জীবনের গল্প

লিখেছেন লিখেছেন ইমরান বিন আনোয়ার ২২ অক্টোবর, ২০১৪, ০৭:৪৫:২২ সন্ধ্যা

'মিডিয়া এন্ড সোসাইটি' ক্লাস শেষে দ্রুত রওয়ানা হলাম পরবর্তী ক্লাসের জন্য। আমার বর্তমান সেমিস্টারের সবগুলো ক্লাস-ই 'বিজন্যাস এন্ড ইকোনমিকস' বিল্ডিংয়ে। তবে একই সেকশনে নয়। তাই 'ডি' সেকশনে ক্লাস শেষ করে 'এরিয়া স্টাডিজ' ক্লাসের জন্য 'ই' সেকশনের দিকে পা বাড়িয়েছি। 'ডি' থেকে 'ই'তে যাওয়ার জন্য একটি শর্টকাট রাস্তা আছে। সেটা হল দু'টো সেকশনের মাঝে একটি থাই-রেস্টুরেন্ট। বেশ বড়সড়। সেটার ভিতর দিয়ে গেলেই খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছানো যায় অপর সেকশনে। যাইহোক, প্রতিদিনের মত আজো রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকেছি। হাতে সময় খুব কম। আগ্রহ নিয়ে কোনো কিছু পর্যবেক্ষণ করব- সে সুযোগ নেই। তবে না তাকিয়েও বুঝা যায়, এখানে সবাই বসে শুধু খাচ্ছে না, কেউ কেউ পড়ছে ও। এদের মাঝেই আমার চোখ চলে গেল একটি সুন্দর চেহারার স্মার্ট ছেলের দিকে। ছেলেটিকে মনে হল পুরোপুরি সুস্থ নয়! কিছুটা ঋজু ভঙ্গিতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। সে কি পঙ্গু! তাকে দেখলাম স্টীকে ভর করে আমার মতই কোনো ক্লাসের দিকে যাচ্ছে। মনটা বিষাদময় হয়ে উঠল। আমার আলহামদুলিল্লাহ শারীরিক কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। দেখতে একেবারেই আন-স্মার্ট এবং কিছুটা খাটো প্রকৃতির হলেও নিজের 'অক্ষমতা' নিয়ে মন খারাপ হতে পারে- এমন কোনো অজহাত আমার নেই। আবারো আলহামদুলিল্লাহ। অথচ এই ছেলেটি কত স্মার্ট! কতটা আভিজাত্য ছড়িয়ে আছে তার দেহ-ভঙ্গিতে! কিন্তু, আল্লাহ তাকে সাময়িক 'ক্লেশপূর্ণ' জীবন দিয়েছেন! আমি ভাবছিলাম, তবে কি আমি আমার ত্রুটিহীন-অকলঙ্ক দেহাবয়বের জন্য আল্লাহ'র কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবনা? অবশ্যই। মহান আল্লাহ আমার কৃতজ্ঞতা গ্রহণ করুন।

ভাবনার আবরণ ছেড়ে বাস্তবে ফিরে এলাম। এগিয়ে চললাম ক্লাসের দিকে। ক্লাস শুরু হতে আরো দশ মিনিট বাকি। করিডরে বিশ্রামের জন্য সোফা বিছানো আছে। সেখানেই বসে ল্যাপটপের সান্নিধ্যে সময়টা পার করব বলে ভাবছি! আবারো মনে মনে ধাক্কা খেতে হলো। আমি যে সোফায় বসেছি তার পাশেরটাতেই বসেছে একজন 'দৃষ্টিহীন মেধাবী সহপাঠী'। 'এরিয়া স্টাডিজ' ক্লাসে সে আমাদের সাথেই পড়ে। তার সাথে এখনো পর্যন্ত কোনোদিন কথা হয়নি। তাই সে আমাকে 'অনুধাবন' করতে পারেনি মনে হল। আমি বসার খানিক সময়ের মধ্যেই সে আমাকে বিনয়ের সাথে অনুরোধ জানালো তাকে তার ক্লাসে পৌঁছে দিতে। আমি কালবিলম্ব না করে তার কথায় সম্মত হলাম এবং তাকে জানালাম, আমিও তার সাথে একই ক্লাসে পড়ছি। আমার কথায় তার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল। এতে আমার মনেও এক পবিত্র প্রফুল্লতা জেগে উঠে। আমি ছেলেটিকে হাত ধরে-ধরে ক্লাসরুমের দিকে নিয়ে চললাম। আমার সহযোগিতায় সে প্রীত হয়ে আমার জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া করে দিল। আমিও প্রতিউত্তরে তার জন্য দোয়া করলাম।...

ক্লাসের পুরোটা সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক-রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা চললেও আমাকে আবিষ্ট করে রেখেছিল একটু আগের ছোট্ট দু'টি ঘটনা। আমরা মানুষেরা আল্লাহ'র কাছ থেকে সর্বোচ্চ নেয়ামতপ্রাপ্তির পরও তাঁর অবাধ্যতা করে বেড়াই। অথচ এই আপাতকালীন 'অসমর্থ' মানুষগুলো যখন আমাদের চারিধারে ভাগ্যের নির্মমতা নিয়ে হেঁটে-ফিরে, তখনো আমাদের ভাবনায় এটা আসেনা যে, চাইলে তিনি'তো অনেক নির্বল মানুষের মত আমাদেরকেও ক্ষমতাহীন করে দিতে পারতেন!

বিষয়: বিবিধ

৯৫৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

277170
২২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৯:২৮
আফরা লিখেছেন : আলহাদুল্লিলাহ ! অনেক ভাল লাগল ধন্যবাদ ।
277178
২২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৯:৪৭
ইমরান বিন আনোয়ার লিখেছেন : পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File