জয় হোক চতুর মানুষদের!
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান বিন আনোয়ার ২৫ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:৪৩:৩২ সকাল
সকাল আটটা বেজে পনেরো মিনিট। বসে আছি ড্রেসিং-টেবিলের সামনে। পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা নিয়ে লিখতে বসেছি। তবে লেখার বিষয়বস্তু তেমন জানা নেই। অনেক্ষণ ধরেই এটা-ওটা নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি। বলাবাহুল্য, সফল হতে পারছিনা। প্রতিটি বিষয়েই তিন-চার লাইন লিখে শেষে কী লিখব- তার কিনারা না পেয়ে বাধ্য হয়েই সে লেখার ইতি টানছি। এ লেখাটিরও একই পরিণতি ঘটবে কিনা বুঝতে পারছিনা!
বাসায় যে মহিলা কাজ করেন তিনি এইমাত্র টিউবওয়েল থেকে বাসন-কোসন ধুয়ে আসলেন। ভাবছি, তাকে নাস্তা দিতে বলব। আর নাস্তা খেতে যাওয়া মানেই আমার এ লেখাটিরও করুণ সমাপ্তি ঘটা! অবশ্য তার প্রসঙ্গ আসতেই মাথায় একটা চিন্তা খেলে গেল। মহিলার একটা মেয়ে আছে। ছোট্ট মেয়ে। বয়স দু-তিন হবে। নাম কারিমা। সারাদিন শুধু চিল্লায়। এ-রুম থেকে সে-রুম, মেয়েটার চিল্লানী কোনোভাবেই থামেনা। সবচেয়ে যেটা বিব্রতকর সেটা হল- এতটুকুন মেয়ে, কথা বলে পাকা পাকা। কিছু কথা শুনে মনে হয়, মেয়েটার গলা টিপে ধরি! হা হা হা...। আমি অবশ্য সুযোগ পেলেই এটাকে চোখ রাঙ্গিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করি। তবে আমার সে চেষ্টায় কোনো ফলাফল খুঁজে পাইনা। উল্টো নিজেকেই লজ্জা পেতে হয়! মেয়েটা এখনো চিল্লাচ্ছে। মা’কে ডাকছে, “আম্মা...।” আমি শুনতে পাচ্ছি, “হাম্বা...।”
আজকে অনেকগুলো কাজ করতে হবে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, একজনের কাছে দশ’হাজার টাকা পাই-সে টাকা উদ্ধার করা। গত দু’সপ্তাহ ধরে দিবে-দিবে করছে, এখনো দিচ্ছেনা। আজকে ফাইনাল ডেইট। আজকে যেভাবেই পারি তার থেকে টাকাটা আদায় করতে হবে। টাকা নেয়ার সময় বলেছিল, “চুরি করি ডাকাতি করি, তোমার টাকা আমি সময়মতো পরিশোধ করে দিব।” সেই ‘চুরি-ডাকাতির’ টাকা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দু’সপ্তাহ পেছনে এসেও ফেরত দিতে পারেনি। আজ না কাল, এখন না তখন, সকালে না বিকালে- এসব বলেই আমাকে চরকির মত ঘুরাচ্ছে। আমিও হাঁদারামের মত তার মিষ্টি কথায় ‘ঠিক আছে-ঠিক আছে’ বলে ফিরে আসছি। আজকে যদি টাকা না দেয়, তবে তার সাথে সম্ভবত ঝগড়া হবে। এই মুহুর্তে আমার টাকার খুব প্রয়োজন। অথচ যাদেরকে বিপদের সময় ধার দিয়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি, তারাই এখন আমার কপালে লাঠি ভাঙছে।
আরেকজন আছে। তাকে আমি ধার দেয়ার সময় মেসেজ করে বলে দিয়েছিলাম- সময়মতো যেন আমাকে টাকা পরিশোধ করে দেয়। মুখ ফুটে বলতে পারার ক্ষমতা আমার নেই। তাই মেসেজ করেছি। সে-ও কথা দিয়েছে। বলেছে, “ কমিটম্যান্ট তো কমিটম্যান্ট-ই।" নির্ধারিত সময়েই তিনি পাওনা পরিশোধ করবেন। সেই কমিটম্যান্টওয়ালা ভদ্রলোক গত পাঁচদিন ধরে আমার ফোন-ই রিসিভ করছেননা। ঠিক যে দিনে তার ঋণ পরিশোধের তারিখ সে দিন থেকে! তারিখটা ২০।০৮।২০১৪
জুলাইয়ের বিশ তারিখ রাতে তাকে আমি ‘বিকাশ’ করে পাঁচ হাজার টাকা পাঠাই। এক মাস পর আরেক বিশ তারিখেই তার পাওনা পরিশোধের কথা! সেই তিনি অভিনব পদ্ধতিতে আমার ঋণ আদায় করছেন! শুধুমাত্র আমার কল রিসিভ না করে, কোনো মেসেজের উত্তর না দিয়ে তিনি সসম্ভ্রমে আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন! এমন আরো দু’জন ‘সামাজিক’ মানুষের খপ্পরে পড়ে আমি এখন দার্শনিক বনে গেছি। জয় হোক মানবতার! জয় হোক চতুর মানুষদের!
বিষয়: বিবিধ
৯৮৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আবার এটাও ঠিক টাকা না থাকলে দিবে কোথা থেকে ।
একটা কথা শুনেছিলাম যদি কারো সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাও তাহলে তাকে টাকা কর্জ দিও ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন