সুন্দর চরিত্র ইসলামের ভিত্তি ও অলঙ্কার
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান বিন আনোয়ার ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১২:৪৯:১৪ দুপুর
ইসলামের চারিত্রিক বিধি-নিষেধগুলো শুধুমাত্র ইসলামের সাধারণ কিছু নিয়মনীতিই নয়, বরং সুন্দর-মানবিক চরিত্র ইসলামের ভিত্তগত অংশ ও অনন্য অলঙ্কার। ইসলামী নীতিমালা সাধারণত চারিত্রিক দর্শনের উপরই ভিত্তি লাভ করে। এ কথার সাধারণ প্রমাণ হিসেবে আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদীসে মনোনিবেশ করতে পারি। রাসুল (সাঃ) বলেন, "আমি চারিত্রিক কল্যাণের পূর্ণতা দিতেই প্রেরিত হয়েছি।" হাদীসটিতে লক্ষ করা যায়, রাসুল (সাঃ) মানুষের চরিত্রগঠন ও এর পূর্ণতা সাধনকেই তাঁর জীবনের লক্ষ নির্ধারণ করেছেন।
আমরা এটাও বলতে পারি, রাসুল (সাঃ) তাঁর পূর্ববর্তী সকল মনীষী ও খোদাপ্রেরিত মহামানবদের চারিত্রিক মহৎ স্তম্ভগুলোকে বাস্তবিক রূপ দিতে এই পৃথিবীতে আগমন করেন। একটি হাদিসে আছে, নবীজি (সাঃ)বলেন; "আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবীদের উদাহরণটি হল- এক ব্যক্তি একটি ভবন নির্মাণ করল। অতঃপর সে ভবনটিকে সুন্দর ও চমৎকার আকৃতিতে শোভিত করল। তবে ভবনটির এক কোণে সে একটি ইটের গাঁথুনি পরিমাণ খালি জায়গা রেখে দিল। মানুষজন ঘরটিকে ঘুরেফিরে দেখে, তারা আশ্চর্য হয় এবং বলে, কেন এই অংশটি নির্মান করা হলনা?! নবীজি সাঃ বললেন, আমি যেন সেই অবশিষ্ট ইটের টুকরো। আর আমিই হলাম শেষ নবী।"
এই যে আল্লাহ তায়া'লার পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য অগণিত আসমানী বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে, এর সবটুকু উদ্দেশ্যই কিন্তু মানুষের চারিত্রিক উন্নতি সাধন! উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) এই ব্যপারটিই অনুধাবন করতেন ইসলামের অন্তর্নিহিত স্পৃহা থেকে। যখন তাঁকে নবী (সাঃ)এর চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল, তিনি জবাব দিলেন, "নবীজির (সাঃ) চরিত্র ছিল 'কোরআন'।" অর্থাৎ কোরআনের পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রতিরূপ ছিলেন আমাদের প্রিয় নবীজি (সাঃ)। এ ব্যপারটি আরো সুদৃঢ় হয় নবীজির একটি কথায়। "ইসলামে চারিত্রিকভাবে সুন্দর মানুষটিই সবচেয়ে সুন্দর মানুষ বলে বিবেচিত হয়।" নবীজি আরো বলেন, "তোমাদের মধ্যে চারিত্রিক বৈশিষ্টে উন্নত ব্যক্তিটিই সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি।" অন্য আরেকটি হাদিসে এসেছে, "যে ব্যপারটি মানুষকে জান্নাতে প্রবেশে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করবে, সেটি হল আল্লাহ'র প্রতি তাকওয়া ও উত্তম চরিত্র।"
পবিত্র কোরআনের বেশ অনেক আয়াত ও রাসুলের (সাঃ) মুখনিঃসৃত অসংখ্য পবিত্র হাদীস থেকে এই ব্যপারটিই স্পষ্ট হয় যে, ইসলামে চরিত্রই 'ইবাদাত'। মৌলিক পাঁচটি বিষয়কে স্বীকার ও পালন করে যে ব্যক্তি যত সমৃদ্ধ ও মাধুর্যপূর্ণ চরিত্রের অধিকারী হবেন, মহান আল্লাহ'র কাছে তাঁর মর্যাদা ততই বেশি হবে। বর্তমানে সারা বিশ্বে, সর্বোপরি আমাদের মত 'তৃতীয় বিশ্বে'র উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বসবাসকারী সকল মানুষ তাদের মানবীয় উৎকর্ষতা ও চারিত্রিক সৌন্দর্য ক্রমেই হারিয়ে ফেলছে। ফলে সবখানে তৈরি হচ্ছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত আর অসমাধানযোগ্য হানাহানি। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের পরম-বন্ধু এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ)এর জীবনী থেকে আমরা সত্যিকারভাবেই নিজেদের চরিত্র গঠনের মৌলিক শিক্ষা পেতে পারি। আর কামনা করতে পারি, নিজেদের চারিত্রিক বিকাশ ও ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের মাধ্যমেই আমাদের কল্যাণ তরান্বিত হবে এবং আমরা হয়তো মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার নৈতিক অধিকার লাভ করতে পারব। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন
বিষয়: বিবিধ
১২০৪ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসলেই আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে আইনের শাসন কম থাকলেও এক সময় নৈতিকতা ছিল প্রবল, কিন্তু ইদানীং হলিউড ভলিউডী সংস্কৃতির অবাধ আমদানীতে মানুষ নৈতিকতা হারিয়ে ফেলছে।
যার ফলে আইনের শাসন কম থাকা এই দেশগুলোতে নৈতিকার বিপর্যয়ে মাৎস্যন্যায় অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে অত্যন্ত প্রকটভাবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন। আপনার লেখাটিতে কমেন্ট করার জন্য আবার লগেইন করলাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
'উত্তম সুন্দর ও সৎ চরিত্রের পুর্ণতার জন্যেই প্রিয় নবী সাঃ এর আগমনের অন্যতম কারণ!'
হাদীসে নববী সাঃ-তে এমন ঘোষণাই এসেছে!
সুন্দর সাবলীল উপস্হাপনা বিষয়টির গভীরতা বুঝতে সাহায্য করবে!
অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহু খাইরান!!
চমৎকার লেখুনি, অনেক ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন