়টা বাংলা সিনেমার মত হয়ে যাচ্ছিল------ গানের মধ্যে বিনা নোটিশে বৃষ্টি ।
ভালো লাগলো, ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন