হোক অযথা এসব কথা, দুঃখের পরেই সুখ আসে কি?
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান বিন আনোয়ার ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:০৬:০৩ রাত
বয়স চব্বিশ পেরিয়ে পঁচিশে ঠেকেছে। পড়াশোনা এবং চাকরি, ভীষণ দুরূহ দুটি কাজ একসাথে করতে গিয়ে চিড়েচ্যাপটা হয়ে যাচ্ছি। সমানভাবে চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও, সত্যি কথা হল, তেমন সফল হতে পারছিনা। এই অসফলতা বা ব্যর্থতার পেছনে মূল কারণ হল 'নিঃসঙ্গতা'। শহর থেকে অনেক দূরে কর্মস্থল হওয়ায় সারাক্ষণ একাকী-ই থাকতে হয়। আশেপাশে মানুষজন কম। তাছাড়া এখানে সবাই কাজের বাধ্য-বাধকতায় আটকে আছে। ফলে কেউ কাউকে সময় দিতে পারেনা। আমি পড়ে গেছি মহা গ্যাঁড়াকলে! কারো সাথে আড্ডা দিতে পারিনা। সারাক্ষণ বুঁদ হয়ে বসে থাকতে হয়। নিজের বাসাতে, যেখানে পুরো একটি ফ্যামিলি আনন্দের সাথে দিনাতিপাত করতে পারে, সেখানে কিনা আমি একা নিজের জীবনের মূল্যবান সময়গুলো পার করে দিচ্ছি। নিজের মধ্যে এক ধরণের 'জ্যাম' অনুভূত হয়। কোনও কাজে মন বসাতে পারিনা। পড়াশোনা, চাকরি, দুটোর জরুরি কাজগুলো ছাড়া বাকি সবকিছু থেকে উদাসীন থেকে যাই। ভেতরে কোনও উদ্যমতা খুঁজে পাইনা। মাঝেমাঝে ভয় হয়, না জানি আবার মানসিকভাবে 'অসুস্থ' হয়ে পড়ি! সারাদিন ল্যাপটপের পাতায় ইন্টারনেট ঘেঁটে কত সময় পার করা যায়! একজন বন্ধু প্রয়োজন। সত্যিকারের বন্ধু। সাহস, অনুপ্রেরণা, নির্দেশনা; সবকিছু যার কাছে নিঃস্বার্থভাবে পেতে পারি। এমন কেউ নেই তাতো জানি-ই! তবু আশা করতে দোষ কী! আশা করতে দোষ নেই। আমার আশা আমার স্বপ্নে বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই। (হাঁসির ইমু)
দু'দিন আগে বাসায় গিয়েছিলাম। ভাইয়ার বাসায়। আজ সকালে ফিরলাম। বাস থেকে নেমে অনেকটা পথ হেঁটে এলাম। সাথে প্রায় দশ কেজি ওজনের তিনটে ব্যাগ নিয়ে এসে আমি যেন বাঁকা হয়ে গেছি। দুপুরে খেয়ে লম্বা ঘুম দিলাম। একটু আগে মায়ের সাথে কথা হল। ইমুতে কথা বললাম। ইদানিং 'ইমু'টা ভাল কাজে দিচ্ছে। অনেক দূরে থেকে মা-বাবাকে দেখে দেখে কথা বলি। তাঁরাও আমাকে দেখেন। দেখে উৎকণ্ঠিত হন। 'তোর চেহারাটা কেমন পাংশুটে হয়ে গেছে। খাওয়া-দাওয়া করিসনা বুঝি'? আমি মাথা দোলাই। 'হুম, খাওয়া-দাওয়াটা ঠিকমত হয়না' বলে অসহায়ভাবে স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকি। মায়ের চোখে পানি টলমল করে। বাবা কেমন অস্থির হয়ে যান! আমি দোয়া চাই। বারবার দোয়া চাই। বলি, 'আমার জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের দোয়া-ই আমার জীবনের একমাত্র সম্বল।' চোখে পানি নিয়ে মা বলেন, 'বাবা, তোর জন্য আমি দিন-রাত দোয়া করি। রোজা রাখি। নামাজ পড়ি। আল্লাহ'র কাছে তোর জীবনের সফলতা কামনা করি।'
হ্যাঁ, জীবনে আর কিছু না পেলেও অন্তত এই একটি ব্যপারে আমি গর্ব করতে পারি, আমার মত মা-বাবার ভালবাসা ও অহর্নিশ আশীর্বাদ পৃথিবীর খুব কম সন্তান-ই অর্জন করতে পেরেছে। সেজন্যই, নিজের সবচেয়ে সুন্দর স্বপ্নগুলো বিসর্জন দিয়ে হলেও আমি তাঁদের মুখে এক টুকরো সুখের হাসি ফোটাতে চাই। বহুদূরের একলা নির্জন প্রান্তে তাঁদের দোয়াকে সম্বল করেই জীবনকে টেনে নিতে চাই।
বিষয়: বিবিধ
১৬১৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার পরামর্শের জন্য কৃতজ্ঞতা! ভালো থাকুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন