ফ্রিডম অভ এক্সপ্রেইশন, ব্লাসফেমি, শার্লি হেব্দো এবং ইসলামের অবস্থান- ২য় পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান বিন আনোয়ার ১৮ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৯:৫৭:১৬ সকাল
(কথাগুলো একটি ইংরেজি বক্তব্যের অনুবাদ। একজন সত্যানুসন্ধানী, ধর্মপ্রাণ মানুষ হিসেবে এগুলো যে কারো জানা থাকা প্রয়োজন)
আমেরিকার মত দেশে ১৯৫২ পর্যন্ত ব্লাসফেমি আইনের প্রয়োগ ছিল। ১৯৫২’তে আমেরিকায় ‘মিরাকল’ নামে একটি ছবি মুক্তি পায়। সেই ছবিতে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী-চরিত্র দেখানো হয়- যার নাম ছিল মেরী। এবং ওই ছবিতে দেখানো হয় যে, মহিলাটি নিজেকে ‘মাদার মেরী অভ ঈসা’ (ঈসা আঃ-এর মা মারিয়াম) বলে ভাবতে শুরু করেছে। নাউজুবিল্লাহ। অবশেষে সে একজনের সাথে ব্যভিচার করে এবং তার একটি সন্তান হয়, ওই সন্তানকে সে ‘জিসাস’ বলে ডাকতে শুরু করে। যদিও ছবিতে মহিলাটি ছিল পাগল, এতদসত্তেও ছবিটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এটা ১৯৫২সালের ঘটনা। পরে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট বলে যে, আমেরিকার সংবিধানের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী, “আপনি কাউকে তার ভাবনা প্রকাশে বাঁধা দিতে পারেন না”। যদিও এখনো আমেরিকার অনেক অঙ্গরাজ্যে; যদি আপনি মিশিগান, ওকলাহোমা, পেন্সিলভানিয়া, ম্যাসাচুসেটসে যান; (দেখবেন) এই সব রাজ্যগুলোতে তাদের আলাদা আলাদা ব্লাসফেমি আইন আছে। ফ্রান্সেও ব্লাসফেমি আইন আছে। ইউরোপে এখনো অনেক দেশ আছে যেখানে আপনি জিসাসের বিপক্ষে কিছু বলতে পারবেন না। আমাদের কথা হল, যখন আপনি আপনার দেশে নিয়ম করেছেন যে কেউ জিসাসের বিপক্ষে কিছু বলতে পারবেনা, তখন আপনাকে এটাও বুঝতে হবে যে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বিপক্ষে কিছু বলার জন্য আপনার কাউকে অনুমতি দেওয়া উচিৎ নয়।
এবার আমাদের ঐতিহাসিক পটভূমি জানতে হবে তারা কেন ফ্রিডম অভ এক্সপ্রেশনের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছে। কারণ তারা মূলত চার্চের বিপক্ষে বিদ্রোহ করেছিল। তারা চার্চের বিপক্ষে লড়ার জন্য ফ্রিডম অভ একপ্রেশনের পক্ষে খুব শক্তিশালী আইন জারি করেছে, আর সেই আইনের সুবিধায় (চার্চের বিপক্ষে যেতে যেতে) এমনকি তারা বাইবেলের ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের গালাগালি শুরু করে দিয়েছিল।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইউরোপীয় অঞ্চলে এটা শুরু হয়েছিল। আর ইউরোপীয় অঞ্চলে মুসলিমরা সংখ্যায় তখন একেবারে নগণ্য ছিল। মুসলমানদের সংখ্যা ছিল একেবারেই কম! তার পর আস্তে আস্তে মুসলমানদের সংখ্যা ইউরোপে বাড়তে থাকে। প্রথমবারের মত ইউরোপীয়রা মুসলিম সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে শুরু করে। যখন এই যোগাযোগটা শুরু হল এবং মুসলমানের সংখ্যাও অনেক বেড়ে গেল, আর যখন ইউরোপিয়রা দেখল যে; মুসলমানরা তো হালাল খেতে চায়, তারা মদ স্পর্শ করেনা, তারা এলকোহল পান করতে চায়না, তারা ব্যভিচার করেনা, যখন মুসলিমরা এগুলো থেকে বিরত থাকতে শুরু করল; তখন ইউরোপীয়রা ভাবল যে; আরে, কিছু মানুষ তো ‘এক্সপ্রেশন’কে থামানোর চেষ্টা করছে! সুতরাং তারা তাদের নিজ ধর্মের ব্যপারে বা সেই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের ধর্মের ব্যপারে যা করেছিল, একইভাবে এটা ইসলামের বিরুদ্ধেও করতে শুরু করে দিল। তারা এটা বুঝতে চেষ্টা করেনি যে মুসলমানরা তাদের ধর্মের ব্যপারে খুব সিরিয়াস!
এটা সেই একই ঢঙয়ে শুরু হয়েছে। আর যখনই মুসলামানরা প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করল, তখন তারা বলতে লাগল, “কেনো তোমরা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছ? আমাদের বাকস্বাধীনতা আছে। যেহেতু আমাদের বাকস্বাধীনতা আছে, আমাদের থামানোর কোনো অধিকার তোমাদের নেই। তোমরা যদি এই আইনকে পছন্দ না করো তাহলে আমাদের দেশ ছেড়ে চলে যাও!” তারা যে আইনটি প্রণয়ন করেছে- যার সারকথা এটাই যে, ‘ফ্রিডম অভ এক্সপ্রেশন শোড বি সাপোর্টেড ইন্টারন্যাশনালি’ (Freedom of expression should be supported internationally), এবং এর অধীনে তাদের অধিকার থাকবে যেকোনো কিছুর সমালোচনা করার। ব্যপারটা এমন নয় যে তারা এটা শুধু ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধেই করছে, বরং তারা এটা ইতিমধ্যেই বাইবেলের নবীর বিরুদ্ধে করে ফেলেছে। তারা একই পথ অনুসরণ করেছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তারা এটা বুঝেনি যে আমরা মুসলমানেরা তাদের মত ধর্মকে এত সহজভাবে গ্রহণ করিনি। আমরা সবসময় কোরআন, নবীজি সাঃ, আল্লাহ, এবং ইসলামকে আর সবকিছু থেকে বেশি ভালবাসি।
এটা তো গেল এক কারণ। দ্বিতীয়ত তারা এটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে যে ইসলাম হল একটি ‘এনিকনিস্ট’ (Aniconist) ধর্ম। ‘এনিকনিস্ট’ মানে কী? এনিকনিস্ট মানে হল, ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা কোনো ‘আইকন’ বা প্রতিমাকে বিশ্বাস করেনা। ওই যে আপনারা দেখেন চাঁদ-তারা, বা তারাখচিত চাঁদ; বিভিন্ন নিদর্শন, এসবের ইসলামের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। নবীজির গম্বুজে সবুজ রঙ; ইসলামের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম একটি এনিকনিস্ট ধর্ম। তুলনাগতভাবে অন্য ধর্মগুলো ‘আইকনকলাস্ট’ (Iconoclast) ধর্ম। অর্থাৎ, তারা আইকনে বিশ্বাস করে! তাদের ধর্মকে প্রতিনিধিত্ব করতে তাদের বিভিন্ন আইকন আছে। এখন তারা দেখল যে, ইসলামের যেহেতু কোনো আইকন নেই, তাই তারা আল্লাহ’র জন্য কোনো আইকন তৈরি করতে পারেনি। আল্লাহ’র পর মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন মোহাম্মাদ সাঃ। সুতরাং তারা ভাবল যে, ঠিক আছে, আমরা তো জানিনা আসলেই তিনি কেমন ছিলেন (চলো তার কার্টুন আঁকি)! ফলে তারা কার্টুন আঁকল। তারা এটা বুঝতে পারলনা যে এই ব্যপারটি আমাদের জন্য একটি সিরিয়াস ইস্যু! আমরা মুসলমানরা এটা সহ্য করিনা।… এটা তো শুরু হয়েছিল ‘ফ্রিডম অভ এক্সপ্রেশন’-এর অধিকারের কারণে, যা মূলত তাদের ওপর চার্চের পক্ষ থেকে যা ঘটেছে তার বিপরীতে একটি রিএকশন ছিল। (পরবর্তীতে ব্যপারটি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।)
অনেক মানুষ জানেনা, ১৯০২ থেকে ১৯৫৫, নিউ ইয়র্কে মেডিসন স্কয়ারের স্ট্রীট ২৫-এ, চার্লস আলবার্ট লোপেজ (Charles Albert Lopez) নামে এক ব্যক্তি মানবেতিহাসের ৯জন মহান ব্যক্তিত্বের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে। যারা মানুষের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক বিধানতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন। ওই ব্যক্তি হযরত মুসা, কনফুসিয়ানের মূর্তি তৈরি করে। এমনকি ওই ব্যক্তি নবী মুহাম্মাদ সাঃ-এর ভাস্কর্যও তৈরি করে যা পরে খুব নীরবে সরিয়ে নেওয়া হয়। সে কিন্তু এটা মুসলমানদেরকে অসম্মান করার জন্য করেনি! সে শুধু এটা করেছে কারণ এই নয়জন মানুষ মানবজাতির জন্য নতুন বিধান নিয়ে এসেছিলেন। সৌভাগ্যজনকভাবে অথবা দুর্ভাগ্যের কারণে, এটা সেখানে অবস্থানরত মুসলমানদের চোখে পড়ে। অতএব, যখন আমেরিকান সরকার এটা বুঝতে পারল যে এ ব্যপারটি ইসলামে অনুমোদিত নয়, তারা সেই ভাস্কর্যকে নীরবে সরিয়ে নিল। এটা অবশ্য কোনো সমস্যার কথা নয়! যারা এটা করেছিল তাদের ভাবনাটা এমনই (সৎ !) ছিল।
বিষয়: বিবিধ
১০৬৭ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দুনিয়াতে তারা এর ফলে পাবে - ইন শা আল্লাহ । আর তার চেয়েও কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে আখেরাতে তাদের জন্য।
শয়তানী কুটবুদ্ধিতে স্বীয় ধর্মের আসলিয়াত থেকে অনেক দূরে সরে যাওয়াতেই এমন সব কর্ম করে যাচ্ছে ইয়াহুদী-নাসারা গং!
উপস্হাপনার সাথেই আছি ভাল লাগা জানিয়ে.....।
মন্তব্য করতে লগইন করুন