গল্পে শিখি কোরআনের বিধান
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান বিন আনোয়ার ১১ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৯:৪৫:৩২ সকাল
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়া'লা বলেন, "আল্লাহ তায়া'লা তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের ব্যপারে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, একজন পুত্রের জন্য দু'জন কন্যার অংশের পরিমাণ (সম্পদ), আর যদি মেয়েরা দু'য়ের অধিক হয়, তাহলে তাদের জন্য মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ (সম্পদ)। আর মেয়ে যদি একজন হয়, তাহলে তার জন্য পুরো সম্পদের অর্ধেক..." (আয়াত চলমান)।
হযরত সা'দ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, "রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্বের সময় আমার এক কঠিন মরণব্যাধি অবস্থায় আমাকে দেখতে এলেন। আমি বললাম, 'হে আল্লাহ'র রাসুল! আপনি দেখছেন যে আমাকে খুব কঠিন রোগে ধরেছে। আমি একজন বিত্তবান মানুষ আর আমার একটিমাত্র মেয়ে ছাড়া আর কোনো উত্তরাধিকারও নেই। আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের মাঝে দান করে দিব?' রাসুল সাঃ বললেন, 'না।' হযরত সা'দ বলেন, অতঃপর আমি আবারো বললাম, 'তবে কি আমি অর্ধেক দিয়ে দিব?' রাসুল সাঃ বলেন, 'না। আর এক তৃতীয়াংশ, এক তৃতীয়াংশও তো বেশি! তোমার উত্তরাধিকারীদের নিঃস অবস্থায় ছেড়ে যাওয়ার চেয়ে তাদেরকে ঐশ্বর্যবান করে রেখে যাওয়াটা তোমার জন্য উত্তম। নিঃস্ব অবস্থায় তারা তো মানুষের কাছ হাত পাতবে! তুমি আল্লাহ'র সন্তুষ্টি লাভে যাই দান করোনা কেনো- তাতেই তোমার প্রতিদান মিলবে। এমনকি যদি স্ত্রীর মুখে এক নলা খাবার তুলে দাও তার জন্যও !"
গল্পঃ
একদিন এক মুসলিম রমণী তাঁর রাজ্যের এক বিজ্ঞ আলিমের কাছে আগমন করলেন। তিনি এসেছেন মূলত একরাশ ক্ষোভ ও নালিশ নিয়ে! তাঁর অভিযোগ, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত-সম্পদে তাঁর স্বজন'রা তাঁর প্রতি ন্যায়বিচায় করেনি! কিভাবে? স্ত্রীলোকটি বলেন, "কিছুদিন হল আমার ভাই মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তিনি মোট ৬০০দিরহাম (রূপার টাকা) রেখে গেছেন সম্পদ হিসেবে। অথচ সেখান থেকে ভাগবাটোয়ারা করে সবাই আমাকে মাত্র ১দিরহাম দিয়েছে! এটা নির্ঘাত অন্যায়, এমনটা মেনে নেওয়া যায়না!..." এসব শুনে সেই বিচক্ষণ আলিম চিন্তার স্রোতে নিমজ্জিত হলেন! একসময় বললেন, "আপনার ভাইয়ের একজন স্ত্রী, মা, দু'টো মেয়ে আর বারোজন ভাই এবং একজন বোন; মানে আপনি আছেন- তাই না? আলিমের কথা শুনে মহিলা তো দারুণ বিস্মিত! চরম আশ্চর্যের সাথে তিনি উত্তর দিলেন, "হ্যা, এমনই তো!" তাঁর সম্মতিসূচক সাড়া পেয়ে শ্রদ্ধেয় আলিম নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন, "তাহলে আপনাকে যে এক দিরহাম দেওয়া হয়েছে তাতে কোনো ভুল হয়নি। এই এক দিরহামই আপনার প্রাপ্য। এখানে আপনার প্রতি কোনো অবিচার করা হয়নি।"
ভদ্রমহিলা এমনিই তেঁতে ছিলেন। তার ওপর সেই আলিমের কথা শুনে তাঁর রুষ্টতা যেন আরো বেড়ে গেল। তিনি শ্রদ্ধেয় আলিমের কাছে এই 'অন্যায্য' বন্টনের পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা দাবি করলেন। অবস্থার প্রেক্ষিতে সেই অভিজ্ঞ আলিমও খুব ধীরে ধীরে, একেবারে শান্ত ভঙ্গিতে মহিলার কাছে তাঁর কাঙ্ক্ষিত ব্যাখ্যা বর্ণনা করে গেলেন। বললেন, "দেখুন, আপনার ভাইয়ের রেখে যাওয়া ৬০০দিরহাম থেকে তাঁর স্ত্রী পাবেন ৮ভাগের এক ভাগ- যা কিনা ৭৫দিরহাম-সমপরিমান। তাঁর দুই মেয়ে পাবে সর্বমোট সম্পদের তিনভাগের দুই ভাগ। অর্থাৎ ৪০০দিরহাম। তাহলে কত হল? মোট চারশ' ও আগের পঁচাত্তর মিলিয়ে চারশ' পঁচাত্তর দিরহাম! আপনাদের মা পাবেন মোট সম্পদের ৬ভাগের একভাগ, মানে ১০০দিরহাম। তাহলে আরো একশ' দিরহাম এখানে যোগ হল। মানে পাঁচশ' পঁচাত্তর দিরহাম। সবশেষে বাকি রইল মাত্র ২৫দিরহাম। এই পঁচিশ দিরহাম ভাগ করতে হবে এভাবে যে, কোরআনের বিধি অনুযায়ী একজন মহিলা একজন পুরুষের অর্ধেক পেয়ে থাকেন। অতএব, যেহেতু মৃতের বারোজন ভাই আছেন এবং একজন বোন- মানে আপনি আছেন, তাই ভাইদের সবাইকে দুই দিরহাম করে চব্বিশ দিরহাম দেওয়া হবে। বাকি এক দিরহাম তাঁর বোন, মানে আপনাকে দেওয়া হবে। যেমনটি আপনাকে দেওয়া হয়েছে। অতএব, ইসলামী বিধি অনুযায়ী আপনি অবশ্যই ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আপনার প্রতি ন্যূনতম অবিচার করা হয়নি। তবে হ্যা, আপনার ভাইয়েরা চাইলে আপনাকে পুরো পঁচিশ দিরহাম বা অন্যরাও আপনাকে তাদের অধিকার থেকে সানন্দে ভাগ দিতে পারেন। এতে কোনো সমস্যা নেই।" বিজ্ঞ আলিমের এমন সহজ ও সাবলীল ব্যাখ্যা এবং কোরআনের অত্যধিক আচারনিষ্ঠ এই বিধানের সৌন্দর্য উপলব্ধি করে সেই মুসলিম রমণী প্রফুল্লতার সাথেই সম্মানিত আলিমের কাছ থেকে প্রস্থান করলেন।
উপদেশ ও উপসংহারঃ পবিত্র কোরআনের প্রতিটি বিধানই মানবজাতির কল্যাণের জন্য নির্ধারিত। আমাদের স্বল্প জ্ঞানে আমরা সবসময় হয়তো সেটা বুঝে উঠতে পারিনা। তবে বুঝি আর না বুঝি, পবিত্র কোরআনের সকল বিধানের প্রতি আমাদের পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা রাখা উচিৎ। আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
১১৬৪ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সাবলীল উপস্হাপনার দ্বীনী আলোচনা অনেক ভাল লাগল! চমৎকার ভাবে বিষয়ের গভীরে নিয়ে গেছেন পাঠককে! জাযাকাল্লাহু খাইর জানাই!
বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে মৃত সন্তানের উত্তরাধীকার সূত্রে মাতা-পিতা কোন অংশ পায় কী? মৃতের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী থাকাবস্হায়?
পেলে কত অংশ? জানা থাকলে জানাবেন আশা করি!!
১- পিতা ২- মাতা ৩-ছেলে ৪- মেয়ে ৫- স্বামী ৬-স্ত্রী।
এবার মৃত ব্যক্তির পিতা উত্তরাধিকার লাভে তিন অবস্থায় পড়তে পারেন-
ক. মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র বা পুত্রের পুত্র, যত নিম্নেরই হউক, থাকলে বাবা ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬) পাবেন।
খ. পুত্র, পুত্রের পুত্র না থাকলে কিন্তু কন্যা, পুত্রের কন্যা থাকলে ছয় ভাগের এক ভাগ ( ১/৬) পাবেন এবং তাদের দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তাও পাবেন।
গ. মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকলে অন্যান্য অংশীদারদের দেয়ার পর বাকী সমস্ত সম্পত্তি পিতা পাবেন।
একইভাবে মৃত ব্যক্তির মাতা তিনভাবে উত্তরাধিকার লাভ করতে পারেন-
ক. মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নেরই হউক, থাকলে অথবা যদি বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন থাকে তবে মাতা ছয় ভাগের এক ভাগ ( ১/৬) পাবেন।
খ. কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নের হউক না থাকলে এবং যদি একজনের বেশি ভাই বা বোন না থাকে তবে মাতা তিন ভাগের এক ভাগ ( ১/৩) পাবেন।
গ. কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নের হউক না থাকলে অথবা কমপক্ষে দুইজন ভাইবোন না থাকলে এবং যদি মৃত ব্যক্তি স্বামী বা স্ত্রী হয়,
তবে তার স্বামী বা স্ত্রী, মাতা ও পিতা উত্তরাধিকারী হলে সেই স্বামী বা স্ত্রীর অংশ বাদ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তার তিন ভাগের এক ভাগ ( ১/৩) মাতা পাবেন।
মৃত ব্যক্তির এক ভাই থাকলেও মাতা ১/৩ অংশ পাবেন।
(কাহাফ ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তরে। আমি সাধ্যমত চেষ্টা করেছি কথাগুলো সহজভাবে লেখার। তথ্যগুলোও যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা করে লিখেছি। আপনি প্রয়োজনে আরো নিশ্চিত হয়ে নিবেন। আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান দান করুন)
আমার প্রশ্নের জবাব সুন্দর ভাবে উপস্হাপন করায় অনেক ধন্যবাদ ও সাযাকাল্লাহু খাইরান জানাই শ্রদ্ধেয় ইনরান বিন আনোয়ার ভাই!
খোদায়ী আইনে মাতা-পিতা সন্তানের ওয়ারিস হন এটা জানি! বর্তমান রাষ্ট্রীয় আইনের বিষয়ে ধারণা ছিল না আমার!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন